একবার ভাবুন তো, আপনি কোনো এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে একটা কথা বলছেন। কথাটা আপনি আর আপনার বন্ধু ছাড়া আর কেউ একবিন্দুও বুঝতে পারছে না। এমন হলে ব্যাপারটা মজার না? ….প্রাচীনকালে যখন ফোনের ব্যবস্থা ছিলো না, তখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্যের হাতে কাগজে লিখে পাঠানো হত। এবং মাধ্যমকারী যাতে এ তথ্য পড়ে বুঝতে না পারে সেজন্য তথ্যকে এনক্রিপ্ট করে পাঠানো হত। আর প্রাপক একই উপায়ে একে ডিক্রিপ্ট করে তথ্য বুঝে নিতো।
এনক্রিপশন কি?
এটা বুঝার জন্য নিচের গল্পটি পড়ুন। আর যদি এতটুকুতেই বুঝে যান তাহলে এ অংশটুকু ছেঁড়ে যেতে পারেন।
-সুবা আর সাদমান। খুব পছন্দ করতো সুবাকে। [নরমাল ঘটনা। আমিও করি কিন্তু মেয়েটা বুঝে না 🙁 ]। -সাদমান পড়তো ঢাকার একটা নামকরা কলেজে আর সুবাহ পড়তো চট্টগ্রামের একটা নামকরা কলেজে। সুবাহকে শুধু একপলক দেখার জন্য কলেজে একদিন বন্ধ পেলেই সাদমান ছুটে আসতো চট্টগ্রামে। একদিন ছেলেটি চিন্তা করলো “নাহ, এবার বলেই ফেলি আমার টান(!) এর কথা।” তবে সে চিন্তা করলো যদি সে প্রোপোজ করার সাথে সাথেই গালে লাগায় দে তবে কি হবে। এরপর সে চিন্তা করলো “I LOVE YOU” বাক্যের প্রতিটি বর্ণকে সে পরের বর্ণ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করবে এবং এভাবেই সে বলবে। এটা যদি সুবা ধরতে পারে তাইলে যা হবার হবে আর না বুঝলে সুবাহকে ভুলি যাবে। তাই সে একদিন তার মনের কথাটা বললো এইভাবে “J MPWF ZPV” …এরপর তারা বিয়ে করি ফেললো। গল্প শেষ!
এখানে “J MPWF ZPV” হলো I LOVE YOU এর এনক্রিপ্টেড টেক্সট। আর যে প্রক্রিয়ায় এটি করা হয়েছে এর নামই হলো এনক্রিপশন। তবে সাধারণত এত সহজে এনক্রিপশন করা হয় না। কারণ এতে একটু মাথা খাটালেই ট্রিক টা ধরে ফেলা যায়। তাই এনক্রিপশন প্রক্রিয়াটা হতে হয় একটু জটিল। আর এ ধরনের জটিল ঘুরানো পেচানো এবং জনপ্রিয় একটি এনক্রিপ্ট এর মধ্যে CIPHER এনক্রিপ্ট ছিলো জনপ্রিয়। আর আমি এখানে এটি নিয়েই আলোচনা করব। এই এনক্রিপ্টশন এর শুরুতে আপনাকে একটা ছক বানাতে হবে। মূলত এই ছকই হলো হাতিয়ার। এটি আমিই বানিয়ে এখানে দিয়েছি। তবে এটি একটা টেকনিকে না ফেললে মনে রাখা কষ্টকর। তাই আমি এখানে তৈরী করার নিয়ম সহ দিয়েছি। একে Cipher Table বলে। নিচে ধাপে ধাপে টেবল তৈরীর প্রক্রিয়া দেয়া হল।
১) প্রথমে একটা ১৩*১২ একটা টে
২) এর প্রথম দুটি সারিতে ১৩+১৩ করে মোট ২৬ টি ইংরেজী বর্নের সব লিখতে হবে।
৩) এবার এর পরের প্রতিটি সারিতে প্রথম ঘরে লিখা অক্ষরটি হবে এর পুর্বের সারির দ্বিতীয় অক্ষর। এভাবে ক্রমান্বয়ে লিখে যেতে হবে। যেমনঃ দ্বিতীয় সারির প্রথম অক্ষর N। তাহলে তৃতীয় সারীর প্রথম অক্ষর হবে O..এবং এভাবে p, q, r, s… এভাবে লিখে যেতে হবে এবং সবার শেষের ঘরে N লিখতে হবে।
৪) এভাবে মূল টেবিল তৈরীর পর সর্ব ডানে(ছবিতে কালোটা)আরেকটি কলাম আকতে হবে যার ১৩ টি সারি থাকবে এবং প্রতিটিতে ২৬ টি অক্ষরের জোড়ায় জোড়ায় থাকবে। যেমনঃ (A, b), (c, d), (e, f) এভাবে।
এবার একটি লেখা, যেমন ধরি Shoshikkha কে এনক্রিপ্ট করবো। প্রথমে এ শব্দটির প্রতিটি letter এর বিপরীতে “CIPHERCIPHER” শব্দ টির প্রতিটি বর্নকে স্থাপন করতে হবে। তাহলে S এর বিপরীতে C, H এর বিপরীতে I, O এর বিপরীতে p এভাবে হবে। এবার সর্ব-বামের কোন ঘরে C আছে এটি খুঁজি। এখানে ২ নং টিতে এবার এ সারিতে S খুজে বের করি। এখানে S এর কলামে সর্ব-উপরের (ধূসর রং এর সারিতে) বর্ণটি হল E. অর্থাৎ S এর এনক্রিপ্টেড টেক্সট হলো E… এবার একইভাবে I অক্ষরটিকে সর্ববামের ঘরটিতে খুজে অই বরাবর সারিতে H খুজতে হবে। দেখা যাবে যে এখানে H অক্ষরটি নেই। তাহলে উপরের প্রথম সারিতে (ছবিতে ধূসর রং টা) যে কলামে H আছে এর বরাবর নিচে I এর সারিতে অবস্থিত বর্ণটিই হলো H এর এনক্রিপ্ট এড বর্ণ।এক্ষেত্রে Y..
আর এভাবে পুরা SHOSHIKKHA টেক্সট এর এনক্রিপ্টেড রুপ হলো EYHCWQYOP
একে আবার একই নিয়মে রুপান্তর করলে মূল শব্দ টি পাওয়া যাবে। একে Decryption বলে। উপরের অই গল্পটিতে সুবা J MPWF ZPV ‘র মানে বুঝবে তখনই যদি সে উল্টা পথে আগায়। অর্থাৎ সে যদি অই এনক্রিপ্টেড টেক্সট এর প্রতিটি বর্ণকে আবার এর পূর্বের বর্ণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত তাহলে সে বুঝবে সে এটি হলো “I LOVE YOU”.. আর এই উল্টা প্রক্রিয়াটির নামই হলো ডিক্রিপশন।
Leave a Reply