নিউট্রিনো বনাম নিউট্রিনো সংঘর্ষ

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

দ্রষ্টব্যঃ লেখারটা সহজ করার জন্য কিছু স্থানে সংঘর্ষ (যাকে কোয়ান্টামে বলে মিথস্ক্রিয়া)-কে “যোগাযোগ” বলা হয়েছে ।

পাঠকদের মধ্যে যারা নিউট্রিনো সম্পর্কে জানেন তাদের হয়তো এই নিউট্রিনোর সম্পর্কে প্রাথমিক (যারা জানেন তাদের তো স্নাতকোত্তর লেভেলের) ধারণা পেয়েছেন । তো আজকে কথা বলা যাক এই ভূতুরে কণা যেটা সবকিছুর মধ্য দিয়ে অনায়াসে চলে যায় সেই কণার নিজেদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে কি হবে ।

নিউট্রিনোর মিথস্ক্রিয়া (যেটাকে সাধারণ ভাষায় সংঘর্ষ বলি) নির্ভর করে ঔ নিউট্রিনোদের পারস্পরিক ক্রিয়ার শক্তির ওপর । নিউট্রিনো প্রধানত দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করে । দুর্বল মিথস্ক্রিয়া, ভেক্টর বোসন (কণা পদার্থবিজ্ঞানে, ভেক্টর বোসন হলো একটি বোসন কণা যা স্পিন ১ এর সমান)-এর দ্বারা ব্যাপকভাবে মধ্যস্থিত হয় । ডব্লিউ (W) বোসন হল যেটা নিউট্রিনোকে চার্যযুক্ত লেপটন (ইলেকট্রন, মিউ বা টাও)-এ পরিণত করতে পারে এবং জি (Z) বোসন, যেটা আসলো কোন কণার পরিচয়কে বদলাতে পারে না । কারণ ভেক্টর বোসন ব্যাপক, তার অবিশ্বাস্যভাবে সংক্ষিপ্ত পরিসীমায় পারস্পরিক ক্রিয়া হয়ে থাকে যেটা মাত্র ১০-১৫ সেমি দূরত্বের । এর মানে হল কম শক্তিতে (যেটা দীর্ঘ দূরত্বে মিলে যায়) এদের পারস্পারিক ক্রিয়া অর্থাৎ মিথস্ক্রিয়া দমন করা যায় বা বলা যেতে পারে মিথস্ক্রিয়া সংঘটিত হয় না ।

নিউট্রিনো উল্লেখযোগ্যভাবে ফোটনের সাথে তেমন যোগাযোগ করে না । এ কারণেই এটা প্রায় অসম্বভ যে, নিউট্রিনো ভেঙ্গে ফোটন বা একই ভাবে গ্রাভিটন (কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব হিসেবে, গ্র্যাভিটন হল মহাকর্ষের অনুমিত কোয়ান্টাম যা একটি প্রাথমিক কণা এবং যেটা মহাকর্ষের বলকে মধ্যস্থতা করে; আমার মতে, যেই কণা গ্র্যাভিটি তৈরি করে 🥰) -এ পরিণত হবে । এর মানে হলে কম শক্তিতে নিউট্রিনো শুধুমাত্র যেটা করতে পারে সেটা হল, দিক পরিবর্তন করে স্থিতিস্থাপক বিক্ষিপ্ত (ইলাস্টিক স্ক্র্যাটারিং বা স্থিতিস্থাপক বিক্ষিপ্ত হল পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানে কণা বিচ্ছুরণের এক রূপ) হওয়া ।

নিউট্রিনোগুলি s-channel বা t-channel জি (Z) বোসনের মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকভাবে বিক্ষিপ্ত হতে পারে । (s-channel, t-channel জি (Z) বোসন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে নিচে PDF এর ডাউনলোড লিঙ্ক দেওয়া আছে সেখান থেকে ডাউনলোড করে রিসার্চ পেপার (হতে পারে)-টা পরে নিতে পারেন)

