বিজ্ঞান ব্লগে এটি আমার প্রথম লেখা । বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পথচলা খুব বেশি দিনের নয়। তবে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রথম থেকে জীববিজ্ঞানের প্রতি কেন জানিনা একটা আলাদা ভাললাগার অনুভূতি কাজ করে।তাই সেই ভালবাসা আর ভাললাগা বিষয় গুলিকে একত্রিত করে ছড়িয়ে দিতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আজকে বলব জীবনের বিজ্ঞানের কথা আর জীবনের বিজ্ঞানের সৌন্দর্যের কথা।জীবকে জানার ইচ্ছা আমাদের সবারই থাকে। কিছু প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরঘুর করে। যেমন: আমাদের চারপাশে যে কত নানারকম জীব দেখি- এদের উদ্ভব কিভাবে হল? মানে কিভাবে তারা এই পৃথিবীতে প্রথম আসলো, কিভাবে তারা চলে ফিরে বেড়াচ্ছে? খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমাচ্ছে? কেন আমাদের হাড়ের সঙ্গে কুমিরের হাড়ের মিল আছে? কেন বানর দেখতে আমাদের কাছাকাছি, কিন্তু গাছপালা দেখতে একদম অন্যরকম? ডাইনোসররা কেন পৃথিবীতে ছিল আর এখন নাই? আসলে প্রাণ মানে কি? গরুটা ঘাস খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে, কিন্তু আমরা পারিনা, খেতে ভালও লাগেনা আমাদের, কেন? কিভাবে প্রথম প্রাণ তৈরি হয়েছে? এইসব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে আমাদের মনে। রাতের আকাশের দিকে তাকালে কত শত নক্ষত্র চোখে আসে আমাদের! সেগুলির কোনটিতে কি প্রাণের বিকাশ ঘটেছে? আর সেখানের জীবগুলি আমাদের মতই কিনা ! কত শত চিন্তা ভাবনা খেলে যায় আমাদের নিজের জগতে!
আমাদের অস্তিত্ব জৈবনিক এবং আমাদের পরিমন্ডল জীবজগত থেকে অবিচ্ছিন্ন। জীবজগত এবং জৈবনিক সকল প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং পরিণত উপলব্ধি তাই আধুনিক মানুষের পূর্ণাঙ্গতার অপরিহার্য ভিত্তি। জীব এবং জৈবনিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে উন্নত এবং স্পষ্ট ধারণা, জগতকে ব্যাখ্যা করা এবং নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি তৈরী করে থাকে। অন্ততঃ সেদিক থেকে হলেও জীববিজ্ঞানের গুরুত্ব প্রকৃতপক্ষে অনস্বীকার্য।আমাদের দৃষ্টিভংগির উন্নয়ন আর মানসিকতায় বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদের আলো প্রদর্শন করতে বিজ্ঞানের এই শাখাটির জুড়ি মেলা ভার। আর তাই জীববিদ্যা শুধু বিজ্ঞানের শাখায়ই নয় বরং যুগপৎ ভাবে ভূমিকা রেখেছে মানুষের মননশীলতা আর চিন্তাশীলতার জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে।
আসলে আমরা যদি বিজ্ঞানের ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখা যাবে জীববিজ্ঞানের অনুশীলন হয়েছে অনেক পরে এসে ।যেখানে পদার্থবিদ্যা কিংবা গণিতের অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজ হয়েছে মানবসভ্যতার প্রারম্ভ থেকেই।আর সত্যি কথা বলতে কি জীববিজ্ঞান প্রথম অনুশীলনের আদি থেকেই সম্মুখীন হয়েছে অনেক ভুল এবং ত্রুটিপূর্ণ ধারণার।এটা সত্যি যে, জ্ঞান যেখানে আটকে গেছে সেখানে ভীড় করেছে আলৌকিকতা, অতিপ্রাকৃতিক শক্তি, কিন্তু সেখানেই তো মানব অনুসন্ধিৎসা থেমে থাকেনি। আবার যখন নতুন এবং পরিবর্ধিত জ্ঞানের আলোয় আগের অজানা বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছে তখনই সে সব বাধা অতিক্রম করে পুরনো ভুলগুলোকে ভেঙ্গেচুরে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানে যে বিপ্লব ঘটিয়েছে, ঠিক একই ধরণের বিপ্লব ঘটিয়েছে ১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন এবং অ্যালফ্রেড রাসেলের প্রস্তাবিত বিবর্তন তত্ত্ব। আসলে এরপর থেকেই যেন জীববিজ্ঞান পেল তার প্রকৃত পথ । আর সেজন্যই ডবঝানস্কি বলেছিলেন –
“বিবর্তনের আলোয় না দেখলে জীববিজ্ঞানের কোন কিছুরই অর্থ থাকে না”
তা সে যাই হোক না কেন অন্তত জীবনের সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা পরিণত হয় মানুষের জন্যে ভালবাসায় ,জীবনের প্রতি ভালবাসায়। আমরা সকলেই জানি জীবনের সৌন্দর্যের অনন্যতা সম্পর্কে। আর জীববিজ্ঞানের মত সুন্দর আর পরম ভালবাসার কি হতে পারে যেখানে জীবনের রহস্য উন্মোচিত হয় ! যেখানে সমগ্র প্রাণের কথা দ্বিসূত্রের একটা মালায় একের পর এক বর্ণিত হতে থাকে!
আসলে জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা আর সেই সুন্দর জীববিজ্ঞানের আলোয় মুগ্ধ হওয়া থেকে আমার এই সিকুয়েন্স লেখা্র সূচনা। জীবনের গল্পের নানা চমকপ্রদ কাহিনী আর ভালোলাগা নিয়ে এরপর দেখা হচ্ছে এখানেই। জীববিজ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হোক ভূবনলোক!
Dedication and Inspiration: The whole sequence is for Arpita who inspires me everytime.
Leave a Reply