শুরুতেই বলি, আমি নিজেই একজন ঘনঘন সিরিজ হাঁচির কষ্টে ভোগা মানুষ। নিজে বাঁচার জন্যে জ্ঞান নিতে যেয়ে এই লেখাটা তৈরি হয়ে গেল। অনেক সময় ব্যয় করে, ঘাঁটা-ঘাঁটি করে অবশেষে লেখাটাকে যখন দাঁড় করালাম তখন দেখি এটা হাঁচির রচনা হয়ে গেছে। এটাকে ছোট করতে গেলেই মনে হচ্ছে নিজের জন্যই কিছু একটা তথ্য বাদ পড়ে যাচ্ছে। অবশ্য জ্ঞানটা নিয়ে উপকার পেয়েছি বটে। কিন্তু তারপরও মাঝেমধ্যে ফেক্সোফেনাড্রিন জাতীয় ওষুধ খাই। তবে সেটা আগের থেকে কম। ওষুধ শরীরের জন্যে মোটেও ভাল না। আর আমার তো মাঝেমধ্যে ওষুধ খেয়েও ভাল কাজ হয় না। তাই আমার হাঁচি কেন হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে আর কার জন্যে হচ্ছে তাই খুঁজে বের করে সেটার ট্রিটমেন্ট শুরু করলাম। আশেপাশের মানুষ-জন হাঁচি দিলে ভয়, বিরক্ত আর ঘেন্ন্যা লাগে। বিশেষ করে যখন আমার নাপিত তার নাক চুলকায়।
আর কথা না বাড়াই। শুরুহোক হাঁচি নিয়ে বিজ্ঞানের জ্ঞান। শুভকামনা থাকলো।
- হাঁচি কি?
মানবদেহের অনেক বিস্ময়ের মধ্যে একটি হলো এই হাঁচি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাঁচিকে বলা হয় “Achoo” অথবা “Sternutation“। আর ইংরেজিতে বলা হয় “Sneeze” (স্নীজ্) যা ল্যাটিন শব্দ “Sterno” থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে বিস্তৃত করা, প্রসারিত করা বা ছড়িয়ে দেয়া।
হাঁচি একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত ইচ্ছানিরপেক্ষ নিরাপত্তামূলক একটি বিশেষ শারীরিক ক্রিয়া যা কিনা দেহের অনেকগুলো অঙ্গের একটির পর একটি সাধারণ নড়াচড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়। একবার আপনি হাঁচির জন্যে টেনে দম নিলেন তো বাকী কাজটুকু আপনি আপনা-আপনিই করবেনই। শুধুমাত্র হাঁচিটা কোন দিকে দিবেন আর কত জোরে দেবেন এটুকুই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বিজ্ঞানীরা আমাদের ব্রেনের একটি নির্দিষ্ট অংশকে ‘হাঁচি কেন্দ্র’ বলে নামকরণ করেছেন। যখন আপনার নাকের ভেতরে সুড়সুড়ি লাগে, তখন একটি বার্তা আপনার ব্রেনের এই হাঁচি কেন্দ্রে প্রেরিত হয়। এই হাঁচি কেন্দ্র তখন সাথে সাথে আরেকটি বার্তা সেই সকল দেহ পেশিকে প্রেরণ করে, যারা কিনা একত্রে মিলিত হয়ে একটি অসাধারণ জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, যাকে আমরা হাঁচি বলে থাকি।
আরও বলা যায়, হাঁচি হলো স্নায়ুর উপর উদ্দীপনা সৃষ্টির দরুন ইচ্ছানিরপেক্ষ একপ্রকার ক্রিয়া। অনেকটা শীতের কারণে দেহে কাঁপুনি ওঠার মতো করে হাঁচিও একবার কোন কারণে শুরু হলে আর থামতে চায় না।
হঠাৎ করে প্রবল বেগে নাক এবং মুখ থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাতাসের নির্গমনই হলো হাঁচি।
- হাঁচির বৈশিষ্ট্য-
একটি হাঁচির সময় ঘন্টায় প্রায় ১০০ মাইল বেগে নাক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসে। আর এর সাথে বেরিয়ে আসা জলীয়পদার্থ প্রায় পাঁচ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচির স্প্রের কথা ভুলে গেলে চলবে না – প্রায় ২০০০ থেকে ৫০০০ জীবাণুযুক্ত তরলপদার্থ নাক-মুখ দিয়ে হাঁচির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। আমাদের দেহের অ্যাবডোমিনাল বা পেটের পেশি, বুকের পেশি, ডাইআফ্র্যাম বা বক্ষ-উদরের মধ্যে উপস্থিত পেশি, স্বরযন্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী পেশি এবং কণ্ঠের পেছনের পেশি একটি হাঁচি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে থাকে। হাঁচি হওয়ার জন্যে এক সেকেন্ডেরও কম সময় লাগে। যদি নাক বন্ধ করে হাঁচি দেয়া হয়, তবে তা 176mmHg বায়ু চাপের সমান চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটা আপনার শ্রবণ শক্তিকে এবং চোখকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আপনার হাঁচি আপনি গর্বের সাথে উড়িয়ে দিন। তবে বাতাসে নয়, রুমালে। আর অনেকে বলে থাকেন যে, হাঁচির সময় পাপকিন বা পাইনাপেল বললে হাঁচিটা সহজে বের হয়ে যায়।
- হাঁচির সূত্রপাত এবং স্নায়ু-পেশির কার্যাবলি-
আমাদের নাকের ভেতরে লোম পার হয়ে যখন কোনো অস্বস্তিকর ধূলা, ফুলের রেণু, ঝালের গুড়া বা অন্য কোন উপাদান নাকের ভেতরে প্রবেশ করে তখন আমাদের হাঁচি হয়। আমাদের নাকের ছিদ্রের ভেতরের লোম অনেকটা ঝাড়ুর মতো কাজ করে। এগুলি প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে নাকের ভেতরে প্রবেশ করা হাজার-হাজার উপাদানকে আটকে দেয় এবং সাথে ধরে রাখে। আর যদি এই ঝাড়ুর মতো গেটকে টপকে কোন উত্তেজক ধূলাবালি আমাদের নাকের ভেতরে প্রবেশ করে, তবে আমাদের হাঁচির সূত্রপাত হয়। ঝাঁঝাঁলো বা কড়া গন্ধ থেকেও হাঁচি হতে পারে। আসলে ধূলাজাতীয় কোন পদার্থ হোক আর কোন গন্ধই হোক না কেন, আমাদের নাকের ভেতরে উত্তেজনা বা সুড়সুড়ি সৃষ্টি হলেই আমাদের হাঁচি হয়। হাঁচি দেবার সময় আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এবং পেশিতন্ত্র উভয়ই একসাথে অতিদ্রুত কাজ করে থাকে।
হাঁচিকে সাধারণত দু’টি পর্বে ভাগ করা যায়। একটি সংবেদনশীল পর্ব আর অন্যটি বহির্মুখী বা শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত পর্ব। সংবেদনশীল পর্বে আপনার নাকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, সুড়সুড়ি অনুভূত হয়। আর তা সংকেত দেয় যে কিছু একটা আসছে। এটাই সেই মূহুর্ত যখন আপনি আপনার আঙুল নাকের নিচে দিয়ে চেষ্টা করেন এটাকে ঠেকানোর জন্যে এবং আপনি খুব ভালোভাবে সফলও হন।
আসলে হাঁচির জন্য দায়ী কোন উপাদান বা গন্ধ নাকের ভেতরে মিউকোসা অংশে পৌঁছালে সেখানে উত্তেজনা বা সুড়সুড়ি জাতীয় অনুভূতি সৃষ্টির কারণে হিস্টামিন নামক একধরনের পদার্থ নিঃসৃত হয়। যা মিউকোসা স্তরের নিচে ছড়িয়ে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু কোষকে উত্তেজিত করে। আর এর ফলাফল স্বরূপ একটি সংকেত আমাদের ব্রেনের হাঁচি কেন্দ্রে চলে যায়। ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুটি আমাদের করোটির ১২টি স্নায়ুর মধ্যে ৫ম স্নায়ু যা কিনা আমাদের মুখের চামড়ার নিচে, পাশাপাশি নাকের কোমল মিউকোসা স্তরের নিচে ছড়িয়ে থাকে। আর আমাদের নাকের ভেতরের মিউকোসা স্তরটি আমরা নাকের ভেতরে আঙুল দিলে সেটার অস্তিত্ব টের পেতে পারি। আমাদের নাকের দুইটি ছিদ্রের মাঝে অবস্থিত পাতলা তরুণাস্থির উপরে এই মিউকোসা স্তরটি বিদ্যমান।
(ছবিতে মুখের চারপাশে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু)
আপনার নাকের চমড়ার নিচে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর অংশগুলো খুবই সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। যখন ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু উত্তেজিত হয় তখন একটি সংকেত সাথে সাথে ব্রেনের একটি বিশেষ অংশ- মেডুলাতে পৌঁছে যায় এবং মেডুলার পাশে আঘাত করে। এই মেডুলা নামক অংশটিকেই হাঁচি কেন্দ্র বলা হচ্ছে।
(ছবিতে সাদা তীর দিয়ে মেডুলা স্থানটি চিহ্নিত করা হচ্ছে।)
ছবিতে এই এলাকাটি আমাদের ব্রেনে হাঁচির কেন্দ্র এবং যখন এটি অনেক বেশি উত্তেজিত হয় তখন আমাদের ইচ্ছানিরপেক্ষ হাঁচির সূত্রপাত ঘটে। যদি আপনি আপনার নাকে খুব বেশি সুড়সুড়ি দেন তবে সাথে সাথে এটি মেডুলার পার্শ্বীয় অংশে বা হাঁচি কেন্দ্রে চলে যায় এবং হাঁচি দেবার জন্যে আমাদের ফুসফুসে, চোখে আর গলায় একটি সংকেত প্রেরণ করে।
আর তখন নিম্নের ঘটনাগুলি আপনা-আপনি ঘটতে থাকে –
১। আপনার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। (যদি হাঁচি দেবার সময় আপনার চোখ বন্ধ না হয়, তবে সম্ভবতঃ যে ক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে হবার কথা তা ঘটেনি এবং এটা রোগীর এবিষয়টি নির্দেশ করে যে, এই ধরণের হাঁচি স্বাভাবিক না বরং অস্বাভাবিক হাঁচি। যা রোগীর মানসিক সমস্যা আছে বলে নির্দেশ করে।)
২। আপনি গভীর নিঃশ্বাস বা বড় দম নেন। এটাকে ধরে রাখেন, যেটা আপনার বুকের মাংস পেশিকে শক্ত করে দেয়।
৩। আপনার শ্বাসরন্ধ্র বন্ধ হয়ে যাবে।
৪। আপনার জিহ্ববা মুখের ওপরের বিপরীতে চাপ দিবে।
৫। আপনার ফুসফুসে বাতাসের চাপ বৃদ্ধি পাবে। বুকের পেশিগুলো আমাদের ফুসফুসকে দ্রুত সংকুচিত করে, ফলে একটি বাতাসের বিস্ফোরণ উপরের দিকে চলে আসে। গলার পেশি শক্ত হয়ে যায়। তখনই আপনি বিস্ফোরন আকারে মুখ এবং নাক দিয়ে খুব দ্রুত দম ফেলবেন এবং সাথে সাথে আপনার শ্বাসরন্ধ্রের পথ খুলে যাবে।
৬। আপনি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসেন এবং পরিষ্কার হবার জন্যে বেপরোয়াভাবে কিছু একটা করেন।
- হাঁচির কারণ-
হাঁচি হওয়ার পেছনে কারণের অভাব নেই। তবুও বিজ্ঞানীরা কিছু বিশেষ কারণকে এই হাঁচির জন্যে দায়ী করে থাকেন। এই কারণগুলি বেশ মজার এবং হাস্যকর। তবে আসলকথা যে, এই কারণগুলির জন্যে আমাদের মুখমন্ডলের ত্বকের নিচে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর প্রান্তগুলি উত্তেজিত হয় এবং এটি আমাদের ব্রেনের হাঁচি কেন্দ্রে হাঁচি দেবার জন্যে একটি সংকেত পাঠায়। আর তখনই আমরা হাঁচি দেয়। নিচে সেই সমস্ত কারণগুলো একটু জানা যাক।
১। যখন কিছু মানুষ উজ্জ্বল আলোতে যায় তখন তাদের হাঁচি হয়। সেজন্য সূর্যালোক হাঁচির কারণ হতে পারে। মানুষের চোখের আর নাকের স্নায়ুর পাশাপাশি অবস্থান এবং চোখ-নাক ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর যোগসূত্রের জন্যে এমনটি হয়। সাধারণত ১৮% থেকে ৩৫% মানুষের হাঁচি হয় হটাৎ করে উজ্জ্বল আলোতে গেলে। বিজ্ঞানী উড বলেন, প্রতি ৩ জনে এক জনের হাঁচি হয় এই উজ্জ্বল সূর্যের আলোর জন্যে। আলোর জন্যে হাঁচি দেয়াকে গ্রীক ভাষায় বলে “ফোটিক্স স্নীজইং”। এর অর্থ “আলোর জন্যে হাঁচি”। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো- “Autosomal Dominant Compelling Helio-Ophthalmic Outburst Syndrome”. যার বাংলা করলে দাঁড়ায়- “সূর্যালোকের জন্যে চোখের মূল স্নায়ুতে নিশ্চিত সুড়সুড়ির লক্ষণ”। এখনে Helio অর্থ সূর্য আর Ophthalmic অর্থ চোখ। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক নামটাকে সহজে বলা এবং মনে রাখার জন্যে বিজ্ঞানী আর ডাক্তাররা একটি ছোট নাম ব্যবহার করেন। যা একো সিন্ড্রোম (ACHOO Syndrome) নামে পরিচিত। অবশ্য আলোর সংবেদনশীলতা একটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আর তাই এটা আরো একটি বিষয় আমাদের অভিভাবককে দোষ দেবার মতোন।
২। ভ্রু তোলার সময় অনেক মানুষের হাঁচি হয়।
৩। ব্যয়াম করলে হাঁচি হয়। ব্যয়াম শেষে আমরা হাঁপিয়ে যেয়ে দ্রুত শ্বাস নেয়। ফলে আমাদের নাক-মুখ দ্রুত শুকিয়ে যায়। আর এ অবস্থায় সুড়সুড়ি অনুভূত হয়ে হাঁচি হয় এবং আর্দ্রভাব আমাদের নাকে-মুখে চলে আসে।
৪। যৌনক্রিয়ার পরে হাঁচি হয়। গবেষকেরা মনে করেন যে, আমাদের দেহে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র এর জন্য দায়ী।
৫। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু এবং অ্যালার্জি। বাতাসে ভাসমান ফুলের পরাগরেণু, মোল্ড, লোম, ধূলা-তে অ্যালার্জি হতে পারে। একে ডাস্ট অ্যালার্জি বলা হয়।
৬। আমাদের ব্রেনের কোন রোগের জন্যেও হাঁচি হতে পারে। সাধারণত ব্রেনের মেডুলা অংশের কোন অস্বাভাবিকতা জন্যে হাঁচি হয়। একধরণের মৃগীরোগের ক্ষেত্রে হাঁচিটা দেখা যায়। চোখ প্রায় খোলা রেখে ছোট-ছোট করে হাঁচি দেয়াটাকে বিজ্ঞানীরা মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
৭। পেট ভরা থাকলে এটা হয়। এটা অবশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না, তবে এমনটা সত্যি ঘটে।
৮। ঘুমের মধ্যে অনেকের হাঁচি আসে এবং ঘুম ভেঙ্গে যেয়ে হাঁচি দেয়। ঘুমের মধ্যে কোন কারণে ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর উত্তেজনার ফলাফল এটি। মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁচি দিতে পারে না। আপনি যখন ঘুমান বা ঝিমান তখন আপনার হাঁচি হবার জন্য সাহায্যকারী পেশিগুলি বিশ্রাম অবস্থায় থাকে। ফলে হাঁচি হয় না। তাই ঘুমন্ত মানুষ হাঁচি দেবার আগে জেগে ওঠে এবং তারপর হাঁচি দেয়।
৯। যে কোন প্রকার গন্ধ নিঃশ্বাসে নেবার জন্যে হাঁচি হতে পারে।
১০। যে কোন ধরণের নেশা ছেড়ে দেবার প্রাথমিক ফলাফল হিসেবে হাঁচি হতে পারে।
১১। কিছু জিনিসের সূত্রপাত যেমন ধূলা, দূষিত বাতাস, শুষ্ক বাতাস, মসলাযুক্ত খাবার, ঝাঁঝালো অনুভূতি, কিছু ঔষধ, এবং পাউডারের জন্য হাঁচি হতে পারে।
১২। কিছু মানুষের খাবারের অ্যালার্জির জন্যে হাঁচি হতে পারে।
১৩। গর্ভাবস্থায় থাকাকালে প্রকাশিত অনেকগুলি বিব্রতকর লক্ষণের মধ্যে একটি লক্ষণ হলো এই অতিরিক্ত মাত্রায় হাঁচি হওয়া। কিছু মহিলা এটা লক্ষ্য করেছেন যে, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে গর্ভাবস্থায় তাদের হাঁচি দেবার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
- ব্রেনের কোষের উপর হাঁচির প্রভাব-
এ কথা শোনা যায় যে- হাঁচি দিলে ব্রেনের কোষ মারা যায়। এ সম্পর্কে বিশিষ্ট্য স্নায়ু বিজ্ঞানী ডাক্তার রিচার্ড কোললার বলেন যে, “একথা সত্য নয়”।
তিনি বলেন যে, “হাঁচি দিলে আমাদের ব্রেনের খুলির মধ্যে কিছুটা চাপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই চাপের পরিমান খুবই সামান্য এবং চাপটা এতোটাই হাল্কা যে এটি আমাদের ব্রেনের কোষকে ধংস করার মতো যথেষ্ট নয়। যারা কয়েকটি হাঁচি দিয়ে সহজেই কাবু হয়ে যায় তাদের ব্রেনে হাঁচির চাপ পড়ার জন্যে মাথাব্যথা হবার সম্ভাবনা থাকে”।
হাঁচির জন্যে যে ব্রেন কোষ নষ্ট হয়ে যায়, এই ধারণাটা এসেছে ব্রেন স্ট্রোকের কাছ থেকে। কারণ ব্রেন স্ট্রোকের জন্য ব্রেনে অনেক চাপ পড়ে এবং ব্রেন কোষ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু হাঁচি দেবার জন্যে ব্রেনে খুবই সামান্য চাপ সৃষ্টি হয় যা ব্রেন কোষকে নষ্ট করতে পারে না, বরং হাঁচির জন্য অল্প সময়ের জন্যে খুব সামান্য মাথাব্যথা হতে পারে।
- হৃদপিন্ডের উপর হাঁচির প্রভাব-
অনেককে বলে থাকে যে হাঁচি দেবার সময় হৃদপিন্ড বন্ধ থাকে। কিন্তু একথা মোটেও ঠিক নয়। বরং হাঁচির জন্য আমাদের বুকের ভেতরে যে বাতাসের চাপের পরিবর্তন হয় তার জন্যে আমাদের দেহে রক্তের পরিবহনের গতি বেড়ে যায়, যা কিনা আমাদের হৃদপিন্ডের ছন্দের পরিবর্তন করে থাকে।
- হাঁচি থেকে বাঁচার উপায়-
হাঁচি দেয়াটা কষ্টকর। আর এই কষ্টকর ঘটনাটা থেকে সবাই বাঁচতে চায়। হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে অনেক ভালো থাকেন। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে একটি-দুটি বা একটির পর একটি সিরিজ হাঁচি চলে আসে। আবার অনেকে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অতিমাত্রায় ঘুম আসবার ভয়ে অনেকে ওষুধও খান না। কিন্তু সিরিজ হাঁচি দেবার জন্য ক্লান্ত হয়ে আবার ঠিকই ঘুমান। জেগে থাকলে হাঁচি দিয়ে কারোবা দিনটাই মাটি হয়ে যায়। নিচের হাঁচি থেকে বাঁচার উপায়গুলো পড়ে দেখুন যে হাঁচি থেকে বাঁচতে পারেন কিনা।
১। যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, তা খাবেন না।
২। ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক বা নাক-বন্ধনী লাগিয়ে শ্বাস নিন।
৩। প্রা্ণির লোম, ফুলের পরাগ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪। সুতি কাপড়-চোপড়ে উপস্থিত মাইট মেরে ফেলতে তা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন বা রৌদে দিন।
৫। রুমান ব্যবহার করুন।
নিচে ছবিসহ কিছু পদ্ধতি দেখানো হলো।
আসন্ন হাঁচি থামানো-
১। নাক চেপে ধরাঃ- নাকের ডগা চেপে ধরুন এবং টেনে প্রসারিত করুন। তবে যেন সেটা ব্যথাদায়ক না হয়। এভাবে নাকের তরুণাস্থি প্রসারিত করলে হাঁচি থামবে।
২। নাক ঝাড়ুনঃ- যখন আপনার মনে হবে যে হাঁচি আসছে তখন রুমান বা টিস্যু নিয়ে নাক ঝাড়ুন। এটা প্রথমেই আপনার সাইনাস্কে পরিষ্কার করে দিবে যা কিনা হাঁচির কারণ হতে পারে।
৩। উপরের ঠোঁটে হাল্কা চিমটি দিনঃ- বৃদ্ধা এবং তর্জনী আঙুল দিয়ে উপরের ঠোঁটে চিমটি দিয়ে উপরে নাকের দিকে টানুন।
৪। জ্বিহবা ব্যবহার করুনঃ- জ্বিহবা দিয়ে উপরের পাটির মাঝ বরাবর দুটি দাঁতের পেছনের দিকে চাপ দিন। জোরে চাপ দিন যাতে করে মুখের ভেতরে চোয়ালের উপরেও চাপ পড়ে এবং এতে করে আপনার নাকের ভেতরে চুলকানো বন্ধ হয়ে যাবে।
৫। ঝুঁকে অপেক্ষা করুনঃ- ঘরে টেবিলের কাছে যেয়ে ঝুঁকে যান এবং টেবিলের ১ ইঞ্চি বা ২•৫ সেন্টিমিটার উপরে মাথা এনে জ্বিহবা বের করুন। হাঁচি আসা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। এটা ৫-৭ সেকেন্ড সময় নেবে।
৬। কাতুকুতু দিনঃ- যখন আপনার হাঁচি আসছে তখন জ্বিহবার অগ্রভাগ দিয়ে মুখের ভেতরে উপরের দিকে তালুতে কাতুকুতু দিন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার হাঁচি দেবার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে থাকুন। এটা ৫-১০ সেকেন্ড সময় দেবে।
৭। নিজের হাতের মাধ্যমে মনোযোগ অন্যদিকে করাঃ একহাতের বৃদ্ধা আঙুল প্রসারিত করে হাতের অন্যান্য আঙুল থেকে টান-টান করে দূরে নিয়ে যান। এরপর বৃদ্ধা আঙুল এবং অন্যান্য আঙুলের মধ্যে অন্য হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে খোঁচা দিন।
৮। দুই ভ্রুর মাঝে ধরুনঃ- এটা এমন একটা স্থান যেখানে চাপ সৃষ্টি করলে যেমন মাথাব্যথা কমে তার সাথে আবার হাঁচি হবার সম্ভাবনাও কমে যায়।
৯। নাকের নিচে চুলকে দিনঃ- মাথা সোজা রেখে আঙুল দিয়ে নাকের নিচে মাঝ ববাবর চুলকান। এতে করে হাঁচির সাথে যে সকল পেশি যুক্ত থাকে তাদের কিছু সংখ্যক পেশি শান্ত হয়ে যাবে।
১০। কানে হাল্কা চাপ দিনঃ- আপনার যদি মনে হয় যে হাঁচি আসছে তবে কানে লতি হাত দিয়ে ধীরে ধীরে নাড়ান। অনেক মানুষের সামনে হাঁচি থামাতে বা আড়াল করতে, এটা মনে হতে পারে যে আপনি আপনার কান নিয়ে খেলছেন।
১১। যদি আপনি কাউকে দেখেন যে সে হাঁচি দিতে উদ্যত হচ্ছে, তবে তক্ষণি উদ্ভট কিছু একটা কথা মুখ দিয়ে বলে ফেলুন। দেখবেন যে সে ব্যক্তির ব্রেন কিছু সময়ের জন্যে হাঁচি দেবার কথা ভুলে গেছে।
১২। রাগ করুনঃ- আপনার দাঁত দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরুন এবং দাঁতের পেছনে জ্বিহবা দিয়ে জোরে ধাক্কা দিন। এতে করে হাঁচি দেবার উত্তেজনা কমে যাবে।
১৩। কালো জিরা ব্যবহার করুনঃ- কালো জিরা নিয়ে গুড়ো করুন। এর পর এই গুড়ো হাতের তালুতে করে নাকের সামনে নিয়ে তা নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে টেনে নিন। এতে করে হাঁচি আর হবে না।
হাঁচি প্রায় কমানো- হাঁচি কমাতে সহায়তা করবে এমন কিছু টিপস্ –
১। অনেক খেলে বা পেট ভরে খেলে হাঁচি হয়। তখন আমাদের পাকস্থলি সম্পূর্ণ ভর্তি থাকে আর তার জন্যে অস্বস্তি বোধ হয়। ফলে হাঁচি ঠেকানো সম্ভব হয় না। তাই কম খাওয়া উচিত।
২। সান গ্লাস ব্যবহার করুন। ঔষধ খেতে পারেন। আর যদি মোটর গাড়ি চালান তবে সাবধান হওয়া উচিত।
৩। প্রস্তুত থাকুন যখন কিনা আপনি এমন একটি এলাকাতে প্রবেশ করছেন যেখানে আবহাওয়া হাঁচির জন্যে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন ঝাঁলের কাজ হচ্ছে যেখানে অথবা ফুলের পরাগরেণু আছে যেখানে, সেখানে প্রবেশের আগে সাবধাণতা অবলম্বন করা উচিত। হাতে টিস্যু রাখুন। টিস্যু ভিজিয়ে নাকের ছিদ্রের ভেতরে দিতে পারেন। গরম চা বা কফির বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে নিতে পারেন।
৪। যাদের অ্যালার্জির সমস্যাজনিত কারণে হাঁচি হয়, তাদের অ্যালার্জি জনিত উপাদানগুলো থেকে সবধানে থাকা উচিত। আমাদের চারপাশের আবহাওয়াতে উপস্থিত ধূলা-বালি, পরাগরেণু, মাইট অ্যালার্জি জনিত হাঁচির জন্যে দায়ী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এ ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন।
৫। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।গরম পানির ভাব নিন। যতটুকু সম্ভব ঠান্ডা খাবার পরিহার করুন।
৬। ঘুমানোর সময় মাথা উন্নত রাখুন।
৭। দুই নাসারন্ধ্রের নিচে বাইরের ধারে দিনে ৩০-৪০ বার হাল্কা চাপ দিন। এটি কিছু ক্ষণের জন্য আপনার হাঁচি কমাতে পারে।
৮। টক জাতীয় ফল এবং শাক-সবজি যেগুলো কিনা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার সেগুলি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে রাখুন।
৯। দিনে বেশ কয়েকবার নাকের স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
- হাঁচির মন্দ দিক-
রোগ জীবাণু ছড়ানোই হচ্ছে হাঁচির মন্দ দিক। তাছাড়া নাক-মুখ ধরে হাঁচি জোর করে ঠেকাতে গেলে মন্দ দিকটা ভাল মতো টের পাওয়া যায়। তাই হাঁচি একটা হোক কিংবা দশটা হোক ঠেকিয়ে রাখার চেয়ে দিয়ে দেয়া ভাল। মোটকথা হাঁচি আসার আগে নাক সুড়সুড় করলে আঙুল বা রুমাল দিয়ে চুলকে বা ডলে তা নিয়ন্ত্রণ করুন। কিন্তু হাঁচির জন্যে বুক ভরে বাতাস নেবার পর তা আর ঠেকাবার চেষ্টা করবেন না। আর যদি চেষ্টা করেন তবে নিচের সমস্যাগুলির কোন-কোনটি হতে পারে। হাঁচির সব মন্দ দিকগুলি একনজরে দেখা যাক।
১। ঘাড়ের বা কোমরের জয়েন্টে ব্যথা থাকলে হাঁচির কারণে টান লেগে তা বাড়তে পারে। অবশ্য দাঁড়িয়ে হাঁচি দিলে এই টানটা বেশি লাগে। তাই বসে হাঁচি দিন।
২। অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। যে সব মহিলাদের অস্টিওপোরসিস বা হাড় ক্ষয়ের সমস্যা আছে তাদের নাক ভেঙ্গেও যেতে পারে।
৩। শ্বাসকষ্ট-সহ বুকে ব্যথা হতে পারে।
৪। মাথাব্যথা হতে পারে।
৫। ঘুমঘুম লাগতে পারে। মোটকথা শরীর দুর্বল লাগতে পারে।
৬। চোখের সাদা অংশের রক্তনালী ছিড়ে যেতে পারে। ফলে চোখের সাদা অংশে দাগ হতে পারে।
৭। কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। অনেক সময় শ্রবণশক্তি কমে যায়। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হতে পারে, কান গরম হয়ে যায়।
৮। দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৯। গলার ভেতরের ত্বক ফেটে যেয়ে কফের সাথে রক্ত আসতে পারে।
রোগ-জীবাণু ছড়ানোর ক্ষেত্রে হাঁচি –
হাঁচি আমাদের গলার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে এবং প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি তরল কণা এটি সৃষ্টি করে। কিছু কিছু তরল কণা ঘন্টায় প্রায় ১০০ মাইল বেগেও বেরিয়ে আসতে পারে। এই তরল কণার মধ্যে বেশির ভাগের আকার ১০০ মাইক্রোনেরও কম হয়, অনেকটা আমাদের চুলের প্রস্থের সমান। তাদের অধিকাংশ এতোই ছোট যে আমরা তাদের খালি চোখে দেখতে পারি না।
আকারে বড় তরল কণা গুলি অভিকর্ষের জন্যে দ্রুত মাটিতে পড়ে যায়। আর ৫ মাইক্রোন বা তার থেকেও ছোট হাল্কা কণাগুলো মাটিতে না পড়ে বাতাসে ভেসে চারিদিকে ছড়িয়ে যায়।
ঘরের মধ্যে হাঁচি দিলে মেঝেতে পড়ে থাকা তরল কণাগুলি কিছুক্ষণ পর বায়ুবাহিত হয়ে যায়। ঘরে প্রবাহিত বাতাসের মাধ্যমে মেঝে থেকে হাঁচির সাথে বেরিয়ে পড়া জীবাণুগুলি বাতাসে ভাসা আরম্ভ করে। ঘরে মানুষের হাটা-হাটির জন্যও জীবাণুগুলি বাতাসে উড়ে বেড়াই।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি একজন অসুস্থ মানুষ হাঁচি দেয় তবে তার হাঁচির মাধ্যমে নিসৃত তরল কণাগুলি প্রায় ২০ লক্ষ বিভিন্ন প্রকারের ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম। মানুষের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতার উপর এই ভাইরাস গুলোর আক্রমনের হার নির্ভর করে।
- হাঁচির ভাল দিক-
হাঁচি আপনার দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। কারণ, এর মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে বিভিন্ন জীবাণু বের হয়ে যায়। সব ধরণের একটা বা দুইটা হাঁচিই আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ক্রিয়া মাত্র।
বাতাসে উপস্থিত জীবাণু, ধূলা, পরাগরেণুর ইত্যাদি আমাদের দেহে ফুসফুসের ভেতরে যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্যে আমাদের নাক প্রাকৃতিক ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। হাঁচি দিলে নাকে জমে থাকা এই ময়লা উপাদানগুলি সাফ হয়ে যায়।
যা কিনা আমাদেরকে সুস্থ থাকতে এবং ভালভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
কাঁপুনি, কাশি, হেঁচকি ওঠা আর হাই তোলার মতো হাঁচি-ও ইছানিরপেক্ষ ক্রিয়া। কিন্তু এদের মধ্যে হাঁচি-ই আমাদের দেহের জন্য উত্তম।
১। নাকে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস হাঁচির মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায়।
২।হাঁচির ফলে আমাদের নাকের ভেতরের ময়লা এবং জীবাণু বের হয়ে নাক পরিষ্কার হয়ে যায় এবং আমরা নিঃশ্বাস নিতে আরাম বোধ করি।
৩। আমাদের দেহের ভেতরে বিভিন্ন জীবণু, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য উপাদান যেমন মশা, মাছি বা অন্যান্য পোকা-মাকড়ের প্রবেশকে প্রতিরোধ করে হাঁচি।
৪। আবার হাঁচির ফলে আমাদের ব্রেন বেশ সক্রিয় হয় এবং
৫। আলস্য দূর হয়ে দেহ বেশ ঝরঝরা হয়ে যায়।
- স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভদ্র ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হাঁচির কৌশল-
অনেক ধরনের হাঁচি দিতে আমরা দেখি। কেউ জোরে, কেউ বা আস্তে হাঁচি দেয়। মাথায় চাপ পড়বে ভেবে কেউ হাঁচি চেপে যায়। আবার কেউ এতো জোরে হাঁচি দেয় যে তার আশে-পাশে উপস্থিত মানুষজন চমকে ওঠে। কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে, কেউ একটা হাঁচি দেয় আর কেউ অনেক গুলো বা সিরিজ হাঁচি দেয়। একটা বা দুইটা হাঁচি দেয়া ভাল। কিন্তু সিরিজ হাঁচি দেয়াটা মোটেও ভাল নয়।
আসলে অনেক ক্ষতিকর জীবাণু থেকে বাঁচার জন্যে হাঁচি হল আমাদের দেহের নিরাপত্তা বজার রাখার একটি বিশেষ উপায়। এটা একদিকে যেমন ইচ্ছানিরপেক্ষ তেমনি অন্যদিকে বিব্রতকর, অরুচিকরও বটে।