তো এবার আসি আরেক ব্যাপারে, ধরেই নিলাম নিউট্রিনোগুলিতে কোনভাবে ইলেক্ট্রন (বা অন্য কোন মেজর কণা) তৈরির জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পেল তখন কি হবে । সেক্ষেত্রে আসলে এমন অনেকগুলি অবাস্তব অস্থিতিস্থাপক ইন্টারঅ্যাকশন বা মিথস্ক্রিয়া ঘটতে পারে । এরকম হতে পারে যে, জি (Z) বোসনের দ্বারা একটা ইলেকট্রন এবং পজিট্রনের s-channel পেয়ার তৈরি করতে পারে (যা ডব্লিউ (W) বোসনের t-channel প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করে) । আবার নিউট্রিনো একসাথে কাপল ড্যান্স ও শুরু করে দিতে পারে (জাস্ট অ্যা জোক)

উচ্চ শক্তিতে, আপনি মূলত যেকোনো কিছু করতে পারবেন কেননা তখন নিউট্রিনোগুলি আর নিরপেক্ষ আচরণ করবে না । তারা তখন ইলেকট্রন (মিউ আর টাও -এর মতনও)-এর ছোট বোনের মত আচরণ শুরু করবে 😜 । যেটা কিনা সম্ভাবনার বিস্তৃত ক্ষেত্র খুলে দেয় । ইউ নো হুহাই 😁 । তখন বাকিটা ব্যাপারটা সাধারণ নিউট্রন ইন্টারঅ্যাকশন হয়ে যাবে । এখানে যদিও আমি নিউট্রন ইন্টারঅ্যাকশন বা নিউট্রন মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে বললাম না । যাইহোক

আমরা কখনও একটা নিউট্রিনো অন্য নিউট্রিনোর সাথে সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষ্য করতে পারব না কেননা এই মহাবিশ্বে উচ্চ শক্তির নিউট্রিনোর (100 TeV) ঘনত্ব বা পরিমাণ খুবই কম যেটা বলতে গেলে একেবারে নগন্য । তবে এটি বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই যে খুব বেশি অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে কারণ বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে ইলেক্ট্রন মিথস্ক্রিয়া ব্যাপরটাতে জেনেছে তাই উচ্চ শক্তির নিউট্রিনো ইলেকট্রন (বা অন্য কোন মেজর পার্টিকেল) মিথস্ক্রিয়ার মত কাজ করবে সেটা বলা যেতে পারে । তো খুব সম্ভবত এরকম কিছু ঘটবে না যেটা আমরা ইলেক্ট্রন মিথস্ক্রিয়া দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারব না ।

ও আর একটা সম্ভাবনার কথা বলতে ভুলে গিয়েছি । আরও একটি সম্ভাবনা আছে । যেটা আসলে সুনির্দিষ্ট নয়, কেবল মাত্র একটা সম্ভাবনা, তবে সেটা নিউট্রিনো পরীক্ষায় প্রতিবেদন করা নিউট্রিনো ঘাটতির (ব্যাপারটা “Solar Neutrino Problem”-এর যেখান সূর্য থেকে হিসাবের চেয়ে অনেক কম পরিমান নিউট্রিনো আসে যেটা ধারণা থেকে অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ) জন্য দায়ী হতে পারে । সেটা হল, যদি দুটি নিউট্রিনো প্রায় একই দিকে ভ্রমণ করে, তাহলে তারা মহাকাশে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একসঙ্গে হয় । তারা তখন একত্রিত হয়ে একটা বড় নিউট্রিনো তৈরি করতে পারে । এভাবেই ইলেক্ট্রন নিউট্রিন মিউ নিউট্রিনো বা মিউ নিউট্রিনো টাউ নিউট্রিনোতে পারিণত হয় । বর্তমানে অনেকে মনে করে তারা নিজেরাই টাইপ পরিবর্তন করে যেটা আসলে একটা ভুল ধারণা । নিউট্রিনোতে এমন কিছু নেই যা স্থির ভর হিসাবে বিবেচিত হতে পারে । অনেকের হিসেবে নিউট্রিনো স্থির ভর আছে যেটা আসলে তেমনটা মেনে নেওয়ার মত না (তবে হ্যা কিছু নিউট্রিনোর ভর রয়েছে) । কেননা অনেক গভষণায় দেখা গেছে যে নিউট্রিনো প্রায় আলোর দ্রুতিতে ছোটে । তো যাই হোক লেখাটা প্রায় শেষ তো চলুন একটু ঝালাই করে নেওয়া যাক কেননা আমার মন হয় যে লেখাটা একটু জটিল হয়ে গেছে 😊😊 ।

Diagram of the IceCube Neutrino Observatory. Credit: IceCube Science Team – Francis Halzen

তো নিউট্রিনো বনাম নিউট্রিনোর সংঘর্ষ, যোগাযোগ, মিথস্ক্রিয়া, ইন্টারঅ্যাকশন যাই বলিনা কেন এর উল্লেখ করার মত তত্ত্বীয়ভাবে তিনটি ঘটনা ঘটার সম্ভবনা আছে । সেগুলো হল—

১. উল্লেখিত ফিচার ইমেজের কমিকের মত ব্যাপারটা হবে, যদি সেটা নিম্ন শক্তি সম্পূর্ণ নিউট্রিনোর মাঝে ঘটে ।

২. বেশি শক্তির নিউট্রিনো হলে, যেটা খুবই কম আছে, ইলেকট্রন মিথস্ক্রিয়ার মত ঘটনা ঘটবে ।

৩. আর না হলে দুই নিউট্রন কাকা একসাথে কোলাকুলি করে নতুন শক্তির (একটু বেশি) নিউট্রিনো তৈরি করে মহাবিশ্ব পারি দেওয়ার ফন্দি করবে ।

ব্যাক্তিগত মতামতঃ ৩ নম্বটা ঘটার সম্ভাবনা বেশি । প্রশ্ন করবেন না কেন কারণ আমি জানি না । কামন ডুড, আই অ্যাম ১৮ ইয়ারস্ ওল্ড, আমি এত কিছু জানব কীভাবে ।

তো যাই হোক, লেখা শেষ । নিউট্রন যাই করুক ওরা সংঘর্ষ করুক, মারামারি করুক আর কোলাকুলিই করুক আমার কি । আমি খাই দাই আর বোগল বাঁজাই । 😎😎😎

ধন্যবাদ!

PDF (Z-boson)
PDF (Neutrino Interactions)

তথ্য সুত্রঃ

https://en.m.wikipedia.org/wiki/W_and_Z_bosons

https://www.researchgate.net/figure/a-Photon-and-Z-boson-in-the-s-channel-bphoton-and-Z-boson-in-the-t-chanel-cfour-W_fig2_260050040

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Neutrino#No_self_interaction

https://www-he.scphys.kyoto-u.ac.jp/member/nuICISE/Neutrino-Interactions.html

https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0146641017300340

এন্ড সর্বোপরি, মাই কুল ব্রেইন 😎🤣

লেখাটি 284-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. লেখাটি ভাল হয়েছে।
    কিন্তু লেখার ভাষা বা ইমোজীর ব্যবহার আমার কাছে কিছুটা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।
    সোশাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস লেখা এবং ব্লগপোস্ট লেখার ধরনে কিছুটা পার্থক্য রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। ধন্যবাদ।

    1. তানভীর রানা রাব্বি Avatar
      তানভীর রানা রাব্বি

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । আসল একটু সারকেজম করে লেখার আভ্যাস আছে তো তাই হয়ে গিয়েছে । তবে পরবর্তী সময় থেকে এগুলো পরিহার করার চেষ্টা করবো । আমি আসলে ব্লগ বলতে অন্যকিছু বুঝতাম ।😜

Leave a Reply to তানভীর রানা রাব্বিCancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers