একেক অঞ্চলের মানুষ কেন একেক রকম হয়?

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

BNCC এর নাম শুনেছেন? Bangladesh national cadet core না। বরিশাল নোয়াখালি চাঁদপুর কুমিল্লা চিটাগাং ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধু এই BNCC না, এমন কথা অবশ্যই শুনেছেন, অমুক এলাকার মানুষজন সহজসরল, ওই অঞ্চলের মানুষজন পরিশ্রমী এমন অনেক কিছু। এখন ঘটনা হচ্ছে এরকম এলাকা ভিত্তিক মানুষজনকে ধরে ধরে ডেঞ্জারাস-সহজসরল কিংবা হাজারটা বৈশিষ্ট্য ধরে ক্রাইটেরিয়ায় কিভাবে ফেলে দিল? তাও শুধুমাত্র এলাকার উপর ভিত্তি করে?

এটার একটা ব্যাখ্যা কেন জানি দিতে ইচ্ছা করল। (প্রায়) বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা(এটাকে হাইপোথিসিস বলাই ভাল)। চেষ্টা করব, এমনভাবে যাতে অবৈজ্ঞানিক মানুষজনও টুকটাক বুঝতে পারে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখির এটাই প্রথম চেষ্টা, ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।

আমাদের বৈশিষ্ট্যগুলো জন্মসূত্রে আমরা পাই আমাদের পিতামাতার কাছ থেকে। আর এগুলো আমরা পাই ক্রোমোসমের মাধ্যমে। আমাদের প্রত্যকটা কোষের ৪৬ টা ক্রোমোসোমের ২৩ টা আসে পিতার কাছ থেকে এবং বাকি ২৩ টা মাতার কাছ থেকে। এই ক্রোমোসোম তথা ডিএনএ তথা জিন আমাদের সকল বাহ্যিক, আচরণগত, প্রতিভাগত মানে জাগতিক সব বৈশিষ্ট্যই নিয়ন্ত্রণ করে। (এখানে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, আপনার ভাইবোনও কিন্তু আপনার বাবা-মার কাছ থেকেই ক্রোমোসোম পাচ্ছেন। আবার আপনার বাবা-চাচা-ফুফু পেয়েছেন তাদের পিতা মাতা অর্থাৎ আপনার দাদাদাদীর কাছ থেকে। এভাবে মা-মামা-খালাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই আপনার সাথে বাবা কিংবা মা উভয় দিকের আত্মীয়স্বজনের ক্রোমোসোমগত মিল থাকার কথা এবং আছেও)

কিন্তু সন্তানের মধ্যে কি একদম বাবা মায়ের বৈশিষ্ট্যই থাকে শুধু? না সেটা অবশ্যই থাকে না। এখানে একটা ঘটনা ঘটে। ক্রসিং ওভার। ঘটনাটা ঘটে যখন গ্যামেট (শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু) তৈরি হয় তখন। আপনার পিতা এবং মাতার মধ্যে থাকা তাদের পিতামাতার(অর্থাৎ আপনার দাদাদাদী বা নানানানী) কাছ থেকে পাওয়া জোড়ায় জোড়ায় থাকা ক্রোমোসোমগুলি(এরাই হোমোলোগাস) জোড় বেধে নিজেদের মধ্যে অংশ বিনিময় করে। এতে করে জিনে পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয়।


এবার আলোচনা যাক অনেকটা এর বিপরীত একটা ব্যাপার নিয়ে। লিংকেজ। বুঝাই যাচ্ছে লিংক টাইপ কিছু। আসলে ঘটনা হচ্ছে, একটা ক্রোমসোমে অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য দায়ী জিন থাকে। এই জিনগুলো যত কাছাকাছি থাকে তত এরা হোমোলোগাস ক্রোমোসোমের সাথে ক্রসিং ওভারের প্রতি নিরাসক্তি দেখায় এবং সবসময় একসাথে থাকার প্রবণতা দেখায়। ফলাফলে নতুন বৈচিত্র্য তৈরি হয় না।



এসব বিবেচনা করলে একটা বিষয় নিশ্চিত যে, বাবা, মা, ভাই, বোন, মামা, চাচা, ফুফু, দাদা, দাদী, মামাতো চাচাতো ফুফাতো ভাইবোন সর্বোপরি তথাকথিত রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনের সাথে আপনার জিনগত মিল থাকবেই(DNA Test এর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটাই ব্যাবহার করা হয়)। তারমানে বাহ্যিক মিলও নিশ্চিত। (তবে এখানেও প্রকট প্রচ্ছন্নের ব্যাপার আছে, সেটা বাদ থাকুক)। এজন্যই আপনি দেখবেন একটি বাচ্চা শিশু জন্ম নিলে সবাই উঠে পড়ে লাগে বাবুর ডান চোখ দাদার মতন নাকি নানার মতন? গায়ের ত্বক বাবারটা পেল নাকি মায়েরটা? নাকটা ফুপুর মতন বোঁচা নাকি খালার মতন সোজা? এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে লেগে যেতে। তারপর যখন বড় হয়, তখন বলতে শুনবেন ছেলেটা একেবারে বাবার মতই সহজ-সরল হয়েছে, কারো সাথেপাছে নেই।কিংবা দাদার মত বিজ্ঞ/মায়ের মতই চালাক/মামার মত চঞ্চল/ফুফুর মত ঝগড়াটে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা দূরবর্তী উদাহরণ দেই, আপনার চাচাতো ভাইয়ের ছেলের মেয়ের সাথেও আপনার খুব অল্প হলেও জিনগত মিল থাকবে।

আমাদের দেশে বিয়ের ক্ষেত্র একটু চিন্তা করা যাক। কিছু কিছু অঞ্চল আছে যেখানে অন্য অঞ্চলের কারো সাথে বিয়ে প্রায় হয়ই না। আসলে সত্যি বলতে কি সব অঞ্চলেই এই ব্যাপারটা আছে। কোথাও প্রকট কোথাও প্রচ্ছন্ন। কোথাও কোথাও একেবারে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে (ধরুন মনিপুরীদের ক্ষেত্রে, এরা কিন্তু মনিপুরী ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। আবার চাইনিজ, কোরিয়ান, জাপানিজরাও নিজেদের পিওর ব্রিড ধরে রাখার ব্যাপারে বেশ সজাগ)। কিছুবছর আগেও যখন যোগাযোগ ব্যাবস্থা এতটা উন্নত ছিল না, তখন একটা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে খুব বেশি বিয়ে হত বলে আমার জানা নাই। এবং এক্ষেত্রে খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখা যায় ফ্যামিলি ট্রির রুটের দিকে গেলেই কয়েক পুরুষের মধ্যে এই দুই পরিবারের মধ্যে একটা রক্তের (পড়ুন জিনগত) সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।

ফলাফল, বৈশিষ্ট্যগুলো খুব একটা পরিবর্তিত হচ্ছে না এবং একই ধরণের বৈশিষ্ট্য বারবার ফিরে আসছে। বৈচিত্র্য আসছে না। আর ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের আবহাওয়া, পরিবেশ, প্রকৃতি, সম্পদ ওই অঞ্চলের মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়ন্র্রণে ভূমিকা রাখে। হয়ত জিনতাত্ত্বিক ভাবেই…

এখন থেকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে দূরের সম্পর্কের কথা চিন্তা করবেন। যত দূরে যাবেন ততই ভাল। DV (Diversity Visa) লটারির ক্ষেত্রে আসলে এই কাজটাই করা হয়। নিজেদের জিনগুলোকে বৈচিত্র্যময় তথা সমৃদ্ধ করার চেষ্টা…

তবে এটা সত্যি, জিনের কাজ করার ধরণ আমার এই বর্ণনার মত এতটা সহজসরলও না। এই মজার বিষয়গুলোর অনেক কিছুই এখনও রহস্যাবৃত। এসব বিষয়ে এখনও হচ্ছে নিত্যনতুন তত্ত্ব, কৌশল আবিষ্কার।

লেখাটি 698-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. লেখার বিষয় খুবই আগ্রহের। বানান ভুল চোখে পড়লো না। ভাষা সুন্দর। তবে লেখাটা পড়ে একটু হতাশ হলাম।

    আপনার লেখার মূল প্রশ্ন হলো: “একেক অঞ্চলের মানুষ কেন একেক রকম হয়?”। প্রথম প্যারা পড়ে মন হলো আপনি অঞ্চলভেদে মানসিকতার-দৃষ্টিভঙ্গি-আচরণ ইত্যাদির প্রতি ইন্টারেস্টেড। এর জন্য আপনি জেনেটিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন “ত্বক”। ত্বক হলো ফেনোটাইপ। কিন্তু মানুষের আচার-ব্যবহার সম্পর্কের কোন উদাহরণ দেন নি। প্রায়ই দেখা যায় একই পরিবারের দুই ভাই বা দুই বোন একদম বিপরীত স্বভাবের হয়, বড়জন শান্ত, ছোটজন চঞ্চল। এই ভিন্নতাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

    আপনি হাইপোথিসিস দিচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা হাইপোথিসিস দিলে প্রাসঙ্গিত উদাহরণ দিয়ে থাকেন। ঐ বিষয়ে একটু পড়াশুনা করেন। আপনার লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে লেখাটাতে সে পড়াশুনার ঘাটতি রয়েছে। কিংবা পড়াশুনা থাকলেও আপনি কোন রেফারেন্স দেন নি। আপনি কোন জিনের কথা বলতে পারতেন যেটা মানুষের আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। তাছাড়া আঞ্চলিক বৈশিষ্টের ক্ষেত্রে কতটা জেনেটিক প্রভাব কাজ করে? অনেক সামাজিক বিষয় এখানে প্রভাব রাখে। বরিশাল নোয়াখালি চাঁদপুর কুমিল্লা চিটাগাং ইত্যাদি জায়গা সমুদ্রের কাছে বলে ঐতিহাসিক ভাবে বিদেশীরা (পর্তুগীজ ইত্যাদি) সমুদ্রপথে যখন আসে তখন এ অঞ্চলের লোকজনের সাথে বেশি মেলামেশা হয়, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ইত্যাদি।

    আপনি বিষয়টা সম্পর্কে আরেকটু ভালোভাবে ইন্টারনেটে ঘেঁটে দেখেন। তারপর আরেকটা লেখা দেন।

    যেমন এই লেখাটা দেখতে পারেন:
    Do Genes Influence Personality?
    http://www.psychologytoday.com/blog/under-the-influence/201307/do-genes-influence-personality

    1. সৈয়দ মুক্তাদির আল সিয়াম Avatar
      সৈয়দ মুক্তাদির আল সিয়াম

      অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য। আমি আগেই বলেছি বিজ্ঞান বিষয়ক এটাই আমার প্রথম লেখা। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাও অবশ্যই কিছুটা কম।

      আপনি চমৎকার কিছু ঘাটতি তুলে ধরেছেন, এসব বিষয়ের কোনটা কোনটা আমারও ব্যাখ্যা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমি অনেকটাই সারফেস লেভেলেই থাকার চেষ্টা করেছি এক্ষেত্রে। আর বড় লেখার প্রতি স্বভাবতই মানুষের একটু অনীহা রয়েছে, এজন্য খুব একটা বড়ও করিনি লেখা (এটা ভুল ছিল)। তবে এটা ঠিক, আপনি বলার পর মনে হচ্ছে, কিছু জিনিস আরেকটু পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা উচিৎ ছিল।

      যাই হোক, আগামীতে ইন শা আল্লাহ্‌ আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ লেখার চেষ্টা করবো।

      1. এটা ঠিক যে ছোট লেখা ব্লগ পরিসরে মানুষজন বেশি পড়ে। আবার আগ্রহ উস্কে দিয়ে পরে লেখার মধ্যে একটু গভীরে না গেলে সেটা একটু হতাশও করে।
        বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম।

Leave a Reply to আরাফাত রহমানCancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers