বাংলাদেশের মুদ্রাগুলোর জন্য আক্ষেপ হয়, বেচারাদের হাঁপ ছেঁড়ে বাঁচার যেন কোনো সুযোগ নেই। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে টাকা তার রূপ বদলাতে বাধ্য হয়। এক সরকার আসলে সকল টাকাতে সরকারের আত্মীয় (স্বজন) সম্পর্কীয় কারো ছবিতে ছেয়ে যায়। পরে যদি ঐ সরকার পরিবর্তিত হয়ে অন্য সরকার আসে তাহলে টাকার উপর শুরু হয় ঠিক আগের সরকারের বিপরীত প্রক্রিয়া। আগের সরকারের সকল টাকা বদলে নতুন রূপের টাকা ছাড়ে। প্রথম দলটির নাম আওয়ামীলীগ,পরেরটির নাম বিএনপি। প্রথম দলের দেশের আবেগ অনুভূতি নিয়ে, দেশের ভিত্তি নিয়ে কাজ করেছে এমন কিছু আছে যা পরের দলটির নেই তেমন একটা। যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই টাকাতে দ্বিতীয় দলের কারো ছবি ছাপিয়ে ভরে ফেলতো। ব্যাংক নোটের এই অবস্থা নিয়ে আমার একটা স্থায়ী অসন্তোষ। এই ব্যাপারটাতে আমি ভারী অতৃপ্ত।
বিজ্ঞান লেখক জাফর ইকবালের একটা ঘটনা মনে পড়ছে তিনি পিএইচডি’র জন্য আমেরিকা যাবার সময় দেশ থেকে তার মানিব্যাগটা নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেটা যত্ন করে রেখেছিলেন। তাতে কিছু টাকাও ছিলো। আমেরিকায় বাংলাদেশী টাকা চলে না তাই সে টাকা তোলাই রয়ে গেলো। বেশ কয়েকদিন পর তিনি দেশে ফিরে আসলেন। এসে যখন রিকশাওয়ালাকে মুজিবের ছবিওয়ালা পুরাতন টাকা দিলেন তখন রিকশাওয়ালা তো অবাক-“এই ট্যাকা আপনে কই পাইছেন? এই ট্যাকা তো এখন চলে না।” তখনকার বাংলাদেশের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে ফেলা হয়েছে। অনেকটা সময় ধরে কারা না কারা দেশ শাসন করেছে আর তার ফলশ্রুতিতে মাত্র কয়েকদিনেই মুজিবের ছবিওয়ালা সকল টাকা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
যাহোক আমার কথা সেখানে না। নোটের ব্যাপারে আমি মনে করি নোটে বিজ্ঞানী গণিতবিদদের ছবি দেয়া উত্তম। হতে পারে সেটা বাঙ্গালী বিজ্ঞানী, তবে বিজ্ঞানী সে বাঙ্গালীই হতে হবে এমনটাও ঠিক নয়। বিজ্ঞানীরা কোনো দেশের একার নয়, তাঁরা সমগ্র পৃথিবীর। আইনস্টাইন কি শুধুই জার্মানির? তিনি সকল দেশের। মুসলমানদের প্রেরিত পুরুষ মুহাম্মদ (সাঃ) এর বেলায় যেমন অনেকটা তেমন। মুহাম্মদ শুধুই আরবের ব্যক্তিত্ব নয়, সমগ্র বিশ্বের।
একটা জাতিকে, সমাজকে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় বিজ্ঞানীরা। সকল সমস্যার সমাধান দেন বিজ্ঞানীরা। সুখ স্বচ্ছন্দে থাকার জন্য সবকিছুই করে দেন বিজ্ঞানীরা। অন্য সকল উন্নত উন্নত দেশগুলোতে দেশে বিজ্ঞানীদের এমন কদর দেয়া হয় বলেই তাঁরা এত উন্নত এত আরামে স্বচ্ছন্দে জীবন উপভোগ করতে পারে। তাদের টাকায়, প্রতীকে, আদর্শ লিপিতে সবকিছুতে বিজ্ঞানী আর গণিতবদ।
এই অংশে উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দেশের মুদ্রাতে বিজ্ঞানীদের ছবি সম্বলিত নোট দেখে নেই।
শুধু যুগোস্লাভিয়াই নয় সার্বিয়া সহ অন্যান্য দেশের নোটেও টেসলার ছবি পাওয়া যায়। নিচের ছবিতে সার্বিয়ার ১০০ দিনার দেখা যাচ্ছে। এই নোটটাতে টেসলার ছবির পাশাপাশি তার আবিষ্কার করা সূত্রের গাণিতিক রূপ স্থান পেয়েছে। নোটের অপর পিঠে চিন্তামগ্ন টেসলা এবং তার কর্মের একটা কার্যকর প্রয়োগ ক্ষেত্রের ছবি স্থান পেয়েছে। সবদিক থেকে এই নোটটা অসাধারণ হয়েছে।
দুই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও শ্রোডিঞ্জার স্থান পেয়েছে যথাক্রমে ইজরাইল ও অস্ট্রিয়ার মুদ্রাতে। ইজরাইলের ৫ ও অস্ট্রিয়ার ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটে এরা স্থান পেয়েছে। নোটে যেমন বিজ্ঞানীর ছবি ঠাই পেয়েছে তেমনই নোটের পরিবেশও বিজ্ঞানবান্ধব কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক। আশেপাশের চিত্র লেখা রেখা সবকিছুতেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। দেখলে অল্পতেই বোঝা যায় কতটা আন্তরিকতা রয়েছে এই নোটগুলোর উপর।
বিজ্ঞানের বরপুত্র কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিওর ছবিও আছে নানান দেশের নোটে। কোপার্নিকাস আছে পোল্যান্ডের নোটে আর গ্যালিলিও আছে ইতালির নোটে।
আর বিজ্ঞানের ইতিহাসে ক্লাসিক যারা তাঁরাও বাদ যাবে কেন? বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন না করে বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু কথা বলেছিলেন কিন্তু বিজ্ঞানের শুরুটা তো তারাই করেছিলেন। তাদের বেশিরভাগ মত আজ ভুল হতে পারে, তাদের কর্মপদ্ধতি সঠিক না হতে পারে কিন্তু তাঁরা ছিলেন সে হিসেবে বিজ্ঞানমনস্ক। শুরুর দিকের অবদানের জন্য তাঁরা স্মরণীয়। তাদের স্মরণ করে সম্মান দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। নিচের ছবিগুলোতে গ্রিসের ১০০ টাকার নোটে ডেমোক্রিটাস, ১০ টাকার নোটে এরিস্টটল এবং ইতালির ৫০০০০০০ টাকার নোটে প্লেটো শোভা পাচ্ছে।
আমাদের দেশের মুদ্রাতেও বিজ্ঞানীদের ছবি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক নোটগুলোতে বিজ্ঞানী উদ্ভাবকদের ছবি দিলে দেশের মানুষের বিজ্ঞানীদের প্রতি একটা অন্যরকম সম্মান বোধ কাজ করবে সবসময়। বিজ্ঞানীদের আলাদা একটা গুরুত্ব বেরিয়ে আসবে। এতে করে একটা বিশেষ সম্মান জানানো হবে তাদের। “বিশেষ” মানুষের বিশেষ সম্মান। যাদের ছবি জাতীয় নোটে থাকে তাঁরা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং পৃথিবীর অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব। ছাত্রদের কেও কেও এ দেখে সংকল্প করে বসবে “আমি বিজ্ঞানী হবো।” আমি সেটা বলছি না যে সবাই বিজ্ঞানী হয়ে যাবে কিংবা সবাই বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে যাবে। নোটগুলোতে বিজ্ঞানীর ছবি ছাপালে যে তার সুন্দর একটা প্রভাব পড়বে সেটা অবশ্যই স্পষ্ট। তা দেখে ছাত্ররা বিজ্ঞানী হতে অনুপ্রাণিত হবে এটা কোনো দৈব বাণী নয় এটা সাধারণ গাণিতিক বাস্তবতা।
আমাদের ছেলেপিলেরা বিজ্ঞানী হোক, নানা আবিষ্কার-উদ্ভাবন করে বিশ্ব বিজ্ঞানে অবদান রাখুক সেটা আমরা সকলেই চাইবো। আমাদের দেশটা বিজ্ঞানে এগিয়ে যাক, পরের দেশের প্রযুক্তি উচ্চ মূল্যে কিনে আনার পরিবর্তে নিজেদের বানানো প্রযুক্তিতে নিশ্চয়ই আমরা চলতে চাইবো। আর তার জন্য দরকার ভাল একটা ভিত্তি। যে ভিত্তি হবে অনেক বিস্তৃত। আর সে বিস্তৃত ভিত্তির একটা হতে পারে এই নোটে, কয়েনে বিজ্ঞানীর ছবি কিংবা বিজ্ঞান বিষয়ক ছবি। টাকা জিনিসটা এমন একটা ব্যাপার যে এমন কোনো নাগরিক নেই যাকে কিনা টাকা ব্যবহার করতে হয় না।
