ছেলেটাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল এই জন্য যে, তার স্মৃতি শক্তি অত্যধিক দুর্বল। এই ছেলেকে দিয়ে জীববিজ্ঞানের মতো ভাইটাল সাবজেক্ট পড়া সম্ভব না। তাকে অন্য বিষয় পড়তে দেয়া হোক যেটা তার জন্য সোজা। পরবর্তীকালে ইনিই হয়েছিলেন দ্বিপদ নামকরনের জনক। বিশ্ব তাকে চেনে বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস নামে।
লিনিয়াসের জন্ম দক্ষিণ সুইডেনের সামালান্দের এক গ্রামে। তার পূর্বপুরুষ কেউই শেষ নাম ব্যবহার করতেন না। তাদের নাম রাখা হতো স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের প্যাট্রোনিমিক (পিতার নামের সাথে সংযুক্ত) নিয়মে। তার বাবাই প্রথম শেষ নামের প্রচলন করেন। বাড়ির সামনের এক বিশাল লিন্ডেন গাছের নামানুসারে লিনিয়াস নামটিই বেছে নেন। ক্যারোলাস লিনিয়াসের জন্ম ১৭০৭ সালে সুইডেনের স্মেলেন প্রদেশের র্যাশাল গ্রামে। পিতা নিলস লিনিয়াস গির্জার পাদরি। মা-বাবা চেয়েছেন তিনিও যাজক হবেন, কিন্তু হলেন চিকিৎসক। খনিজ, উদ্ভিদ নিয়ে লেখালেখি করে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। লিনিয়াস শিক্ষাজীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৭৩০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৭৩৫ থেকে ১৭৩৮ সাল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন এবং এ সময়ই নেদারল্যান্ড থেকে তার Systema Naturae গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর সুইডেনে ফিরে এসে উপসালাতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৭৪০-এর দশকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস করার জন্য তাকে সুইডেনের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল। ১৭৫০ ও ৬০-এর দশকে তিনি এই শ্রেণীবিন্যাস চালিয়ে যান এবং ভলিউম ভলিউম বই প্রকাশ করেন। অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের শেষে যে নাম রেখেছেন তার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ স্থান পায়। ।
লিনিয়াস যে নামগুলো রেখেছেন সেগুলোর শেষে “L” অক্ষরটি থাকে। লিনিয়াস উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিগুলোর নামকরণের নৈরাজ্য দূর করে দ্বিপদী নামকরণ চালু করেন। তাঁর প্রবর্তিত নামকরণের আগে বিভিন্ন প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম ছিল অনেক দীর্ঘ। লিনিয়াস মানুষ প্রজাতির নাম রাখেন Homo sapiens . লিনিয়াস ভিন্নার্থে এটি ব্যবহার করেছিলেন—হোমো স্যাপিয়েন্স হলো—হোমো ‘নসে তে ইপসাম’ অর্থাৎ Man know thyself—আত্মানং বিধ্বি, মানুষ নিজেকে জানো। গভীরতর অর্থবহ এই অভিধা। আগেও মানুষ ছিল হোমো ইরেকটাস, হোমো হ্যাবিলিস, হোমো নিয়ানডারথেলেনসিস ইত্যাদি। সাত হাজার ৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও চার হাজার ৪০০ প্রাণীর নামকরণ ছাড়াও তিনি স্পিসিস প্লান্টারাম (১৭৫৩), জেনেরা প্লান্টারাম (১৭৫৪) ও সিস্টেমা ন্যাচারই (১৭৫৮) বইয়ের লেখক। প্রথম দুটি উদ্ভিদ ও তৃতীয়টি প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণবিষয়ক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মৃত্যুর সময় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ১৭৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কবরের নামফলকে শেষ ইচ্ছানুসারে লিনিয়াসের নামের পাশে Homo sapiens শব্দটি যুক্ত হয়েছে।
Leave a Reply