পানি এবং চায়ের পর বিয়ার হল পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। কিন্তু বিয়ারের কিছু প্রাচীন বিষয় খুব মজার। বলি।
বহু বছর আগে থেকেই বিয়ার মানুষের পছন্দের পানীয় হিসেবে চলে এসেছে। যেমন, প্রাচীন মিশরে ফারাওগণ (সাম্রাজ্যের সম্রাট) প্রতিদিন নিয়মিত বিয়ার খেত বলে জানা যায়। সেইসময়ের সাধারন খেটেখাওয়া মানুষদের মধ্যেও আদরনীয় ছিল বিয়ার। এমনকি বাচ্চারাও খেত। প্রাচীন মিশরিয় বিয়ার ছিল মিষ্টি এবং পুষ্টিকর। শোনা যায় পিরামিড শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেয়া হত বিয়ারের মাধ্যমে। প্রচুর শর্করা থাকায় বিয়ার দিত কাজ করার শক্তি।
বার্লির তৈরি রুটি থেকে সাধারনত বিয়ার তৈরি হত এবং এই শিল্পে কাজ করতো মূলতঃ মেয়েরা। তাতে মেয়েদের কিছু আয়-রোজগার হত। কিন্তু ব্যাপারটার একটা চমকপ্রদ দিক আছে- কিছু বছর আগে আবিস্কৃত হয়েছে যে প্রাচীন মিশরের বিয়ারে টেট্রাসাইক্লিন নামক এন্টিবায়োটিক এর উপস্থিতি ছিল। বিশেষ করে নুবিয়ানরা যেই বিয়ার বানাতো তাতে। নুবিয়ান হল দক্ষিণ মিশরিয় জাতি যাদেরকে এলিট ফোর্স হিসেবে যুদ্ধে (২০৪০-১৭৮০ খ্রীষ্টপূর্ব) ব্যবহার করা হত প্রাচীন মিশরে। তো এই নুবিয়ানদের মমির হাড়ে টেট্রাসাইক্লিন নামক এন্টিবায়োটিক অধিক ঘনত্বে পাওয়া গেছে।
নুবিয়ান মানুষ
টেট্রাসাইক্লিন একটি ব্রড স্পেক্ট্রাম এন্টিবায়োটিক যেটা অনেক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেই কাজ করে। আর এই এন্টিবায়োটিক তৈরি করে মাটিতে থাকে এমন Streptomyces প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া। নুবিয়ানরা নিশ্চয়ই খুব সচেতনভাবে বিয়ার তৈরর সময় এই ব্যাকটেরিয়াই চাষ করতো। কিন্তু এন্টিবায়োটিক সম্বন্ধে কোন ধারনাই ছিলনা তাদের। বিয়ার যেমন দূষিত পানির চেয়ে স্বাস্থ্যকর ছিল, তেমনি টেট্রাসাইক্লিন থাকার কারনে সেটা খেলে রোগবালাই কম হওয়ারই সম্ভাবনা ছিল।
১৯২৮ সালে আলেক্জান্ডার ফ্লেমিং পেনিসলিন নামক এন্টিবায়োটিক আবিস্কার করে দেখান যে একটা জীব থেকেই আমরা অন্য জীব-নিধক তৈরি করতে পারি যা ঔষধ হিসেবে কাজে লাগানো যাবে। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কার পান। মজার বিষয় হলো- এর অনেক আগে থেকেই প্রাচীন মিশরিয়রা নিজেদের অজান্তেই এন্টিবায়োটিক তৈরি করে খেয়ে আসছিল বিয়ারের সঙ্গে।
Leave a Reply