ডিজনি স্টুডিও প্রতি বছর একটি করে ডকুমেন্টারি তৈরি করছে। কোনো কোনো বছর দুটি করেও করছে। প্রতি বছর Earth Day বা ধরিত্রী দিবসে রিলিজ হয় একটি করে ডকু ফিল্ম। ডিজনির এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ডিজনির কাজ মানেই ক্লাসিক, আমি ডিজনির অন্যতম ভক্ত। ডিজনি স্টুডিওর করা সকল কিছুই আমার ভাল লাগে। হোক সেটা মুভি, এনিমেশন, ফেইরি বই, কিংবা ডকুমেন্টারি।
এই ডকুমেন্টারির সবটুকু সময়ই আবর্তিত হয়েছে একটি ছোট নব জন্ম নেয়া এক শিম্পাঞ্জিকে কেন্দ্র করে। ডকুতে তাকে ডাকা হয় ‘অস্কার’ নামে। মোটা দাগে বলতে গেলে অস্কারের ছোট জীবনের কিছু ঘটনাবহুল চিত্র এতে স্থান পেয়েছে। এই হিসেবে একে নায়ক বলা যেতে পারে। তবে দেখতে এরকম মনে হলেও ডকু ফিল্ম তার নামকরণের সার্থকতা বজায় রেখেছে। এই তথ্যচিত্রে ওঠে এসেছে শিম্পাঞ্জিদের জীবন, চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া, ভয়, আক্রমণ, সংগ্রাম করে টিকে থাকা, বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে নিজের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই তথ্যচিত্রে শিম্পাঞ্জীদের জীবনের অনেকখানিই ওঠে এসেছে। স্থান পেয়েছে শিম্পাঞ্জীদের দুঃখ কষ্ট সহ অন্যান্য মানবিক দিকগুলো। ব্যাপারটা এরকম অস্কার নামের শিশু শিম্পাঞ্জীর জীবনের চারিদিকে চোখ ফেলে ফেলে শিম্পাঞ্জী সমাজের পুরো ব্যাপারটা তুলে আনা হয়েছে।
>>> || এক শিম্পাঞ্জী মায়ের কোলে আছে এক শিশু, তার নাম দেয়া যাক অস্কার। সকল কাজেই অস্কার তার মায়ের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। প্রধান কাজ খাওয়া দাওয়া। স্বাভাবিক নিয়মে মাই করে দিতো সেই খাবারের ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বিপদে সতর্কতা, আত্মরক্ষা এইসব দায়িত্ব মা তার প্রশস্ত কাঁধে নিয়ে নিতো। শিম্পাঞ্জীদের এলাকা নির্ধারিত থাকে। এক এলাকার শিম্পাঞ্জী অন্য শিম্পাঞ্জীদের এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। করলে যদি দেখে তাহলে লেগে যায় তুমুল লড়াই। আইন যেমন আছে, আইনের বরখেলাফও আছে। নানা প্রয়োজনেই আইন ভঙ্গ করে শিম্পাঞ্জীরা- হতে পারে সেটা খাবার সন্ধানের জন্য, খাবার চুরি করার জন্য, খাবার ছিনিয়ে আনার জন্য। তেমনই একদিন আসলো বিপদ, পাশের অঞ্চল থেকে বিপক্ষ শিম্পাঞ্জীদল এসে আক্রমণ করলো অস্কারদের দলে। দৌড়াদৌড়ি হুড়োহুড়ি করে কেও পালাতে পারলো, কেও পারলো না। না পেরে ব্যর্থ হয়ে যাবার দলে আছে অস্কারের মা ‘ইশা’। বিপদ শেষে অস্কার বসে আছে অস্কারের মায়ের জন্য, অপেক্ষা করছে। সে অসহায় সবকিছুতেই তার মায়ের প্রয়োজন। কিন্তু একদম ছোট অস্কারের মা মারা গেছেন আর কখনোই ফিরে আসবে না এটা সে জানে না।
অস্কারের জীবন হুমকিতে। অপেক্ষা করে করে একসময় সে তার মায়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে। এবং চাইছে অন্য কাওকে মা হিসেবে পেতে। কিন্তু কেহই তাকে সন্তান হিসেবে নেয় না। প্রায় সবারই সন্তান আছে, কেও তাকে খাবার দেয় না। হাত বাড়িয়ে কিছু নিলে তাড়িয়ে দেয়। এমতাবস্থায় অক্ষম অস্কারের জীবন আসলেই সঙ্কটে পড়ে যায়। এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে দেবতার মত অপ্রত্যাশিতভাবে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায় দলপতি ‘ফ্রেডি’। ফ্রেডি তাকে মায়ের আদরে লালন করতে থাকে।
যারা ডকুটির ভিডিও করছিলেন তাদের ভাষাতেই- এটি ছিল অসাধারণ একটি ঘটনা। এতে আমাদের মাঝে একধরণের আশার সৃষ্টি হয়। এমনটা না হলে আমরা পুরোপুরিই হতাশ হয়ে যেতাম। বিপদের মুহূর্তে অস্কারের বেঁচে থাকার যে অসাধারণ চেষ্টা তা দেখলে দারুণ লাগে। জীবনধারণে প্রয়োজনীয় সকল কিছুর যে অনুকরণ করে এতে তা আসলেই দেখার মত।
আর মোটা দাগে এই ঘটনাটি ডকুমেন্টারির মূল কথা নয়। প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিকূলতা, এদের মাঝে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলার যে চিত্র এখানে চিত্রায়িত হয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। প্রকৃতি, গাছপালা, লতাপাতা বরাবরই আমার ভালো লাগে।
এই তথ্যচিত্রের আরেকটা ছোট দিক দেখা যাবে একদম শেষে। এই তথ্যচিত্র তৈরিতে কর্মীদের কী কী শ্রম দিতে হয়েছে, কেমন ধরণের অসুবিধার শিকার হতে হয়েছে, জীবন বিসর্জন দেবার মত কত কত বিপদ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সর্বোপরি বৈরি পরিবেশে শুটিং করা বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। এবং মানুষের ভাষা বুঝতে অক্ষম শিম্পাঞ্জীদের উপযুক্ত চিত্র ধারণ করা আরও চ্যালেঞ্জ, এরা তো এক জায়গায় স্থির থাকে না! একটা উপভোগ্য তথ্যচিত্র দেখলে এই ক্যামেরার পেছনের মানুষদের প্রতিও শ্রদ্ধা জাগে।
অনেকদিন ধরেই এই ডকু ফিল্মটি দেখব দেখব করছিলাম। সুযোগের অভাবে নামানো হয়নি। এবার সম্প্রতি শিম্পাঞ্জীদের নিয়ে টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের তৈরি করা হিট সিনেমা “ডন অব দ্যা প্ল্যানেট অব দ্যা এপস” এবং এর আগের সিক্যুয়েল “রাইজ অব দ্যা প্ল্যানেট অব দ্যা এপস” দেখে দ্রুত এই ডকুমেন্টারি দেখে শেষ করি। মুভিতে সায়েন্স ফিকশনের আদলে যা যা দেখানো হয়েছে তার থেকে দূরে সরে গিয়ে বাস্তব শিম্পাঞ্জীদের খুঁজতে, শিম্পাঞ্জীদের সত্যিকার জীবন খুঁজতে এই ডকুমেন্টারি দেখা।
চিত্র : ডন অব দ্যা প্লানেট অব দ্যা এপস এর পোস্টার।
পুনশ্চ : ১৯৬০ সালের দিকে সাঁরা বিশ্বে প্রায় এক মিলিয়নের মত শিম্পাঞ্জী ছিল পৃথিবীতে। কিন্তু মাত্র কয়েক দশকে তার মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ টিকে আছে। যা সত্যিই আশঙ্কাজনক। জীনগতভাবে তারা আমাদের পূর্বপুরুষ। কিংবা তারা ও আমরা একই গোত্রের। আমাদের মানুষের DNA এর গঠনের সাথে সবচে বেশি মিল আছে এই শিম্পাঞ্জীদের DNA. শতকরা ৯৮ ভাগ এর মত। বিশাল অবস্থা, এরা প্রায় মানুষের কাছাকাছি কিংবা মানুষ এদের কাছের কাছাকাছি। এই ব্যাপারটাতে একধরণের শিকরের টান অনুভূত হয়। আজকের মানুষকে একদিন তাদের মতই বন্য জীবন- যাপন করতে হয়েছে। বুদ্ধিমত্তায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয়েছে, কৌশলে নিজেকে উপরে তুলে আনতে হয়েছে। আর আজকের এই আধুনিক সময়েও মানুষের করোটির ভেতর বাস করছে সেই আদিম বনমানুষের মস্তিষ্ক। তাই নিজেদের জানতে হলেও শিম্পাঞ্জীদের জানতে হয়। সেজন্য এই ডকুমেন্টারি হতে পারে একটা প্রাথমিক সোপান।
সবশেষে লিঙ্ক। যেহেতু ডকুমেন্টারি তাই ভালো কোয়ালিটিতে দেখাই উচিৎ। সাদামাটা প্রিন্টে দেখে মজাটা নষ্ট করে লাভ নেই। ১০৮০ পি এর টরেন্ট লিঙ্ক || ৭২০ পি এর টরেন্ট লিঙ্ক || যারা পিক্সেল ছাড়াও বিট-রেট ও ফ্রেম-রেট হিসাব করে ভাল ভাল অতি উন্নতমানের প্রিন্ট দেখেন তারা দেখতে পারেন এই লিঙ্কে । অনলাইনে দেখলে এই লিঙ্ক।
তথ্যসূত্র :
- উইকিপিডিয়া
- ডিজনি নেচার ওয়েবসাইট
- ভালোবাসা কারে কয় : অভিজিৎ রায়; শুদ্ধস্বর; ২০১২
Chimpanzee (2012) | |
---|---|
Rating: 7.1/10 (4,204 votes) Director: Alastair Fothergill, Mark Linfield Writer: Alastair Fothergill (original concept), Mark Linfield (original concept), Mark Linfield, Alastair Fothergill, Don Hahn Stars: Tim Allen Runtime: 78 min Rated: G Genre: Documentary Released: 20 Apr 2012 | |
Plot: A 3-months-old chimpanzee is separated from his troop and is then adopted by a fully-grown male. |
Leave a Reply