পাস্তুরের পর থেকে …
সময়কাল ১৮৬৭।জীবাণুমুক্ত শল্যচিকিৎসার যুগ শুরু হয় যোসেফ লিস্টার এর হাত ধরে। পাস্তুরের কাজের দিকে নজর রাখছিলেন লিস্টার আর সেই সূত্রেই শল্যচিকিৎসার পূর্বে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে তা জীবাণুমুক্ত করার লক্ষ্যে ফেনলে চুবিয়ে নেন। তাঁর এই চিন্তাশীলতা শল্যচিকিৎসা পরবর্তি সংক্রমণ এর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দেয় এবং শল্যচিকিৎসা আরো বেশি রোগী-বান্ধব হতে থাকে। অনেকের মতে লিস্টার ‘আধুনিক জীবাণুক্রিয়ানিরোধ প্রক্রিয়া’ বা ‘মডার্ন অ্যান্টিসেপ্সিস’ এর জনক।
![](https://i0.wp.com/www.cliftonrfchistory.co.uk/internationals/england/penny/C9.jpg)
সময়কাল ১৮৭৭। জন টিন্ড্যাল ফ্র্যাকশানাল স্টেরিলাইজেশানের বা টিন্ড্যালাইজেশান এর ওপর তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এ বছর। অটোক্লেভিং প্রক্রিয়ার পূর্বে এটিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় জীবানুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া। জন টিন্ড্যাল তাঁর গবেষণায় দেখান যে, তাপ প্রতিরোধি উপাদান যেমন স্পোর-ই পঁচন এর জন্যে দায়ী। আর এটা আবারো প্রমাণ করে যে ‘স্বতঃস্ফুর্ত জন্ম’ বা স্পন্টেইনিয়াস জেনারেশান অসম্ভব ।
![](https://i0.wp.com/news.bbcimg.co.uk/media/images/55631000/jpg/_55631014_h4200214-john_tyndall,_irish_physicist-spl.jpg)
সময়কাল ১৮৮০। মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় ম্যালেরিয়া রোগের পরজীবি খুঁজে পান আলফোনসে লেভেরান। পরবর্তিতে ১৮৯৮ সালে রোনাল্ড রস আবিষ্কার করেন যে ম্যালেরিয়া পরজীবি মানুষে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টির জন্যে দায়ী।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2021/07/image-3.jpeg?resize=230%2C251&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.wiki8.com/uploadfiles/ZoomImg/2009-7/2009723165518734.jpg.jpg)
আলফোনসে লেভেরান, মানুষের লোহিত কণিকায় ম্যালেরিয়া পরজীবি আবিষ্কার করেন
সময়কাল ১৮৮৪। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান গ্রাম বিভিন্ন ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে কোষ প্রাচীরের গঠনের উপর ভিত্তি করে আলাদা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা গ্রাম স্টেইনিং নামে আমাদের সবার কাছে পরিচিত। গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতি কোন ক্ষতে বা সংক্রমণে উপস্থিত ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষতি করার সামর্থ্যের তীব্রতা বুঝতে সাহায্য করে কারণ গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ার বহিঃঝিল্লি এদের গ্রাম পজিটিভ ব্যাক্টেরিয়ার চেয়ে নিরাপদে রাখে এবং এই বহিঃঝিল্লি ‘লিপিড-এ’ নামক টক্সিন বহন করে যা সেপ্টিক শক ঘটাতে পারে।
![](https://i0.wp.com/www.textbookofbacteriology.net/gram_pos_cw1.jpg)
গ্রাম নেগেটিভ কোষ প্রাচীরের গঠন