হাঁচি দেহের একটি স্বাভাবিক কার্যক্রম। অনেক সংস্কৃতিতে এটাকে অনেক অরুচিকর একটি ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে যখন একজন হাঁচি দেবার পর রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করে না। যাইহোক, অনেক মানুষই বিভিন্ন কারণে হাঁচি থামাতে চায়, এমন কি যিনি হাঁচি দিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন তিনিও। গ্রিনিচ বুক অব ওয়ার্ড রেকর্ড এর তথ্য মতে, ইংল্যান্ডের ওরচেস্তরশির শহরের বাসিন্দা ডন্না গ্রিফ্ফিথ টানা ৯৭৮ দিন প্রথম থেকে প্রতি মিনিটে একটি করে মোট এক মিলিয়নেরও বেশি হাঁচি দিয়ে গেছেন। এটাই ছিল হাঁচির সবচেয়ে দীর্ঘ রেকর্ড।
যখন বাইরে কোথাও আছেন যেখানে অনেক ময়লা বা জীবাণু তখন হাঁচি আসলে সেটি জোরে শব্দ করে দিতে পারেন। কিন্তু অফিসে মিটিংএর সময় বা কারোর সাথে কথা বলার সময় হাঁচি আসলে অনুমতি নিয়ে বাইরে চলে যান। হাঁচিকে বাঁধা না দিয়ে রুমাল ব্যবহার করে হাঁচি দিন। ফলে জীবাণু ছড়াবে না। হাঁচি ঠেকানো মোটেও উচিত না। একটি হাঁচি অনেক শক্তিশালী একটি প্রক্রিয়া।
এটা বলাবাহুল্য যে, নিজের আশে-পাশের মানুষের নিরাপত্তার জন্যে রুমাল বা টিস্যু হাঁচির সময় ব্যবহার করা উচিত। পকেটে রুমাল রাখার অভ্যাস করুন।
ভালোভাবে হাঁচি দেওয়ার অভ্যাস-
১। যেহেতু হাঁচি ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বের হয়, তাই এটা ততক্ষণাৎ আটকাতে গেলে মারাত্মক ভাবে আহত হবার সম্ভাবনা থাকে।
২। যদি আপনি অন্যদের আশেপাশে থাকেন তবে হাঁচি দেবার সময় আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। কারণ, হাঁচির মাধ্যমে নির্গত জীবাণু ৫ ফুট বা ১•৫ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। আর এই দূরুত্বে অনেক মানুষ থাকা সম্ভব।
রুমাল ব্যবহার করুন। রুমাল না থাকলে নাক-মুখের সামনে হাত দিন। পরে অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলুন।
৩। হাঁচির শব্দ কমাবার জন্যে রুমাল ব্যবহার করুন।
৪। আপনার পাঁজরে বা কোমরে যদি ব্যথা থাকে তবে হাঁচির ঝাঁকির জন্যে তা বাড়তে পারে। তাই এ অবস্থায় যতটুকু পারা যায় হাঁচির শক্তি কমিয়ে দেয়া উচিত। হাঁচি দেয়ার ঠিক পূর্বে মুখ দিয়ে বাতাস বের করে দিন। তাহলে হাঁচির শক্তি বা চাপটা কমে যাবে।
নাক ডলো, খুব জোরে নাক দিয়ে বাতাস ছাড়ো, এবং নাকের নিচে উপরের ঠোঁটে চাপ দাও। তাহলে হাঁচির সম্ভাবনা কমে যাবে। কিন্তু একবার হাঁচি শুরু হয়ে গেলে, ভালো হয় এটা দিয়ে যাওয়া… বলেছেন ওয়ান্ড।
- তথ্যসূত্র-
১। http://kidshealth.org/kid/talk/qa/sneeze.html
২। http://www.loc.gov/rr/scitech/mysteries/sneeze.html
৩। http://www.nlm.nih.gov/medlineplus/ency/article/003060.htm
৪। http://www.wikihow.com/Stop-a-Sneeze
৫। http://www.webmd.com/allergies/features/11-surprising-sneezing-facts
৬। http://healthfitnessrevolution.com/sneezing-is-good-for-your-health/
৭। http://the-benefits.blogspot.com/2013/03/sneezing-healthy-benefits.html
৮। http://www.mnn.com/health/allergies/questions/what-happens-to-your-body-when-you-sneeze
৯। http://www.huffingtonpost.com/2014/03/14/sneezing-facts-didnt-know_n_4936611.html
১০। http://scicurious.scientopia.org/2011/01/10/the-sneeze/
১১।http://chealth.canoe.ca/channel_section_details.asp?text_id=4749&channel_id=2098&relation_id=74113
১২।http://www.bendbulletin.com/news/1441089-151/sneezing-kills-brain-cells
১৪। http://www.livescience.com/32776-is-it-safe-to-hold-in-a-sneeze.html
১৫। http://www.livescience.com/3686-gross-science-cough-sneeze.html
Leave a Reply