এনজাইম কি
এক কথায় বলা যায় এনজাইম হল জৈব প্রভাবক বা উৎসেচক। প্রভাবক বলতে সেসব রাসায়নিক যৌগ কে বোঝাচ্ছি যারা কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে। আমাদের জানা দরকার যে জীবনের দুটি মৌলিক শর্ত হল:
- প্রত্যেক জীবের অবশ্যই তার অনুরূপ বংশধর তৈরির ক্ষমতা থাকতে হবে
- জীবদের অবশ্যই তাদের দেহে ঘটা প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়া সমূহ কে নিয়ন্ত্রণ তথা প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
এই শর্ত গুলো বলবার কারণ হচ্ছে জীবনের এই মৌলিক বিষয় বস্তুর উভয় ক্ষেত্রেই এনজাইমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেই জন্যে এনজাইমোলজি কে জীবনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় বস্তু বলা চলে। প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকা থেকে শুরু করে বংশধর তৈরি এবং মারা যাবার পরে তার মৃত দেহটি প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া পর্যন্ত সব জায়গায় এনজাইমের ভূমিকা রয়েছে। এনজাইম নিয়ে পুরো লেখাটা পড়া শেষ করলেই আপনি আমার সাথে একমত হবেন।
খাবার খাওয়া এবং হজম এর কথাই ভাবুন। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আমরা যেসব খাবার খাই তার বেশির ভাগই অনেক জটিল, শক্ত ধরনের। আমাদের দাঁত আছে বলে আমরা অনায়েসেই এসব শক্ত শক্ত খাবার গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারি। তারপর জিহ্বা দিয়ে তালুর উপর চাপ দিয়ে পাকস্থলীতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর? তারপর কি হয় এসব জটিল জটিল খাদ্য বস্তুর? আমরা তো খাবার খাই আমাদের দেহের কোষ গুলোকে পুষ্টি দেবার জন্যে। কিন্তু আমরা তো সরাসরি পুষ্টি গ্রহণ করছি না। আমরা কতগুলো শক্ত শক্ত খাবারের টুকরো দিচ্ছি। কোষের তো আর আমাদের মতো ধারালো দাঁত নেই যে তারা সেগুলোকে ভেঙ্গে পুষ্টি গুলো আলাদা করবে। আসলে আমাদের পাঠানো শক্ত জটিল খাবার গুলো পরিপাক নামক একটি শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কতগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরল পুষ্টি উপাদানে পরিণত হয়। তারপর কোষ সেগুলোকে শোষণ করতে পারে।
পরিপাকের এই প্রতিটি বিক্রিয়ায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অনেক এনজাইম। এক এক এনজাইম এক এক ধরণের খাদ্যবস্তুর উপর কাজ করে। শর্করা জাতীয় খাবারের উপর অ্যামাইলেজ, মলটেজ। প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপর ট্রিপসিন, রেনিন। চর্বির উপর লাইপেজ। খাদ্য গ্রহণ ছাড়াও আমাদের কোষ বিভাজনের ক্ষেত্রেও এনজাইমের ভূমিকা রয়েছে। কোষ বিভাজনের একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হল কোষের ডিএনএ এর অনুলিপন (যে প্রক্রিয়ায় ডিএনএ এর হুবুহু কপি তৈরি হয়)। এই অনুলিপন প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিভিন্ন ধরণের এনজাইমের ভূমিকা। যেমনঃ ডিএনএ পলিমারেজ , হেলিকেজ , লাইগেজ , এপিমারেজ ইত্যাদি। আর কোষ বিভাজন হয় বিধায় আমাদের দেহের বৃদ্ধি ঘটে, আমরা আমাদের বংশধর উৎপাদন করতে পারি। এই রকম ভাবে এনজাইম আমাদের জীবনের প্রায় সব রকমের শারিরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এনজাইমের কারণে এসব প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়া গুলো খুব দ্রুত গতিতে ঘটে। এনজাইম ছাড়া এসব বিক্রিয়া গুলো খুব ধীর গতিতে ঘটত। এতে আমাদের মৃত্যু অবশম্ভাবী হতে পারে। এনজাইম একটি বিক্রিয়ার গতি কয়েকশ থেকে কয়েক লক্ষ-গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরুপ ওরোটিডাইন ৫-ফসফেট ডিকার্বোক্সিলেজ এনজাইম এটির সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়া কয়েক মিলি সেকেন্ডে ঘটাতে পারে। কিন্তু এনজাইমটি ছাড়া বিক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মিলিয়ান বছর লেগে যাবে। এনজাইমের এই ধর্ম কে বলা হয় তার প্রভাবন ধর্ম। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এনজাইম নির্দিষ্ট রাসায়নিক যৌগের উপর কাজ করে। এই ধর্মকে বলা হয় সাবস্ট্রেট স্পেসিফিসিটি (substrate specificity)। এনজাইম যে যৌগের উপর কাজ করে তাকে বলা হয় সাবস্ট্রেট (substrate)। কিছু কিছু রাসায়নিক যৌগ এনজাইমের কার্যক্রম কে বাধা দেয় এদের কে বলা হয় ইনিহিবিটর। উদাহরণস্বরূপ: বিভিন্ন ড্রাগ, বিষ। আবার কিছু কিছু রাসায়নিক যৌগ এনজাইমের কার্যক্রম এর গতি কে বাড়িয়ে দেয় এদেরকে বলা হয় অ্যাকটিভেটর। যেমন হেক্সোকাইনেজ-১।
এনজাইম আবিষ্কারের ইতিহাস
সতেরশো শতকের শেষ এবং আঠারো শতকের শুরুর দিকে মানুষ জানত যে, পাকস্থলী তে নিঃসৃত এক প্রকার রসের প্রভাবে মাংস পরিপাক হয় এবং লালা ও উদ্ভিদের দেহে থাকা এক ধরণের উপাদান এর প্রভাবে স্টার্চ ভেঙ্গে সরল শর্করায় পরিণত হয়। কিন্তু কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় হয় সে সম্বন্ধে কোন জ্ঞান ছিল না। ১৮৩৩ সালে ফরাসি রসায়নবিদ আনসালমে পাইয়েন সর্বপ্রথম ডায়াস্টেজ এনজাইম আবিষ্কার করেন। এর কয়েক দশক বাদে, লুই পাস্তুর শর্করা হতে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে বলেন যে,
ঈস্ট ছত্রাকের ভেতর থাকা ফারমেন্টস নামের একটা জৈব শক্তি (ভাইটাল ফোর্স) ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ঘটায়। এবং এই ফারমেন্টস কেবল জীব দেহের ভেতর পাওয়া যায়।
১৮৭৭ সালে জার্মান শরীরতত্ত্ববিদ উলহেম কোন সর্বপ্রথম এনজাইম শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এনজাইম শব্দটি জীব দেহের বাইরের কিছু প্রভাবক যেমন পেপসিন কে বোঝাতে ব্যবহৃত হত আর জীব দেহের ভেতরের প্রভাবক কে ফারমেন্টস ই বলা হত। এডওয়ার্ড বাখনার ১৮৯৭ সালে ঈস্ট ছত্রাকের উপর গবেষণা করে একটি পেপার লিখেন।
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন কয়েক ধাপের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তিনি খুঁজে পান জীবিত ঈস্ট কোষ ছাড়াই কেবল এর কিছু অংশ দ্বারা শর্করার ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় যে এনজাইম টা কাজ করে তিনি এর নাম দেন জাইমেজ। ১৯০৭ সালে জীবিত কোষ ছাড়া ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম হবার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি নোবেল পুরস্কার পান। বাখনারকে অনুসরণ করে এনজাইম এর নামকরন সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ার সাবস্ট্রেট এর নাম এর শেষে ‘এজ’ যুক্ত করে করা হয়। যেমন ল্যাকটোজ এর উপর কাজ করে ল্যাকটেজ এনজাইম, কাজ করে। আবার বিক্রিয়ার ধরণ অনুসারেও এনজাইমের নামকরন করা হয়। যেমন ডিএনএ পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় এনজাইমের নাম ডিএনএ পলিমারেজ।
এনজাইমের রাসায়নিক প্রকৃতি
১৯০০ সালের প্রথম দিক অব্দি এনজাইমের প্রানরাসায়নিক প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট জানা যায় নি। অনেক বিজ্ঞানীরা খেয়াল করলেন যে এনজাইমের ধর্ম প্রোটিন এর সাথে মেলে। কিন্তু কিছু কিছু বিজ্ঞানী যেমন নোবেল বিজয়ী রিচার্ড উইলস্ট্রেট বিশ্বাস করতেন প্রোটিন এনজাইমের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র প্রোটিন নিজের কোন রকম প্রভাবন ধর্ম নেই। ১৯২৬ সালের দিকে জেমস বি. সামার দেখান যে ইউরিয়েজ এনজাইম একটি বিশুদ্ধ প্রোটিন এবং তিনি এই এনজাইম এর একটা ক্রিস্টাল তৈরি করেন।
১৯৩৭ সালে তিনি একই ভাবে ক্যাটালেজ এনজাইম নিয়েও কাজ করে দেখান যে এটিও একটি প্রোটিন। অয়েন্ডেল স্টেইনলি এবং জন হাওয়ার্ড পেপসিন, ট্রিপসিন , কাইমোট্রিপসিন এনজাইম নিয়ে কাজ করে মতবাদ দেন যে কিছু বিশুদ্ধ প্রোটিন এনজাইম হতে পারে। এই দুজন বিজ্ঞানী ১৯৪৬ সালে রসায়ন এ নোবেল জেতেন। অবশেষে এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি পদ্ধতি ব্যবহার করে লাইসোজাইম এনজাইমকে ক্রিস্টালাইজড করেন। লাইসোজাইম এনজাইম চোখের পানি, লালা, ডিমের সাদা অংশে থাকে। এই এনজাইম ব্যাকটেরিয়ার কোট প্রোটিন কে ভেঙে ফেলে। তারপর থেকে এনজাইম কে প্রোটিন হিসেবেই ভাবা হত। কিন্তু ১৯৮০ এর দশক এ জানা যায় কিছু রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ) এর এনজাইমের মতো প্রভাবন ক্রিয়া রয়েছে। এদেরকে রাইবোজাইমস (ribozymes) বলা হয়।রাইবোজাইম ( রাইবোনিউক্লিক এসিড এনজাইম ) হল কিছু আরএনএ অণু যাদের কিছু বিশেষ প্রানরাসায়নিক বিক্রিয়া ( বিশেষত আরএনএ স্প্লাইসিং) কে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৮২ সালে সিডনি অলটম্যান রাইবোজাইমস আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন যে, আরএনএ অণু বংশগতি বস্তু এবং প্রভাবক উভয় ধরনের ধর্মই প্রদর্শন করতে পারে।
তারপর থেকে সকল এনজাইমই প্রোটিন, এই ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসতে হয়। যেসব এনজাইম প্রোটিন এদেরকে প্রোটিন এনজাইম বলা হয়। এরা মূলত অনেক গুলো অ্যামাইনো এসিড এর সমন্বয়ে গঠিত পলিপেপটাইড চেইন। অ্যামাইনো এসিড এর সিকোয়েন্স এর উপর এনজাইমের বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। এনজাইমের কার্যকারিতা তাপমাত্রা এবং pH এর উপর নির্ভর করে। প্রতিটি এনজাইমের নির্দিষ্ট অনুকূল তাপমাত্রা এবং pH রয়েছে। অনুকূল তাপমাত্রার চাইতে বেশী তাপমাত্রায় এনজাইম ডিনেচারড ( এনজাইমের ত্রিমাত্রিক গঠন নষ্ট হয়ে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়া ) হয়ে যায়।
এনজাইম | অনুকূল তাপমাত্রা | অনুকূল pH |
পেপসিন | ৪০° সেলসিয়াস | ১.৫-২.০ |
প্রোটিয়েজ | ৫০° সেলসিয়াস | ৮-৯ |
লাইপেজ | ৪০° সেলসিয়াস | ৭.০ |
আলফা-এমাইলেজ | ৪০° সেলসিয়াস | ৮.০ |
ইউরিয়েজ | ৬০° সেলসিয়াস | ৭.০ |
সুক্রেজ | ৪০° সেলসিয়াস | ৬.২ |
কিছু কিছু এনজাইমের গঠনে এর প্রোটিন অংশ বাদেও কিছু অপ্রোটিন অংশ থাকে। এদেরকে কোফ্যাক্টর বলে। কোফ্যাক্টর হিসেবে কোন অজৈব ধাতব আয়ন থাকতে পারে অথবা কোন জৈব অংশও (কো-এনজাইম) থাকতে পারে যেমন কোন ভিটামিন। কোফ্যাক্টর এনজাইমের সাথে শক্তভাবে কিংবা দুর্বলভাবে যুক্ত থাকতে পারে। শক্ত ভাবে যুক্ত থাকলে এদেরকে প্রোসথেটিক গ্রুপ বলা হয়।
এনজাইম কিভাবে কাজ করে
কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া কে প্রভাবিত করার জন্যে এনজাইম কে অবশ্যই সাবস্ট্রেটের সাথে যুক্ত হতে হয়। আগেই বলেছি যে নির্দিষ্ট এনজাইমের জন্যে সাবস্ট্রেট নির্দিষ্ট ।প্রতিটি এনজাইমের আলাদা আলাদা সাবস্ট্রেট বাইন্ডিং সাইট আছে। যে সাবস্ট্রেট এ একটি নির্দিষ্ট এনজাইমের বাইন্ডিং সাইটের ঠিক পরিপূরক সাইট আছে কেবল সেই সাবস্ট্রেটই ঐ এনজাইমের সাথে যুক্ত হতে পারে। অনেকটা তালা চাবির মতোন। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট এনজাইম নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেট এর সাথে পরিপূরক চার্জ কিংবা হাইড্রোফিলিক অথবা হাইড্রোফোবিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেও যুক্ত হতে পারে। সুতরাং এনজাইমের সাবস্ট্রেট এর সাথে যুক্ত হবার বিভিন্নতা হয়ে থাকে কেমোসিলেক্টিভ , রেজিওসিলেক্টিভ এবং স্টেরিওসিলেক্টিভ।
কিছু কিছু এনজাইমের ডিএনএ প্রুফ রিডিং এর ক্ষমতা আছে। যে প্রক্রিয়ায় কোন এনজাইম ডিএনএ পলিমারকরণ বিক্রিয়ার ভুল শনাক্তকরণ করা হয় তাকে প্রুফ রিডিং প্রক্রিয়া বলা হয়। আর ডিএনএ অনুলিপন প্রক্রিয়ায় ছাঁচ সুত্রকের নিউক্লিওটাইড বেস অনুসারে পরিপূরক বেস বসানোর প্রক্রিয়া কে বলা হয় পলিমারকরণ বিক্রিয়া। ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম প্রুফ রিডিং এর কাজটি করে থাকে। আরএনএ পলিমারেজ , অ্যামাইনো অ্যাসাইল টিআরএনএ সিন্থেটেজ এনজাইমেরও প্রুফ রিডিং ক্ষমতা আছে। এনজাইম কিভাবে সাবস্ট্রেট এর সাথে যুক্ত হয় তা ব্যাখ্যা করার জন্যে দুইটা মডেল আছে। যথাঃ
- তালা চাবি মডেল, এবং
- ইনডিউসড ফিট মডেল
তালা-চাবি মডেল
১৮৯৪ সালে এমিল ফিশার এনজাইমের স্পেসিফিসিটি ব্যাখ্যার জন্যে এই তালা চাবি মতবাদ দেন। তার মতে নির্দিষ্ট এনজাইম এবং নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেট এর পরস্পরের সাথে যুক্ত হবার জন্যে নির্দিষ্ট পরিপূরক বাইন্ডিং সাইট আছে। এনজাইমের বাইন্ডিং সাইটে সাবস্ট্রেট পরিপূরক ভাবে এঁটে যায়। অনেকটা তালা চাবির মতো। একটি নির্দিষ্ট এনজাইমে যুক্ত হবার জন্যে কোন সাবস্ট্রেট ঐ এনজাইমের বাইন্ডিং সাইটের পরিপূরক গঠন বিশিষ্ট হতে হবে। অন্যথায় সেই সাবস্ট্রেট ঐ এনজাইমে যুক্ত হতে পারবে না। এনজাইমের বাইন্ডিং সাইটকে বলা হয় এর অ্যাকটিভ সাইট। এই ক্ষেত্রে প্রথমে কোন সাবস্ট্রেট কোন এনজাইমের অ্যাকটিভ সাইটে যুক্ত হয়ে সাবস্ট্রেট-এনজাইম যৌগ তৈরি করে। বিক্রিয়া শেষে এরা আলাদা হয়ে উৎপাদ তৈরি করে। এনজাইমের গঠনের কোন রকম পরিবর্তন হয় না। একটি নির্দিষ্ট এনজাইম এর একাধিক অ্যাকটিভ সাইট থাকতে পারে। তালা চাবি মডেলের সীমাবদ্ধতা হল এটি এনজাইমের সাবস্ট্রেট স্পেসিফিসিটি ব্যাখ্যা করতে পারলেও বিক্রিয়ার ট্রান্জজিশান স্টেট কে ব্যাখ্যা করতে পারে না। ট্রান্জজিশান স্টেট নিয়ে আমরা পরে জানব।
ইনডিউসড ফিট মডেল
এই মডেল অনুসারে এনজাইম এর একটিভ সাইট এবং সাবস্ট্রেট আগে থেকেই একে অপরের সাথে একদম এঁটে যাবার জন্যে তৈরি থাকে না। যেমনটা বিজ্ঞানীরা তালা চাবি মডেল এ ভাবতেন। বরং সাবস্ট্রেট এর সাথে যুক্ত হবার জন্যে এনজাইম তার কাঠামোয় কিছুটা পরিবর্তন আনে। ফলে সাবস্ট্রেট এনজাইমের সাথে একদম খাপে খাপ ভাবে যুক্ত হয়ে যায়। এনজাইমের সাথে সাবস্ট্রেট এর এভাবে যুক্ত হবার প্রক্রিয়াকে ইনডিউসড ফিট বলা হয়।
এনজাইমের প্রভাবন প্রক্রিয়া
আমরা জানি এনজাইম কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি কয়েক লক্ষ গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এনজাইমের এই ধর্ম কে প্রভাবন ধর্ম বলা হয়। কীভাবে এনজাইম কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি কে বাড়িয়ে দেয় সে সম্পর্কে জানতে হলে আগে বিক্রিয়ার বাধ শক্তি বা সক্রিয়ন শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংঘর্ষ তত্ত্ব মতে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাকালে বিক্রিয়ক অণু গুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম শক্তি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। যেসকল বিক্রিয়ক অণু এই ন্যূনতম শক্তি অর্জন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারবে তারাই কেবল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে। এই ন্যূনতম শক্তিকে বলা হয় বিক্রিয়ার বাধ শক্তি বা সক্রিয়ন শক্তি। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি। ধরুন আপনি একটা গাড়িকে ঠেলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে একটা ন্যূনতম শক্তি খরচ করে গাড়িটি কে ঠেলতে হবে। নইলে আপনি গাড়িটিকে সরাতে পারছেন না। সক্রিয়ন শক্তির ব্যাপারটাও অনেকটা এমন। কোন বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক অণু গুলো সক্রিয়ন শক্তি অর্জন করে বিক্রিয়ার মধ্যবর্তী একটি অস্থায়ী জটিল অবস্থায় পৌঁছে। একেই বিক্রিয়ার ট্রান্সজিশান স্টেট বা মধ্যবর্তী দশা বলা হয়। ট্রান্সজিশান স্টেট এবং বিক্রিয়ার শুরুতে বিক্রিয়ক অণু গুলোর মধ্যে শক্তির পার্থক্যটাই হল ঐ বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তির পরিমাণ।
এখন কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার সক্রিয়ন শক্তি বেশি হলে সে বিক্রিয়ার হার বা গতি কম হবে না বেশি হবে? অবশ্যই কম। যেমন ধরুন আপনার কাছে দুইটা পিকনিক এর প্রস্তাব আসল। দুইটাই একই স্থানে হবে। কিন্তু যেতে হলে আপনাকে একটাতে ৫০০ আরেকটায় ১০০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আপনার পকেটে বর্তমানে আছে ৩০০ টাকা। আপনি কোনটায় যাবার চিন্তা করবেন ? অবশ্যই যেইটায় ৫০০ টাকা লাগবে সেটায়। শুধু তাই না দেখবেন ৫০০ টাকা চাঁদার অফারটায় লোকের সংখ্যাও বেশি হয়েছে। সক্রিয়ন শক্তির ব্যাপারটাও অনেকটা এমন। যে বিক্রিয়ার সক্রিয়ন শক্তির পরিমাণ যত কম সেই বিক্রিয়ায় তত বেশি অণু সহজেই বাধ শক্তি অর্জন করে বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে এবং সেই বিক্রিয়ায়র গতিও বেশি হবে।
এখন এনজাইম যা করে সেটা হল এটি কোন বিক্রিয়াকে আগের তুলনায় কম সক্রিয়ন শক্তির পথে ঘটায়।
অর্থাৎ এনজাইম কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার বাধ শক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে এনজাইম ছাড়া রাসায়নিক বিক্রিয়ার তুলনায় এনজাইম যুক্ত বিক্রিয়ায় অধিক বেশি সংখ্যক অণু বাধ শক্তি অর্জন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে। আর তাই বিক্রিয়ায় এনজাইম ব্যবহৃত হলে বিক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল এনজাইম কীভাবে কোন বিক্রিয়ার সক্রিয়ন শক্তির পরিমাণ কমায় ?
এক এক এনজাইম এক এক প্রক্রিয়ায় কাজটা করে থাকে। কিছু কিছু এনজাইম বিক্রিয়ক গুলো কে একসাথে সঠিক বিন্যাসে রেখে বিক্রিয়ার গতি বাড়ায়। কিছু কিছু এনজাইম তার একটিভ সাইটে সাবস্ট্রেট যুক্ত হবার জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। যেমন সেটা হতে পারে এসিডিক কিংবা ননপোলার। কিছু কিছু এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স সাবস্ট্রেট কে এমন ভাবে নমনীয় করে যাতে করে এর মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন গুলো সহজেই ভাঙতে পারে এবং এভাবে খুব তাড়াতাড়ি ট্রান্সজিশান স্টেট এ পৌছাতে পারে। কোন কোন এনজাইম বাধ শক্তি কমাবার জন্যে নিজেদের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এর জন্যে এনজাইম অণু বিক্রিয়ক অনুর সাথে একটি ক্ষণস্থায়ী সমযোজী বন্ধন তৈরি করে। ক্ষণস্থায়ী শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ। সকল এনজাইম ই রাসায়নিক বিক্রিয়া শেষে আবার নিজের আগের অবস্থায় ফিরে যায়। অর্থাৎ বিক্রিয়া শেষ এ এনজাইমের গঠনের দীর্ঘস্থায়ী কোন পরিবর্তন হয় না। একটি বিক্রিয়া প্রভাবিত করার পর বিক্রিয়া শেষ এ এনজাইম প্রোডাক্ট টাকে রিলিজ করে দিয়ে আবার নতুন কোন বিক্রিয়া কে প্রভাবিত করার জন্যে তৈরি হয়।
এনজাইম নিয়ন্ত্রণ
এনজাইমের গঠনে পরিবর্তন করার মাধ্যমে এর প্রভাবন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াকে এনজাইমের রেগুলেশন বা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বলে। যে সকল রাসায়নিক যৌগ এনজাইমের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এ ব্যবহৃত হয় তাদের কে বলা হয় রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রক যৌগ। এরা কোন এনজাইমের কার্যক্রম বাড়াতে পারে (অ্যাকটিভেটর) অথবা কমিয়ে দিতে পারে (ইনহিবিটর)। এনজাইমের রেগুলেশন বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। যেমন অ্যালোস্টেরিক রেগুলেশান, প্রোটিওলাইটিক এক্টিভেশন, রিভার্সেবল কোএভেলেন্ট মডিফিকেশান , আইসোএনজাইম ব্যবহার করে রেগোলেশান।
অ্যালোস্টেরিক নিয়ন্ত্রণ
এ প্রক্রিয়ায় কোন এনজাইম এর অ্যাকটিভ সাইট ব্যাতীত অন্য কোন নিয়ন্ত্রণ স্থান (বা রেগুলেটরি সাইটে) ইফেক্টর অণু যুক্ত হয়ে এনজাইম কে রেগুলেট করে। যে সাইটে ইফেক্টর অণু যুক্ত হচ্ছে তাকে রেগুলেটরি সাইট বলা হয়। একটি এনজাইমের একাধিক রেগুলেটরি সাইট থাকে। অ্যালোস্টেরিক সাইট কোন ইফেক্টর অণুকে এনজাইমের সাথে যুক্ত হতে সহায়তা করে এবং এনজাইমের গঠনের পরিবর্তন ঘটায়। অ্যালোস্টেরিক রেগুলেশান দুই রকম হতে পারেঃ
- অ্যালোষ্টেরিক ইনহিভিশন এবং
- অ্যালোষ্টেরিক অ্যাক্টিভিশন
প্রথম ক্ষেত্রে কোন ইনহিবিটর এনজাইমের সাথে এলোষ্টেরিকেলি যুক্ত হয়ে এর কার্যক্রম এর গতির হ্রাস ঘটায়। যেমনঃ আইসোলিউসিন ( অ্যামাইনো এসিড) সিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় প্রোডাক্ট আইসোলিউসিন বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত থ্রিয়োনিন ডিহাইড্রেটেজ এনজাইম কে ইনহিবিট করে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে এনজাইমের কার্যক্রম কে ত্বরান্বিত করে। এ ক্ষেত্রে এক্টিভেটর অণু এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে এর সাথে সাবস্ট্রেট এর এফিনিটি বা আকর্ষণ কে ত্বরান্বিত করে। যেমনঃ এএমপি (এডেনোসাইন মনো ফসফেট) গ্লাইকজেন ফসফোরাইলেজ এনজাইম এর অ্যাকটিভেটর হিসেবে কাজ করে।
যেসকল এনজাইম অ্যালোষ্টেরিকেললি রেগুলেট করা যায় তাদেরকে অ্যালোস্টেরিক এনজাইম বলে। এসব এনজাইমের একটি রেগুলেটরি সাইটে কোন ইফেক্টর অণু যুক্ত হলে অন্যান্য সাইটে এর প্রভাব পড়ে। এই ধর্ম কে বলা হয় কো-অপারেটিভিটি। এটি দুই রকমের হতে পারে। পজেটিভ এবং নেগেটিভ। একটি সাইটে কোন ইফেক্টর যুক্ত হলে অন্যান্য সাইটেও যদি এর যুক্ত হবার সুযোগ বেড়ে যায় তাহলে এটাকে বলা হয় পজিটিভ কো-অপারেটিভিটি। ঠিক উল্টোটা হলে তাকে বলা হয় নেগেটিভ কো-অপারেটিভিটি।
এনজাইমের অ্যালোষ্টেরিক রেগোলেশান প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্যে দুইটা মডেল রয়েছে।
- কন্সারটেড মডেল, এবং
- সিকোয়েন্সাল মডেল
কন্সারটেড মডেল
১৯৬৫ সালে জ্যাক মনোড , জেফ্রিস উয়াইমেন এই মডেল প্রস্তাব করেন। ছবিতে অ্যালোষ্টেরিক এনজাইম এর দুইটা কনফরমেশান রয়েছে। R ( রিল্যাক্স বা শিথিল) এবং T ( টাইট বা শক্ত)। R কনফরমেশানটা সক্রিয় এবং সাবস্ট্রেট এর সাথে শক্ত ভাবে বাইন্ড করে। T কনফরমেশানটি নিষ্ক্রিয় এবং সাবস্ট্রেট এর সাথে তুলনামূলক কম শক্তভাবে বাইন্ড করে। এই মডেলের মূল কথা হলো এনজাইমের সকল সাবইউনিট এর কনফরমেশাল বা গাঠনিক পরিবর্তন একই সাথে হয়। অর্থাৎ একই সাথে সকল সাব-ইউনিট এর T থেকে R কনফরমেশনের দিকে পরিবর্তন হয় স্বাভাবিক অবস্থায় একটি এনজাইমের T এবং R কনফরমেশন একটা সাম্যাবস্থা বজায় রেখে চলে। এ অবস্থায় T কনফরমেশন এর সংখ্যা R এর তুলনায় বেশি থাকে। অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় থেকে সক্রিয় কনফরমেশনে যায়। এই মডেল অনুসারে T কনফরমেশনের সবগুলো সাব ইউনিটে সাবস্ট্রেট যুক্ত হবার পরে একসাথে সবগুলো ইউনিট এর কনফরমেশনাল পরিবর্তন হয়।
সিকোয়েন্সাল মডেল
ডেনিয়েল কোশল্যান্ড এই মডেল প্রস্তাব করেন। এই মডেল অনুসারে এনজাইমের সব ইউনিট এ এনজাইমেটিক রেগোলেশান প্রসেস একই সাথে হয় না। প্রথমে এনজাইমের একটি সাব ইউনিট এর সাথে একটি সাবস্ট্রেট বাইন্ড করে এবং এর কনফরমেশনাল পরিবর্তন ঘটায়। এবং সেটা T থেকে R কনফরমেশন এর দিকে। অর্থাৎ যেই সাব ইউনিটে সাবস্ট্ররেট যুক্ত হয় কেবল সেই ইউনিটেই কনফরমেশনাল পরিবর্তন ঘটে।
অ্যালোস্টেরিক মডিউলেশন
অ্যালোস্টেরিক মডিউলেশন হচ্ছে এনজাইমের কার্যক্রম কে পরিবর্তন করা। এ ক্ষেত্রে কোন এনজাইমের অ্যালোস্টেরিক সাইটে একটি ইফেক্টর যুক্ত হয়ে এর কার্যক্রম কে পরিবর্তন করে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ইফেক্টর অণুগুলোকে বলা হয় মডিউলেটর। এরা কোন এনজাইমের রেগুলেটরি সাইটে যুক্ত হয়ে এনজাইমের একটিভ সাইটের একটি কনফরমেশনাল পরিবর্তন ঘটায় এবং এর কার্যক্রম কে পরিবর্তন করে। এনজাইম মডিউলেশন পজিটিভ অথবা নেগেটিভ হতে পারে। পজিটিভ মডিউলেশন এর ক্ষেত্রে কোনো লিগ্যান্ড বা মডিউলেটর এনজাইমের সাথে বাইন্ড করে এর অ্যাকটিভ সাইটের পজিটিভ গাঠনিক পরিবর্তন ঘটায় এবং সাবস্ট্রেট এর সাথে যুক্ত হবার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নেগেটিভ মডিউলেশন এর ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা ঘটে। হিমোগ্লোবিন এর সাথে অক্সিজেন যুক্ত হওয়া পজিটিভ মডিউলেশন এর উদাহরন। এখানে অক্সিজেন সাবস্ট্রেট এবং লিগ্যান্ড হিসেবে কাজ করে। হিমোগ্লোবিন এর একটি সাবইউনিটে অক্সিজেন যুক্ত হলে অন্যান্য ইউনিট গুলোর অ্যাকটিভ সাইটে অক্সিজেন যুক্ত হওয়া শুরু হয়।
এনজাইমের নামকরণ
তিনটি পৃথক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এনজাইমের নামকরণ করা হয়। যথা:
- সাবস্ট্রেট এর ধরণ অনুসারে ,
- বিক্রিয়ার ধরণ অনুসারে ,
- সাবস্ট্রেট-বিক্রিয়ার মিলিত বৈশিষ্ট্য অনুসারে।
সাবস্ট্রেট এর ধরণ অনুসারে
এই পদ্ধতিটি সিস্টেমিক নামকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। ১৮৯৮ সালে ডুক্ল্যাক্স প্রস্তাব করেন যে ডায়াস্টেজ এনজাইমের শেষ তিন অক্ষর( এজ) এনজাইম যেই সাবস্ট্রেট এর উপর কাজ করে তার নাম এর শেষ এ যুক্ত করে ঐ এনজাইম এর নামকরণ করা যায়। কিছু উদাহরণ:
সাবস্ট্রেট | এনজাইম |
সুক্রোজ | সুক্রেজ |
ইউরিয়া | ইউরিয়েজ |
আরজিনিন | আরজিনেজ |
টাইরোসিন | টাইরোসিনেজ |
লিপিড | লাইপেজ |
প্রোটিন | প্রোটিয়েজ |
বিক্রিয়ার ধরণ অনুসারে
এই পদ্ধতিও সিস্টেমিক নামকরণ এর অন্তর্ভুক্ত।এনজাইম যে ধরনের বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তার নামের শেষ এ এজ যুক্ত করেও এনজাইমের নামকরণ করা হয়।
বিক্রিয়ার নাম | এনজাইম |
হাইড্রোলাইসিস | হাইড্রোলেজ |
অক্সিডেশন | অক্সিডেজ |
রিডাকশন | রিডাকটেজ |
সাবস্ট্রেট-বিক্রিয়ার মিলিত বৈশিষ্ট্য অনুসারে
সাবস্ট্রেট এর সাথে এনজাইমের নাম যৌগ করে এ জাতীয় এনজাইমের নাম করা হয়। বিক্রিয়াকে নির্দিষ্ট করে বোঝাতে এই রকম নামকরণ করা হয়। যেমন সাবস্ট্রেট হেক্সোজ এবং বিক্রিয়া কাইনেজ হওয়ায় এর এনজাইমের নাম হেক্সোকাইনেজ। ফসফোইনল পাইরোভিক এসিড থেকে পাইরোভিক এসিড তৈরির এনজাইম এর নাম পাইরোভিক এসিড কাইনেজ।
এনজাইমের প্রকারভেদ
জিনোমিক সিকোয়েন্সিং পদ্ধতির অগ্রগতির কল্যাণে এ যাবত অনেক এনজাইম আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০০৪ এর মাঝামাঝি সময়ে ৯৮০০ টি ভিন্ন ভিন্ন জীব হতে প্রায় ৮৩,০০০ বিভিন্ন এনজাইম আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যাটি দ্বিগুণ এ পরিণত হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সকল এনজাইম কে ৬ টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি (IUBMB) কর্তৃক প্রতিটি এনজাইমের জন্যে ৪টি সংখ্যার সমন্বয়ে একটি সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন করে। এর মধ্যে প্রথম সংখ্যাটি এনজাইম কি ধরনের বিক্রিয়া কে প্রভাবিত করে তা নির্দেশ করে। অ্যালকোহল কে জারিত করে অ্যালডিহাইড তৈরি করে এনজাইম অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ এর IUBMB নাম্বার হল 1.1.1.1.। এখানে প্রথম সংখ্যা বোঝায় এই এনজাইম জারন-বিজারন বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে , দ্বিতীয় সংখ্যা নির্দেশ করে এটি NAD+ কে ব্যবহার একটি হাইড্রোজেন কে অপসারিত করে , তৃতীয় সংখ্যাটি নির্দেশ করে এর সাবস্ট্রেট প্রাথমিক ভাবে অ্যালকোহল , চতুর্থ সংখ্যাটি ভিন্ন ভিন্ন সাবস্ট্রেট এর উপর একই ধরনের বিক্রিয়া ঘটায় এমন সকল এনজাইমকে আলাদা আলাদা ভাবে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
শ্রেণী-১: অক্সিডোরিডাকটেজ
প্রথম শ্রেণীর এনজাইম গুলো জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া কে প্রভাবিত করে। জারণ মানে হল ইলেকট্রন দান এবং বিজারণ মানে হল ইলেকট্রন গ্রহণ। যে ইলেকট্রন দান করে সে জারিত এবং যে ইলেকট্রন গ্রহণ করে সে বিজারিত হয়। সাধারণত এই এনজাইম গুলোর ক্ষেত্রে ডিহাইড্রোজিনেজ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজিনেজ , গ্লিসার্যালডিহাইড-৩- ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রিডাকটেজও ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ পাইরোভেট রিডাকটেজ।
শ্রেণী-২: ট্রান্সফারেজ
এই শ্রেণীর এনজাইম গুলো কোন যৌগ হতে একটি রাসায়নিক গ্রুপ কে অন্য কোন যৌগ এ ট্রান্সফার করে। এই কারণে এই এনজাইম গুলোর প্রতিটি দুইটা সাবস্ট্রেট এর উপর কাজ করে এবং দুইটা উৎপাদ তৈরি করে। যেমনঃ হেক্সোকাইনেজ এনজাইম এটিপি হতে একটি ফসফেট গ্রুপ কে গ্লুকোজ অনুতে ট্রান্সফার করে। আবার অ্যাসিটাইল ট্রান্সফারেজ এনজাইম অ্যাসিটাইল-কোএ হতে অ্যাসিটাইল গ্রুপ কে অন্য কোন অণু যেমন লাইসিন এ ট্রান্সফার করে। অ্যামিনো ট্রান্সফারেজ এনজাইম কোন অ্যামিনো এসিড হতে অ্যামিনো গ্রুপ কে ট্রান্সফার করে থাকে এবং কিটো এসিড তৈরি করে।
শ্রেণী-৩: হাইড্রোলেজ
এ শ্রেণীর এনজাইম গুলো হাইড্রোলাইসিস বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে কোন রাসায়নিক অনুতে একটি পানি অণু যুক্ত করে। সাধারণত এই গ্রুপ এর সাবস্ট্রেট কোন অ্যামাইড অথবা এস্টার অণু হয়ে থাকে। যেমন এস্টারেজ , লাইপেজ , ফসফাটেজ , গ্লাইকোসাইডেজ , পেপটাইডেজ , নিক্লিওসাইডেজ।
শ্রেণী-৪: লাইয়েজ
সাধারণত এই গ্রুপের এনজাইম গুলো কার্বন-কার্বন সমযোজী বন্ধন ভাঙতে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্যরা কোন কিটো এসিড এর কার্বন-নাইট্রোজেন বন্ধন ভেঙ্গে এক অণু কার্বন-ডাই অক্সাইড রিলিজ করে। যেমন ডোপামিন তৈরির বিক্রিয়ায় ডোপা ( ডিহাইড্রোফিনাইল অ্যালানিন) ডিকার্বোক্সিলেজ এনজাইম অংশ নেয়। ডোপা হতে এক অণু কার্বন-ডাই অক্সাইড অপসারণ করে ডোপামিন তৈরি করে।
শ্রেনী-৫: আইসোমারেজ
এই এনজাইম গুলো কোন রাসায়নিক যৌগের কোন রাসায়নিক গ্রুপ অথবা দ্বিবন্ধন ঐ যৌগেই অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে। যেমন ২-ফসফোগ্লিসারেট এর ২ নাম্বার কার্বন এর ফসফেট গ্রুপ ৩ নাম্বার কার্বন এ স্থানান্তর করে ৩-ফসফোগ্লিসারেট তৈরি করে ফসফোগ্লিসারেট মিউটেজ এনজাইম।
শ্রেণী-৬: লাইগেজ
লাইগেজ দুইটা কার্বন পরমাণুকে জোড়া লাগাতে ব্যবহৃত হয়। এই এনজাইম গুলো বিক্রিয়া কে প্রভাবিত করতে শক্তির দরকার হয়। সাধারণত এটিপি (এডিনো এসাইন ট্রাই ফসফেট) হতে শক্তি আসে। সাধারণত যেসকল এনজাইম কোন নিউক্লিওটাইড ব্যবহার করে শক্তি সংগ্রহ করে তাদের সিনথেটেজ বলা হয়। আর যাদের নিউক্লিওটাইড এর দরকার পড়ে না তাদের বলা হয় সিনথেজ। সুতরাং লাইগেজ এনজাইম গুলো সিন্থেটেজ। ট্রান্সফার আরএনএ তে অ্যামিনো এসিড যুক্ত করার বিক্রিয়ায়কে লাইগেজ ( অ্যামাইনো-অ্যাসাইল-টিআরএনএ-সিনথেটেজ) এনজাইম প্রভাবিত করে।
জীব দেহে এনজাইম
জীবদেহে এনজাইম এর ভূমিকা বলে কয়ে শেষ করবার মতো নয়। তবে দুই একটা গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম এর কাজ নিয়ে গল্প করলে মন্দ নয়। সেক্ষেত্রে প্রথমই রুবিস্কো এনজাইম এর কথা বলতে হয়।
এনজাইম জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম বলা হয় একে।
সাধারণত উদ্ভিদেরা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে। আসলে উদ্ভিদ আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এ প্রক্রিয়ায়। সেটা হলো উদ্ভিদ ই প্রথম আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে সংবদ্ধ করতে পারে। সালোকসংশ্লেষণ এর একদম প্রথম যে বিক্রিয়া সে সময় বাতাসের কার্বন-ডাই অক্সাইড কে পাতার মধ্যে থাকা রাইবুলোজ-১,৫-বিস ফসফেট এর সাথে বিক্রিয়া করে অস্থায়ী কিটো এসিড তৈরি করে। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সর্বপ্রথম সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে সংবদ্ধ হয়। এ বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসবে ভূমিকা রাখে রুবিস্কো এনজাইম। সুতরাং এই এনজাইম না থাকলে এ বিক্রিয়া হতো না এবং তাতে উদ্ভিদের পক্ষে খাদ্য তৈরিও সম্ভব হতো না। আর তখন কি হতো ভাবতে পারছেন নিশ্চয়। সে জন্যে এই এনজাইম টা এত দামী। এ ছাড়াও এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও অনেক এনজাইম এর ভূমিকা।
আচ্ছা ভাবুন তো উদ্ভিদ এর বীজ যখন মাটির নিচে থাকে তখন তো বীজে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া হবার সুযোগ নেই। কারণ সূর্যালোক সেখানে পৌছাতে পারে না। আবার বীজ এ ক্লোরোফিলও নেই। তাহলে বীজ টিকে থাকার জন্যে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় কোথা থেকে। বীজ এ থাকে লিপিড আর প্রোটিন। তো সেখানে লিপিড আর প্রোটিন থেকেই গ্লাইঅক্সালেট সাইকেল এর মাধ্যমে লিপিড আর প্রোটিন থেকেই বীজ তার প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ উৎপাদন করে নেয়। সেখানেও দুটো গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম এর ভূমিকা রয়েছে। সেগুলো হলো আইসো সাইট্রেট লাইয়েজ এবং ম্যালেট সিন্থেজ। এই এনজাইম দুটো প্রাণী দেহে নেই। তাই প্রানিরা লিপিড থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন করতে পারে না।
শ্বসন জীব দেহের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীব দেহের পুষ্টি উপাদান গুলোকে ভেঙ্গে শক্তি তৈরি করে। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক অনেক এনজাইম এর ভূমিকা। যেমন হেক্সোকাইনেজ , ফসফোফ্রুক্টো কাইনেজ, অ্যালডোলেজ, সাইট্রেট সিন্থেজ , ফিউমারেজ ইত্যাদি।
এবার হজম তথা পরিপাক প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলা যাক। প্রাণী দেহে হজম একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। লেখার প্রথমেই পরিপাক নিয়ে একটু বকবক করেছিলাম। এ প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু ভেঙ্গে সরল পুষ্টি উপাদানে পরিণত হয়। আর এখানে রয়েছে অজস্র এনজাইম এর ভূমিকা। খাদ্যবস্তুর রাসায়নিক পরিপাক মূলত মুখগহ্বরে লালা রসের মাধ্যমেই শুরু হয়ে যায়। মুখের ভেতর তিন জোড়া লালা গ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয়। আর লালা রসে থাকে শর্করা বিশ্লেষী এনজাইম। যেমন টায়ালিন , মলটেজ। টায়ালিন জটিল শর্করা কে ভেঙ্গে মলটোজ আর মলটেজ মলটোজ কে গ্লুকোজ এ রূপান্তরিত করে। লালায় লিপিড এবং প্রোটিন ভাঙ্গার কোন এনজাইম নেই।
মুখগহ্বর হতে খাদ্যবস্তু খাদ্যনালি হয়ে পাকস্থলীতে চলে আসে। পাকস্থলীতে শর্করা বিশ্লেষী কোন এনজাইম নেই। এর প্রাচীরে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি হতে নিঃসৃত হয় গ্যাস্ট্রিক জুস। এই জুস এ থাকে পেপসিন , রেনিন , লাইপেজ এনজাইম। পেপসিন প্রোটিন কে ভেঙ্গে প্রোটিওজ ও পেপটোন এ পরিণত করে। রেনিন ক্যাসিন প্রোটিন কে প্যারাকেসিন এ পরিণত করে। লাইপেজ চর্বি কে ভেঙ্গে ফ্যাটি এসিড গ্লিসারল তৈরি করে।
পাকস্থলীর পরে ক্ষুদ্রান্ত্র শুরু। পাকস্থলী হতে অর্ধ পাচিত খাদ্যদ্রব্য এর প্রায় একশ ভাগ হজম হয়। এখানে শর্করা , আমিষ , চর্বি সব জাতীয় খাদ্যবস্তুরই পরিপাক হয়। এখানে অগ্ন্যাশয় হতে অগ্ন্যাশয় রস , যকৃত রস এবং পিত্ত রস এসে খাদ্য বস্তুর সাথে মেশে। অগ্ন্যাশয় রসে থাকে অ্যামাইলেজ , লাইপেজ , ট্রিপসিন , কাইমোট্রিপসিন , কার্বোক্সি পেপটাইডেজ , অ্যামিনো পেপটাইডেজ, ফসফোলাইপেজ এনজাইম। এ ছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীর হতে নিঃসৃত হয় আন্ত্রিক রস। আন্ত্রিক রসে থাকে অ্যামাইলেজ , লেসিথিনেজ , সুক্রেজ , মলটেজ , লাইপেজ এসব এনজাইম। অ্যামাইলেজ জটিল শর্করা কে গ্লুকোজ এ পরিণত করে। ট্রিপসিন , কাইমোট্রিপসিন , কার্বোক্সি পেপটাইডেজ পলিপেপটাইড অণু কে ভেঙ্গে অ্যামিনোএসিড এ পরিণত করে। লেসিথিনেজ , লাইপেজ , ফসসোলাইপেজ হল চর্বি বিশ্লেষণকারী এনজাইম।
শিল্পক্ষেত্রে এনজাইম
শিল্পক্ষেত্রে এনজাইম বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে এনজাইম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন টেক্সটাইল শিল্পে , ফার্মাসিউটিকেলস , ডিটারজেনট , জৈব জ্বালানী তৈরি তে এনজাইম এর ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক।
দুগ্ধশিল্পেঃ
দীর্ঘদিন ধরেই দুগ্ধ শিল্পে বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন পনির , দই , ঘোল তৈরি করার জন্যে বাছুরের পাকস্থলীতে উৎপন্ন রেনেট ব্যবহৃত হতো। রেনেট হচ্ছে কতগুলো প্রোটিয়েজ এনজাইম নিয়ে গঠিত একটা তরল যা তৃণভোজী স্তন্যপায়ীদের পাকস্থলীতে উৎপন্ন হয়। রেনেট এ রেনিন , পেপসিন এনজাইম থাকে যে গুলো দুধ এর প্রোটিন ক্যাসিন কে ভেঙ্গে ফেলে। বর্তমানে বাছুর এর রেনেট এর পরিবর্তে মাইক্রোবিয়াল রেনেট ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোবিয়াল রেনেট এ এসিড অ্যাসপারটে প্রোটিয়েজ এনজাইম থাকে। আবার দই , ঘোল তৈরি তে ল্যাকটেজ এনজাইম ব্যবহৃত হয়। ল্যাকটেজ দুধ এর শর্করা ল্যাকটোজ কে আদ্রবিশ্লেষিত করে। এছাড়া পনির এর গন্ধ ঠিক রাখতে লাইপেজ এনজাইম ব্যবহৃত হয়।
টেক্সটাইল শিল্পেঃ
টেক্সটাইল শিল্পে সাধারণত সেলুলেজ , ক্যাটালেজ , ল্যাকেজ , অ্যামাইলেজ প্রভৃতি এনজাইম সমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলত সুতা থেকে স্টার্চ অপসারণ করার জন্যে , অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভাঙ্গার জন্যে , ব্লিচিং করার জন্যে , লিগনিন অপসারনের জন্যে এনজাইম ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
টেক্সটাইল এ এনজাইম যে কাজে ব্যবহৃত হয়ঃ
- এনজাইমেটিক ডিসাইজিংঃ ফেব্রিক বা সুতা থেকে স্টার্চ অপসারণের জন্যে অ্যামাইলেজ এনজাইম ব্যবহৃত হয়। এই ক্ষেত্রে অনুকূল তাপমাত্রা হল ৩০-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পিএইচ হল ৫.৫-৬.৫। এভাবে সুতার কোন রকম ক্ষতি না করেই ডিসাইজিং করা যায়।
- এনজাইম ওয়াশিংঃ এনজাইম ব্যবহার করে সুতাকে নরম , কোমল করা এবং সুতা হতে বিভিন্ন দাগ অপসারণ করার প্রক্রিয়া কে বলা হয় এনজাইম ওয়াশিং। সাধারণ ওয়াশিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রোটিন ধর্মী ময়লা কাপড়ে বা সুতায় অধঃক্ষিপ্ত হয়ে দাগ তৈরি করে। এ ক্ষত্রে ডিটারজেন্ট তৈরি তে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম ব্যবহার করে সহজেই এসব দাগ তোলে ফেলা যায়।
- বায়োফিনিশিংঃ বায়োফিনিশিং হচ্ছে এনজাইম ব্যবহার করে সুতাকে মসৃণ ও আরামদায়ক করা। এ প্রক্রিয়ায় সেলুলেজ এনজাইম ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিক কমাতে এনজাইমঃ
স্পেন এর একদল গবেষক প্লাস্টিক অপসারণে একটি নতুন পরিকল্পনা উদ্ভাবন করেন। পরিকল্পনাটি মূলত দুই ধাপের। প্রথমে কিছু অণুজীব প্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসবে। তারপর সেগুলো প্লাস্টিক কে তাদের কার্বন এর উৎস হিসেবে ব্যবহার করবে। অণুজীব গুলো কিছু এনজাইম ( পিইটি এজ ) তৈরি করবে যে গুলো দ্বারা তারা প্লাস্টিক পলিমার কে ভেঙ্গে ফেলে। যদি প্রক্রিয়াটি অক্সিজেন এর উপস্থিতিতে হয় তাহলে বিক্রিয়া শেষ এ কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং পানি তৈরি হবে। আর যদি অক্সিজেন এর অণুপস্থিতিতে ঘটে তাহলে বায়োগ্যাস এবং পানি তৈরি হবে।পিইটি এজ এনজাইম পলিইথিলিন টেরেপথেলেট প্লাস্টিক কে ভেঙ্গে ফেলে। ২০১৬ সালে সালেইডিয়োনেলা সাকাইনেসিস এ সর্বপ্রথম এই এনজাইম আবিষ্কৃত হয়।
তথ্য সুত্রঃ
- Lehninger Principles of Biochemistry.
- Text book of Biochemistry, Thomas M.Devlin.
- এনজাইম
- এনজাইম কি , সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ
- Enzymes and the active site (article)
- How Do Enzymes Work?
- প্লাস্টিকভুক ব্যাকটেরিয়া
- সমুদ্রের ঘ্রাণ
Leave a Reply