ছারপোকাকে তো আমরা সবাই চিনি। তাই না? ছারপোকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুখখিস্তি (গালমন্দ) পাওয়া পোকা হিসেবেই চেনা হয়। একে কিন্তু সর্বত্রই পাওয়া যায়। আবাসন, হোটেল-রেস্তোরা; এমনকি বিভিন্ন রিচ হোটেলেও পাওয়া যায়। একে একপ্রকার রক্তচোষক পতঙ্গও বলা যায়। এদেরকে আবার পর্যটকদের লাগেজ, ব্যাকপ্যাকে পাওয়া যায়। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, তারা শোভাবর্ধক জিনিসের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। এছাড়া দোয়াতকালিতে লিপিবদ্ধ কোন লেখা যদি অনেকদিন পরে থাকে, তবে দেখা যায় এদের উপর ছারপোকার আক্রমণ। এদের অনুভূতির ব্যাপারটা মারাত্মক। তাইতো!
পোকামাকড়ে ইতিহাস কিংবা জীবন বৃত্তান্তের যেটাতেই হাত দিব না কেন; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এদের সংক্রমণের ব্যাপারটিই মূখ্য। করণ, স্বাভাবিকভাবেই বেশির ভাগ পোকামাকড় জীবন ধারণ করে অন্যের উপর নির্ভর করে। এতে অনেক বেশির ভাগেই দাতার(যার উপর নির্ভরশীল) কিছু সময় উপকার হলেও বেশির ভাগ সময়ই অপকার হয়ে থাকে। বিজ্ঞান লেখক ব্রোক বোরেল, যিনি ছারপোকা নিয়ে বেশ লেখালিখি করেছেন তিনি নিজেও ছারপোকার সংক্রমণের কবলে পরেছেন তার বাড়িতে এবং ভ্রমণেও। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন, ছারপোকা মানুষ ঘুমন্ত থাকার সময় চামড়ায় কামড়ের মাধ্যমে আক্রমণ করে থাকে।
গবেষণায় অনেকেই মতামত দিয়েছেন, ছারপোকা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বোরেল বলেছেন, কোন কীট-পতঙ্গই ক্ষতিকর ছাড়া নেই; এর মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। ছারপোকার লালার মাঝে এক রকম প্রোটিন আছে যা লাল লাল ফুসকুড়ির সৃষ্টি সহ অন্যান্য এলার্জির সংক্রমণ ঘটায়। এছাড়া এসব পতঙ্গ মানুষের শরীরে ময়লাযুক্ত একপ্রকার রস নিক্ষেপ করে যা এজমা (হাঁপানি জনিত) রোগের সংক্রমণ ঘটায়। এছাড়া ছারপোকার আক্রমণে এনিমিয়া নামক রক্তশূন্যতার রোগও হয়ে থাকে।
বোরেল ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে ঘুরে কিছু ছারপোকা সংগ্রহ করেছে গহীন জঙ্গলের কিছু চিলেকোঠা থেকে। তিনি গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন ছারপোকার সাথে মানুষের প্রথম যোগসূত্র ঘটেছিল ২০০,০০০ বছর আগেই। সম্ভবতঃ যখন আমাদের পূর্বপুরুষেরা গুহায় যাওয়া আসা করতো তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের তাকিদে।
প্রাচীন পূর্বপুরুষদের কাছে ছারপোকার ব্যাপারটি খুবই পরিচিত ছিলো, বলেছেন বোরেল। গ্রীক নাট্যকার এরিস্টোফোনিস পঞ্চম শতাব্দিতে উল্ল্যেখ করেছেন মিশরীয়রা এদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন জাদুমন্ত্র পালন করত। এতে নাকি আবার পতঙ্গগুলো সেসব এলাকা থেকে চলেও যেত! এর আগে একই কথা উল্ল্যেখ করেছেন পেপিরাস তৃতীয় শতাব্দিতে।
২০০,০০০ বছর আগের এই পতঙ্গটি আজও আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং এটি এসলেই ক্ষতিকর। এটাকে নিরবঘাতি পতঙ্গও বলা যেতে পারে। বর্তমানে এদের ক্ষতিকে নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য ডিডিটি সহ আরো কিছু কীটনাশক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এটাই, বেশির ভাগ ছারপোকার কীটনাশক প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে এবং এতে করে তাদের প্রজাতির ধ্বংস হচ্ছে না।
সূত্রঃ https://www.sciencenews.org
Leave a Reply