এখন অনেকেই আমার উপর চড়াও হতে পারেন, চোখ রাঙিয়ে আসতে পারেন, আমি কেন শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে দিলাম? শেখ মুজিব কি গুরুত্বপূর্ণ কেও না? মুজিব কি অনুকরণীয় ব্যক্তি নয়? আমি সবিনয়ে বলতে চাই, না শেখ মুজিবকে বাদ দেইনি। সুন্দর একটা দেশ প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের অনেকগুলো স্মরণীয় ইতিহাসে তার যে অবদান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবিতে শেখ মুজিব অবশ্যই থাকতে পারে, সাথে সাথে বিজ্ঞানীর ছবিও থাকুক। আমার আক্ষেপটা হয়তো অনেকে ধরতে পেরেছেন। আওমী সরকার ক্ষমতায় আসলে দেশের যাবতীয় সকল নোট আর কয়েনে একজনের ছবি দিয়ে ভরিয়ে ফেলেন। আমি এই ব্যাপারটাকে অবশ্যই অতিরঞ্জন বলে অভিহিত করবো। অনেকটা স্বৈর-তান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে যেন ব্যাপারটা।
দাবী করবো কখনোই যেন একচেটিয়াভাবে সকল নোটে একজনের ছবি না হয়। দুয়েকটা নোটে তার ছবি থাকুক বাকিগুলোতে অন্যদের ছবি দেয়া হোক যারা দেশের জন্য অবদান রেখেছে। যেমন হতে ভাষা শহীদেরা, বীরশ্রেষ্ঠরা। কিংবা হতে পারে মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিকদের আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়, একটা দেশে শিক্ষারই যদি কদর না হয় তাহলে শিক্ষায় দেশ ভাল করবে কি করে? ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, রবি ঠাকুর, নজরুল ইসলাম এরা আসতে পারে। এই কথাগুলো ছিল সাধারণ মানুষের কথা, সাধারণ মানুষের দাবী। এখানে আমি আমার প্রস্তাবের কথা বলতে পারি।
আমি মনে করি মুদ্রায় ছবি দেবার ক্ষেত্রে এমন কারো ছবি দেয়া হোক যাদের অবদানে এগিয়ে গেছে সমগ্র বিশ্ব। তাদেরকেই বেশি পরিমাণ গুরুত্ব দেয়া হোক যাদের প্রয়োজন সবচে বেশি। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটা হবে বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর জন্য, সমগ্র মহাবিশ্বের জন্য বিজ্ঞানীরা যা করেছে তা কোনোদিনই কোনো ব্যক্তিত্ব করেনি। সেজন্য মুদ্রার ছবিতে বিজ্ঞানীদের প্রাধান্য দেয়া দরকার। এতে করে জাতির উন্নতি ত্বরান্বিত হবে, আর কমবে পক্ষপাতিত্ব ও দলীয়করণ। বাংলাদেশী ও বাঙ্গালী বিজ্ঞানীদের মাঝে দেয়া যেতে পারে সত্যেন বসু, জামাল নজরুল ইসলাম, মেঘনাদ সাহা, কিংবা জগদীশ চন্দ্রের নাম। দেয়া যেতে পারে অমল কুমার, মাকসুদুল আলম সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের নাম। আর সবগুলো বাংলাদেশের বিজ্ঞানীর দিতে হবে এমন তো আইন হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা সকল দেশের সকল সকল জাতির। বিজ্ঞানের কোনো নিয়ম কোনো সূত্র বাংলাদেশে যেমন জার্মানেও তেমন। দেয়া যেতে পারে আইনস্টাইনের ছবি, এই ছবি দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা আইনস্টাইনের মত উঁচু দরের বিজ্ঞানী হতে চাইবে। নিউটনই বা বাদ যাবে কেন? ছোটবেলার চাওয়া থেকেই তো শুরু। কি চাই, কি দরকার সেটাই যদি মাথায় না ঢোকানো যায় তাহলে কীভাবে হবে?
