এপিজিনোমিক রোডম্যাপ

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

আমাদের কোন অংশটি লেখা জিনোমে আর কোন অংশটি দৈনন্দিন জীবনাচরনের ফল, সেই বিষয়ক একটি গবেষনা যাকে বলা হচ্ছে ‘এপিজিনোম রোডম্যাপ’ তার প্রকাশনা গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী তারিখে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতি বনাম প্রতিপালনের বিতর্কটা আরেকটু চড়া হলো।

Roadmap Epigenomics Mapping « Adafruit Industries – Makers, hackers,  artists, designers and engineers!

আমদের জিনগত তথ্যের নিয়ন্ত্রক হিসেবে যা থাকে সেটাই হলো এপিজিনোম। জিনোমটা যদি শব্দের ক্রম হয়, তাহলে এপিজিনোম হচ্ছে দাড়ি, কমা সহ পুরো প্যরাগ্রাফ। যা প্রকৃতপক্ষে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন যাতে মিথাইল গ্রুপ, এসিটাইল গ্রুপ এরা ডিএনএর সাথে যুক্ত হয় এবং জিন সক্রিয়করন, নিষ্ক্রিয়করনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

জীববিজ্ঞানী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের একটি সংঘবদ্ধ দল এই গবেষনার মূলে। এপিজিনোমিক ম্যাপ থেকে বিভিন্ন জিনের অভিব্যাক্তির প্রভাবক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সম্ভব যা চিকিৎসাক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী কোষসমূহকে যথাযথভাবে সনাক্ত করতে কাজে লাগবে। আসন্ন কোন ক্ষতিকর এপিজিনোমিক পরিবর্তন ঠেকাতে কিভাবে জীবনাচরন সাজাতে হবে সেই তথ্যও এর থেকে পাওয়া সম্ভব হবে।

গবেষকরা এখনো বুঝার চেষ্টা করছেন কিভাবে এবং কখন এপিজেনেটিক ট্যাগগুলো যুক্ত হয়, কিন্তু ব্যাপারটা পরিবেশের প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল। আমরা আমাদের বাবা-মা’র থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে কিছু এপিজেনেটিক তথ্য পেয়ে থাকি, এমনকি গর্ভাবস্থার মায়ের খাদ্যাভ্যাসের কারনেও সন্তানের এপিজিনোমে পরিবর্তন ঘটে। তবে অন্যান্য এপিজিনোমিক ট্যাগ কোন পরিবেশে জীবনধারন করছি তার সাথে সম্পর্কিত।

দেহের কোষগুলো একই ডিএনএ বা জিনোম বহন করা সত্বেও এপিজিনোমের কারনেই বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও কার্যাবলীর প্রকাশ ঘটে। তাই এর ম্যাপ তৈরির জন্য এপিজিনোমিক্স রোডম্যাপ কনসোর্টিয়াম হাজার হাজার পরিনত ও ভ্রূনাবস্থিত টিস্যু থেকে কোষ সংগ্রহ করে বিশ্লেষন করেছেন। এখন পর্যন্ত তারা মস্তিষ্কের কোষ থেকে শুরু করে চামড়ার কোষ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কোষের জন্য ১২৭ টি এপিজিনোম তৈরি করেছেন। তারা সুস্থ এপিজিনোমের সাথে বিভিন্ন রোগ যেমনঃ ডাইবেটিস, ক্রন’স ডিজিস, ও আলঝেইমারের জিনগত উপাদানের পারস্পরিক তুলনামূলক তথ্যও প্রকাশ করেছেন। আলঝেইমারের এপিজিনোমিক তথ্য থেকে জানা গেছে মগজের নিউরন এবং দেহের রক্ষীকোষ দুটোই আসলে এই রোগের সাথে জড়িত। দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যাবস্থায় ঝামেলা অন্তত আংশিকভাবে হলেও আলঝেইমারের জন্য দায়ী।

এর থেকে আশা করা যায় একদিন চিকিৎসকগণ নিয়মাফিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার সময় আপনার এপিজিনোমে চোখ বুলিয়ে বলতে পারবেন প্রকৃতি বনাম প্রতিপালনের মিথস্ক্রিয়া আপনার কোষকে কোন অবস্থায় রেখেছে এবং তা কতদূর নিতে পারে। এই এপিজিনোমিক স্ক্যান আরো বলতে পারে যেকোন পরিস্থিতিতে ক্ষতিকর এপিজেনেটিক ট্যাগ যুক্ত হবার প্রবনতা এবং আপনার জীবনযাপন কিভাবে এই ঝুঁকিকে প্রভাবিত করছে। পার্সোনালাইজড মেডিসিনেও এই এপিজেনেটিক ম্যাপিং গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রজেক্টের ওয়েবপেজঃ http://www.roadmapepigenomics.org/







বিজ্ঞান নিউজলেটার

যুক্ত হোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান নিউজলেটারে!
আমরা সাপ্তাহিক ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। 
এ নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। থাকবে নতুন লেখার খবরও।


Loading

লেখাটি 223-বার পড়া হয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা

  • আইনস্টাইন জিগজ্যাগ

    আইনস্টাইন জিগজ্যাগ

  • ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কেমন হতো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

    ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কেমন হতো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

  • মুরগির মাংসে শনাক্ত ইশেরিশিয়া আলবার্টিঃ  অজান্তেই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি

    মুরগির মাংসে শনাক্ত ইশেরিশিয়া আলবার্টিঃ অজান্তেই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি

  • আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

    আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

  • ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

    ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

  • কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!

    কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. এপিজিনোম কথাটা প্রথম শুনলাম। এটাও কি কোনভাবে “সিকোয়েন্সিং” করে?

    1. ওনারা এটাকে ম্যাপিং বলছেন। স্যাম্পল সংগ্রহের পরে বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন ক্রোমাটিন ইমিউনোপ্রেসিপিটেশন, ডিএনএ ডাইজেশন, বাইসালফাইট ট্রিটমেন্ট, মিথাইলেটেড ডিএনএ ইমিউনোপ্রেসিপিটেশন, আরএনএ প্রোফাইলিং এসব থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এপিজিনোম ম্যাপিং করা হয়েছে।

Leave a Reply