পরিবেশ, প্রকৃতি ও মানুষের অস্তিত্বকে সুন্দর, স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত করে তোলে জীববৈচিত্র্য। কিন্তু মানুষের অসচেতনতা, অজ্ঞতা ও অবহেলা জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে। তেমনি ভাবে মানুষের অদূরদর্শীতার শিকার হয়ে অতিবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলা শকুন নামে পরিচিত এক সময়ের অতি পরিচিত পাখিটি। প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত এই উপকারী পাখিটির সংখ্যা আস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়া অব্যহত রয়েছে।
পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শকুনের বিলুপ্তির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় গরুর ব্যাথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক। ডাইক্লোফেনাক দিয়ে চিকিৎসা করা গরুর মৃত্যু হলে এর দেহ ভক্ষণের পর কিডনি বিকল হয়ে শকুনের মৃত্যু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে ভারত পাকিস্তান ও নেপালে এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারি উদ্যোগ কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোন কোম্পানি এই ওষুধ বিক্রি বন্ধ করেছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি। ফলে দেশের বেশিরভাগ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখনো ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ পশুপাখির ওষুধ বিক্রেতা, দোকানে এ ওষুধটি রাখেন। সরকার প্রজ্ঞাপন জারির বাইরে এ পর্যন্ত এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়নি। বিশেষজ্ঞরা ডাইক্লোফেনকের বিকল্প হিসেবে মেলাক্সিক্যাম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এটি শকুনের জন্য ক্ষতিকারক নয়। তবে এর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই এখনো ডাইক্লোফেনাক গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহার অব্যহত রয়েছে।
অন্যদিকে শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গরুর রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি মৃত গরুর শরীর থেকে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। শকুন হচ্ছে একমাত্র প্রাণী যারা তড়কা রোগে আক্রান্ত গরুর মৃতদেহ খেয়ে হজম করতে পারে। এ কারণে শকুন টিকে থাকলে তড়কা রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করবে। তাই শকুন এর পাশাপাশি অন্যান্য গবাদি পশুর জীবন রক্ষায় ডাইক্লোফেনকের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করা অতি শীঘ্রই জরুরী। তা না হলে এই অতি উপকারি পাখিটিকে আমরা আমাদের ভুলে অচিরেই হারিয়ে ফেলব। তাই আসুন আমরা প্রকৃতি ব›ধু এই পাখিটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি।
Leave a Reply