শূন্যের দুধরণের ফাংশন আছে। প্রথম টি ধারণাগত। ত্রিশ সংখ্যাটি তিন থেকে বড়, ত্রিশ থেকে তিনশো বড় – এই ধারণা পরিষ্কার করে দেয় শূন্য। দ্বিতীয় টি হলো, মধ্যমের ভূমিকা পালন। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যাগুলোর মধ্যম মান হলো শূন্য।
শূন্য আবিষ্কারের ইতিহাস নিয়ে প্রচুর দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং সংক্ষেপে পুরোটা বলা সম্ভব নয়। সবচেয়ে প্রচলিত মতে, ব্যবিলনীয়, মায়ান ও ভারতীয়রা স্বাধীন ভাবে শূন্য আবিষ্কার করে। (কিছু গবেষকের মতে ভারতীয় সংখ্যাব্যবস্থা ব্যবিলনীয়দের দের প্রভাবেই সৃষ্টি হয়েছে)
ভারতীয় সভ্যতা প্রথম তাদের সংখ্যাব্যবস্থায় শূন্য কে স্থান দেয় সংখ্যা হিসেবে(INDIA: Where zero become number)। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্যবিলনীয়দের সংখ্যাব্যবস্থা এখানে এসে পতিত হয়েছে। আবার, কিছু পণ্ডিতদের মতে ভারতীয়রা একাই শূন্য আবিষ্কার করেছে। ৬২৮ সনে এক ভারতীয় হিন্দু ম্যাথমেটিশিয়ান ও এস্ট্রোনোমের ‘ব্রহ্মগুপ্ত’ সর্বপ্রথম শুন্য কে একটি ডট (.) এর সাহায্যে প্রকাশ করেন। তিনি শূন্য দিয়ে অন্যান্য সংখ্যা যোগ, বিয়োগ, গুণ সহ শূন্যের ফাংশন লিপিবদ্ধ করেন। বিশ্বে প্রথমবারের মতো তখন শূন্য কে সংখ্যা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
কাপলান বলেন, “If you look at zero, you see nothing; but if you see through it, you will see the universe”
শূন্য আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় ভারতীয় দের এবং সর্বপ্রথম শূন্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ব্রহ্মগুপ্তের ‘Arithmetic’ বই থেকে। এই বইতে গাণিতিক ভাবে শূন্যের ব্যাখ্যা দেয়া আছে_
x+0=x ;শূন্য এমন একটি সংখ্যা যা অন্য কোন সংখ্যার সাথে যোগ করা হলে, ওই সংখ্যাটি ই পাওয়া যায়।
এরপূর্বে,৫০০ সনে ভারতীয় উপমহাদেশের গণিতবিদ আর্যভট্টের একটি বই-এ পাওয়া যায়, স্থানম স্থানম দশ গুণম।এখানে হয়তবা তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন, স্থানে স্থানে দশ গুণের কথা। তবে এখানেও শুন্যের কথা লুকায়িত ছিল। শেষ পর্যন্ত শুন্যকে সংখ্যার পরিচয় দেন ব্রহ্মগুপ্ত। তার ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত নামক বই-এ প্রথম শুন্যকে সংখ্যা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। শূন্যের সাথে যোগ , বিয়োগ , গুণের কথা এই বই-এ সঠিকভাবে দেয়া হয়। এছাড়া মহাবীর এবং ভাস্কর শুন্য নিয়ে কাজ করেন। তবে দুঃখের বিষয় এদের কেউ শুন্য দিয়ে কোন কিছু ভাগের কথা উল্লেখ করেনি।

“ যে গাণিতিক হিসাবের সময় যদি দশকের ঘরে কোন সংখ্যা না থাকে তাহলে সামঞ্জস্য রাখার জন্য একটি ছোট্ট বৃত্ত দিয়ে তা পূরণ করা যেতে পারে।”
সেই ছোট বৃত্তকে তিনি সিফার (صفر) নামে অবিহিত করেন। তার উল্লিখিত এই সিফারই বর্তমান যুগের জিরো বা শূন্য।

পদার্থবিজ্ঞানে ব্ল্যাকহোল এবং গণিতে শূন্য দিয়ে ভাগ – দুটোই প্রচলিত নিয়মের মধ্যে দিয়ে যায় না। এগুলো হলো অসংজ্ঞায়িত (undefined)। একটা উদাহরণ খেয়াল করি
মনে করো তোমার কাছে শূন্যটি কলম আছে (অর্থাৎ তোমার কাছে কোন কলম ই নেই)। শূন্যটি কলম তুমি তোমার শূন্য জন বন্ধুর মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দিতে চাও। প্রত্যেকে কতটি করে কলম পাবে?
এই প্রশ্নের বাস্তবিক কোন সমাধান নেই, তাত্ত্বিকভাবে ও নেই। আর তাই এটি অসংজ্ঞায়িত এর তালিকায় পড়ে। এবার একটু গাণিতিকভাবে দেখা যাক_
কোন সংখ্যাকে যত ছোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায়, ভাগফল তত বড় আসবে। যেমন –
1÷1 = 1
1÷ 0.1 = 10
1÷0.01= 100
এভাবে 1 কে শূন্যের যত কাছাকাছি ধনাত্মক মান দিয়ে ভাগ করা হবে, ভাগফল তত বড় ধনাত্মক সংখ্যা হতে থাকবে। তাহলে বলা যায়, (1÷0= +∞ )।
একই ভাবে যখন ঋণাত্মক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করবো, তখন পাওয়া যায়
1÷(-1) = -1
1÷ (-0.1) = -10
1÷ (-0.01)= -100
এই ভাষ্যমতে (1÷0= -∞ ) ; যা পূর্বের মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। কোন কিছু কে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে কি পাওয়া যাবে তার ভালো কোন উত্তর আসলেই নেই। তার তাই গণিতবিদ রা 1÷0= অসংজ্ঞায়িত তত্ত্ব কেই মেনে নিয়েছেন।
Leave a Reply