সময়কাল ১৯৭৭। ডিএনএ এর সিকোয়েন্স বের করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ডব্লিউ গিলবার্ট ও এফ স্যাঙ্গার।
সময়কাল ১৯৮৩। ক্যারি মালাস পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশান আবিষ্কার করেন যার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ডিএনএ এর সংখ্যাবৃদ্ধি করে তা পরবর্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা যায়। সন্দেহভাজন অপরাধীর ডিএনএ এর নমুনাকে বর্ধিত করে অপরাধী সনাক্তকরণে দারুণ কাজ করে এই পদ্ধতি। এছাড়াও অণুজীব সনাক্তকরণে এবং সিঙ্গল জীন ডিজর্ডারের কারণে যে সব রোগ হতে পারে তা সনাক্তকরণেও এই পদ্ধতি অনেক ভাল ফলাফল দেয়।
১৯৮৩ সালেই লুক মন্টেইগনার ও রবার্ট গ্যালো এইডস এর জীবাণু হিউম্যান ইম্যুনোডিফিসেন্সি ভাইরাস বা এইচ. আই. ভি. আবিষ্কার করেন।
সময়কাল ১৯৯৫। ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্যে দায়ী Haemophilus influenzae এর সম্পূর্ন জিনোমিক সিকোয়েন্স আবিষ্কার করে The Institute of Genomic Research ( TIGR)।
১৯৯৫ সালেই ম্যালেরিয়া পরজীবি Plasmodium falciparum জীনোমিক সিকোয়েন্স আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়।প্রতিবছর ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় আর দেড় থেকে আড়াই মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয় ম্যালেরিয়াতে ভুগে। তাই ম্যালেরিয়া পরজীবির জীনোমিক সিকোয়েন্স আবিষ্কারকে গুরুত্বের সাথেই নেন বিজ্ঞানীরা। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০০২ সালে Sanger Institute, TIGR, ও Stanford University এর সমন্বিত কাজের ফলে Plasmodium falciparum জীনোমিক সিকোয়েন্স উন্মোচিত হয়।
সময়কাল ১৯৯৮। ম্যালেরিয়ার চেয়েও ভয়ংকর যক্ষা রোগের কারণ Mycobacterium tuberculosis এর জীনোমিক সিকোয়েন্স আবিষ্কৃত হয় এ সময়ে। যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার আর এদের অকার্যকারিতা থেকে মুক্তি পেতে নতুন অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই আবিষ্কারের ফলে। ফলে যক্ষার বিরুদ্ধে ভাল প্রতিরোধ গড়ে তোলা আর ঔষধ তৈরিতেও আরো অগ্রগামী হওয়া সম্ভব হবে ।
সময়কাল ২০০৮। আমেরিকার National Institutes of Health এর উদ্যোগে Human Microbiome Project এর কাজ শুরু হয়। সুস্থ এবং অসুস্থ মানুষের শরীরে উপস্থিত সকল অণুজীবের সনাক্তকরণ ও তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো জানার লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা। মানুষের শরীরে স্বাভাবিক অণুজীবগোষ্ঠীর পরিবর্তনের সাথে মানব স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নির্ধারণই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ৫ বছর ব্যাপী এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৩ সালে।
সময়কাল ২০১০। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অসাধারণ এক নিদর্শন দেখালেন J. Craig Venter Institute এর গবেষক Craig Venter ও তাঁর সহকর্মীরা সিনথেটিক ব্যাক্টেরিয়া তৈরির মাধ্যমে। ১৫ বছর ধরে চলা তাঁদের গবেষণার ফলাফলে তাঁরা দেখান যে জীনোমকে কম্পিউটারে ডিজাইন করা যায়, ল্যাব এ রাসায়নিকভাবে প্রস্তুত করা যায় আর গ্রাহক কোষে একে প্রবেশ করালে সেই কৃত্রিমভাবে তৈরিকৃত জীনোমই নতুন কোষ তৈরির নির্দেশনা দিতে পারে। কৃত্রিমভাবে তৈরি জীনোম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন কোন কোষ তৈরি করতে সক্ষম এই ব্যাক্টেরিয়াটির নাম Mycobacterium mycoides যা একটি নতুন স্পিসিসও বটে যার জন্ম বস্তুতঃ কম্পিউটারে। তবে সিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়ার জন্ম তাঁদের মূল গবেষণার শেষ নয় ,শুরু কেবল।
বর্তমান সময়কে বলা হয় জীববিজ্ঞানের জন্য স্বর্ণযুগ।প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আসছে বছরগুলোতে পৃথিবীকে আরো অনেক নতুন বিষ্ময় উপহার দেবে জীববিজ্ঞান আর তাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে অণুজীবদের নিয়ে গড়া বিজ্ঞানের এই শাখা-অণুজীববিজ্ঞান,এমনটিই সবার প্রত্যাশা । (সমাপ্ত)
Leave a Reply