বই পরিচিতি: বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

(শুরুতেই বলে নেই এই রিভিউটা লেখক আব্দুল গাফফার রনির লেখা  এবং প্রথমা প্রকাশন হতে প্রকাশিত  “বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট” এর প্রথম সংস্করণের রিভিউ। তাই পরবর্তী কোনো সংস্করণে হয়তো কিছু পরিবর্তন থাকলে রিভিউর কিছুটা অমিল হতে পারে।) 

উৎসর্গ

“বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট” বইটা অনেক আগ্রহ নিয়েই পড়েছিলাম। বইটি পেন্সিল দিয়ে অনেক দাগিয়ে দাগিয়েই পড়েছি,  এমনকি বইয়ের পৃষ্ঠা বুকমার্ক করার জন্য একটি বেলিফুল রাখতাম, বইয়ের ভিতর বেলীফুলটা শুকিয়েও ফেলেছি। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর গবেষণা ও অবদান সম্পর্কে লেখা হয়েছে এই বইটিতে। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর একটি উক্তি- “যারা বলে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা হয়না, তারা হয় বাংলা জানে না, না হয় বিজ্ঞান বুঝে না”, এই উক্তিটি প্রতি উৎসাহিত হয়েই আমি বিজ্ঞান ব্লগে লেখালেখি করতাম। তাছাড়া এই উক্তিটি বিজ্ঞান ব্লগ পিন করে রাখতো। তাই এই উক্তিটির প্রতি আমার এক অন্যরকম আবেগ রয়েছে। বিজ্ঞান ব্লগের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের সেরা লেখক হিসেবে বইটা পেয়েছিলাম। লেখককে বইটা পড়ে রিভিউ দেওয়ার কথা দিয়েছিলাম। তাই এই রিভিউয়ের উৎসর্গ করলাম সকল পাঠক এবং লেখক আব্দুল গাফফার রনিকে। 

বই পর্যালোচনা

আমাদের বাংলার অনেক বড় বিজ্ঞানীর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর গবেষণা এবং অবদান সম্পর্কে- “বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’’ বইটিতে অনেককিছুই আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে ১৮ টি অধ্যায় রয়েছে। পাঠকের উদ্দেশ্যে বলছি শুধুমাত্র এই বইটি ছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট সম্পর্কিত কোনো বই পাবেন না। লেখক আব্দুল গাফফার খুব সহজ সরল ভাষায় লিখেছেন। বইটিতে বেশি বড় করে কোনো বাক্য লেখা হয়নি। তাই এই বইটি পড়তে আমি একটুও বিরক্তি বোধ করিনি। লেখক পাঠকদের আগ্রহ ধরে রাখতে এবং বুঝার সুবিধার্থে বইয়ের শুরুর দিকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা এই দুইজনের সম্পর্কে লিখেছেন। 

বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট তৈরি হলো মহাকাশে

লেখকের একটা ভালো গুন আছে সেটা হলো তিনি অল্প কথায় অনেক কিছু বুঝাতে পারেন। বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট বুঝানোর পাশাপাশি এই বইতে তিনি সুন্দরভাবে ইতিহাসসহ অনেককিছুই বুঝিয়েছেন। যেমন – কণা, তরঙ্গ, কৃষ্ণ বস্তুর বিকিরণ, আইনস্টাইনের ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট, বোসন কণা এবং ফার্মিওন কণা, সুপার ফোটন, বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট, পরমশূন্য তাপমাত্রা, বোসন কণা, ফার্মিওন কনা, ম্যাক্সওয়েল ও বোলজম্যান গবেষণার কিছু কথা, ভিনের সূত্র নিয়ে কিছু আলোচনা, কিছু হাইপোথিসিস, তাপগতি বিদ্যা ও এনট্রপি সম্পর্কিত আলোচনা, ইত্যাদি আরো বিভিন্ন গবেষণা । 

বইটার মান সম্পর্কে আরেকটা কথা বলতে চাই। এই বইটির সুপারিশপত্রটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মোরেনো ভ্যালি কলেজের অধ্যাপক ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী দীপেন ভট্টাচার্য। দীপেন ভট্টাচার্যের সুপারিশপত্র দিয়েই বইয়ের মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

বইয়ের যেই অংশগুলো স্মরণীয়:

বাংলার এই দুজন মহান বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা যে বন্ধু ছিলো তা এতদিন জানতাম না । এই বই থেকেই প্রথম জানলাম। বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। 

সত্যেন্দ্রনাথ বসু নোবেল পুরস্কার পাওয়ার উপযোগী ছিলেন, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি ১৯৯৫ সালেই নোবেল পদক পেতেন। যদিও তিনি নোবেল পুরস্কারের চেয়ে বড় সম্মান পেয়েছেন। সেটা হলো বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সকল কনার অর্ধেক কণা তার নাম নামকরণ করা হয়েছে। সেটা হলো বোসন কণা । যতদিন রবে এই বিশ্ব ততদিন বিশ্বের অর্ধেক কণা বোসন কণার নাম টিকে থাকবে। এটা নোবেলের চেয়ে অনেক বড় সম্মান।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু আরো বিখ্যাত হতে পারতেন, কিন্তু তার অতি গুরুভক্তির কারণে সেটা হলো না। তিনি বস্তুর স্পিন ধারণার প্রবক্তা হিসেবে স্বীকৃত হতে পারতেন। কিন্তু আইনস্টাইন কোয়ান্টাম ধারণাকে পছন্দ করতেন না বলে সেটা হতে দিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে বস্তুর স্পিন ধারণা ব্যাপক প্রসার পেলেও সেই মহান গবেষণার সীকৃতি সত্যেন্দ্রনাথ বসু পান নি।

তাছাড়া কোনো মৌলের ফার্মিওন সংখ্যা বের করে কণাটা ফার্মিওন কণা নাকি বোসন কণা, তা বের করার পদ্ধতিটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। 

সত্যেন্দ্রনাথ বসুই যে প্রথম স্পিন ধারণার প্রবক্তা ছিলেন-  এই যুক্তি প্রমাণ করার কিছু চেষ্টার ইতিহাস আমার ভালো লেগেছে। এই বইতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা সেই চিঠিটি দেখানো হয়েছে। তাছাড়া বইয়ের বিভিন্ন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আমার ভালো লেগেছে। ইত্যাদি আরো অনেক অংশ ভালো লেগেছে।

আর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সেই উক্তি- “যারা বলে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা হয়না, তারা হয় বাংলা জানে না, না হয় বিজ্ঞান বুঝে না”

সমালোচনা

শুধু শুধু বাক্যের পর বাক্য পড়লে সব পাঠকই কিছুটা বিরক্ত বোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এর মানে এই নয় যে  লেখক বইতে লেখক আব্দুল গাফফার “বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’’ বইটিতে মজা করেন নি। এই বইতে তিনি কিছু বিনোদনমূলক বাক্য লিখেছেন বটেই, কিন্তু বিনোদনের তুলনায় আবেগ জাতীয় লেখা আর সরাসরি তাত্ত্বিক বিষয়ে লিখছেন। যদিও অনেকের কাছে এই পদ্ধতিটাই ভালো মনে হতে পারে যে – বেশি কথা বলে সরাসরি তাত্ত্বিক বিষয়ে আলোচনা করাই ভালো। তবুও এটা বললাম কারণ এটা আমার একান্ত মতামত। 

বইয়ের দাম নিয়ে কোনো সমালোচনা করতে চাই না, কারণ এই বইটির মান অনেক। বইটি রকমারিতে ২৫১ টাকা আর প্রথমায় ২২৪ টাকা। দামটা বাংলাদেশে প্রায় তেলের দামের সমান। তাছাড়া আপনি যদি বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট সম্পর্কে জানার জন্য ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কোর্স করতে চান তাহলে সেখানে কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হবে এবং সেগুলো হবে ইংলিশে।  তাই আমার মতে দামটা ঠিক আছে। 

১৭৫ পৃষ্ঠার এই বইতে মাত্র ৪ টি  শব্দের বানান ভুল পেয়েছি। যদিও এই চারটি ভুলের জন্য চারটি বাক্য পড়তে কোনো অসুবিধা হয়নি। বইটির জন্য আমি ৯৮% পয়েন্ট দিলাম। 

অবশেষে বলতে চাই- এগুলো সব আমার একান্ত মতামত ও পর্যালোচনা। 

লেখাটি 310-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. রহমাতুল্লাহ আল আরাবী Avatar
    রহমাতুল্লাহ আল আরাবী

    অনেক ভাল লিখেছো।

  2. বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট বইখানি অত্যন্ত সহজ বাঙলায় লেখা হয়েছে। লেখক জনাব আব্দুল গাফফার রনি খুবই পরিশ্রমী ও উচ্চমানের বিজ্ঞান লেখক। বাঙলা ভাষায় এই বিষয়ের ওপর লিখিত খুব কম বই মেলে। লেখক এমন একটি অপরিচিত বিষয় খুব সাবলীল ভাবে নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা বাঙালি বিজ্ঞানপ্রিয় পাঠকদের অনুসন্ধিৎসু মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। আমি এই লেখকের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading