শিরোনাম দেখে চোখ ছানাবড়া হলেও একদল গবেষক টমেটোতে একটি চমৎকার গবেষণা করেছেন! যা Elsevier পাব্লিশার্স এর মেটাবলিক ইঞ্জিয়ারিং জার্নালে প্রকাশিত হয় । যেখানে একদল গবেষক জিএমও টমেটোতে পার্কিন্সন রোগের ঔষধ এলডিওপিএ প্রবেশ করিয়েছেন।
জিএমও হলো এমন কোনও জীব যা জিন প্রকৌশল ব্যবহার করে জিনগত উপাদানকে পরিবর্তন করে করা হয়। জিএমওগুলি জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়, প্রাকৃতিক নির্বাচন বা প্রথাগত প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে নয়।
ঐ গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে বায়োফার্মা নিউজ প্রতিবেদন করেছে। প্রতিবেদনের ভাবার্থটি নিচে দেয়া হলো:
বিজ্ঞানীরা পারকিন্সন এর ঔষধ এল- ডিওপিএ সমৃদ্ধ টমেটো উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন । এল-ডিওপিএ বমি ভাব কিংবা আচরণগত সমস্যায় ভুক্তভোগী রোগীদের চিকিৎসায় কার্যকরী। গবেষকরা বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদ যোগ্য শস্য হিসেবে টমেটোটাকে ব্যবহার করেছে যেটা ব্যাপক পরিসরে মানসম্মত পরিবেশে উৎপাদন করা যায়।
এল-ডোপা টাইরোসিন থেকে উৎপাদিত একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড যা অনেক খাবারে পাওয়া যায়। গবেষক দল টাইরোসিনেজ এনকোডিং একটি জিন সন্নিবেশ করেছে যা টাইরোসিন ব্যবহার করে একটি এনজাইম এর এল -ডোপার মতো অণু তৈরি করে বিশেষত উদ্ভিদের ফলের অংশে এল ডোপা এর স্তরকে উন্নীত করে এবং সমগ্র উদ্ভিদে এল – ডোপা উৎপাদনের সাথে যুক্তদের তুলনায় উচ্চ ফলন ঘটায়।
টমেটো ফলের অর্জিত মাত্রা – প্রতি কেজি টমেটোতে ১৫০ মিলি গ্রাম যা অন্যান্য এল ডোপা সঞ্চয়কারী উদ্ভিদে ঔষধের বিপাকীয় উৎপাদনে উদ্ভিদের বাধা সৃষ্টিকারী কিছু পরিচিত ত্রুটি ছাড়াই পরিলক্ষিত ছিলো।
এখন লক্ষ্য হল টমেটো থেকে এল- ডিওপিএ উত্তোলন করা উৎপাদিত পণ্য গুলোকে বিশুদ্ধ করার জন্য একটি উৎপাদন পাইপ –লাইন তৈরি করা।
এই গবেষণার সংশ্লিষ্ট প্রফেসর ক্যাথি মার্টিন এই গবেষণার ব্যাপারে বলেন “এই ধারণাটা এত কৌতূহল- উদ্দীপক যে আপনি ক্ষুদ্র পরিসরে টমেটো উৎপাদন করতে পারবেন। যেহেতু জিএমও (জিনগত ভাবে পরিবর্তিত প্রোডাক্টকে) আপনি গ্রিন হাউজে ,নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চিকন জাল ব্যবহার করে করবেন তাই পোকা পরাগরেণু বাইরে নিতে পারবেনা।
“তারপর আপনি কম খরচের একটা ইন্ড্রাস্টি সেট আপ করতে পারেন যা এল- ডিওপিএ তৈরি করতে পারে জি.এম.ও টমেটোর জলীয় দ্রবণ থেকে।“যা খুব অল্প খরচে নিরাপদ খাঁটি এল-ডিওপিএ তৈরিতে কাজে লাগবে।পারকিন্সন রোগটা একটা বিরাট সমস্যা উন্নয়নশীল দেশের জন্যে যেখানে প্রতিদিন রোগী ২ ডলার খরচ করতে পারেনা সিন্হেটিক এল- ডিওপিএ ক্রয়ের জন্যে। এল- ডিওপিএ হচ্ছে রাসানিক ডোপামিনের অ্যামিনো এসিডের এমন অণু যা রোগীদের ডোপামিনের ঘাটতি পূরণ করে। বেশিরভাগ(ভেলবেট বিন)মখমল শিমের Mucuna purine(বৈজ্ঞানিক নাম)বীজে ১০% এল-ডিওপিএ ধারণ করতে পারে। কিন্তু এই উদ্ভিদটাতে ক্ষুরধার যুক্ত কাঁটা থাকে যা কৃষকদের জন্যে ক্ষতিকর । কারণ কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ঘটতে পারে। এই ভেলবেট বিনে বেশি পরিমাণ ট্রিপটামিনের কারণ রোগীদের (হ্যালুসিনেশন)অলীক কল্পনা ও হতে পারে।
Velbet bean
এই গবেষণা সম্পর্কে প্রথম লেখক বলেন, এটা পরবর্তীতে সিনথেটিক বায়োলজির (কৃত্রিম জীব বিজ্ঞানের) জন্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। সত্যিই এক বিষ্ময়কর কাজ ভবিষ্যতে আমরা অ্যামিনো এসিডের জন্য এটা পর্যবেক্ষণ করতে পারি।
যেহেতু এই গবেষণাটি একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করলো সেহেতু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি যদি বৃহৎ পরিসরে জি.এম.ও টমেটো ব্যবহার করে এল- ডিওপিএ উৎপাদন করতে পারে তাহলে উন্নয়নশীল এবং সল্পোন্নত দেশের পার্কিন্সন রোগীদের ঔষধের চাহিদা মেটাতে পারবে। তাই বলা যেতেই পারে এই গবেষণাটি অদূর ভবিষ্যতে এল – ডিওপিএ সংকট দূর করতে ভূমিকা রাখবে। তদ্রুপ পার্কিন্সন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাইলফলক রাখতে পারবে।
ছবিসূত্রঃ গবেষণা পত্র ও amazon.in
তথ্যসূত্রঃ Biopharma news: Scientists produce a GMO tomato enriched with Parkinson’s drug L-DOPA
Leave a Reply