১৮৮৪ সালের আরো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া। ম্যাক্রোফেইজ, নিউট্রোফিল এবং অন্যান্য কোষ নিয়ে গঠিত শরীরের প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এ প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন রাশান জীববিজ্ঞানী, ইলায়া মেচনিকফ। এই প্রক্রিয়াটি প্রোটোজোয়াতেও পরিলক্ষিত হয় । প্রোটোজোয়ার পুষ্টিতে ভূমিকা রাখে এই পদ্ধতি।
![](https://i0.wp.com/cf067b.medialib.glogster.com/media/d9/d93dae7dc4aae09c19832b38014e5cb21c4268cf38d57c4e07bee01abd5b7be5/metchnikoff.jpg)
![](https://i0.wp.com/dictybase.org/Multimedia/phagocytosis/new_pa4.jpg)
সময়কাল ১৮৮৫। অণুজীববিজ্ঞানের ছাত্র অথচ Escherichia coli এর কথা শোনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। তাই ধরে নেওয়া যায় আপনিও শুনেছেন , হয়তোবা নিজ হাতেই পরম মমতায় তাকে জন্মাতে দিয়েছেন দুধ কলা দিয়ে ( মানে কালচার মিডিয়ার কথা বলছি); সেই E. coli আবিষ্কার করেন থিয়োডোর ইশেরিক। পরবর্তিতে তাঁর নামেই নামকরণ করা হয় এর। অন্য যে কোন ব্যাক্টেরিয়ার চেয়ে এ পর্যন্ত E.coli সম্পর্কে জানা গেছে সবচেয়ে বেশি । তাই একে মডেল বা আদর্শ অণুজীব হিসেবে গবেষণাতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হলে আপনার শত্রুদের তালিকায় আপনি খুঁজে পাবেন E.coli আর তার বন্ধুদের। ওহ ! আরেকটা কথা বলতে তো প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম। E. coli আপনাকে খুব ভালোবাসে আর আপনার সাথে আত্মীয়তা করতে চায় বলে আপনার অন্ত্রকে তার বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। আপনি কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই দুধ কলা দিয়ে একে পুষছেন বস !
![](https://i0.wp.com/i.dailymail.co.uk/i/pix/2012/09/03/article-2197533-14D03B2C000005DC-491_964x907.jpg)
![](https://i0.wp.com/www.fotosimagenes.org/imagenes/theodore-von-escherich-2.jpg)
![](https://i0.wp.com/www.bacteriainphotos.com/cultivation%20media/BA%20larger/columbia%20sheep%20blood%20agar.jpg)
ব্লাড আগারে E. coli এর কলোনী
সময়কাল ১৮৯০। জার্মান চিকিৎসক রবার্ট কোখ রোগাক্রান্ত পশু থেকে Bacillus anthracis পৃথক করার মাধ্যমে জার্ম-থিওরি( রোগ সৃষ্টির জন্যে জীবাণু দায়ী) প্রমাণ করেন। এছাড়াও তিনি অণুজীব এবং রোগের সম্পর্ক দেখাতে ৪ টি মানদন্ড ঠিক করে দেন যা কোখের স্বীকার্য নামে পরিচিত। তিনি অ্যানথ্রাক্স এর রোগ সৃষ্টি চক্র আবিষ্কার করেন। কলেরা আর যক্ষার জীবাণুও আবিষ্কার করেন তিনি। কলেরা মহামারি দমনে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করেন রবার্ট কোখ।
অণুজীববিজ্ঞানের কলাকৌশলগুলোর মাঝে কোখের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান কালচার-মিডিয়াতে আগার-আগার এর ব্যবহারের প্রচলন। আগার-আগার এর ব্যবহার মিডিয়াকে দৃঢ় গঠন দেয় যা ব্যাক্টেরিয়া কালচারে ও পৃথকীকরণে বিশেষ সুবিধা এনে দেয়। যদিও আগার-আগার ব্যবহারের ধারণা এককভাবে কোখের কাছ থেকে আসেনি তবুও সঠিক ভাবে একে ব্যবহার করতে পারার কারণে রবার্ট কোখকেই এই আবিষ্কারের জন্যে সম্মান জানানো হয়। (চল্বে)
Leave a Reply