ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতে ফোর্বস এর একটা আর্টিকেল পেয়ে গেলাম আজ, বিষয় – Dangerous Education in Developing Countries বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিপজ্জনক শিক্ষা। ওরা উন্নয়নশীল/দরিদ্র ২০ টা দেশের স্কুলের শিক্ষা ব্যাবস্থা এর উপর সার্ভে করেছিল একটা। তার একটা জিস্ট সেখানে দিয়েছে। সেখান থেকে কিছুটা অনুবাদ করছি।
বিপজ্জনক শিক্ষার তালিকা তৈরি করা হলে যেটি সবার উপরে স্থান করে নিবে, সেই শিক্ষাটি হল, “শিক্ষকরা সব কিছুই জানেন”- এ ধারণাটা শিক্ষার্থীর মনে জাগিয়ে তোলা। শিশুরা মনে করে, শিক্ষকরা খুবই জ্ঞানী এবং তাঁরা মারাত্মক ক্ষমতাধর। এ ধারণার কারণে অনেকেই বিতর্কিত বিষয়গুলো যাচাই করে দেখার মানসিকতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে।
বিপজ্জনক শিক্ষার দ্বিতীয় পাঠটা সম্ভবত এই যে একটা সময়ে শিক্ষার্থী মনে মনে ধরেই নেয়- “স্কুলের পড়া শেষ জীবনের শেখার পালাও শেষ”। এর ক্ষতিকারক প্রভাব হলো, এ শিক্ষার মাধ্যমে অনেকে “দিবাস্বপ্ন” জাতীয় মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
তৃতীয় শিক্ষাটি হচ্ছে, “সেরা ও ভালো ছাত্রছাত্রীরাই কেবল সব ধরনের নিয়ম মেনে চলে”। এর ফলে শিশুরা ঈর্ষাপরায়ণ হয় এবং ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের মধ্যে মর্যাদাগত লড়াইয়ের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়।
চতুর্থ শিক্ষাটি হচ্ছে, “বইয়ে যা লেখা আছে, সেটাই সব সময় ঠিক”। এর ফলে তথ্য খোঁজার জন্য বহুমুখী সূত্র ব্যবহারের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়।
পঞ্চম ভয়ানক শিক্ষাটি হচ্ছে- “জীবনে সাফল্যের সরল পথ একটিই, আর তা হচ্ছে স্কুলের পড়া শেষ করে কলেজে যাওয়া।” তাই ফেল করে যারা কলেজে যেতে পারেনি তাদের উচ্চাশাগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়।
ষষ্ঠ বিপজ্জনক শিক্ষাটি হচ্ছে, “ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষকের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা”। এর ফলে শিক্ষার্থীর মাঝে পক্ষপাতিত্বের মনোভাব জাগতে পারে।
সপ্তমটি হচ্ছে, “পরীক্ষায় ভালো নম্বর ছাড়া আর কোনো কিছুই ভবিষ্যৎ উপার্জনের জন্য ভালো হতে পারে না”। এর ফলে মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অষ্টম বিপজ্জনক শিক্ষাটি হচ্ছে, ক্লাসে যাওয়ার চেয়ে ছুটির দিনই বেশি মজার। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে কর্মজীবনেও।
সর্বশেষ ও নবম বিপজ্জনক শিক্ষাটি হচ্ছে, শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে কেবল চাকরি করা কিংবা পেটের চাহিদা মেটাতে কিছু একটা করা। এর ফলে সৃষ্টিশীল বা উদ্যোগী মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায় অনেকের।
বিজ্ঞান শিক্ষা কিভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠে তা এখানে দেখানো হয়েছে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে ভাবলে মনে হয় আরেকটা, দশম পয়েন্ট প্রযোজ্য। সেটা হল আমাদের জরাজীর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যে টইটুম্বুর বিজ্ঞান বই।
আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত বইগুলোতে রয়েছে নানা রকমের অসংগতি। বিজ্ঞানের বইগুলর অবস্থা তো একেবারেই করুণ। আমাদের বিজ্ঞান বইগুলো যেগুলো পড়ে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা নিজেদের গড়ে তোল্বার স্বপ্ন দেখে, আকাশ ছোবার স্বপ্ন দেখে, সেইসব বইগুলো দেখলে সত্যি বড় কষ্ট হয়। এই বইগুলো অসংখ্য ভুল তথ্য, অযৌক্তিক ব্যাখ্যা, আর তথ্য সরলীকরণের নামে এমন কিছু বিষ্য় এখানে আছে, যাকে এক কথায় বলতে হয় “নিউক্লিয়ার বোমা”। আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষা আসলে হয়ে গেছে বিশ্বাস নির্ভর, যুক্তি বা পর্যবেক্ষণের মূল্য এখানে নেই। বইতে যা লেখা আছে মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় বমি করে দিয়ে এলেই হল!
ভুল তথ্য আর অসংগতি রেখেই ১৯৯৬ থেকে পাঠ্যবইগুলো প্রতি বছর তথাকথিত “সংশোধিত ও পরিমার্জিত” হয়ে আসছে, চলছে একের পর এক পুণর্মুদ্রণ। কিন্তু ভুলগুলো থেকে গেছে যেন “আপন শক্তিতে”। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় পৌনে দুই কোটি শিক্ষার্থী এসব বই পড়ছে। তার মানে হল, প্রতি বছর প্রায় পৌনে দুই কোটি শিক্ষার্থী এভাবে ভুল শিখে শিখে বেড়ে উঠছে! আর এদেরকে নিয়েই আমরা দেখি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বার স্বপ্ন!
বিজ্ঞানের সব তথ্য এবং শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে যে তথ্যই দেওয়া হোক না কেন, তা অবিকৃত রাখতে হবে। যেখানে তথ্য বা উপাত্ত সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে অস্পষ্টতার বিষয়টিও উল্লেখ করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের উপলব্ধি হবে, পরবর্তী ধাপে সে হয়তো এ বিষয়ে জানতে পারবে।
আমাদের বিজ্ঞানের পাঠ্যবইগুলো অনেকটা নোট বা গাইড বইয়ের মতো। বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলো স্পষ্ট নয়। অনেক বিষয়ের সর্বশেষ তথ্য নেই। বিস্তৃত আকারে তা বর্ণনা করার দরকার ছিল। আরও বেশি গাণিতিক সমস্যা বা বাস্তব জীবন ভিত্তিক উদাহরণ থাকলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো।
শহরের শিক্ষকদের বিজ্ঞানের সর্বশেষ তথ্য, কোথায় কি নতুন গবেষণা হচ্ছে- সেসব নিয়ে খুব সহজেই জানা সম্ভব। কিন্তু গ্রামে? গ্রামে তো ততটা সুযোগ নেই। পাঠ্যবইয়ে স্বল্পতম সময়ে সর্বশেষ তথ্য যুক্ত করা না হলে গ্রামের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বঞ্চিতই হয়ে যাচ্ছে। যা পরবর্তীতে বিকট সমস্যার আকার ধারণ করে।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের দেশের পাঠ্যক্রম পুরোনো। পাঠ্যবইগুলোও আকর্ষণীয় নয়। বিশেষ করে, বিজ্ঞানের বইগুলোর ভাষা এমন সহজবোধ্য হওয়া চাই, যাতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে না হয়। সে নিজেই যেন এটা বুঝতে পারে। এ ছাড়া বইয়ে প্রচুর উদাহরণ রাখা জরুরি”।
সেদিন বেশ অনেকক্ষাণি সময় ব্যয় করে NCTB প্রকাশিত বিভিন্ন শ্রেণির বিজ্ঞান বইগুলোতে একটু চোঁখ বুলালাম। তাতেই ভেসে উঠল প্রায় দেড় ডজন ভুল বা অসংগতি। আমার দেখাতেই এই অবস্থা, কোন ঝানু লোকের হাতে পড়লে না জানি কি হবে! অবশ্য এমনও হয়ে থাকতে পারে যে, আমি বিজ্ঞান সম্পর্কে জানি না বলেই আমার চোঁখে বেশি অসংগতিপূর্ণ মনে হয়েছে, আসলে হয়ত ব্যাপারটা ওরকম নয়। যাহোক, আমার যা পর্যবেক্ষণ করলাম তার কিছুটা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
অষ্টম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের নাম ‘মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ’। এ অধ্যায়ের ৬৮ পৃষ্ঠায় অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পড়ন্ত বস্তুর গ্যালিলিও পরীক্ষার উল্লেখ করা হয়েছে। ‘…১৫৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও একটি পরীক্ষা করে দেখান যে একই উচ্চতা থেকে মুক্তভাবে পড়ন্ত সব বস্তু, ভারী বা হালকা — একই সময়ে মাটিতে এসে পড়ে।’ পিসার হেলানো টাওয়ার থেকে গ্যালিলিও এ পরীক্ষাটি করেছিলেন বলে পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গ্যালিলিও এমন প্রক্রিয়ায় যে ত্বরণ পরিমাপ করেননি, সে ব্যাপারে প্রায় সব বিজ্ঞানী বর্তমানে একমত। হেলানো তলের সাহায্যে তিনি পরীক্ষাটি করেছিলেন। ইতিহাসবেত্তাদের মতেও এই তথ্যের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
“অতি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও পরমাণু দেখা যায় না।“ অষ্টম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের “পরমাণু” অধ্যায়ে এমন তথ্য রয়েছে।

একই তথ্য রয়েছে মাধ্যমিক রসায়ন বইতে। ২০০৪ সালে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, ল্যাবরেটরির গবেষকেরা ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে (স্ক্যানিং ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ) সিলিকন পরমাণুর ছবি তুলেছেন। কিছুদিন আগে IBM হাইড্রোজেন পরমাণুর ছবিও তুলেছে। গত বছর ওকে রিজ ন্যাশানাল ল্যাব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বোরন, কার্বন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণুর ছবি তোলা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মো. আরশাদ মোমেন প্রথম আলোতে বলেন, “আমরা যখন বলি, কোনো কিছু দেখা যায় না, তা সাধারণ অর্থে বোঝায় বস্তুটি আলোক দিয়ে দেখা যায় না। কিন্তু চোখের দেখাই তো শেষ কথা নয়। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমেও তো আমরা দেহাভ্যন্তরেও ‘দেখছি’। যদিও সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করছি শব্দ তরঙ্গ। পরমাণু আলো দিয়ে দেখা সম্ভব নয়। এ জন্য ব্যবহার করতে হয় ইলেকট্রনের তরঙ্গ, যা দিয়ে পরমাণুকে ‘দেখা’ সম্ভব”।
নবম-দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক সাধারণ বিজ্ঞানের শক্তির নিত্যতার সুত্রে বলা হয়েছে, “শক্তির বিনাশ বা সৃষ্টি নেই, শক্তি কেবল মাত্র একরূপ থেকে এক বা একাধিক রূপে রূপান্তরিত হয় এবং বিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়”। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ইত্যাদি। এই বইয়ের এই অধ্যায়েরই একই পৃষ্ঠায় পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, পরমাণু ভেঙে বিপুল শক্তি বের করা যায়। অর্থাৎ ভর শক্তিতে পরিণত হয়।
ভর ও শক্তি সম্পর্কে এমন বর্ণনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল/দ্বিধান্বিত ধারণা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিউটনীয় তত্ত্বে বস্তু ও শক্তি আলাদা করে শক্তির নিত্যতা মেনে চলে। কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এক্ষেত্রে ভর এবং শক্তির নিত্যতার বিষয়টি অন্তত কিছুটা হলেও বর্ণনা করা উচিত ছিল বলে মনে হয়।
তৃতীয় শ্রেণীর পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানের ‘আমাদের বিশ্ব’ অধ্যায়ে গ্রহের সংখ্যা বলা হয়েছে আটটি। প্লুটোকে এখানে গ্রহের বিবেচনায় আনা হয় নি।

আবার মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞানের ‘আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান’ অধ্যায়ে সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা নয়টি উল্লেখ করা হয়েছে (পৃষ্ঠা-৩১৪)। এ নিয়ে এর আগে পত্রিকাতেও লেখালিখি হয়েছে। কিন্তু সংশোধনের দিকে নজর নেই কারো।
ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে আছে- পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ১০৯টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে। একই তথ্য আছে নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ও সাধারণ বিজ্ঞান বইতে।

সপ্তম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানে হাইড্রোজেন অধ্যায়ে এ সংখ্যা বলা হয় ১১০টি। সম্ভবত এখানে ডারমস্টাডটিউমকে (Ds) হিসেবে আনা হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানের পদার্থের গঠন: অণু, পরমাণু অধ্যায়ের তথ্য ১১১টি। ডারমস্টাডটিউম এর পর সম্ভবত রন্টজেনিয়ামকেও (Rg) এখানে হিসেবে আনা হয়েছে মনে হয়।

আসলে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রির সর্বশেষ তথ্যমতে, মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ১১৯টি (আনবিয়াম বা একা থোরিয়াম সহ)।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। অথচ ২০০১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিন ধরনের তথ্য রয়েছে বিভিন্ন ক্লাসের বিজ্ঞান বইতে। তৃতীয় শ্রেণির পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান বইতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসঙ্খ্যা ১২ কোটি ৯৩ লক্ষ।

চতুর্থ শ্রেণীর পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে জনসংখ্যা ও পরিবেশ অধ্যায়ের তথ্য হলো, জনসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি ৩০ হাজার (পৃষ্ঠা-১০৯)। পঞ্চম শ্রেণীর পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে জনসংখ্যা ও পরিবেশ অধ্যায়ে, জনসংখ্যা ১২ কোটি ৯৩ লাখ (পৃষ্ঠা-১৬২)। আবার সপ্তম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণ অধ্যায়ে বলা হচ্ছে, জনসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি।

বাঙলাদেশ পরিসঙ্খ্যান ব্যুরোর আদমশুমারী প্রাথমিক রিপোর্ট-২০০১ অনুযায়ী ২০০১ সালে বাংলাদেশের জনসঙ্খ্যা ছিল প্রায় ১২ কোটি ৯৩ লক্ষ।
ষষ্ঠ শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানের ‘ধাতু ও অধাতু’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ১৭৫৬ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস সর্বপ্রথম হাইড্রোজেন আবিষ্কার করেন।

একই বিষয়ে সপ্তম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানে হাইড্রোজেন অধ্যায়ের তথ্য হলো, ১৭৬৬ সালে হেনরি ক্যাভেন্ডিস সর্বপ্রথম এ গ্যাসের অস্তিত্ব আছে বলে বুঝতে পারেন। আর ১৭৮৮ সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে প্রমাণ করেন যে হাইড্রোজেন মৌলিক পদার্থ।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেন্ডিস মূলত হাইড্রোজেন গ্যাসটি শনাক্ত করেন ১৭৬৬ সালে। আর ১৭৯৩ সালে অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ে হাইড্রোজেন নামকরণ করেন।
অষ্টম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানের ‘মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ’ অধ্যায়ে লেখা, ‘নিউটন মহাকর্ষ আবিষ্কার করেন ১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে, যখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩ বছর।’ (পৃষ্ঠা-৬৬)

বর্তমানে কোনো কিছু আবিষ্কারের সময় নির্ধারণের একটি প্রতিষ্ঠিত নিয়ম রয়েছে। সেটা হলো আবিষ্কার সম্পর্কে তথ্যের প্রকাশকাল। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, নিউটন তাঁর প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা গ্রন্থে মহাকর্ষ সূত্রটি প্রকাশ করেন ১৬৮৭ সালে। আর এর আগের বছর তাঁর বইটি রয়েল সোসাইটিতে উপস্থাপন করা হয়। তাই পাঠ্যবইয়ে দুটো সালই উল্লেখ করলে ভালো হতো।
নবম-দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞানের ‘পরিমাপ’ অধ্যায়ে এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি (এসআই) চালুর সালটি ১৯৬০।

একই বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞানে পরিমাপ অধ্যায়ের তথ্য হলো, বিশ্বের সব দেশের বিজ্ঞানীরা ১৯৬৮ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে মিলিত হয়ে সব দেশের জন্য একটিমাত্র এককের পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে একমত হন । একই অধ্যায়ে বলা হচ্ছে, কতটুকু দৈর্ঘ্য এক মিটারের সমান সেটা ঠিক করেছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা একসাথে বসে ১৮৭৫ সালে (প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম মিশ্রিত ধাতুর দণ্ড)।

বস্তুত, ওজন ও পরিমাণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ব্যুরোর প্রতিবেদন (অষ্টম সংস্করণ, ২০০৬) অনুযায়ী, ১৯৪৮ সালে এসআই পদ্ধতি গৃহীত হওয়ার পর থেকে তা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর ১৯৬০ সালে এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত রূপ এসআই ঠিক করা হয়। এক মিটারের দৈর্ঘ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় ১৮৮৯ সালে।
নবম-দশম শ্রেনির মাধ্যমিক রসায়ন বইতে চতুর্দশ অধ্যায়ে ফসফরিক এসিডের সংকেত দেয়া হয়েছে H3PO3। এই একই পৃষ্ঠায়ই পরের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ফসফরিক এসিডের সংকেত H3PO4।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রির তথ্য অনুসারে H3PO3 এর আধুনিক নাম হল অর্থো ফসফরাস এসিড বা ডাই হাইড্রোক্সিফসফিন অক্সাইড বা ডাইহাইড্রোক্সি-অক্সো ফসফেন। আর H3PO4 হল ফসফরিক এসিড। কিন্তু এই বইয়েরই পঞ্চদশ অধ্যাতে H3PO3 কে আবারো ফসফরিক এসিড বলা হয়েছে। গণতান্ত্রিক হিসেবে বলতে গেলে মনে হয়, H3PO3 ই ফসফরিক এসিডের শুদ্ধ সংকেত!! সত্যি বলতে কি, আমি যখন প্রথম পড়েছিলাম, তখন আমিও এমনটাই ভেবেছিলাম।

এই বইয়ের সপ্তম অধ্যায় পর্যায় সারণী। এখানে পর্যায় সারণীর বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, এতে বাম থেকে ডানে ক্রমানুসারে I থেকে VIII পর্যন্ত মোট ৮ টি গ্রুপ বিদ্যমান। আরো বলা আছে, গ্রুপ – II এবং গ্রুপ – III এর মাঝের মৌলগুলোকে অবস্থান্তর মৌল বলা হয়।

কিন্তু, আধুনিক পর্যায় সারণীর বৈশিষ্ট্য হল- এতে মোট ১৬ টি গ্রুপ রয়েছে। বাম থেকে ডানে ক্রমানুসারে এই গ্রুপগুলো হল – IA, II A, III B, IV B, V B, VI B, VII B, VIII, I B, II B, III A, IV A, V A, VII A ও 0।
যেসব মৌলের পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরের আগের শক্তিস্তরের d-অর্বিটালের শেষের ইলেকট্রন প্রবেশ করে, তাদের বলে d-ব্লক মৌল। আর যেসব d-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নের d-অর্বিটাল আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে, তাদের অবস্থান্তর মৌল বলে। সব অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সব d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়।
এই বইয়েরই নবম অধ্যায়ে সোডিয়াম থায়োসালফেটের দ্রবণে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের একটি বিক্রিয়া দেয়া হয়েছে যাতে উৎপাদ হিসেবে পাওয়া যায় সোডিয়াম ক্লোরাইড, পানি আর সালফার।

কিন্তু এই বিক্রিয়াটি কোনভাবেই সমতা সাধন করা সম্ভব না। কেননা, এতে একটি ম্মস্ত ভুল হয়ে গেছে। সোডিয়াম থায়োসালফেটের দ্রবণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করলে সোদিয়াম ক্লোরাইড, পানি, সালফারের সাথে আরো একটি উৎপাদ পাওয়া যায়। আর সেটি হল সালফার ডাই অক্সাইড। কিন্তু বইতে কিভাবে যেন এটি গায়েব হয়ে গেছে। ২০০৪ সালের বইতে এই ভুলটি পেয়েছি। ২০১০ সালে আমি যখন বইটি পড়েছি, তখনো এই ভুলখানা ছিল। আর সর্বশেষ ২০১২ সালের বইতেও এই ভুলটি বহাল তবিয়তে বাসা বেঁধে আছে।
ত্রয়োদশ অধ্যায়ে কপার পাইরাইটস আকরিক থেকে কপার ধাতু নিষ্কাশনের পদ্ধতি দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, কপার পাইরাইটকে তাপে বিজারিত করে কপার (I) সালফাইড উত্পাদন করা হয়। এই বিক্রিয়ায় সহ উৎপাদ হিসেবে উৎপন্ন হয় অক্সিজ্জেন গ্যাস ও ফেরাস অক্সাইড। এই বিক্রিয়াটিও শত চেষ্টা করে সমতা করা যায় না।

এর কারণ হল, কপার পাইরাইটের তাপীয় বিজারণের ফলে কিউপ্রাস সালফাইডের সাথে সহ উৎপাদ হিসেবে উৎপন্ন হয় অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় ঠিকই, কিন্তু ফেরাস অক্সাইড উৎপন্ন হয় না। উৎপন্ন হয় ফেরাস সালফাইড (FeS)। বিক্রিয়াটিতে ফেরাস সালফাইড কেমন করে যেন ফেরাস অক্সাইড হয়ে গেছে।
মাধ্যমিক রসায়ন বইটির ২০০৪ সালের সংস্করণে আরো একটি বিষয় আমার চোঁখে পড়েছে। সেটা আমি যখন ২০১০ সালে পড়েছি, তখনো পেয়েছি, এখনো ২০১২ সালের বইতে রয়ে গেছে বীর-বিক্রমে। অ্যাল্কোহলের জারণের ফলে প্রথমে অ্যাল্ডিহাইড এবং পরে এর আবারো জারণের ফলে জৈব এসিড উৎপন্ন হয় – এমন একটা বিক্রিয়া এখানে আছে।

বিক্রিয়াটিতে জায়মান অক্সিজেনের সাহায্যে অ্যাল্কোহলের দুই ধাপে জারণের মাধ্যমে অ্যাসিটিক এসিড প্রস্তুত হয়- তা দেখানো হয়েছে। কিন্তু, আমার প্রশ্ন হল জায়মান অক্সিজেন কি তা কি মাধ্যমিক স্তরের কোন বইতে আছে? নবম-দশম দূরে থাক, উচ্চ মাধ্যমিকেও এর কথা খুব ভালভাবে দেয়া হয় নি!!
বিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ে নানা তথ্য সরলীকরণের ফলে ছাত্রছাত্রীরা ভুলও শিখছে। যেমন, অষ্টম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের কয়েকটি সাধারণ ব্যাধি অধ্যায়ে বলা হয়েছে জন্ডিস রোগের কারণ হল এবিসি ডেল্টাই নামক ভাইরাস। জন্ডিস হওয়ার অর্থ হল রক্তে বিলিরুবিন বা পিত্তরসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। আর জন্ডিসের জন্যে দায়ি সবচেয়ে মারাত্বক ভাইরাস হল বি।

উইকিপিডিয়ার এর মতে প্রকৃত তথ্য হল, জন্ডিসের জন্যে বেশ কয়েকটি ভাইরাস দায়ি। এদের নাম গুলো হল হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস ডি আর হেপাটাইটিস ই। এর মাঝে সবচেয়ে মারাত্বক হল হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। বি ভাইরাসের লিথালিটি বেশি হলেও সার্বিক বিচারে সি ভাইরাসই বেশি ভয়ঙ্কর। এ ভাইরাসগুলোর আক্রমণ ছাড়াও অন্য অনেক কারণে জন্ডিস হতে পারে। বইতে যে ‘এ বি সি ডেল্টাই’ ভাইরাসের কথা বলা হয়েছে, এ নামে কোন ভাইরাস আছে তা আমার জানা নেই। ইন্টারনেটে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এমন কোন ভাইরাসের কথা খুঁজে পাই নি। আর MolBioSci এর তথ্যানুসারে বিলিরুবিন কখনোই পিত্তরস নয়। Bilirubin শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দের সমষ্টি: bilis (পিত্তরস) + ruber (লাল রং)। পিত্তরসের মধ্যে লালচে রঙের যে ভাঙ্গা কণাগুলো পাওয়া যায় সেগুলোই বিলিরুবিন, যদিও অনেকগুলো কণা একত্রে দেখতে সোনালী-হলুদ মনে হয়। বিলিরুবিনের একটি উপজাত বিলিভার্ডিনও পিত্তে মিশে থাকে। বিলিভার্ডিনের রং সবুজাভ বলে সব মিলিয়ে পিত্তরসকে হলদে-সবুজ দেখায়। উল্লেখ্য, বিলিভার্ডিনের verdin অংশটি প্রাচীন ফরাসী শব্দ verd থেকে এসেছে তার অর্থ ‘সবুজাভ’।
চাঁদের গতিপথ সম্পর্কে ভুল জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানের ‘আমাদের বিশ্ব’ অধ্যায়ে। এখানে বলা হচ্ছে, চাঁদের দূরত্ব পৃথিবী থেকে তিন লাখ চুরাশি হাজার কিলোমিটার।

কিন্তু, আমরা সবাই এটা জানি যে, চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, পৃথিবী থেকে এর সর্বনিম্ন দূরত্ব তিন লাখ ৬৩ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে এর সর্বোচ্চ দূরত্ব চার লাখ পাঁচ হাজার ৬৯৬ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে এর গড় দূরত্ব তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪০৩ কিলোমিটার। তাই পাঠ্যবইয়ে গড় দূরত্ব লিখলে আর ভুল হতো না।
একই বইয়ের ৪৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেন। বিজ্ঞানীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আকাশের গ্রহ ও নক্ষত্র দেখেন। এতে মনে হতে পারে দূরবীক্ষণ ও অণুবীক্ষণ যন্ত্র আর কেউ ব্যবহার করে না।

চতুর্থ শ্রেণীর পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় ‘বায়ু’। এ অধ্যায়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে, ‘… বাতাস ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, এমনকি দেখাও যায় না। শুধু এর পরশ অনুভব করা যায়।’ প্রথম বাক্যে ছোঁয়া যায় না, কিন্তু পরের বাক্যে পরশ লাগে কীভাবে? যদ্দুর জানি, পরশ শব্দের অর্থই তো ছোঁয়া!

পঞ্চম শ্রেণীর পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে ‘পদার্থ’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, অত্যন্ত ঠান্ডায় পানি জমিয়ে বরফ তৈরি করা হয়।

