বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগেই একজন সাধারণ মানুষ তার দৈনন্দিন ভাবনায়, সামাজিক–রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক চিন্তায়, বিশ্বাসে–অবিশ্বাসে, সঠিক ন্যায়সঙ্গত মানবিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আত্ননির্ভরতা অর্জন করতে পারে, জীবনের সামগ্রিক মূল্যবোধকে উপলব্ধি করতে পারে। এহেন পরিশীলিত মন গড়ে উঠলেই আমরা তাকে বিজ্ঞান মনষ্ক বলতে পারি।
–ড. অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়
সত্তরের দশকে সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানকে নিয়ে যাওয়ার এক আন্দোলনে মেতেছিলো কিছু তরুণ। পদার্থবিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৫০-২০০৮) ছিলেন তাঁদেরই মধ্যমণি। তাঁর সম্পাদনায় কলকাতা থেকে ১৯৮০ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সহজ করে বাংলাতে লক্ষ্যভেদী বিজ্ঞান আলোচনার এক নিজস্ব বলয় তৈরি করেছিলো ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকা। যার মূলকথা-এলিট বিজ্ঞান নয়, চারধারে প্রতি দিনের জীবনে, কর্মে ও সংষ্কৃতিতে ওতপ্রোত বিজ্ঞান। বহু সংগঠন ও সামাজিক নানা কাজকর্মে যুক্ত মানুষজন ‘উৎস মানুষ’ থেকে নিয়েছেন কাজের প্রেরণা। বিজ্ঞানমনষ্ক মানবিক মূল্যবোধ গড়ার জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন অশোকদা। কুসংষ্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন সদা সক্রিয়, লড়েছেন সামাজিক অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বিজ্ঞানমনষ্ক মানসিকতা গড়ে তুলতে দিয়েছেন নিরলস শ্রম। যে বিজ্ঞান জানলে জানালে সাধারণ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন জীবনে সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব, ভালো-মন্দ,ঠিক বেঠিক যাচাই করা সম্ভব, সাধারণ মানুষের বিপক্ষে থাকে এমন মানুষকে ও কাজকে চিনে নেওয়া সম্ভব তেমন বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে ও অন্যদের লিখতে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। কখনো ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বা মূল্যায়নের তোয়াক্কা করেননি।লেখালেখি-বই প্রকাশ ছাড়াও মফস্বল অঞ্চলে, কলকাতায় অনেক পাঠচক্রে, কুসংস্কার বিরোধী সংগঠন, বিজ্ঞান ক্লাব ইত্যাদি করার জন্য অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সাংগঠনিক শ্রম দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে তাঁর কর্মের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে গণবিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন আত্মপ্রচার বিমুখ এই মানুষটি।শেষের দিকে সাথের অনেকেই সরে গেছেন। কিন্তু তিনি থামেননি। অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবন আমাদের দেখায় কীভাবে উথ্তানে-পতনে মাথা না হারিয়ে কাজ করে যেতে হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে সুফল এনে দেয়।
২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর অকুতোভয় এই মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন। আজ অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় নেই। কিন্ত লেখা আছে, উদ্দ্যোগটি বেঁচে আছে। আশা- এদেশেও অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও উৎস মানুষ নিয়ে আলোচনা হবে।অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
উৎস মানুষ হতে প্রকাশিত বেশ কিছু বই সংগ্রহে রয়েছে বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্রের সত্যেন বসু গ্রন্থাগারে। আগ্রহী যে কেউ সদস্য হয়ে বইগুলো পড়তে পারেন। কিছু বই ঢাকার শাহাবাগের আজিজসুপার মার্কেটেও পাওয়া যেতে পারে। উৎস মানুষ পত্রিকাটি কিছুদিন বন্ধ থাকার পর কলকাতা থেকে আবারো প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকাটির অনলাইন সংষ্করণগুলো পড়া যাবে এই ওয়েবসাইটে-www.utsamanush.com।
উৎস মানুষ কর্তৃক প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের তালিকা এখানে দেয়া হলো:
প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয়, খাবার নিয়ে ভাবার আছে,সাপ নিয়ে কিংবদন্তী,শেকল ভাঙ্গা সংস্কৃতি,বিজ্ঞান অবিজ্ঞান অপবিজ্ঞান,
বিজ্ঞান জ্যোতিষ সমাজ,আয়ুর্বেদে বিজ্ঞান,প্রতিরোধ:অন্ধতা ও অযুক্তির বিরুদ্ধে,আরজ আলী মাতুব্বর,
এটা কী ওটা কেন।
লেখাটি 283-বার পড়া হয়েছে।
নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।
আলোচনা
Responses
উৎসমানুষের বইগুলো একেকটা আগুন, বলবো না যে সব কথাই ঠিক, কিন্তু লেখগুলো চিন্তাজগতে একটা বিশাল আলোড়ন তৈরি করে। এই মাসে কিন্তু দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়েরও জন্মদিন।
মানুষ অশোকের কার্যপদ্ধতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাথের অনেকেই পিছুটান দিয়েছিলেন কিন্ত অশোকদা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
বহু দিন আগে আদ্য পিঠের মূর্তি স্থাপন নিয়ে একটি লেখা পড়ে ছিলাম।সেট পাওয়া যাবে?
ই-মেইল নিউজলেটার
বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?
আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।
Leave a Reply