( নীচের লেখাটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে প্রকাশিত ডগলাস মেইনের লেখা ‘Worls largest cave fish discovered in India’ এর অনুবাদ।)
এখন পর্যন্ত ২৫০ প্রজাতির গুহাবাসী মাছ পাওয়া গিয়েছে যারা ঘুটঘুটে অন্ধকারময় জায়গায় সামান্য খাদ্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। যেহেতু খাবারের জন্য খুব বেশি কিছু মিলে না তাই এরা আকারে ছোট হয়, সাধারণত কয়েক ইঞ্চি লম্বা।
কিন্তু গবেষকরা ভারতের এক পাতাল গহ্বরে একটি মাছ আবিষ্কার করেছেন যা প্রায় দেড় ফুট লম্বা। যা জানা প্রজাতিগুলো থেকে প্রায় দশগুন ভারী। যখন জীববিজ্ঞানী ডেনিয়েল হ্যারিস ২০১৯ সালের অভিযানে প্রথম এই মাছটি দেখেন তখন তিনি বিস্মিত ও বিহম্বল হয়ে পড়েন। “আমার প্রথম অনুভূতি ছিলো আমার একটি বড় জাল লাগবে।” মাছটি নিয়ে Cave and Karst Science -এ প্রকাশিত গবেষণা পত্রের সহলেখক হ্যারিসের মতে এই মাছটি এখনও নতুন প্রজাতিতে পরিণত হওয়ার পথে বিবর্তিত হচ্ছে। এটা বিজ্ঞানীদের এই বিবর্তন পদ্ধতি বোঝার সুযোগ করে দিবে।
এই আবিষ্কারের ফলে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠে এসেছে। মাছগুলো আকারে এত বড় কীভাবে হলো, এরা কী খায়, এরা কীভাবে এই গুহায় বাঁচতে অভিযোজিত হলো যেটা অনেক গভীর এবং এই গুহার বেশীরভাগ অংশ এখনও অজানা রয়ে গিয়েছে। অন্য পাতাল প্রাণীদের মতো এই মাছটিও অন্ধ, এদের চোখ নেই, যদিও এরা আলো অনুভব করতে পারে।
গুহার ভেতর:
ভারতের পাহাড়ী রাজ্য মেঘালয়াতে থমাস আরবেঞ্জ এর সাথে অভিযানে হ্যারিস এই মাছটির সন্ধান পান। এই এলাকায় অনেক গুহা রয়েছে কারণ এখানে পর্যাপ্ত চুনাপাথর আছে যা বৃষ্টির কারণে বেঁকে যায়। এটি একটি পৃথিবীর অন্যতম বৃষ্টিবহুল জায়গা।
দলের আরেকজন সদস্য থেকে সবাই মাছটি সম্পর্কে জানতে পারে এবং সন্দেহ করে যে এটি একটি নতুন প্রজাতির মাছ। কিন্তু তারা তখনও এটি বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে ভূপৃষ্ঠের ৩০০ ফুট নিচে উম লাদাও গুহা নামে জায়গায় তারা এটির খোঁজ পেয়েছে।
তারা সেখানে দেখলো ডজন ডজন মাছ পানিতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। হ্যারিস বললো “আমার একটি ছোট জাল ছিলো। যা আসলে ট্যাঙ্কে উষ্ণ অঞ্চলের মাছ ধরার জন্য। আমি দাঁড়িয়ে নিচে তাকাচ্ছিলাম।” সে বুঝতে পারলো মাছটি অন্য পদ্ধতিতে ধরতে হবে। সে পানিতে একটি ব্যাগে বিস্কুট দিয়ে পানিতে নামিয়ে দিলো। এই বুদ্ধিটি সফল হলো।
হ্যারিস একজন শখের গুহা পর্যবেক্ষক এবং এডিংবার্গ স্কটল্যান্ডের হেরিওট ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমুদ্র জীববিজ্ঞানী। তিনি বলেন মাছগুলো হয়তো বৃষ্টির পানিতে ভেসে আসা উদ্ভিদ খায় কিন্তু অভিযানের সময় তা দেখা যায় নি। এই গুহাটিতে কেবল শীতকালে যাওয়া যায়, বর্ষাকালে পুরো এলাকা বন্যা হয়ে যায় এবং ফলে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।
তারা কীভাবে এত বড় হলো এবং তারা কী খায় তা এখনও একটি রহস্য। মাছটির ওজন এখনও মাপা হয় নি। কারণ এই গুহার ভেতর নিক্তি নিয়ে আসাটা কঠিন। কিন্তু হ্যারিসের মতে এদের ওজন দুই পাউন্ডের চেয়ে একটু বেশি।
“এখানে অদ্ভুত কিছু ঘটছে যার ফলে এই পরিবেশে এত বড় মাছ থাকা সম্ভব হয়েছে।”
ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অফ মেক্সিকোর গবেষক প্যাট্রিসিয়া অরনিলাস যিনি এই গবেষণার সাথে জড়িত নন। তিনি বলেন, “এই গুহায় শুধু বড় আকারের মাছ পাওয়া গেছে তা নয়, এরা সংখ্যাতেও প্রচুর।”
এই আবিষ্কারের আগে পাতালের সবচেয়ে লম্বা দুইটি মাছ ছিলো ব্লাইন্ড সোয়াম্প ইল এবং ব্লাইন্ড কেইভ ইল। এই মাছ দুটি মেক্সিকোর স্থানীয়। এই বিলুপ্তপ্রায় মাছদুটি নতুন মাছটি থেকে চিকন। নতুন মাছটি আকারে অনেক বড় যা কিনা পাতালের অন্য মাছ থেকে কয়েকগুণ বড় হবে।
এই মাছের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। দলটি ভারতের বিজ্ঞানী নিলেশ ধানুকার এবং রাজীব রাঘাবান একসাথে কাজ করছে মাছটির জিনোম সিকুয়েন্সিং এর জন্য, যাতে করে মাছটি নতুন কোন প্রজাতি কি না তা যাতে জানা যায়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ফিরতি অভিযানে ফটোগ্রাফার রবি শোন, হ্যারিস এবং তার সহযোগীরা কিছু জীবিত মাছ সংগ্রহ করে এবং ল্যাব পরীক্ষার জন্য কিছু পাখনার অংশও সংগ্রহ করেন।
শোন বলেছে,
আমি গত ২০ বছর ধরে গুহার প্রাণীদের ছবি তুলছি কিন্তু এত বড় কোন কিছু দেখি নি। তাদের আকার দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম
বিবর্তনের খেলা?
“এই নতুন মাছটি নিঃসন্দেহে গোল্ডেন মাহসির সাথে সম্পর্কিত” হ্যারিস বলেন।
তার বর্ণনা অনুযায়ী এই মাছদুটির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো রঙের। এই মাছটি দেখতে সাদা। চোখ ভালোভাবে গঠিত নয় অথবা চোখ নেই। এই মাছটি মাহসির থেকে ছোট।
যদিও তারা আকার-আকৃতিতে মাহাসির এর মতো তবুও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই মাছটি একটি নতুন প্রজাতি। একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে মেক্সিকান টেট্রার ক্ষেত্রে। মেক্সিকান টেট্রা একটি গুহাবাসী মাছ যা উপরে বসবাসকারী টেট্রার মতো শুধু তাদের চোখ আর দেহে রঙ নেই। এই বিষয়ে মতবাদ হলো কিছু মাছ অন্য মাছ থেকে আলাদা হয়ে গুহার তলদেশে চলে যায় এবং পরবর্তীতে এমন সব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে যা তাদের ঐ অন্ধকার গুহায় বাঁচতে সাহায্য করে।
কীভাবে ম্যাক্সিকান টেট্রা রং এবং দৃষ্টিশক্তি হারালো তা নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। এই ভারতীয় গুহা মাছের উপর গবেষণা, ওরনিলাসের মতে “এইসব অভিযোজনের জিনগত ব্যাখ্যা দুয়ার খুলে দিতে পারে”। গুহা মাছের রং এবং দৃষ্টির উপর গভীর জ্ঞান হয়তো ব্যাপক এবং অপ্রত্যাশিত কোন প্রয়োগের দিক উন্মোচন করবে।
হ্যারিস এর মতে, ম্যাক্সিকেন টেট্রা এবং নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতি হয়তো “প্রজাতিকরণ এবং চলমান বিবর্তনের” একটি উদাহরণ হতে পারে।
অনেক মানুষ কল্পনা করেন বিবর্তন খুবই ধীর এবং অপরিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার কিন্তু হ্যারিসের মতে বিষয়টি এমন নয়। তার মতে,
এই ধরণের পরিবেশের গবেষণা আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে খুবই আলাদা প্রাণীরা হয়তো দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
হ্যারিসের মতে এই আবিষ্কার আমাদের দেখায় যে গুহায় অনন্য কিছু প্রাণী থাকে যাদেরকে রক্ষা করতে হবে। গুহা সচারচর চুনাপাথর দিয়ে তৈরি হয় এবং সিমেন্ট তৈরি, কয়লা উৎপাদন এবং পানিদূষণের কারণে সারা পৃথিবীব্যাপী হুমকিতে আছে এবং এর ফলে গুহা বসবাস করা প্রাণীগুলো আবিষ্কারের আগে বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।
আরও অনেক কিছু খোঁজার আছে
অন্ধকারে থাকা সত্ত্বেও তারা নড়াচড়া করতে পারে, সাঁতার কাটতে পারে এবং তাদের বসবাসের জায়গার কিনারা তারা অনুভব করতে পারে, শন বলেন। তারা প্রথমে খুবই কৌতুহলী ছিলো আর সাথে ক্ষুধার্ত। হ্যারিস বলেন,
আপনি যদি আপনার বুট জুতা অথবা আঙ্গুল পানিতে রাখেন, তারা এসে সেটা চুষবে।
প্রথমে মনে হয়েছিলো তারা আলো অনুভব করতে পারে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দলের লোকজন যখন কৃত্রিম আলো জ্বালালো তখন তারা পালাতে পারলো। হাঁটাহাঁটি এবং ছবি তোলার জন্য আলো দরকার ছিলো। শোন বলেন, গুহাতে ছবি তোলা আসলেই কঠিন। এর একটা কারণ হলো ছবি তোলার জন্য আলো নিজেকেই দিতে হয়।
শোন বলেন,
এটা এমন একটা বিষয় যেটার মূল বিষয়গুলো শিখতে আমার বছরের পর বছর সময় লেগেছে এবং আমি এখনও আমি আজ শিখছি।
এধরণের আবিষ্কার তাকে সামনে এগিয়ে যেতে চালনা করে। যেটা এখনও সবার আড়ালে আছে ওটা খুঁজে বের করা। শোন বলেন,
আবিষ্কারের জন্য অনেক কিছু পড়ে রয়েছে।
Leave a Reply