mummy sleeping statue

সহজ বিজ্ঞান-এসো নিজে করি ৪: নিজেই বানান মমি


লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

(এই শিরোনামে জীববিজ্ঞানের কিছু সহজ পরীক্ষা, যেগুলো আমাদের দেশের সাধারন পরীক্ষাগারেই করতে পারি তার প্রক্রিয়াগুলি তুলে ধরছি।)

মমি হল কোন প্রাণী বা মানুষের একধরনের সংরক্ষিত মৃতদেহ, যেটা হয় মানুষের দ্বারা সংরক্ষণ করা হয়েছে অথবা প্রাকৃতিক ভাবে রসায়ন বা আবহাওয়া জনিত কারনে সংরক্ষিত হয়ে গেছে। প্রাচীন মিশরিয়রা ভাবতো যে দেহ সংরক্ষণ করে রাখা মৃত্যু পরবতীর্ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনতম মিশরিয় মমি প্রায় ৫৬০০ বছর আগের, যদিও মানুষের তৈরি সবচেয়ে পুরনো মানব মমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল চিলিতে, ৭১৫০ বছর পুরাতন। অবশ্য আমরা আরও পুরানো  জন্তু বা মানুষের মমি খুঁজে পেয়েছি যা প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।

মিশরিয় মমি তৈরি প্রথায় কয়েকটি ধাপ ছিলঃ প্রথমে মৃতদেহকে নীলনদের পানিতে খুব ভালভাবে ধোয়া হত। তারপর শরীরের ভেতর থেকে প্রায় সব প্রত্যঙ্গগুলি বের করে ফেলা হত। এই ধাপটা জরুরী ছিল কারন মৃতদেহের এসব প্রত্যঙ্গই সবচেয়ে আগে পঁচতে শুরু করে। পরের ধাপে মৃতদেহের ভিতরটা ন্যাট্রন নামক একধরনের লবন দিয়ে ভতর্ি করা হত, আর বাইরেটাও ঢেকে দেয় হত লবনটি দিয়ে, যাতে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ন্যাট্রন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া লবণ যাতে আছে বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাই কার্বনেট আছে), যা প্রাচীন মিশরের শুকিয়ে যাওয়া হ্রদ থেকে সংগ্রহ করা হত। যাই হোক, যখন শরীর শুকিয়ে যেত তখন সুগন্ধী তেল মাখানো হত শরীরজুড়ে। সবশেষে লিনেন কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে কফিন বন্দি করে শেষমেশ পিরামিডের ভিতর রেখে দেয়া হত। মমি বানানোর মূল ব্যাপারটা ছিল আসলে মৃতদেহ থেকে পানি বের করে নিয়ে তাকে শুষ্ক বানানো। আমাদের দেশে শুটকি বানানোর প্রক্রিয়া আসলে একধরনের মমিকরণই বটে। আমরা এখানে একটি সহজ উপায় শিখবো, হট ডগ কে মমি বানানো।

মমি বানাচ্ছেন মিশরের মমি কারিগরগণ

কি কি লাগবেঃ

-সদ্য কেনা হট ডগ, পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন রকমের কিনতে পারেন যদি খুঁজে পান, যেমন মুরগীর মাংস এবং গরুর মাংস উভয়েরই বানানো হট ডগ। কোন বাজার থেকে বা কোন খাবারের দোকান থেকে কিনে নিন।

-বেকিং সোডা  ২ কেজি

-রুলার

-ফিতা

-টিস্যু পেপার

-নোট নেয়ার জন্য কাগজ কলম

-একটি টিফিন বক্স যা ভালভাবে মুখ বন্ধ করা যায়, যেন প্রায় এয়ার টাইট থাকে বন্ধ করার পর। টিফিন বক্সটা হট ডগের চাইতে সব পাশেই বেশ খানিকটা বড় হওয়া জুরুরী

-খুঁজে পেলে একজোড়া ল্যাব গ্লভস কিনে নেবেন এবং ব্যবহার করবেন। না পেলে প্রতিবার হটডগ ধরার পর খুব ভালভাবে হাত ধুয়ে নেবেন।

হট ডগ ভাজা হচ্ছে

কিভাবে করবেনঃ

১. হট ডগটা একটা টিস্যু পেপারের উপর নিন। রুলার দিয়ে দৈর্ঘ্য মেপে নিন, নোট নিন। ফিতা দিয়ে বেড় মেপে নিন, নোট নিন।

২. এবার  প্রায় ১ ইঞ্চি পুরু করে বেকিং সোডা ঢালুন টিফন বক্সের মধ্যে।

৩. হট ডগটি রাখুন বেকিং সোডার উপর এবং উপরে আরও ১ ইঞ্চি পুরু বেকিং সোডা দিয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন যেন হট ডগটি বক্সের ঠিক মাঝখানে থাকে, যেন চারপাশটা বেকিং সোডা দিয়ে ঢাকা পড়ে যায়। ভালভাবে ঢাকনা এঁটে দিন।

৪. বাসার ছায়াযুক্ত যায়গায় রেখে দিন এক সপ্তাহ।

৫. এক সপ্তাহ পরে টিফিন বক্স খুলুন এবং বেকিং সোডা গুলি ময়লার ব্যাগে ফেলে দিন। ভালভাবে হটডগ ঝেড়ে নিন যেন সব বেকিং সোডা ঝরে যায়।

৬. হটডগের দৈঘর্্য এবং বেড় মাপুন আবার। নোট নিন।

৭. টিফিন বক্সটি ভালভাবে ধুয়ে নিয়ে শুকিয়ে নিন খুব ভালভাবে। এবার ২ নম্বর থেকে ৬ নম্বর প্রক্রিয়াটি আরেকবার করুন।

৮. আপনার মমি বানানো হয়ে গেল। এবার মমিটির জন্য একটি কফিন বানিয়ে পিরামিডে রেখে দেয়াটা আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে!

কিভাবে কাজ করেঃ

প্রাচীন মমি বানানো হত একটি প্রাণীর মৃতদেহ থেকে সব পানি বের করে নিয়ে এসে। পানিহীণ পরিবেশে খুব কম অণুজীবই বসবাস করতে পারে বা খাদ্য গ্রহন করতে পারে। ফলে এতে পঁচন ধরেনা, যেটা হল সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য। সেজন্য দেখবেন মমিগুলো দেখতে কেমন শুষ্ক হাড় এবং চামড়ার অবশেষ। এই পরীক্ষায় বেকিং সোডা হট ডগ থেকে সবগুলি পানির ফোঁটা শুষে নেয়। তাতে এক সপ্তাহ পর হট ডগের আকার এবং দেখতে পরিবর্তন হয়ে যাবে। দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে গন্ধও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, অনেকটা বাজে একটা গন্ধ পাবেন। সেজন্য মিশরীয়রা সুগন্ধী ব্যবহার করত। আবার প্রথম সপ্তাহের চেয়েও আকারটি আরও কমে যাবে দ্বিতীয় সপ্তাহে। তবে আকার কমে যাওয়ার হারটা প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে কম হবে। কারন প্রথম সপ্তাহেই বেশিরভাগ পানি বেকিং সোডা শুষে নেবে। যদি দেখেন দ্বিতীয় সপ্তাহেও বেশ ভাল পরিমান আকার কমেছে তবে প্রক্রিয়াটি আরও কয়েক সপ্তাহ করে দেখুন, যতদিন পর্যন্ত আকার আর পরিবর্তন হচ্ছেনা। কয়েকধরনের হটডগ নিয়ে পরীক্ষা করে আকার পরিবর্তনের সময় দেখুন। হটডগের পানির পরিমান এবং মাংসের গঠনের উপর নির্ভর করবে মমি বানানোর সময়।

হয়ে গেল নিজের তৈরি মমি বানানো। আপনিও এখন নিজেকে প্রাচীণ মিশরের একজন মমি কারিগর ভাবতে পারেন। আর কি কি ভাবে প্রাচীণ লোকজন মমি বানাতেন সেটা খুঁজে দেখতে পারেন।

সতর্কতাঃ

মমি বানানো হটডগটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। সাধারন ময়লার ব্যাগে ফেলে দিন। হাত ধুয়ে ফেলুন প্রতিবার মমি ধরে।

লেখাটি 543-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading