মশলা ও রান্নাবান্না

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

মানুষের বাঁচার জন্য প্রয়োজন শক্তির। আর মানুষকে অবিরত শক্তির যোগান দেয় নানারকম খাদ্য।  আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় থাকে বিচিত্র ধরনের খাবার। বাঁচার জন্য খাওয়া বা খাওয়ার জন্য বাঁচা -খাবার উদ্দ্যেশ্য যাই হোক না কেন সুস্বাদু খাবার আমরা সকলেই পছন্দ করি।

খাবারকে সুস্বাদু করতে মশলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। শতাব্দিকাল ধরে মশলা হয়ে আছে  খাবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।   নানারকম মশলার কারণেই খাবার দেখতে ও খেতে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

মশলা হচ্ছে কোন গাছের বীজ,ফল, মূল,বাকল বা পাতা যা মূলত খাবারকে আকর্ষণীয় রং দিতে, খাবারে সুঘ্রাণ আনতে এবং খাবার সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। মশলা শুধু খাবারে অনন্য স্বাদ যুক্ত  করতেই ব্যবহৃত হয়

না, এর আছে বহুবিধ ব্যবহার।

seeds in sacks
Photo by Frans Van Heerden on Pexels.com


মশলার ব্যবহার সম্পর্কে জানার আগে চলুন জানা যাক মশলা ব্যবহারের ইতিহাস সম্পর্কে।খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকেএশিয়ায় দারুচিনি, কালচে মরিচ প্রভৃতি উৎপন্ন হত।উৎপাদিত এই মশলাগুলো নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে প্রথম মশলার বাণিজ্য শুরু হয়। প্রাচীনকালে মিশরীয়রা মশলা ব্যবহার করত মমি তৈরীতে। এজন্য তাদের প্রয়োজন হত প্রচুর পরিমাণে বিদেশী মশলার। তাদের এই আজব খেয়ালই বিশ্বজুড়ে মশলার বাণিজ্যকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে চীন,কোরিয়া এবং ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা মশলানির্ভর হয়ে পড়ে। প্রাচীনকালে মশলার ব্যবহার ছিল জাদু,ওষুধ,ঐতিহ্য এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। মধ্যযুগে ইউরোপেও মশলার ব্যবহার শুরু হয়। তারপর আরব এবং আফ্রিকান বণিকদের সৌজন্যে মশলা বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবীতে।বিখ্যাত সিল্করোডও জড়িয়ে আছে এই মশলা বাণিজ্যের সঙ্গে। বর্তমানে মশলা সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে বড় বড় মশলার বাজার।

Spice market, Marrakech, Morocco

হরেক রকম মশলা

এবার চলুন জানা যাক পৃথিবীব্যাপী উৎপাদিত এবং ব্যবহৃত বিচিত্র ধরনের মশলা এবং খাদ্যে মশলার ভূমিকা সম্পর্কে। উদ্ভজ্জগত দিক থেকে মশলা বিভিন্ন ধরনের হয়।  যেমন-

*সুগন্ধী পাতা :তেজপাতা ;ফল বা বীজ:জায়ফল,ধনিয়া,সর্ষে,মরিচ

*মূল: আদা,হলুদ

*বাকল:দারুচিনি ইত্যাদি।

মশলা পাওয়া যায় বিভিন্ন রূপে যেমন-টাটকা,শুকনো।  সাধারণত শুকনো মশলার তাকজীবন বেশি হয়। তাই এ ধরনের মশলা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।  কিছু কিছু মশলা আবার টাটকা ও শুকনো দুই অবস্থাতেই পাওয়া যায়। যেমন-হলুদ।  মশলার সুঘ্রাণের উৎস হল মশলায় থাকা বাষ্পীভূত হতে সক্ষম এক ধরনের তেল যা বাতাসের সংস্পর্শে জারিত হয়।

আচ্ছা,মশলা কেন বেটে ব্যবহার করা হয় জানেন?

মশলা বাটলে মশলার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়।  ফলে মশলার জারণের হার বৃদ্ধি পায়।ফলে ঘ্রাণটা হয় অসাধারণ।  এজন্যই গৃহিনীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মশলা বাটেন।

clear glass jars with assorted foods
একটি মশলার দোকান। Photo by NEOSiAM 2021 on Pexels.com

মশলা কি খাদ্যে শুধু স্বাদই যোগ করে নাকি এর কোন পুষ্টিগুন আছে?

