লেডিবার্ড বিটল কে তো আমরা সবাই চিনি। বাসার সামনের সবজী ক্ষেত বা কোন চাষাবাদের জমিতে গেলেই এসব উজ্জ্বল সুন্দর পোকাগুলির নড়াচড়া দেখতে পাবেন। ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকাদের খেয়ে লেডিবার্ড -রা আমাদের আসলে উপকারই করে বলা চলে। সেজন্যই, ৫০ থেকে ৬০ বছর আগে, এশিয়ান লেডিবার্ড বিটল (চীন এবং জাপান থেকে) নিয়ে আসা হয়েছিল ইউরোপে।
কিন্তু তখন ইউরোপিয় বাপধনেরা বুঝতে পারেনাই কি জিনিস নিয়ে যাচ্ছেন তারা নিজেদের দেশে। এখানে বলে রাখি, লেডিবার্ড বিটল ইউরোপেও পাওয়া যায়। কিন্তু তারা এশিয়ানদের মত এত চটপটে আর শক্তিশালী না। সেজন্য পেস্ট কন্ট্রোল বা পোকা নিয়ন্ত্রনে এশিয়ান লেডিবার্ড পোকা বেশ ভালই খেল দেখাচ্ছিল ইউরোপে।
ঝামেলা বাঁধল যখন এই এশিয়ান লেডিবার্ড পোকাগুলি ইউরোপের নেটিভ ইরোপিয়ান লেডিবার্ড বিটলদের ঝাঁড়ে বংশে উধাও করে দেয়া শুরু করলো। এরা এতই শক্তিশালী সম্প্রদায় যে কয়েকদিন পর নিজেরাই উৎপাত হয়ে দেখা দিল। মানে, পেস্ট কন্ট্রোল করতে গিয়ে নিজেরাই পেস্ট হয়ে গেল।
আজ, ১৬ মে, বিখ্যাত সায়েন্স পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে এশিয়ান লেডিবার্ড পোকা ইউরোপের লেডিবার্ডদের সঙ্গে লড়াই করে জিতে যাচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ মজার, একধরনের বায়োটেররিজম বলা যায়। এশিয়ান লেডিবার্ডগুলি এমন কতগুলি ছত্রাক (microscporidians নামের ক্ষুদ্রাকার প্যারাসাইট) ইউরোপীয় লেডিবাগদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় যেসব ছত্রাকের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় লেডিবার্ডদের কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। ফলে মারা যায়। কিন্তু এশিয়ান লেডিবার্ডরা এসব ছত্রাক শুধু সহ্য করতেই পারেনা, বরং এদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘোরে।
আবার এশিয়ান লেডিবার্ডগুলি অন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাতেও অসাধারণ। এরা এমন কিছু পেপটাইড (অতি ছোট প্রিটিন) এবং হারমোনাইন নামের এক ধরনের যৌগ তৈরি করে যারা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। ব্যাকটেরিয়া চাষের নিচের ছবিটি দেখুন।
বাম পাশের লেডিবার্ডটি হল এশিয়ান, আর ডান পাশেরগুলি ইউরোপিয়ান। সাদা সাদা যেই ডটগুলি দেখতে পাচ্ছেন তারা হল ব্যাকটেরিয়া। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে ইউরোপীয়দের চারপাশে অনেক ব্যাকটেরিয়া। অন্যদিকে এশিয়ান লেডিবার্ডটির চারপাশে কোন ব্যাকটেরিয়া নেই। কারন, লেডিবার্ডটি থেকে উৎপন্ন উপাদানগুলি ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলেছে।
যেসব লেডিবার্ডকে এশিয়া থেকে ইউরোপে নিয়ে আসা হয়েছিল গ্রীন হাউসে অন্য পোকা নিধনের জন্য, তাদের জালাতেই এখন বাঁচা যাচ্ছেনা। খাল কেটে কুমির আনা বোধহয় একেই বলে।
Leave a Reply