শুধু বিজ্ঞানীদের ছবিই যে হতে হবে এমন কথা নেই। বিজ্ঞান সম্পর্কিত কোনো বিশেষ চিত্র, ফিগার, স্মরণীয় মুহূর্ত, স্পট ইত্যাদি হতে পারে নোটের বিষয়বস্তু। তবে অবশ্যই এমন কিছু নির্বাচন করতে হবে যাতে করে সবার মনে এক ধরণের আগ্রহ জন্মে তার প্রতি। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মাঝে হতে পারে ফুলারিন (বাকিবল), সার্কিট, নিউরন, মাইক্রোস্কোপ, মহাকাশ, নক্ষত্র, টেলিস্কোপ, স্থাপত্য, ইলেকট্রনের কক্ষপথ, পৃথিবীর ঘূর্ণন, রকেট, নভোচারী, কম্পাস, গাণিতিক চিত্র ইত্যাদি। নিচের চিত্রটা তার উদাহরণ হতে পারে।
অথবা এমনও হতে পারে নোটের এক পিঠে কোনো এক বিজ্ঞানীর ছবি এবং আরেক পিঠে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কিছুর ছবি। বিজ্ঞান নির্ভর ছবিটা অন্য পিঠে থাকা বিজ্ঞানীর অবদান বা কর্ম থেকে হতে পারে কিংবা নাও হতে পারে। একেবারে ভিন্ন রকম চিত্রও দেয়া যেতে পারে। একই নোটে একাধিক বিজ্ঞানীও স্থান পেতে পারে। একই নোটে কয়েকজন বিজ্ঞানীর ছবি নির্বাচিত হতে পারে বিজ্ঞানীদের কর্মক্ষেত্র, অথবা তাদের ভাষা কিংবা দেশ অনুসারে।
নিচের চিত্রে বেলজিয়ামের ২০ টাকার নোট দেখানো হল। সেখানে বিজ্ঞানীর ছবি নেই কিন্তু এটি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট ছবি। ছবিটি লৌহের একটি ক্রিস্টাল। ক্রিস্টালের গঠন একটি ঘনকের মতো এবং এর কেন্দ্রে একটি আয়ন আছে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে অনুপ্রাণিত করতে ঐ দেশের নোটে আয়রনের ক্রিস্টালের ছবি ছাপা হয়।
এবার আরও কয়েকটি ছবি লক্ষ করি। প্রথমটি রোমানিয়ার ২০০০ টাকা মূল্যের নোট যেখানে একটি সূর্যগ্রহণকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। পরেরটি ব্রিটিশ পাউন্ড। এই নোটে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস শাটল এবং প্রতীকীরূপে পৃথিবীকে তুলে ধরা হয়েছে।
শেষের নোটটি পাশের দেশ ভারতের। ১৯৭৫ সাল ভারত প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয় বিখ্যাত গণিতবিদ আর্যভট্টের নামানুসারে। আর্যভট্টকে সম্মান দিতে এবং প্রথম প্রয়াসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারত রি স্মারক মুদ্রা ছাপায়।
আমি এমনটা বলছি না যে কাজটা এখন থেকে শুরু করে দিলে চার-পাঁচ বছর পরই তার ফল পাবো। একটা ছাত্র বিজ্ঞানী হতে চাইলে সে চার-পাঁচ বছরে তা হতে পারবে না, সময় লাগবে অনেকটা। সে সময়টা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। (সে ধৈর্য কি আর আমাদের নীতি নির্ধারণকারীদের আছ?) এতে যেহেতু কোনো শর্ট-কাট নেই তাই সময় বেশি লাগলেও এখনই শুরু করে দিতে হবে। শুরুই যদি না হয় তাহলে আর বাক্য কপচে লাভ কি? আমরা হয়তো ফলটা একটু পরে পাবো কিংবা ধীরে ধীরে পাবো, কিন্তু দেশের জন্য মহৎ কিছু চাইলে কাজটা এখন থেকে শুরু করে দিতে হবে। আমি হলপ করে বলতে পারি সকল নোটে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ছবি যতোটা ভাল ফলাফল বয়ে আনবে তার থেকে শতগুণ ভাল ফলাফল আনবে বিজ্ঞানীদের ছবি দিলে।
শুধু নোটে নোটে বিজ্ঞানীদের ছবি থাকলেই যে দেশ বিজ্ঞানীদের দিয়ে ভরে যাবে তাও কিন্তু না। শুধু ছবি ছাপিয়ে তো আর সব হয়ে যাবে না। অন্যসকল ক্ষেত্রেও পুরোদমে চালিয়ে যেতে হবে বিজ্ঞানের কাজ। মূলত নোটের ছবি হবে বিজ্ঞানের উন্নয়নের অনেকগুলো কাজের মাঝে একটি। সকল ক্ষেত্রে এমনটা করলেই না দেশটা উন্নত হয়ে যাবে। আর বাড়তি পাওনা হিসেবে কারি কারি নোবেল পুরষ্কার আসবে দেশে।
সবশেষে অন্য একটা উদাহরণ দেখি। সমগ্র পৃথিবীতে পাকিস্তানে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ আজ সবথেকে বেশি। অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনার সম্মিলিত ফলাফল হয়ে যেতে পারে বিশাল। পাকিস্তানে লেখাপড়ার শুরুতেই শেখানো হয় “এ ফর আলিফ, বি ফর বন্দুক।” [সূত্রঃ বিশ্বাসের ভাইরাস, অভিজিৎ রায়; জাগৃতি প্রকাশনী, ২০১৪] এরকম অনেকগুলো কারণের সমাবেশই বয়ে আনে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ। একদম শুরু থেকেই যদি এমন শিক্ষা দেয়া হয় তাহলে শিশুমন দাঙ্গা হাঙ্গামা জিহাদকে স্বাভাবিক মনে করবে না তো কি করবে? যদি এমন হতো এ ফর এটম, বি ফর ব্যাকটেরিয়া, সি ফর সেল, ডি ফর ডিএনএ, ই ফর আইনস্টাইন তাহলে কতই না ভাল হতো। অন্যান্য ভাল দেশে কিন্তু এমন করেই বিজ্ঞান নির্ভর আদর্শ লিপি শেখানো হয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে জাতির উন্নতি চাইলে, জাতির ভাল চাইলে সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ চাই।
এতক্ষণ কথাগুলো বলে উলুবনে কতটা মুক্তা ছড়ানো হয়েছে তা আমি জানি না। আমাদের দেশের ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে এতোটা জটিলতা যে আমার বক্তব্যের উপর কারো নজর পড়বে কিনা কিংবা পড়লেও গুরুত্ব পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। তবে আমি আর হতাশ হচ্ছি না। এ নিয়ে আশা ছাড়ছি না। অচিরেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন হবে যারা বিজ্ঞানের সঠিক মূল্য বুঝতে পারবে। একটি রাষ্ট্রে বিজ্ঞানীর কতটা প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবে।
ছবিসূত্র ও তথ্যঋণ:
- alif for Allah, bay for Bondook; Kayes Ahmed; bdnews24.com
- Wikipedia : List_of_people_on_banknotes
- http://www-personal.umich.edu/~jbourj/money.htm
- http://www.slideshare.net/sotos1/scientists-on-banknotes
- http://www.wired.com/2014/11/money-designed-celebrate-science-instead-presidents/
Leave a Reply