আমাদের নৈসর্গিক এই মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু মৌলিক সূত্র রয়েছে, এই ধারনার সাথে আমরা সবাই অভ্যস্ত। আমরা নিজেরাই এই সূত্রগুলোর গাণিতিক প্রকাশ থেকে বিভিন্ন ঘটনা বা প্রকৃয়া যেমন একটা ফুটবলের গতিপথ, পারমাণবিক চুল্লীর চেইন রিঅ্যাকশন কিংবা মোবাইল ফোন থেকে টাওয়ারের সংকেতের আদান প্রদানে সিস্টেমের আচরনকে অনুমান করতে পারি। তবে জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এমনটা বলা কঠিন। পদার্থবিজ্ঞানে F=ma এর মত সার্বজনীন সূত্র জীববিজ্ঞানেও আছে কিনা তা আমরা এখনো জোর দিয়ে বলতে পারিনা। তবে দিন দিন এমন নজিরের সংখ্যা বাড়ছে যা ঐক্যবদ্ধ গাণিতিক নীতির কথা বলে। জীবনের পেছনে কি আসলেই কোন সুন্দর গাণিতিক গল্প রয়েছে? এই লেখায় জিনতত্বের সাথে জড়িত গণিতের সম্পর্কে সামান্য জানবো।
আমরা বেশিরভাগই কোন না কোন দিক দিয়ে দেখতে শুনতে আমাদের বাবা-মা কিংবা ভাই বা বোনের মত। তবে একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে কখনোই পুরোপুরি তাদের মত নই। তবে চেহারা বা স্বভাবে এই কম-বেশি মিল আসে কিভাবে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই বৈশিষ্ট্যের সঞ্চরনই হল বংশগতি। আর বিজ্ঞানের যেই শাখায় এসব নিয়ে পড়ালেখা করা হয় তাকেই বলে বংশগতিবিদ্যা। জিনের মাধ্যমে এই বংশগতির বিস্তার বলে হাল আমলে একে জিনতত্বও বলা হয়।
বহু বছর আগে হিপোক্রেটিস বলে গেছেন, প্রাণির সারা দেহের অংগগুলো থেকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কণিকা এসে জনন কোষের মধ্যে জমা হয়। তিনি এইসব কণিকাকে নাম দিয়েছিলেন ‘প্যানজিন’। এর পর বহু তত্ব ও বাদের বাদানুবাদের পর ১৯ শতকের শুরুতে ‘ব্লেন্ডিং হাইপোথেসিস’ নামক হাইপোথেটিকাল মডেল জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এতে বলা হয় বাবা-মায়ের থেকে বৈশিষ্ট্যে গুলো এসে ব্লেন্ড হয়ে সন্তানে প্রকাশিত হয়। তবে এতে সমস্যা ছিলো যেটা তা হলোঃ এক প্রজন্মে কোন কোন বৈশিষ্ট্য গায়েব হয়ে গিয়ে পরের কোন প্রজন্মে সেটা কিভাবে আবার ফিরে আসে তা ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
১৮৬৬ সালে এক ধর্মযাজক ‘গ্রেগর জোহান মেন্ডেল’ বলেন, বাবা-মায়ের থেকে বৈশিষ্ট্যগুলো সন্তানে যাওয়ার পরেও তারা প্রজন্মান্তরে অক্ষত থাকে, এবং কিছু নির্দিষ্ট প্রকৃয়া ও শর্তসাপেক্ষে কোন কোন প্রজন্মে প্রকাশিত হয়। মেন্ডেল তার প্রকাশনাগুলোতে বৈশিষ্ট্যের ভৌত রূপকে ফ্যাক্টর নাম দেন। পরে ১৮৮৯ সালে আইনজীবি, রাজনীতিবিদ, নেদারল্যান্ডের এককালের প্রধানমন্ত্রী হুগো ডে ভ্রিস এর নাম দেন প্যানজিন। এই ঘটনার ২০ বছর পর ডেনমার্কের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও জেনেটিসিস্ট উইলহেম জোহানসেন এর থেকে প্যানপ্যানানি বাদ দিয়ে শুধু ‘জিন’ অংশটুকু রেখে দেন। ওনার সাথে আমার জন্মদিন মিলে যায় বিধায় আমি বেশ শ্লাঘা অনুভব করে থাকি।
যাই হোক, গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র মেন্ডেল গীর্জার বাগানে মটরশুটি গাছ লাগিয়ে যুগান্তকারী এক গবেষনা করেন, দূর্ভাগ্য যে তার জীবদ্দশায় এই গবেষনা মোটেও পাত্তা পায়নি। তার এক্সপেরিমেন্ট মোটামুটি এমন ছিলো যে তিনি হলদে রঙ্গের মটরশুটির সাথে সবুজ রঙ্গের মটরশুটির পরাগায়ন করার পর চারা পেলেন শুধু হলদে মটরশুটির(সবুজ গেল কই?)। জেনে রাখুন এরা হলো প্রথম প্রজন্ম বা জিনতত্বের ভাষার F1। এর পর তিনি এই হাইব্রীড হলদে গাছগুলোর মধ্যে ক্রস করার পর যেই চারাগুলো পেলেন তার মধ্যে হলুদ আর সবুজ দুইটাই পেলেন। এরা দ্বিতীয় প্রজন্ম বা F2। তার মানে আগের প্রজন্মে এই সবুজ বৈশিষ্ট্য পাশাপাশি থাকলেও হলদে বৈশিষ্টের ফ্যাক্টর, সবুজ বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টরের ওপর প্রকট বিধায় সেটা আর প্রকাশ হতে পারেনি। তাই সবুজ এখানে প্রচ্ছন্ন।
প্রতিটা বৈশিষ্ট্য এক জোড়া ফ্যাক্টরের দ্বারা নির্ধারিত। এর জোড়ার একটা আসে বাবার থেকে, আরেকটা আসে মায়ের থেকে। এখন আমরা জানি এই ফ্যাক্টরগুলোকে বলে অ্যালীল, যা একটি জিনের বিভিন্ন ‘রকমকে’ নির্দেশ করে। এখন মেন্ডেলের প্রাপ্তি অনুসারে দুই ধরনের অ্যালীল আমরা চিনি। একটা হোমোজাইগাস যেখানে দুইটা অ্যালীল এক, আরেকটা হেটারোজাইগাস, যেখানে দুইটা অ্যালীল ভিন্ন। এই অ্যালীলের সমাহারকে আমরা বলি জিনোটাইপ, আর জিনোটাইপের ফলে যে হলুদ বা সবুজ রং, কিংবা খাটো লম্বা আকৃতি পাওয়া যায় তাকে বলি ফিনোটাইপ।
অনেক মুখস্তবিদ্যা ঝাড়লাম, এবার চলেন একটু সংখ্যা নিয়ে খেলা করি। মেন্ডেল মটরশুটির নানা রকম বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটির জন্য F2 এর ফলাফল এরকমঃ
খোসার ধরন
ফোলা 822
সংকীর্ন 299
ফুলের অবস্থান
অক্ষীয় 651
প্রান্তিক 207
কান্ডের দৈর্ঘ্য
লম্বা 787
খাটো 277
বীজের ধরন
গোলাকার 5474
কুঁচকানো 1850
এগুলো কিন্তু সত্যিকারের তথ্য, কোন উদাহরন নয়। এবার আপনি যদি এদের অনুপাত বের করার চেষ্টা করেন তাহলে সবগুলোই কিন্তু 3:1 এর কাছাকাছি আসবে! কলেজে যারা বায়োলজি পড়েছেন তাদের কি মনে পড়ে? একই বৈশিষ্ট্যের(ধরা যাক বীজের ধরন) দুটি ভিন্ন রকম(গোলাকার এবং কুঁচকানো) উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস ঘটালে F1 এ শুধু গোলাকার বীজের চারা পাওয়া যাবে যদি গোলাকার ফ্যাক্টরটা প্রকট হয়। আর F2 তে “গোলাকার : কুঁচকানো” এই অনুপাত হয়ে যায় 3:1। এই ক্রসটিকে বলা হয় মনোহাইব্রিড ক্রস। মনো অর্থ হচ্ছে এক, যেহেতু একটা বৈশিষ্ট্য এখানে বিবেচ্য। এবার যদি দুটো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, যেমন খোসার ধরন এবং কান্ডের দৈর্ঘ্যের কথা চিন্তা করি(ডাইহাইব্রিড, ডাই মানে দুই), তাহলে এদের মধ্যে ক্রস ঘটালে কি হবে? মানে যদি ফোলা খোসার লম্বা গাছের সাথে সংকীর্ন খোসার খাটো গাছের ক্রস ঘটালে F1 এ সবগুলো গাছ হবে প্রকট বৈশিষ্ট্যের, অর্থাৎ ফোলা খোসার লম্বা গাছ। তাই এদের মধ্যে অনুপাত করার কিছু নাই। কিন্তু F2 তে কি পাবো? যারা জানেন তারা ধরে ফেলেছেন 9:3:3:1 অনুপাত পাওয়া যাবে। কিভাবে? মুখস্ত বিদ্যা থেকে কিংবা কষ্টসাধ্য পানেট স্কয়ারের মাধ্যমে। অথবা $(a+b)^2$ এর সূত্র প্রয়োগ করেঃ
\begin{align} (3+1)^2 &= 3^2 + 2.3.1 + 1^2 \\ &= 9 + 3 + 3 + 1
\end{align}
তাহলে এখানে ফিনোটাইপিক অনুপাতটা হবে এরকম(ধরে নিলাম ফোলা ও লম্বা বৈশিষ্ট্য দুটি যথাক্রমে কুঁচকানো এবং খাটোর ওপর প্রকট):
গাছের ধরন |
ফোলা লম্বা |
সংকীর্ন লম্বা |
ফোলা খাটো |
সংকীর্ন খাটো |
অনুপাত |
9 |
3 |
3 |
1 |
ট্রাই হাইব্রীড ক্রসের(৩ টা বৈশিষ্ট্য নিয়ে) ক্ষেত্রে এই অনুপাত হবে $(3 + 1)^3$ টেট্রা হাইব্রীডের ক্ষেত্রে এটা হবে $(3+1)^4$
মজার না বিষয়টা? হিসাব করলে দেখা যাবে এদের মধ্যেও একটি নির্দিষ্ট্য বৈশিষ্ট্যের দুটি রকমের অনুপাত 3:1 ই থাকবে সবসময়। বিশ্বাস না হলে এই একটা পানেট স্কয়ার দিয়ে দিলাম, নিজে মিলিয়ে দেখেন তো। এখানে “লম্বাঃ খাটো” এবং “হলুদঃ সবুজ” অনুপাত কত আসে?
এইবার প্রশ্ন করতে পারেন, আমি পিতা-মাতার জিনোটাইপ জানি। এখন এদের থেকে পানেট স্কয়ারের মাধ্যমে সব জিনোটাইপ/ ফিনোটাইপ পাবার দরকার নাই। শুধু একটা বা দুইটা নিয়ে কাজ করব, যেমন জানতে চাচ্ছি নির্দিষ্ট একটা জিনোটাইপের ফ্রিকোয়েন্সি। তখন কি করব? এখানেই চলে আসছে গণিতের মোস্ট ইন্টারেস্টিং একটা ফিল্ড। সম্ভাব্যতা…
জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে আমাদের সকলেরই টস করার অভিজ্ঞতা আছে। আমরা যদি এক টাকার কয়েন দিয়ে টস করে থাকি, তাহলে এর একটা পিঠে থাকে ‘শাপলা(S)’ এবং অন্য একটা পিঠে থাকে ‘মানুষ(M)’। তো, একবার টস করলে মানুষ ও আসতে পারে, আবার শাপলাও আসতে পারে। তার মানে সম্ভাব্য মোট ঘটনা দুইটা [M,S]। এখন এর মধ্যে যেকোন একটি ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতাকে গাণিতিক ভাবে $ \frac{1}{2}$ দিয়ে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ, M আসার সম্ভাব্যতা $\frac{1}{2}$, S আসার সম্ভাব্যতাও $\frac{1}{2}$। এদের যোগফল? হ্যা 1। মজার বিষয় হল, গণিতে সম্ভাব্যতা খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি শাখা, কিন্তু এর যত হিসাব নিকাশ তা 0 থেকে 1 এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
মেন্ডেলের সূত্র থেকে আমরা জেনেছি, কোন শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী ফ্যাক্টর কোষের মধ্যে জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং সন্তানের মধ্যে সঞ্চরনের সময় একে অপরের থেকে পৃথক হয়ে যায়। এবং অপর লিংগের থেকে আগত একই শ্রেণির ফ্যাক্টরের সাথে জোড়া বাধে। কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য যদি বাবা-মায়ের জিনোটাইপ আমাদের জানা থাকে তাহলে তার থেকে সন্তানের জিনোটাইপ কি হতে পারে, এবং এর ফলে ফিনোটাইপ(বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য) কি হতে পারে তা বের করতে পারি সম্ভাব্যতার সাহায্যে।
ধরা যাক, দুটি মটরশুটি গাছের জিনোটাইপ Tt (এটা কি হোমোজাইগাস নাকি হেটারোজাইগাস?) এবং আকৃতিতে লম্বা। এই জিনোটাইপে লম্বা হওয়ার ফ্যাক্টর(T) এবং খাটো হওয়ার ফ্যাক্টর(t) দুটোই রয়েছে, তবে ধরে নিলাম লম্বা হওয়ার ফ্যাক্টরটা অধিক শক্তিশালী, তাই এর উপস্থিতিতে খাটো হবার ফ্যাক্টর প্রকাশিত হতে পারেনা। এখন, এই দুটি গাছের মধ্যে যদি পরাগায়ন ঘটানো হয়, এবং এর ফলে যে নতুন ফল হবে, ফল থেকে বীজ হবে, বীজ থেকে গাছ হবে, সেই গাছটা কেমন হতে পারে?
সম্ভাব্যতার সূত্রে যদি আসি, তাহলে Tt থেকে দুই ধরনের গ্যামেট T এবং t পাওয়ার সম্ভাব্যতা যথাক্রমে $ \frac{1}{2}$ এবং $\frac{1}{2}$। খেয়াল করে দেখুন, বাবার থেকে কোন গ্যামেট আসলো, এবং মায়ের থেকে কোন গ্যামেট আসলো এই দুইটি ঘটনাই কিন্তু সম্পুর্ন স্বাধীন, এবং কেউ কাউকে প্রভাবিত করেনা। করে না মানে করেইনা, যেমন এই লেখাটি কোনভাবেই আজকে বাড়িতে কি রান্না হয়েছে তাকে প্রভাবিত করেনা। তাহলে, সম্বাভ্যতার উৎপাদ সূত্র অনুসারে সন্তানের জিনোটাইপ হবে, এই সম্ভাব্যতাগুলোর গুনফল। এইবার চলুন দেখি ব্যাপারটা কতভাবে ঘটতে পারেঃ
বাবার থেকে আগত গ্যামেট এবং এর সম্ভাব্যতা |
মায়ের থেকে আগত গ্যামেট এবং এর সম্ভাব্যতা |
চারা গাছের জিনোটাইপ এবং সম্ভাব্যতা |
T ½ X T ½ |
TT ¼ | |
T ½ X t ½ |
Tt ¼ | |
T ½ X T ½ |
Tt ¼ | |
t ½ X t ½ |
tt ¼ |
এই ফলাফলকে যদি বাংলায় বলি, তাহলে বলা যায়, পরাগায়নে অংশগ্রহনকারী দুটো গাছের উভয়েরই যদি জিনোটাইপ Tt হয়, তাহলে চারা গাছের জিনোটাইপ TT কিংবা tt হবার সম্ভাব্যনা $\frac{1}{4}$ তথা 25%, আর Tt হবার সম্ভাবনা $\frac{1}{4}+\frac{1}{4} =\frac{1}{2}$ অর্থাৎ 50%। আর যদি ফিনোটাইপ চিন্তা করেন, তাহলে লম্বা গাছ পাওয়ার সম্ভাবনাঃ
$P(TT)+P(Tt)=\frac{1}{4} + \frac{1}{4}+ \frac{1}{4} = \frac{3}{4}$ তার মানে 75%। তাহলে খাটো গাছের সম্ভাবনা 100 – 75 = 25%। তার মানে এখানে ভিন্ন ভিন্ন জিনোটাইপের অনুপাত আসছে $1:2:1$, আর ভিন্ন ভিন্ন ফিনোটাইপের অনুপাত পাওয়া যাচ্ছে আবারো $3:1$।
এখন আপনি চাইলে TT x tt, tt x tt, TT x TT এই জিনোটাইপ গুলোর মধ্যে ক্রস করে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন, চারা গাছের জিনোটাইপ এবং ফিনোটাইপ কেমন হতে পারে।
চলুন দেখা যাক, এই ধারনা গুলো কাজে লাগিয়ে কত ধরনের প্রশ্ন করা যায়। ধরা যাক একজন পুরুষ এবং স্ত্রী এর জিনোটাইপ নিম্নরূপঃ
স্ত্রী |
পুরুষ |
Aa Bb CC Dd EE |
AA Bb Cc Dd Ee |
এখানে স্ত্রী এবং পুরুষ থেকে কত রকম গ্যামেট আসতে পারে সেটা আপনার হোমওয়ার্ক থাকলো, আমি দেখিয়ে দেই স্ত্রীর থেকে শুধু AbCdE এই গ্যামেট আসার সম্ভাব্যতা কত,
Aa Bb CC Dd EE থেকে A আসার সম্ভাব্যতা $\frac{1}{2}$, b আসার সম্ভ্যাব্যতা $\frac{1}{2}$, C আসার সম্ভাব্যতা 1, d আসার সম্ভ্যাব্যতা $\frac{1}{2}$, এবং সর্বশেষ E আসার সম্ভাব্যতা 1, তাহলে সম্ভাব্যতাত উৎপাদ সূত্র অনুসারে AbCdE আসার সম্ভাব্যতাঃ $\frac{1}{2} \times \frac{1}{2} \times 1 \times \frac{1}{2} \times 1 = \frac{1}{8}$,
আর যদি প্রশ্ন করি AbCdE না আসার সম্ভাব্যতা? খুব সোজা, $1-\frac{1}{8} = \frac{7}{8}$
আবার এখান থেকে প্রশ্ন করা যায়, সন্তানে EE জিনোটাইপ থাকার সম্ভাব্যতা কত?
EE বহনকারী স্ত্রীর থেকে E আসার সম্ভাব্যতা 1, আর Ee বহনকারী পুরুষের থেকে E আসার সম্ভাব্যতা $\frac{1}{2}$। সুতরাং, জাইগোটে EE থাকার সম্ভাব্যতা $1 \times \frac{1}{2} = \frac{1}{2}$.
একটু জটিলতার দিকে(নাকি বাস্তব প্রয়োগের দিকে) যেতে চাইলে আমরা জানতে চাইতে পারি, সন্তানের জিনোটাইপ নির্দিষ্ট, যেমন Aa bb Cc dd EE হবার সম্ভাব্যতা কত?
এই ক্ষেত্রে প্রতিটি লোকাস আলাদা ভাবে হিসাব করতে হবে। Aa(স্ত্রী) এবং AA(পুরুষ) এর ক্রসের ফলে সম্ভাব্য জিনোটাইপগুলো হলঃ Aa এবং AA। তাহলে এখান থেকে আমাদের যেটা দরকার Aa এর সম্ভাব্যতা $\frac{1}{2}$ একইভাবে আমরা পাইঃ
Bb x Bb থেকে bb এর সম্ভাব্যতা ¼
CC x Cc থেকে Cc এর সম্ভাব্যতা ½
Dd x Dd থেকে dd এর সম্ভাব্যতা ¼
EE x Ee থেকে EE এর সম্ভাব্যতা ½
তাহলে, Aa bb Cc dd EE জিনোটাইপের সন্তান পাবার সম্ভাব্যতা $\frac{1}{2} \times \frac{1}{4} \times \frac{1}{2} \times \frac{1}{4} \times \frac{1}{2} = \frac{1}{128}$
এখন যদি জিজ্ঞেস করি পর পর দুইটি সন্তানের এই একই জিনোটাইপ পাবার সম্ভাব্যতা কত?
$\frac{1}{128} \times \frac{1}{128} = \frac{1}{16384}$!
এতটুকুই সব নয়। মেন্ডেলের সূত্রগুলোরই নানান রকম ব্যাতিক্রম রয়েছে। স্বাধীনভাবে সঞ্চরন সব ক্ষেত্রে সত্য নয়। জিনগুলোও আসলে একে অপরের প্রভাব মুক্ত নয়। খাটো এবং লম্বা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যে মাঝারী বলে কিছু থাকতে পারে সেটাও ভুলে যাবার নয়। তাই 3:1, 9:3:3:1 এই অনুপাতগুলোও অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নয়। এতসব ‘নয়’ এর মধ্যে তাহলে ‘হয়’ টা কি?
দিনে দিনে গণিত, জিনতত্ব ও জীববিজ্ঞানের সাথে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে যায়। সেই বিষয়গুলো সম্পর্কেই জানবো পরবর্তী পর্বে।
তথ্যসূত্রঃ
1. Warren J. Ewens, Mathematics, genetics and evolution, Quantitative Biology, 2013, 1: 9-31
2. Kenneth Lange, Applied Probability, Chapter 6
Leave a Reply