red tomatoes in blue plastic crate

জিএমওতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা। এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যের চাহিদা। খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ব্যবহারে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যের গুণগত মান আর সহজলভ্যতা। প্রযুক্তির নানা উৎকর্ষতার মাঝেও এর বিরূপ দিকগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। সেরকমই এক প্রযুক্তির নাম জিএমও। জিএমও হচ্ছে জেনেটিক্যালী মডিফাইড অর্গানিজম, আবার কখনো কখনো জিইও অর্থাৎ জেনেটিক্যালী ইঞ্জিনিয়ার্ড অর্গানিজম ও বলা হয়। সংক্ষেপে জিএমও বা জিই ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃত্রিমভাবে কোন জেনেটিক ইনফরমেশন, অর্গানিজমে ঢুকিয়ে দিয়েই জিএমও তৈরী করা হয় অর্থাৎ কোন একটি অর্গানিজমে, কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের নিউক্লিওটাইড সিকুয়েন্স অর্থাৎ ফরেন ডিএনএ পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে ঢুকিয়ে, অর্গানিজমকে জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন করা হলে ঐ অর্গানিজমকে জিএমও বলে।


১৯৯৬ সনে প্রথম জিএম ফসলের চাষ ও বাজারজাত শুরু হয় আমেরিকায়। সে সময় ১.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি চাষ হয়েছিল। গত ১৪ বছরে জিএম ফসলের চাষে জমির পরিমাণ বেড়ে ১৪৮ মিলিয়ন হেক্টর হয়েছে, অর্থাৎ ৮৭ গুণ বেড়েছে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পোকামাকড় প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, ফসলের গুণাগুণ ও স্বাদের পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে জিএমও টেকনোলজী ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে খুব বড় আকারের শাকসবজি, ফল, মাছ, মুরগি, অধিক উত্‍পাদনশীল ধান, গম, ভুট্টা রোগ পোকা প্রতিরোধী জাত, অধিক উত্‍পাদকারী গাভী ইত্যাদি জিএম ফুড ২৯টি দেশে চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশে জিএম ফসলের চাষ শুরু না হলেও, নানারকম বিদেশী দ্রব্যের আমদানির মাধ্যমে দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে জিএম ফসল। এর মধ্যের রয়েছে বিটি বেগুন, গোল্ডেন রাইস, সয়াবিন ইত্যাদি।

crop ethnic farmer with eggplants in box on plantation
Photo by Zen Chung on Pexels.com


বিটি বেগুন হল ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধী বেগুন, যা জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে তৈরি করা এক ধরনের জিএম ফসল। অনেকে মনে করেন বায়োটেকনোলজি শব্দ থেকে বিটি বেগুনের নামকরণ করা হয় যা সঠিক নয়। বিটি হল Bacillus thuringensis (বেসিলাস থুরেনজেনসিস) এর সংক্ষিপ্ত নাম। বেসিলাস থুরেনজেনসিস মাটিতে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা এক ধরনের কীটনাশক প্রোটিন উৎপন্ন করে যা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করতে পারে। মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় বাংলাদেশ ভারত ও ফিলিপাইনে বিটি বেগুন চাষ চালু করার জন্য এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০০৫ সালে। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবার বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় জিনগত ভাবে রূপান্তরিত বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন দেয়। স্বাস্থ্যগতদিক থেকে বিটি বেগুনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ভয়াবহ। মানুষের স্বাস্থ্য ছাড়াও পরিবেশের জন্য এই বেগুন চরম ক্ষতিকর। অনেকেই দাবি করেন, বিটি বেগুন মানুষের খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। জিনগত পরিবর্তনের কারণে এতে যে বিষ তৈরি হয় তা মানুষের লোহিত কণা ধংস করে দেয়। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য এই বিটি বেগুন ক্ষতিকর।


গোল্ডেন রাইস হচ্ছে বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ জৈব প্রযু্ক্তি প্রকৌশলের মাধ্যমে রূপান্তরিত ধান। এই ধানের সূত্রপাত হয় মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভিটামিন এ অভাবজনিত রাতকানা রোগ দমনে। একদশক ধরে গোল্ডেন রাইস নিয়ে চলছে নানামুখী তুমুল বিতর্ক। বিটা ক্যারোটিন শোষিত হয়ে শরীরে বিষাক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। হজম প্রক্রিয়ায় বিটা ক্যারোটিন পরিবর্তিত হয়ে রেটিনল বা রেটিনোইক এসিড তে রূপান্তরিত হতে পারে, যা চর্বি বা Plasma তে জমা হতে পারে কিন্তু এর প্রভাব বিষাক্ত এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। নিম্ন মাত্রায় ভিটামিন-এ স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ তলপেট, নাকে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং শিশুদের Fontanelle সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী বিষাক্ততা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলগুলোর ব্যথা সৃষ্টি, চুল পড়া, শুষ্কতা জ্বর, ওজন হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠোঁটে ফাটলের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে।


বাংলাদেশের সয়াবিন তেলের একটি বড় অংশ আমদানি করা হয় আমেরিকা, ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনা থেকে। অথচ ঐ সমস্ত দেশের সয়াবিন তেলের প্রায় সবটাই জিএমও বা জেনেটিকালি মোডিফাইড। জিএম ফুডের অতিরিক্ত জিন দেহের পাকস্থলী কিংবা তন্ত্রের উপর হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে জিএম ফুডে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন অনুপ্রবেশ করালে দেহের এন্টিবডি বা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জিএম খাদ্য খেলে প্রজননক্ষমতা হ্রাস, শিশুর জন্মগত ত্রুটি, কিডনিতে সমস্যা, যকৃতে সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যদি জটিল রোগ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে- জিএম ফুডে ঢুকানো অন্যজীবের জিন মানুষের পাকস্থলী ও অন্ত্রে হজম হয় না৷ কখনো রক্তের মাধ্যমে জন্মগত ডিএনএ-এর সাথে মিশে গিয়ে আচরণের পরিবর্তন আনে৷ এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০০ ভাগ বেড়ে যায়।


বাংলাদেশে জিএমও ফুড ব্যবহার হলেও সেটা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে না। অথচ বর্হিবিশ্বে জিএমও ফুড থাকলে তা প্যাকেটের গায়ে স্পষ্ট লেখা থাকে, ফলে অধিকাংশ মানুষ আগে থেকেই সচেতন হতে পারে। জিএম খাদ্যের অনেক ভালো দিক থাকলেও, এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত। যেকোন জিএমও খাদ্যকে অনুমোদন দেয়ার আগে এর স্বাস্থ্যঝুকি নিরূপণ করতে হবে।

লেখাটি 778-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. জিএম খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু তুমি কোন তথ্যসূত্র দাও নি। যেমন: “জিনগত পরিবর্তনের কারণে এতে যে বিষ তৈরি হয় তা মানুষের লোহিত কণা ধংস করে দেয়। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য এই বিটি বেগুন ক্ষতিকর।” — এই তথ্য কোন গবেষণা থেকে পেয়েছো? এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপযুক্ত তথ্যসূত্র না দিলে সেটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রচুর গবেষণায় কিন্তু দাবী করা হচ্ছে যে জিএম খাদ্য হিসেবে স্বাস্থকর। যেমন সায়েন্টিফিক আমেরিকানের এ লেখাটা: The Truth about Genetically Modified Food সূত্র: https://www.scientificamerican.com/article/the-truth-about-genetically-modified-food/

  2. ইদুরের ক্ষেত্রে হেমাটোটোক্সিসিটির একটা সোর্স পেয়েছিলাম… ০.৮ ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালের।
    http://www.esciencecentral.org/journals/hematotoxicity-of-bacillus-thuringiensis-as-spore-crystal-strains-cry1aa-cry1ab-cry1ac-or-cry2aa-in-swiss-albino-mice-2329-8790.1000104.php?aid=11822

    রিপ্রোডাক্টিভ টক্সিসিটি(IF 2.17) জার্নালে আরেকটা পেপার পেলাম , এখানে আপনি যেটা বলেছিলেন নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষনা আছে।
    http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0890623811000566

Leave a Reply to আরাফাত রহমানCancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers