macro photography of water drops

কৃত্রিম বৃষ্টি : প্রকৃতি যখন হাতের নাগালে [২]


লিখেছেন

লেখাটি , , বিভাগে প্রকাশিত
[১ম পর্বের পর থেকে]

কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরিঃ

কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানোর ক্ষেত্রে প্রধানত দুইটি উপায় দেখা যায়। একটি হচ্ছে ভূমি হতে কামান বা কোনো নিক্ষেপকের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার এলাকা বা মেঘের দেশে ঘনীভবনকারী পদার্থ ছুড়ে দেয়া। কিংবা ভূমি হতে এমন কোনো ব্যবস্থা তৈরি করা, অনেকটা ধোঁয়া যেমন ধীরে ধীরে উপরে ওঠে যায় তেমন করে এই রাসায়নিক পদার্থগুলোও যেন উপরে ওঠে যায়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে বাহকের মাঝে রাসায়নিক ভরা হয়। যেহেতু এটি রকেটের মতো করে ছুড়ে মারা হবে তাই উড়ার জন্য বাহককেও রকেটের মতো করে বানানো হয়। সেই রকেট একটি কামানের মতো নিক্ষেপক যন্ত্রের মাঝে রাখা হয়। পরে দিক ও লক্ষ ঠিক করে ছুড়ে মারা হয় উপরে। নিচের ছবিগুলো লক্ষ করি।

চিত্র: চীনে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামাতে কামানের মাধ্যমে করে রাসায়নিক ছুড়ে দিচ্ছে একজন।

চিত্র: মিসাইলের মত দেখতে উৎক্ষেপণের রকেট- যেগুলোকে কামানের মাধ্যমে নিক্ষেপ করা হয় আকাশে।

চিত্র: কামানের মধ্যে স্থাপন ও নিক্ষেপ করা হচ্ছে কৃত্রিম বৃষ্টির প্রভাবকের “ক্যাপসুল মিসাইল”।

রকেট বা মিসাইল কয়েকটি খণ্ডে জোড়া লাগানো থাকে। উপরে ওঠে সে জোড়াগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর রকেটের একটা অংশ নিচে নেমে আসে আরকটা অংশ, যেটায় রাসায়নিক পদার্থ ভরে রাখা হয়, সেটা উপরে চলতে থাকে। যে অংশটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যায় সেটা নামার পথে প্যারাশুটে করে নামে। যাতে নষ্ট না হয়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হতে পারে।

আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে বিমানে করে উপরের মণ্ডলে গিয়ে বৃষ্টি উৎপাদক পদার্থ ছড়িয়ে দেয়া। কামানে করে কিংবা ধোঁয়ার মত করে উড়িয়ে রাসায়নিক নিক্ষেপ করলে তার সবটা গিয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছায় না, অনেকটা অপচয় হয়ে যায়। মাঝে মাঝে লক্ষ্যভ্রষ্টও হতে পারে। সে তুলনায় বিমানে করে উপরে গিয়ে রসায়ন ছিটিয়ে দিয়ে আসলে অধিক উপযোগ পাবার নিশ্চয়তা থাকে বেশি।

বিমান চলার সময় বৃষ্টির আশেপাশে দিয়ে উড়ে গেলে তার রাডারে বৃষ্টির সংকেত ধরা পড়ে। বিমানে করে প্রথম যেদিন কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া করা হয় সেদিন প্রথম দফা রসায়ন ছটিয়ে দেবার পর রাডারে ধরা পরে আশেপাশে কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। পরে আরেক দফা রসায়ন ছিটানোর ফলে হুড়মুড়িয়ে ঝমাঝম বৃষ্টি নামে। অল্প স্বল্প এলাকা নিয়ে নয়, বিশাল এলাকা নিয়ে নামে সে বৃষ্টি। বিমানের পাখার নিচে বিশেষ কায়দা করে রাসায়নিক পদার্থের বাহক রাখা হয়, উপরে উঠার পর সময় হলে সে বাহকের মুখ খুলে দিলে মুখ হতে রাসায়নিক বের হতে থাকে ক্রমান্বয়ে।

চিত্র: বিমানে করে ড্রাই আইস ছড়িয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর যজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি। যখন এই অতীব ঠাণ্ডা ড্রাই আইসকে অবমুক্ত করা হয় তখন সেটা দ্রুত চারিদিকে ঠাণ্ডা ছড়িয়ে দিতে থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের মতো ক্রে বললে তাপ শোষণ করতে থাকে। ফলে এর আশেপাশে থাকা পানির কণাগুলো বরফের কেলাসে পরিণত হয়। কেলাস হয়ে গেলে সে কেলাসকে কেন্দ্র করে চারিদিক থেকে বাষ্পের কণা এসে তাকে ধীরে ধীরে ভারী করে তুলে। মূলত ঘনীভবনের সবচে বড় উপযোগিতাটা হচ্ছে মেঘকে একত্র করে নিচে ঝরে পরার মত ভারী করে তোলা।

চিত্র: ড্রাই আইস। এদেরকে মুক্ত অবস্থায় প্রমাণ চাপে রেখে দিলে দ্রুত আশেপাশের এলাকা ঠাণ্ডা করে তোলে।

ড্রাই আইস ছাড়াও সিলভার আয়োডাইড দিয়েও ঘনীভবন সংঘটন করানো যায়। সিলভার আয়োডাইড ড্রাই আইস থেকে কিছুটা ভিন্ন। ড্রাই আইস যেখানে তার প্রভাবে আশেপাশের অণুগুলোকে বরফ কেলাসে পরিণত করে সেখানে সিলভার আয়োডাইড নিজেই কেলাস হিসেবে কাজ করে। সিলভার আয়োডাইড একটি দারুণ পানিপ্রেমী বা হাইগ্রোস্কোপিক পদার্থ।

আরো একটু এগিয়েঃ

বর্তমানের বিজ্ঞানের যে সভ্যতা, যে অগ্রগতি তার হিসেবে বিমানে করে কিংবা কামানে করে বৃষ্টি নামানোর প্রযুক্তি অনেকটাই যেন সেকেলে ও জ্বালাময়। এই প্রক্রিয়ায় বৃষ্টি নামাতে আরামের যেন একটু ঘাটতি দেখা যায়! তাই বিজ্ঞানীরা এরও বিকল্প কিছু ভাবছেন। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন লেজার বীম ব্যবহার করে মাটিতে বসেই শক্তিশালী রশ্মি দিয়ে মেঘের দেশে রাজত্ব করবে। ঢাকার রাস্তায় দেখা যায় গরমের সময়ে এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য সকলেই অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতে থাকে। এমনটা বাস্তব হলে চাইলেই সরকারী বেসরকারি উদ্যোগে বৃষ্টি নামিয়ে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যেতে পারে! বিমান প্রযুক্তি কামান প্রযুক্তি ব্যয়বহুল এবং ধনকুবের ছাড়া এই প্রযুক্তি সাধারণেরা ব্যবহার করতে পারে না। লেজার প্রযুক্তি হলে এটা ব্যয়বহুল হবার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মেঘের ওপর উচ্চশক্তির লেজার রশ্মি ফেলে বৃষ্টি নামানোর উপায় বের করতে গবেষণা করছেন।

চিত্র: লেজারের সাহায্যে বৃষ্টি নামানোর কাল্পনিক মডেল।

[এর পরের অংশ দেখুন ৩য় ও শেষ পর্বে]







বিজ্ঞান নিউজলেটার

যুক্ত হোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান নিউজলেটারে!
আমরা সাপ্তাহিক ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। 
এ নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। থাকবে নতুন লেখার খবরও।


Loading

লেখাটি 499-বার পড়া হয়েছে।

ইউটিউব চ্যানেল থেকে

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. ছবি ও ইনফোগ্রাফিকের দারুণ ব্যবহারে এ লেখাটা আকর্ষণীয় করে তুলেছো।

  2. Many many thanks for the incredible topic

Leave a Reply to আরাফাত রহমানCancel reply

বিজ্ঞান অভিসন্ধানী: পঞ্চাশ জন বিজ্ঞান লেখকের লেখা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ই-বুকটি। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে শুরু করে ডিএনএর রহস্য, গণিত, এমনকি মনোবিজ্ঞানের মতো বিশাল বিষয় ব্যাপ্তির পঞ্চাশটি নিবন্ধ রয়েছে দুই মলাটের ভেতরে।
বিজ্ঞান অভিসন্ধানী: আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে শুরু করে ডিএনএর রহস্য, গণিত, এমনকি মনোবিজ্ঞানের মতো বিশাল বিষয় ব্যাপ্তির পঞ্চাশটি নিবন্ধ রয়েছে দুই মলাটের ভেতরে। ।