তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের উৎস – ১

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

আলো সৃষ্টি হয় কিভাবে? আলোকে ফোটন কণা হিসেবে যেমন বর্ণনা করা যায়, আবার তরঙ্গ দিয়েও করা যায়। যে কোন তড়িৎ-আধানসম্পন্ন কণাকে ত্বরাণ্বিত করলে তার থেকে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত হবে। তড়িৎ-আধান বা চার্জসম্পন্ন কণা কোনগুলি? যেমন ইলেকট্রনকে আমরা ধরি ঋণাত্মক আধান হিসেবে, আধান বা চার্জের পরিমাণ -১। আবার একটি প্রোটনের চার্জ হল +১। অর্থাৎ ইলেকট্রন বা প্রোটন দুটিরই চার্জের পরিমাণ এক, কিন্তু তাদের বৈশিষ্ট্য বিপরীত।

স্থিত তড়িৎক্ষেত্র: ইলেকট্রন বা প্রোটন স্থির থাকলে তার চারপাশে একটি তড়িৎ বা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়, একে আমরা $\vec E$ ক্ষেত্র বলব। এই ক্ষেত্রের রেখাগুলি হয় ঐ কণা থেকে উৎপন্ন হয় নয় সেই কণায় এসে মেশে রশ্মি-আকারে। যতক্ষণ ঐ কণা স্থিত থাকবে, অর্থাৎ নড়বে না, ততক্ষণ কোনো চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে না। নিচের ছবিটিতে একটি ধনাত্মক আধান থেকে $\vec E$ ক্ষেত্রের রেখা দেখানো হয়েছে।

চুম্বকক্ষেত্র: একটি আধানসম্পন্ন কণা যদি সমবেগে, অর্থাৎ শূন্য ত্বরণে ভ্রমণ করে, তাহলে সেই কণার চারপাশে বলয়াকারে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হবে, একে আমরা $\vec B$ ক্ষেত্র বলব। সমবেগ অর্থ একই গতিতে ভ্রমণ, যেমন সেকেন্ডে দুই লক্ষ কিলোমিটার। এই গতিবেগ যদি সময়ের সাথে না বদলায়, অর্থাৎ সেকেন্ডে দুই লক্ষ কিলোমিটারই থাকে, তবে আমরা তাকে সমবেগ বলব। তাহলে দেখা যাচ্ছে সমবেগে ভ্রমণরত একটি আধানযুক্ত কণার একটি তড়িৎ-ক্ষেত্র $(\vec{E})$ আছে ও সাথে সাথে একটি চুম্বকক্ষেত্রও $(\vec{B})$ আছে। চুম্বকক্ষেত্রটি কণাটিকে অনেকটা আংটির মত ঘিরে থাকে।

নিচের ছবিটিতে আমরা দেখছি একটি ইলেকট্রন $(e)$ বাঁ দিক থেকে ডান দিকে ভ্রমণ করছে $v$ গতিতে। এর ফলে কণাটির চারদিকে বামাবর্তী চক্রাকার চুম্বক ক্ষেত্র $\vec B$ সৃষ্টি হয়েছে। চুম্বকক্ষেত্রের মানটি যে দূরত্বের সাথে কমে যাচ্ছে সেটি $\vec B$ চক্রাকার ক্ষেত্রের ব্যাসার্ধ কমিয়ে দেখানো হয়েছে।

আমাদের রেফারেন্স কাঠামো যদি ঐ আধানের সাথে সাথে ভ্রমণ করে, একই গতিবেগে, তাহলে আমাদের মনে হবে আধানটি স্থির হয়ে আছে। সেই ক্ষেত্রে $\vec B$ ক্ষেত্রটি অদৃশ্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ যেই মুহূর্তে কণাটি আমাদের তুলনায় থেমে যাবে সেই মুহূর্তে চুম্বকক্ষেত্রটিও অদৃশ্য হয়ে যাবে। আবার আমরা যদি ঐ কণাটির দিকে দৌড়ে যায় তবে চুম্বকক্ষেত্রটি আবার আবির্ভূত হবে। দেখা যাচ্ছে চুম্বকক্ষেত্রটির আবির্ভাব কণাটির আপেক্ষিত গতির ওপর নির্ভর করে। বিশেষ আপেক্ষিকতার সূত্র ধরে দেখানো যায় যে এই চুম্বকক্ষেত্রটি গতি-অবস্থায় তড়িৎক্ষেত্রেরই অন্য এক ধরণের বহিঃপ্রকাশ।

সমগতিতে ভ্রাম্যমান কণার $\vec{E}$ ক্ষেত্র: একই সাথে এটা বলে রাখা দরকার সমগতিতে ভ্রাম্যমান কণার $\vec E$ ক্ষেত্র স্থিত অবস্থার মত সমভাবে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে না, বরং কণার গতিমুখের লম্বভাবে জড়ো হয়। নিচের ছবিটা দেখলে এই জিনিসটা একটু স্পষ্ট হবে। এখানে একটা $q$ ধনাত্মক আধান $v$ গতিতে ডানদিকে যাচ্ছে। আধানটির $\vec E$ ক্ষেত্র এমন কেন হয় সেই আলোচনাটা আমরা এখানে করছি না।

কিন্তু স্থিত-ক্ষেত্র বেশী দূর যেতে পারে না: কিন্তু সমবেগে চালিত কণার তড়িৎক্ষেত্র ও চুম্বকক্ষেত্র ঐ কণার সঙ্গে জড়িত, অর্থাৎ ঐ ক্ষেত্রগুলো কণাকে ত্যাগ করে দূরে ভ্রমণ করতে পারে না। ঐ তড়িৎ ও চুম্বকক্ষেত্রের মান দূরত্বের $(x)$ বর্গের ব্যস্তানুপাতিকভাবে কমে, অর্থাৎ $1/x^2$ হিসাবে পড়ে যেতে থাকে। তাই এই ধরণের সমগতি-সম্পন্ন কণা থেকে সৃষ্ট তড়িৎ বা চুম্বকক্ষেত্রের মান খুব দ্রুত শূন্যের কাছাকাছি চলে যায়।

তাই সমবেগে ভ্রমণশীল আধান থেকে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ হয় না: ধরা যাক আধানটি সমবেগে ভ্রমণ করছে এবং তার থেকে যদি তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ হচ্ছে। এখন আমরা যদি আধানের সাথে সমবেগে ভ্রমণ করি তাহলে মনে হবে আধানটি আমাদের তুলনায় স্থির আছে। তখন সেটির চুম্বকক্ষেত্র অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা জানি স্থির এবং সমবেগে ভ্রাম্যমাণ কাঠামোয় পদার্থবিদ্যার পরীক্ষার ফলাফল একই থাকবে। তাই স্থির আধান যদি তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ না করে, তবে সমবেগে ভ্রমণরত আধানও তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ করবে না।

তাহলে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণটা কি? সূর্য থেকে যে আলো আসছে সেটা তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, সেই বিকিরণ সূর্যের সঙ্গে আর সংযুক্ত নয়। রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন যে ধরণের বিকিরণের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে সেটাও আর এক ধরণের তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, মূলতঃ বেতার ও মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ। সেই বিকিরণ সৃষ্টি হচ্ছে মোবাইল ফোন টাওয়ারে বা ফোনে। তাইযে বিকিরণ তার উৎস থেকে বিযুক্ত হয়ে দূরে ভ্রমণ করতে পারবে সেটাই হল তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ। সেই বিকিরণের উৎসও হল তড়িৎ-আধানযুক্ত কণা, তবে সেই কণাকে সমবেগে চললে হবে না, তাকে ত্বরাণ্বিত হতে হবে।

তড়িৎ-চুম্বকীয় বর্ণালী: তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের মধ্যে অনেক ধরণের কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকতে পারে, যেমন বেতার বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলো থেকে অনেক বেশী, আবার এক্স রশ্মির দৈর্ঘ্য অনেক কম। অবশ্য শূন্যস্থানে এদের সবার গতিবেগ একই, সেটা আলোর গতিবেগের সমান। অর্থাৎ সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার। তাই তড়িৎ-চৌম্বকীয় বর্ণালীতে অবস্থিত সব ধরণের তরঙ্গ–বেতার, মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত, দৃশ্যমান, অতিবেগুনী, এক্স রে বা গামা রশ্মি–সবার চরিত্র একই। এদের সবাইকে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের মাধ্যমে বর্ণনা করা যাবে।

ত্বরণশীল আধান থেকে বিকিরণ: এবার দেখা যাক একটি ত্বরণশীল আধান। ত্বরণ অর্থ হচ্ছে সময়ের সাথে গতিবেগের পরিবর্তন। ঐ আধানের গতিবেগ যদি সেকেন্ডে দুই লক্ষ কিলোমিটারের বদলে সময়ের সাথে বেড়ে সেকেন্ডে দুই লক্ষ দশ হাজার কিলোমিটার হয়ে যায় সেটাকে ত্বরণ বলা হবে। যদি এক সেকেন্ডের মধ্যে গতিবেগ পরিবর্তনের ব্যাপারটা ঘটে তাহলে আমরা বলব ঐ মুহুর্তে ত্বরণের মান হচ্ছে সেকেন্ডে দশ হাজার কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডে। যে কোন ত্বরাণ্বিত আধান তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ করে। যে কোন মুক্ত আধান যদি সমবেগ বা স্থিত অবস্থা থেকে কোন ত্বরকের দ্বারা ত্বারিত হয়, তবে তার থেকে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ পাওয়া যাবে।

কিন্তু বিকিরণ এবং স্থিত $\vec E$ ও $\vec B$ ক্ষেত্রের মধ্যে তফাৎটা কোথায়? আগেই বলেছি একটি সমগতিতে ধাবমান কণার $\vec E$ এবং $\vec B$ ক্ষেত্র আধান কণার সঙ্গেই যুক্ত থাকে, কিন্তু তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ সেই কণা থেকে বিযুক্ত হয়ে অসীমে ধাবিত হয়। এই বিকিরণের $\vec E$ ক্ষেত্র আধান থেকে স্থিত ক্ষেত্রের মত রশ্মির আকারে বের হবে না, বরং স্পর্শকের আকারে বিকিরিত হবে। $\vec E$ ক্ষেত্রের সঙ্গে লম্বভাবে একটি $\vec B$ ক্ষেত্রও থাকবে। তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের দিক নির্দেশক ভেক্টরটি $\vec E$ ও $\vec B$ উভয়ের সাথেই লম্বভাবে থাকবে, এবং সেইদিকেই ঐ তরঙ্গের শক্তি সঞ্চারিত হবে।

নিচের ছবিটাতে ওপরে যা বলতে চেয়েছি সেটা একটু স্পষ্ট হবে। এখানে একটি ইলেকট্রন ডান দিকে ত্বরাণ্বিত হচ্ছে। সেটির $\vec E$ ক্ষেত্রটি খেয়াল করুন। কোন একটি মুহূর্তে কণাটির চারিদিকে একটি চক্র এঁকে $\vec E$ ক্ষেত্রকে সেটির স্পর্শক হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে। আর যেহেতু কণাটি ক্রমাগতই সরছে শেষাবধি এই $\vec E$ ক্ষেত্রটিকে কণাটির গতিমুখের সমান্তরাল ভাবা যেতে পারে। দেখাই যাচ্ছে ত্বরণশীল কণার $\vec E$ ক্ষেত্র স্থিত বা সমবেগে চালিত কণার $\vec E$ ক্ষেত্রের মত নয় একেবারেই। $\vec B$ ক্ষেত্রটি $\vec E$ ক্ষেত্রের সাথে লম্বভাবে অবস্থান করবে, গোলের মধ্যে ক্রস চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হচ্ছে $\vec B$ ক্ষেত্রটি পাতার মধ্যে ঢুকছে, আর গোলের মধ্যে ডট হচ্ছে ক্ষেত্রটি পাতা থেকে বের হচ্ছে।

ওপরের ছবিটিতে আর একটি যেটি লক্ষ্যণীয় সেটি হল $\vec{E} \times \vec{B}$ দিয়ে ঐ তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের দিক নির্দেশ করা হয়েছে, অর্থাৎ বিকিরণটি সমস্ত শক্তি নিয়ে কণাটি থেকে $\vec{E}$ এবং $\vec{B}$ উভয়েরই দিক থেকে লম্বভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে।

দ্বিমেরু বিকিরণ: এবার দেখা যাক এমন একটি সিস্টেম যেখান থেকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ পাওয়া সম্ভব। সেটা হচ্ছে মেরু বা ডাইপল বিকিরণ (dipole radiation)। দুটি আধান, একটি ধনাত্মক ও অপরটি ঋণাত্মক, কিন্তু তাদের পরম বা absolute মান সমপরিমাণ। অর্থাৎ একটির মান +১ হলে অপরটির মান হবে -১। আধানের মানকে যে ১ই হতে হবে তা নয়। আমরা বরং এই মানকে $q$ ধরে নিই। তাহলে একটি আধানের মান হবে $+q$, অপরটির হবে $-q$।

এখন যদি $+q$ ও $-q$ একটি সরল রেখায় একে অপরের সাথে জায়গা বদল করতে থাকে একটা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে, তাহলে ঐ দুটি আধান ক্রমান্বয়ে ত্বরণ ও মন্দনের মধ্যে দিয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রথমে তাদের গতি বাড়বে, তারপর গতি মন্দীভূত হয়ে শূন্য হয়ে যাবে, তারপর তাদের গতির দিক বদলাবে ও তাদের আবার ত্বরণ হবে। আমরা আগেই বলেছি বৈদ্যুতিক আধানের ত্বরণ বা মন্দন হলে তার থেকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ হয়।

যে কোন পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনসমূহ ও নিউক্লয়াসকে নির্ভর করে একটা ডাইপল ভাবা যেতে পারে। এখানে ঋণাত্মক ইলেকট্রন কণাসমূহ ধনাত্মক নিউক্লিয়াসের তড়িৎক্ষেত্রে ডাইপল আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ সৃষ্টি করে। মনে করা যেতে পারে ইলেকট্রনগুলো স্প্রিং দিয়ে পজিটিভ নিউক্লিয়াসের সঙ্গে যুক্ত। নিচের ছবিটিতে তাই বোঝানো হয়েছে। চিত্রটি আমি নিয়েছি Hecht এর Optics বই থেকে।


দ্বিমেরু বিকিরণের ফলে যে $\vec E$ এবং $\vec B$ ক্ষেত্র দেখা দেয় তা খুব জটিল, এই জটিল ক্ষেত্রের মধ্যে একটি অংশের মান উৎস থেকে দূরে যেতে যেতে অল্প অল্প ক্ষয় হয়, তাদের মান দূরত্বের $(x)$ সাথে $1/x$ ভাবে কমে। খেয়াল আছে কি আমরা বলেছিলাম সমবেগে ভ্রমণরত আধানকণা থেকে যে $\vec E$ বা $\vec B$ ক্ষেত্র পাওয়া যায় সেগুলো $1/x^2$ ভাবে কমতে থাকে। কাজেই ত্বরণযুক্ত কণার $\vec E$ এবং $\vec B$ ক্ষেত্র অনেক দূর যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই ক্ষেত্রগুলো কণা থেকে বিযুক্ত হয়ে ভ্রমণ করতে পারে। এবং বিযুক্ত ক্ষেত্রকেই তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ বলা হবে।

ওপরের ছবিটা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি দ্বিমেরু বিকিরণের ফলে $\vec E$ ক্ষেত্রটি ডাইপোলের সাথে সমান্তরালভাবে বিকিরিত হচ্ছে ও $\vec B$ ক্ষেত্রটি ডাইপোলের সাথে একটি লম্ব তলের মত বিকিরিত হচ্ছে।

ওপর থেকে $\vec E$ ক্ষেত্রটি দেখলে নিচের ছবিটির মত হবে। এখানে নীল রঙ দিয়ে $\vec E$ ক্ষেত্রটি বোঝানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে ক্ষেত্রটি ডাইপোল থেকে বিযুক্ত হয়ে ভ্রমণ করছে।

আমরা আমাদের বেতার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোনে যে বিকিরণ পাই সেটা বিদ্যুৎ সার্কিটে ইলেকট্রনের ত্বরণ ও মন্দনের ফলেই সৃষ্ট, কাজেই একে দ্বিমেরু বা ডাইপোল বিকিরণই বলে।

পরিবর্তনশীল $\vec E$ ক্ষেত্র $\vec B$ ক্ষেত্র সৃষ্টি করে এবং পরিবর্তনশীল $\vec B$ ক্ষেত্র $\vec E$ ক্ষেত্র সৃষ্টি করে: দেখা যাচ্ছে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের দুটি মূল অংশ- একটি হল তড়িৎ ক্ষেত্র, অপরটি হল চৌম্বকক্ষেত্র। এই দুটি ক্ষেত্র একে অপরের সাথে লম্বভাবে অবস্থান করে। নিচের ছবিটি থেকে এই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। $\vec E$ ক্ষেত্রটি ওঠানামা করছে, সাথে সাথে $\vec B$ ক্ষেত্রটি ওঠানামা করছে, আর বিকিরণটি বাঁ থেকে ডান দিকে যাচ্ছে। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ অনুযায়ী পরিবর্তনশীল $\vec E$ ক্ষেত্র $\vec B$ ক্ষেত্র সৃষ্টি করে এবং পরিবর্তনশীল $\vec{B}$-$\vec E$ ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। তাই বলা যায় শূন্যস্থানে $\vec E$ এবং $\vec B$ একে অপরকে রক্ষা করতে করতে ভ্রমণ করে।

লেখাটি 3,226-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. আমাকে একটু সময় নিয়ে পড়তে হয়েছে। আলো তৈরি হওয়ার বিষয়টা যথেষ্ট সরল করে লিখেছেন, ভেঙে ভেঙে, জটিলতা এড়িয়ে। বর্ণনা সহজ করতে গিয়ে বিষয়বস্তু হালকা করে দেয়ার কোন ভান নেই — এটাই সবচেয়ে ভালো লাগলো।

  2. দীপেন ভট্টাচার্য Avatar
    দীপেন ভট্টাচার্য

    আরফাত, লেখাটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য ও মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ। প্রথম দৃষ্টিতে কোনো ঘটনাকে মনে হবে সহজেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব এবং আমরা হয়তো সেই ব্যাখ্যাটিতেই সন্তুষ্ট থাকি। তারপর গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে সেই ব্যাখ্যা যথাযত না, এমন কি কিছু পরে দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিও যুক্তিসঙ্গত না হতে পারে। এমনই একটা ব্যাপার ছিল সুইচ টিপলেই আলো কেন জ্বলে ওঠে, কিংবা কাচের মধ্যে আলোর গতি শ্লথ কেন সেইসব ঘটনার মধ্যে। আমাদের সাধারণ পাঠ্যপুস্তকগুলো এসব ব্যাপারে কোনো সহজবোধ্য ধারণা দেয় না। আমাদের শরীরও তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের উৎস, এটির বর্ণালী কৃষ্ণবস্তুর বর্ণালীর মতন। ঠিক কিভাবে এই বর্ণালীর সৃষ্টি সেটা আবার বিশদভাবে কোথাও ব্যাখ্যা করা হয় না। যাইহোক এইসব ভাবনা চিন্তা থেকেই এইগুলো লেখা।

  3. Rahul Saha Avatar
    Rahul Saha

    অনেক সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় এই কঠিন বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।

  4. অনেক ভাল লাগলো…. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

  5. Auniruddha Pramanik Avatar
    Auniruddha Pramanik

    আমাকে একটু সময় নিয়ে পড়লাম। আমি একটা চিত্রও দেখতে পাইনি। লিংকে ক্লিক করলে Sorry, the parameters you provided were not valid এই লেখা দেখাচ্ছে। প্রবন্ধটি পড়ে কিছু প্রশ্ন মনে জেগেছে। ১. কোন চাজ স্থির থাকলে কেন স্থির তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি হয়? ২. একটি আধানসম্পন্ন কণা যদি সমবেগে, অর্থাৎ শূন্য ত্বরণে ভ্রমণ করে, তাহলে সেই কণার চারপাশে বলয়াকারে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হবে, কিন্তু কেন? ৩. কই সাথে এটা বলে রাখা দরকার সমগতিতে ভ্রাম্যমান কণার E ক্ষেত্র স্থিত অবস্থার মত সমভাবে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে না, বরং কণার গতিমুখের লম্বভাবে জড়ো হয়। কিন্তু কেন? ৪. ত্বরণযুক্ত কণার E এবং B ক্ষেত্র অনেক দূর যেতে পারে। কিন্তু কেন?

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 911 other subscribers