উত্তর হচ্ছে- মশলা শুধু খাদ্যে স্বাদই আনে না। এর আছে নিজস্ব কিছু অসাধারন পুষ্টিগুন। মশলায় থাকে প্রচুর পরিমান এসেনশিয়াল অয়েল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ লবণ ও ভিটামিন। মশলায় উচ্চমানের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, এজন্য প্রাচীনকাল থেকেই মশলা ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রদাহনাশক ও পেটের সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসায়। মশলায় থাকা কিছু কিছু উপাদান রক্ত জমাট প্রতিরোধে কাজে আসে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মশলা অন্ত্রে অতিরিক্ত এনজাইম ক্ষরনে ভূমিকা রাখে। মশলা ব্রংকাইটিস ও গলা ব্যাথা নিরাময়ে এবং এন্টিসেপ্টিক তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। কিছু কিছু মশলা- যেমনঃ লবংগ ত্বকে লাগালে ব্যথা উপশম হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। আর্থ্রাইটিস চিকিৎসাতেও মশলা ব্যবহৃত হয়।

সুগন্ধীর কারণে মশলা ব্যবহৃত হয় অ্যারোমাথেরাপী এবং পারফিউম ইন্ডাস্ট্রিতে।

মশলায় আছে প্রচুর পরিমান খনিজ লবণ যেমনঃ পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন প্রভৃতি।

মশলার যেমন অনেক উপকারী দিক আছে তেমন কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে।

যেমন- মরিচ অতিরিক্ত খেলে ঝাল লাগে এবং পেট জ্বালা করে। এক্ষেত্রে পানি না খেয়ে দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিছু মশলার অতিরিক্ত ব্যবহার টিস্যুর ক্ষতি করে। দীর্ঘসময় মরিচ নিয়ে কাজ করলে হাত জ্বালা করে। হাতে গ্লাভস পড়ে কাজ করলে এই ঝামেলা থেকে বাঁচা যায়। এছাড়া মরিচ চোখে লাগলেও চোখ জ্বালা করে। মরিচে থাকা ক্যাপসিকাম এইভাবে সামান্য ক্ষতি করে।   

তবে অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খেলে মশলার আরো কিছু ক্ষতিকর দিক আপনার মেনে নিতে হবে। যেমন অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার আপনার টেস্ট বাডকে ভোঁতা করে দিতে পারে। অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আরো খারাপ যেটা তা হচ্ছে ইনসমনিয়া।

সুতরাং, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার যতই আপনাকে প্রলুব্ধ করুক তা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। খাবারে পরিমিত মশলার ব্যবহার খাবারকে পুষ্টি ও স্বাদে অনন্য করে। তাই পরিমিত মশলাযুক্ত খাবার খান, সুস্থ থাকুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. en.m.wikipedia.org/wiki/spice

২. www.nutrition-and-you.com/healthy-spices.html

আজ শুনলাম বিজ্ঞান ব্লগের জন্মদিন, এককালে আমি বিজ্ঞানব্লগের অসংখ্য পাঠকের একজন ছিলাম। বিজ্ঞান ব্লগের আর্টিকেলগুলোর সহজভাবে বিজ্ঞান লেখা আর মজার শব্দচয়ন আমাকে সবসময়ই মুগ্ধ করত। আমিও ব্লগের আমার চোখে “অসাধারণ মেধাবী” লেখকদের মতো লিখতে চাইতাম। সাহস করে একবার লিখেই ফেলেছিলাম। এখন আবজাব যাই লিখি তার উৎসাহটা পেয়েছিলাম এখান থেকেই। বিজ্ঞান ব্লগ দিনে দিনে আরো সমৃদ্ধ হোক, অনেক অনেক শুভকামনা

 

লেখাটি 1,244-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. লেখাটা পড়ে ভাল লাগছে। আরও বেশি বেশি লিখুন 🙂 পরিমিতি মশল্লা খাওয়াই ভাল। বেশি মশল্লা খাইয়া বাঙালি গ্যাস্ট্রিক এ ভুগে 😉

    1. লোটন ভাইয়া, আপনাকে চিনি। কিন্তু আপনার কমেন্ট সাধারনত দেখিনা, এখানে পেয়ে সত্যিই আপ্লুত 🙂

  2. সাহস করে শুরু করাটাই বড়ো। তারপর নিয়মিত চালিয়ে যাওয়াটা চ্যালেেঞ্জ।
    পুনশ্চ: মশলার যুদ্ধ পড়েছো? মশলা, ইতিহাস ও উপনিবেশ নিয়ে দারুণ একটা বই।

    1. জী ভাইয়া ঠিক বলেছেন, আসলেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি।
      না ভাইয়া, বইটা পড়িনি। খুঁজে দেখবো…
      ধন্যবাদ।

      1. মসলার যুদ্ধ পড়বো পড়বো করে পড়া হচ্ছে না। এবার জানুয়ারিতে পড়েই ফেলবো। বাই দা ওয়ে মসলার যুদ্ধ বইটা এখানে পাওয়া যাবে। https://goo.gl/IkCdjF

Leave a Reply to আরাফাত রহমানCancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers