আ মাদের বুড়ো আঙ্গুলটা কত কাজেই না লাগে। নানান সরঞ্জাম তৈরি, পোশাক সেলাই, আচারের বয়াম খোলতে,মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের বুড়ো আঙ্গুলটা নেই সেটা ভাবা যায়? আচ্ছা সে আপনারা ভাবুন। আমি আজকে লিখছি আমাদের এই বুড়ো আঙ্গুলটা ঠিক কত বয়সের বুড়ো! দীর্ঘদিন যাবত এটি রহস্য হয়েই ছিল গবেষকদের কাছে। নতুন একটি গবেষণা বলছে বুড়োটা প্রায় ২ মিলিয়ান বছরের বুড়ো। প্রায় ২ মিলিয়ান বছর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এটি লাভ করে। কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ট্রেসি কিভেল বলছেন গবেষণাটি যুক্তিসম্পন্ন। পূর্বপুরুষদের বুড়ো আঙ্গুল কি করে কাজ করে সেটা জানা এত সহজ নয়।
ফসিলে যথেষ্ট পরিমাণ পেশি সংরক্ষিত থাকে না। সুতরাং এই ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বপুরুষদের আমাদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে এমন কিছু হাড় ঠিক কতটা কাছাকাছি এর উপর নির্ভর করতে হয়। হাতের অস্থি গুলো এমনিতেই ছোট এবং এসব এর ফসিলও খুব কম। সাদৃশ্যের রকমফের হয় অস্থির সাথে পেশিগুলো কীভাবে যুক্ত আছে তার উপর। অনেকসময় দেখা যায় অস্থির একই গঠনতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও মুষ্টির দৃঢ়তায় পার্থক্য হতে পারে।
জার্মানির তিউবেনজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাটেরিনা হরবতি এবং তার সহকারীরা মানুষের বিভিন্ন প্রজাতির জীবাশ্ম নিয়ে সেগুলোর বুড়ো আঙ্গুলের উপর গবেষণা করেন। তারা সেগুলোর হাড়ের আকৃতি এবং নরম টিস্যু নিয়ে কাজ করেন। সেই সাথে তারা নমুনাগুলোর তিন মাত্রিক গঠন তৈরি করেন এবং এগুলোর টর্ক হিসেব করেন। গবেষকরা প্রায় এক লক্ষ বছরের আগের দুইটা আধুনিক মানুষ প্রজাতি এবং চারটি নিয়ানডারথাল এর ফসিল নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া আড়াই থেকে তিন লক্ষ বছর আগের হোমো নালেডি প্রজাতির নমুনা নিয়েও কাজ করেন। হোমো গণের সিস্টার গণ অস্ট্রেলোপিথেসিন ( অস্ট্রেলোপিথেকস আফেরেন্সিস,অ.আফ্রিকানাস,অ.সেদিবা) এর নমুনাও গবেষণার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
বিজ্ঞানীরা থ্রিডি কম্পিউটার সফটওয়ার ব্যবহার করে ফসিলের অপোনেনস পলিসিস পেশি পুনরায় যুক্ত করে একটা তিনমাত্রিক ইমেজ তৈরি করেন। উল্লেখ্য যে অপোনেনস পেশি বুড়ো আঙ্গুল কে হাতের তালুর ভেতরের দিকে ভাজ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও এই পেশি আরো শক্ত এবং দৃঢ়ভাবে কোনো কিছু ধরা যেমন সেলাই এর সময় সুচ অথবা হাতুড়ি নিয়ে কাজ করার সময় হাতুড়ি দোলাতে সহায়তা করে। এটি একটি ত্রিকোণাকার পেশি যা মূলত বুড়ো আঙ্গুলের বিপরীত ডিরেকশন এ কাজ করে। এইক্স মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োম্যাকানিক্স লরেন্ট ভিগারৌক্স বলেন সর্বমোট দশটি ভিন্ন ধরনের পেশি থাম্ব এর চলনে সহায়তা করে। এরপর তারা একই প্রক্রিয়া আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্স এবং শিপাঞ্জির উপর চালান। দেখা যায় ফলাফল দুইটা হোমো গণের অন্তর্ভূক্ত
প্রজাতির নমুনার সাথে মিলে যায়। বিজ্ঞানীরা “কারেন্ট বায়োলজি” তে রিপোর্ট করেন যে হোমো গণের সকল সদস্যদের থাম্ব ( বৃদ্ধাঙ্গুলি) এর দৃঢ়তা একই।
হরবতি বলেন আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সদের আঙ্গুলের নৈপুন্যতার স্তর দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়ার্টক্র্যান্স এ পাওয়া দুইটা হোমিনিন প্রজাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ওই প্রজাতিগুলো প্রায় দুই মিলিয়ান বছর পূর্বের। তাদের কঙ্কালতন্ত্র এতটাই অসম্পূর্ন যে এরা আসলে কোন বংশ বা প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। গবেষণাপত্রটির লেখক বলেন যে এদের থাম্ব হোমো গণের সদস্যদের সাথে এতই মিলসম্পন্ন যে তারা হয়ত হোমো গণের সদস্যই হতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলোপিথেসিনস গণের সদস্যদের বৃদ্ধঙ্গুল শিম্পাঞ্জির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে অ.সেদিবার সাথে সোয়ার্টক্র্যান্স এ পাওয়া ফসিল নমুনার সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এরা হোম স্যাপিয়েন্সদের মতো এতটা দক্ষতা অর্জন করতে পারে নি। গবেষকরা জানান এই গণের সদস্যরা হয়ত সেরকমভাবে অভিযোজিত হওয়া ছাড়াই বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারত। যেখানে হোমো গণের সদস্যরা আরো সরঞ্জাম তৈরিতে এবং আরো দক্ষ হতে পেরেছিল।
পুরো গবেষণা এটাই বলছে যে আধুনিক স্যাপিয়েন্স তথা আমাদের বুড়ো আঙ্গুলের বয়স প্রায় ২ মিলিয়ন বছর। আর এই পুরোনো বুড়ো আঙ্গুল মানুষদের আরো ভাল পাথরের সরঞ্জাম তৈরি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই সভ্যতায় পৌছাতে সহায়তা করেছে। সেই সাথে আমিও অনায়েসে লিখে ফেললাম গবেষণা প্রবন্ধটির ভাবানুবাদ। ভিগারৌক্স জানান এই গবেষণাটি প্রত্নতাত্ত্বিকদের ফসিলের পেশি বৈশিষ্ট্য গুলোকে বোঝতে এবং শ্রেণিকরণ করতে সহায়তা করবে।
তথ্যসূত্রঃ সায়ন্স ম্যাগাজিন।
Leave a Reply