‘অত্যন্ত ঠাণ্ডা’ কথাটি বিজ্ঞান বইয়ে বড়ই বেমানান। সাধারণত শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি বরফে পরিণত হয় উল্লেখ করার দরকার ছিল। এতে শিক্ষার্থীরা তাপমাত্রার একক সম্পর্কে জানতে পারত, না হলেও অন্তত একটা ধারণা পেত।
এমন আরো কত ভুল/অসংগতি যে আমাদের বইতে ছড়িয়ে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এদিকে নজর দেয়াটা খুবই জরুরী। কারণ, এগুলো আমাদের বিপর্যয়ের কারণ। আর খুব কষ্টের একটা ব্যাপার হল, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসের পরিবর্তন ঠিকই হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বইয়ের খোঁজ সংশ্লিষ্ট কারো নেবার সময় নেই!
বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ক্লাস নেয়ার জন্য বহু রকম উপকরণ ব্যবহৃত হলেও আমাদের দেশে তা ব্যবহার তো দূরে থাক, এসবের কথা কেউ ভাবেও না।। এছাড়া বিজ্ঞান শিক্ষার এক অপরিহার্য অংশ হচ্ছে ব্যবহারিক ক্লাস। অবকাঠামোগত অসুবিধার জন্য আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতেব্যবহারিক ক্লাস চলে তাতে সমস্যা বিস্তর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের গবেষণাগারগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। আর ব্যবহারিক সহায়ক বই! ওর কথা আর নাইবা বললাম! ব্যবহারিক বইয়ের চেয়ে ভুলে ভরা তত্ত্বীয় বই বরঞ্চ বহুগুণে ভাল!
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের ভালো বই, যেগুলো দেখে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হবে, সেসব নেই বললেই চলে। কিছু বই যা পাওয়া যায় তার অধিকাংশকে নোট বই ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। বোর্ড বই, রেফারেন্স বই আর নোট বই – তফাৎ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন কাজ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অবস্থা নিতান্তই করুণ। আমাদের মানসম্মত বইয়ের বড্ড অভাব।
গত ১৯/১১/’১২ তারিখে প্রথম আলো’তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে বই প্রকাশিত হবে। আমি/আমরা মনে প্রাণে চাই, নতুন বইগুলো যেন হয় নিখুঁত, সর্বশেষ তথ্য সম্বলিত, সুন্দর, উন্নত। আরো চাইব, এই বইগুলো যেন একবার প্রকাশ করার পর বার বার শুধু পুণমুদ্রণই না হয়, সংশোধিত হয়, বইগুলোর যেন নিয়মিত সংস্কার হয়।
ভুলে ভরা জরাজীর্ণ এসব বই দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নিয়েই আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বার স্বপ্ন দেখি। এবং আমরা জানি, আমরা পারব। একটু চেষ্টা করলেই পারব। এসব বই পড়েই কামারের উত্তপ্ত হাপরের বিপদের ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদের সামনে আজ তারার মত জ্বলজ্বল করছেন মাহমুদুল হাসান সোহাগ, তারিক আদনান মুন, নাজিয়া চৌধুরী, মাকসুদুল আলম, চমক হাসান, সুব্রত দেব নাথ – এমন মত অনেক নাম! তাই, তবুও স্বপ্ন দেখি, সুন্দর দেশটা বিজ্ঞানের মঞ্চেও উচ্চ আসনে ঠাঁই করে নিবে…
♣♣♣ কিছুদিন আগে জীববিজ্ঞানের একটা নোট লিখেছিলাম। তারপর সৌমিত্রদা’ (সৌমিত্র চক্রবর্তী) একটা লেখার কথা বলেছিলেন, বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকের পাতায় যেসব “অতি-সরলীকৃত সুমিষ্ট নিউক্লিয়ার বোমা” আছে সেগুলোকে নিয়ে। বড্ড সাহস করে তাই লিখে ফেলবার একটা অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে ফেললাম। আমি নিতান্তই গণ্ড মূর্খ ক্ষুদ্র মানুষ, অনেক ভুল করে থাকতে পারি। আর ভয়ে ভয়ে লিখেছি,পাছে এই নিউক্লিয়ার বোমার আঘাতে হয়ত দেখা যাবে আমি নিজেই ব্যাকফায়ার্ড হয়ে গেছি!! যাহোক, ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি আর দেখিয়ে দেবেন দয়া করে। আর এটা লিখবার ক্ষেত্রে আমি প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া, MolBioSci, ইয়াহু অ্যান্সারস, ADVANCED CHEMISTRY by Phillip Matthews, উইকি অ্যান্সারস থেকে সাহায্য নিয়েছি। আর এই লেখাটি এর আগে আমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নোট আকারে প্রকাশ করেছিলাম। ♣♣♣
Leave a Reply