Dan Brown এর LOST SYMBOL বইটা আমরা অনেকেই পড়েছি। বই এর শুরুর দিকে একটা কথা আছে, কথাটা এমন, “To live in the world without becoming aware of the meaning of the world is like wandering about in a great library without touching the books”. কথাটা বড়ই সত্যি। আর আমাদের চারপাশের এমন কিছু বিষয় আছে, যা আমরা বহুবার শুনি, কিন্তু একবার ও ভাবি না, এমন কিছু নিয়ে লিখবো এই শিরোনামের পর্ব গুলোতে।
ছোট বেলায় সাধারন জ্ঞান এ একটা প্রশ্ন পড়তাম, “কুকুরে কামড়ালে কোন রোগ হয়?” উত্তর ছিল “জলাতঙ্ক”। উত্তর টা খেয়াল করলে কি অর্থ দাড়ায়, “জলের প্রতি আতঙ্ক”। কখনো কি আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, কুকুরে কামড়ালে এমন কি হয় যে “জল এর প্রতি আতঙ্ক” তৈরি হয়! আসলেই অদ্ভুত! Rabies virus এর সংক্রমনে এই রোগ সৃষ্টি হয়।
আমরা সবাই virus এর ব্যাপারে কম বেশি জানি। মানুষ যেমন হরেক জাতের হয়ে থাকে (আসলে, মানুষের জাতের শেষ নাই !!!), virus এর ও তেমনি অনেক প্রকার আছে। এমনই একটা প্রকার হল Rhabdo virus. আর Rhabdo virus এর সব চেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহারন হল Rabies virus. একটা মজার জিনিস না বলে পারছি না! এই virus এর আকৃতি হল বুলেটের মতো! আসলে আমাদের সকল জিনিস আমরা কোন না কোন ভাবে প্রকিতি থেকে ধার করেছি। এমন আর ও একটা উদাহারন দেই। Platonic Solid এর কথা শুনেছি আমরা সবাই। তার মতে পাঁচ টা আকৃতি দিয়ে পৃথিবীর সব কিছু গঠিত। আমার কাছে খুব অবাক লাগতো এই জিনিসটা ভাবতে। কিন্তু যেই দিন জানতে পারলাম অনেক virus এর আকৃতি icosahederal ও হতে পারে, সেই দিন বুজলাম, এই বিষয়ের পেছনে অনেক বড় রহস্য লুকিয়ে আছে, যা আমরা এখন ও হয়তো বুজতে পারি নাই! কাজের কথায় ফিরে আসি।
এই Rabies virus টি পাওয়া যায় বন্য পশুতে। এরা যখন মানুষকে কামড়ায় তখন তাদের লালার মাধ্যমে এই virus মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে। প্রতিটা virus এর আক্রমণ করার একটা জায়গা থাকে। এরা আক্রমণ করে Central Nervous System (CNS). আর CNS এর সাথে জড়িত হল সকল মাংসপেশীর কাজ-কর্ম। আমরা যখন কোন খাবার গ্রহন করি, তার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক গুলা পেশীর ক্রিয়া-কলাপ। এর ফলে ঐ অবস্থায় যে কোন খাবার গ্রহন করাই আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারন, পেশী সামান্য একটু নড়াতেই প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হয়। তাহলে কথা হল, পানির কথা আসছে কেন? কারন, পানি অথবা জল গ্রহন হল সব চেয়ে সহজ, অন্য খাবারের তুলনায়। আর তখন সামান্য পানিটা গ্রহন করা ও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বলা হয় “জলের প্রতি আতঙ্ক” !!!
জলাতঙ্কের তীব্রতা নির্ভর করবে আপনাকে অথবা আমাকে কুকুর কোথায় কামড়ালো। কামড়ানোর স্থান CNS এর যত নিকটে হয়ে, এর তীব্রতা তত বেশি হবে। আর এই ধরনের ঘটনায় সাথে সাথে আমরা ইঞ্জেকশান নিতে বলি। এই ইঞ্জেকশান টা আসলে কি,যা আমাদের কে রক্ষা করে থাকে? আসলে, এটা হল এক ধরনের টিকা যা Rabies virus থেকেই তৈরি হয়! একটা Rabies virus কে গবেষণাগারে বার বার প্রানিকোষের মধ্যে চাষ করা হয় (সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটানো হয়)। এর ফলে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে “attenuation”. এর ফলে virus টি আক্রমণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, পাশাপাশি তৈরি হয়ে যায় ইঞ্জেকশান হিসেবে, যা আমাদের কে রক্ষা করে থাকে।
বড়ই আজব এই পৃথিবী! যা আমাদের ক্ষতি করে, সে নিজেই কিনা আমাদের উপকার ও করতে পারে! এমন অনেক উদাহারন আছে বিজ্ঞানের জগতে। লেখার শেষ দিকে আপনাদের কাছে আর ও একটা ছোট বেলার সাধারন জ্ঞান এর প্রশ্ন। বলেন তো, “জলাতঙ্ক রোগের টিকা কে আবিস্কার করে ছিলেন?” উত্তর টা আপনাদের জানা অথবা দেখে নিবেন। উত্তরে যেই লোকটার নাম থাকবে, তিনি আমার কাছে খুবি মহান একজন বিজ্ঞানী! সবাই “পাগলা কুকুরের” কামড় থেকে নিরাপদে থাকবেন আশা করে এই পর্বের ইতি টানছি।
Leave a Reply