বিজ্ঞানী, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন কত সহজে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, টিউমার শনাক্ত করতে পারেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বড় ধরণের এজেন্ডার মাঝে ক্যানসার একটি।
এখন পর্যন্ত ডাক্তারেরা তিনটি উপায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা করে থাকেন। প্রথমটি হল ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যানসারকে আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় করা, অন্যটি তেজস্ক্রিয়তা বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে একটু একটু করে কমিয়ে আনা। আরেকটি যেটি আছে সেটি হল ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু কেটে ফেলে দেয়া।
এখানে প্রথম প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীরপ্রক্রিয়া। অন্যদিকে পরের দুটি উপায় চিকিৎসকরা ব্যবহার করে থাকেন বেশি কিন্তু এই প্রক্রিয়া সবসময় সফল হয় না। কারণ এটা বলা খুব কষ্টকর যে ঠিক কোন জায়গা থেকে টিউমার কোষ শুরু হয়েছে এবং কতটা জায়গা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। শরীরে কোনো কোষ দেখতে ভাল মনে হলেও সেখানটা টিউমারের দূষণে দূষিত হয়ে থাকতে পারে। আবার এই চিকিৎসা প্রয়োগের ফলে ভাল কোষও কাটা যেতে পারে।
এই সমস্যার কিংবা সীমাবদ্ধতার দিন বোধহয় শেষ হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন এমন এক চশমা বা গগলস যেটি চোখে লাগিয়ে নিলে দেখা যাবে শরীরের কোন কোন কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। এতে করে শুধু ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলোকে সরিয়ে নেয়া সহজতর হবে। এখনকার চিকিৎসাপ্রযুক্তির যুগে ক্যান্সারের অপারেশন মাঝে মাঝে একাধিক বার করতে হয়। গগলস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে এই একাধিক বার অপারেশন করার হার একদম কমে যাবে। একবারের চেষ্টাতেই সরিয়ে ফেলা যাবে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ। যার ফলে খরচও কমে যাবে বেশ।
গবেষক দলের প্রধান ড. রায়ান ফিল্ডস বলেন “সর্বোপরি এই গগলস প্রযুক্তি আশ্চর্যজনক। যেন চোখের মাঝে একটা মাইক্রোস্কোপ যেটা অপারেশন কক্ষে সাহায্য করছে।”
চিত্র: বিশেষ ধরণের চশমায় দেখা ক্যানসার কোষের কলোনি। যেগুলো আঠার মত লেগে আছে।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীকে একটি ইনজেকশন দেয়া হবে- যে ইনজেকশনে থাকবে বিশেষ ধরনের রঞ্জক পদার্থ। রঞ্জক পদার্থটি একধরণের পেপটাইড প্রোটিন। এই রঞ্জক পদার্থ কোষকে বিশেষ রংয়ে রঞ্জিত করবে। সাধারণ কোষ যে রং ধারণ করবে ক্যানসার বা টিউমার কোষ ভিন্ন রং ধারণ করবে। এই দুই রং যে কম্পাঙ্কের তরঙ্গ নিঃসরণ করবে সে তরঙ্গ আবার মানুষের খালি চোখে সংবেদনশীল নয়। তাই খালি চোখে বোঝা যাবে না দুই রংয়ের পার্থক্য। সে জায়গাতে ব্যবহার করা হবে বিশেষ ধরণের চশমাটি। যে চশমাটি সেই বিশেষ ধরণের তরঙ্গের জন্য সংবেদনশীল। যেটি চোখে লাগালে বোঝা যাবে টিউমারে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো কোথায় অবস্থান করছে। এই গবেষণা প্রজেক্টে জড়িত ড. স্যামুয়েল বলেন “এই বিশেষ ধরণের চশমাটি একটি বর্ধিত দৃশ্য তৈরি করে যার ফলে চিকিৎসকরা অল্প সময়ের মাঝেই আঠার মত লেগে থাকা ক্যানসার কোষ খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
চিত্র: রঞ্জক পদার্থ সামনে রেখে বিশেষ চশমা পরিহিত গবেষক ড. স্যামুয়েল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই প্রযুক্তি যুক্ত হলে ক্যানসার চিকিৎসায় খরচ কমবে প্রায় ৩০ শতাংশ। খরচের ব্যাপার যাই হোক, ক্যানসার চিকিৎসা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
তবে এই পদ্ধতির কিছুটা সীমাবদ্ধতাও আছে। এর দ্বারা শুধু স্কিন ক্যানসার ও স্তন ক্যানসারের চিকিৎসাই করা যায়। অন্যান্যদের বেলায় এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করা যায় না। তবে গবেষক ড. স্যামুয়েল এই ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী যে অচিরেই এই প্রযুক্তিকে উন্নত করে এমন উপায় বের করা হবে যাতে অন্য ধরণের ক্যানসার যেমন প্রোস্টেট ক্যানসার, ফুসফুস ক্যানসার, কোলন ক্যানসারের মত সমস্যা সমাধান করা যাবে।
সাথে সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে এরকম কোষকেও শনাক্ত করা যাবে। এই যন্ত্রের সাহায্যে ক্যানসার কোষকে কেটে ফেলার জন্য আরেকদল গবেষক তৈরি করেছেন বিশেষ ধরণের কাটার বা ছুরি।
তাহলে সেদিন মনে হয় খুব বেশি একটা দূরে নয় যেদিন ক্যানসারের মত দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে উন্নত দেশের পাশাপাশি উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশেও এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হবে।
তথ্যসুত্র:
বিবিসি; http://www.bbc.com/news/health-26954138
ছবিসুত্র: বিবিসি।
Leave a Reply