আমাদের দেহের সকল কাজের নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্ক। খাবার খাওয়া, খাবার হজম, হাঁটা-চলা, ঘুমানো, রক্তচাপসহ যাবতীয় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। হোমিওস্ট্যাসিস (Homeostasis) প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য শরীরে এক ধরনের রাসায়নিক নিঃসৃত হয়- যা হরমোন নামে পরিচিত। হোমিওস্ট্যাসিস মূলত শরীরে পূর্ণ ভারসাম্য অবস্থায় থাকার নাম। মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে পুরো শরীরে হরমোন ভ্রমণ করে থাকে। মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশে রক্ত-জালিকা আছে, যারা জানালা হিসেবে কাজ করে হরমোন চলাচলে।
হোমিওস্ট্যাসিস প্রক্রিয়ায় যখন ব্যাঘাত ঘটে, তখন এই ভারসাম্য বিনষ্টের খবর চলে যায় মস্তিষ্কে। হরমোন বাহক হিসেবে কাজ করে। হরমোন ছাড়া ও কিছু সংকেতবাহী রাসায়নিক (signaling molecule) যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। মস্তিষ্ক এরপর নির্দেশ পাঠায় শরীরে সেই সব ক্ষতিগ্রস্থ অংশে এবং ঠিক করতে তাগাদা দিয়ে থাকে।
হরমোন এবং সংকেতবাহী অণু চলাচল করে থাকে রক্ত ও রক্ত-জালিকার মাঝে অবস্থিত ক্ষুদ্র নালিকার মধ্য দিয়ে যা ক্যাপিলারি ( capillary) নামে পরিচিত।
ক্যাপিলারি আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক প্রকার ক্যাপিলারি আছেে যারা ফেনেস্ট্রেটেড ক্যাপিলারি (Fenestrated capillarries ) নামে পরিচিত। যাদের রক্ত-মস্তিষ্ক জালিকা ( blood brain barrier) থাকে না। অন্য প্রকার ক্যাপিলারিতে রক্ত- মস্তিষ্ক জালিকা থাকে।
হোমিওস্ট্যাসিস প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য একটা উদহারণ দেয়া যেতে পারেঃ-
যখন আমরা খাবার খাই, তখন রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। তা দেখে অগ্ন্যাশয় তড়িৎ গতিতে ইনসুলিন হরমোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়। মস্তিষ্ক সংকেত পেয়ে নির্দেশ দেয় যকৃৎকে। তারপর যকৃৎ অতিরিক্ত চিনি শোষণ করে নেয়। এভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। একই সাথে, অন্ত্র হরমোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে, পাকস্থলী পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে, প্রতিক্রিয়া স্বরুপ মস্তিষ্ক খাবার গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়।
হাইপোথ্যালামাসঃ মস্তিষ্কের মূল কেন্দ্র ভারসাম্যের
মস্তিষ্ক যা কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তার প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে হাইপোথ্যালামাস। এই হাইপোথ্যালামাসকে কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে তুলনা করা যায়- যা কিনা ঠিকঠাক সূত্র মেনে এলগরিদম নীতিতে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে পুরো প্রক্রিয়া। মানব মস্তিষ্ক একটা ক্ষুদ্র প্রসেসরের দশ ভাগের এক ভাগ শক্তি ব্যবহার করে, একটি কার্যক্রম পরিচালনা করতে – যা করতে হাজারটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ( Artificial intelligence) সংযোগ প্রয়োজন। মস্তিষ্ক নিউরণের মাধ্যমে , আরো ক্ষুদ্রভাবে বলতে গেলে সিন্যাপ্সিসের( দুই নিউরণের সংযোগস্থল) মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান, তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। মূলত এই থিওরির সাথে মিল রেখেই বর্তমানে কম্পিউটেশনাল কম্পিউটার তৈরী করা হচ্ছে।
আর এই নিউরণের মাধ্যমেই হাইপোথ্যালামাস সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিউরণ শরীরের ভেতর এবং বাহির উভয় দিক থেকেই প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে থাকে এবং হরমোন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
সিন্যাপ্সিস যেভাবে কাজ করে যোগাযোগ রক্ষায়ঃ
একটি সূক্ষ্ম তড়িৎ অনুভূতির ঢেউ (electrical wave) যখনি নিউরণে পৌঁছায় তৎক্ষণাৎ নিউরোট্রান্সমিটার নামক এক ধরণের রাসায়নিক নিঃসৃত হয় সিন্যাপ্সিসে। পেশীকোষ এবং স্নায়ু কোষের মধ্যবর্তী সিন্যাপ্সিসকে স্নায়ু-পেশীয় সংযোগ অঞ্চল (neuromuscular junction) বলা হয়। এই সংযোগস্থলে নিঃসৃত নিউরোট্রান্সমিটার এসিটাইলকোলিন (acetylcholine) নামে অভিহিত। যখন এই নিউরোট্রান্সমিটার গ্রহণ কোষে (receptive cell) পৌঁছায়, সেখানে গ্রাহক অংশের (receptor) সাথে যুক্ত হয়। অনেকটা তালা-চাবির (lock and key) মত প্রক্রিয়াটা। এই প্রক্রিয়া, আয়ন-চ্যানেল (ion channel) প্রবাহকে প্রভাবিত করে – গ্রহণ কোষকে উন্মুক্ত হয়ে যেতে এবং আয়নগুলো প্রভাবিত হয়ে সহজে গ্রহণ কোষে চলে যায়। ফলে, দ্রুত তড়িৎ বার্তা তৈরী হয়ে যায়। আর এভাবেই, নিউরণ কোষ পেশী কোষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ ১. Through the Open Window: How Does the Brain Talk to the Body?
২. How Does My Brain Communicate With My Body?
৩. Computers That Look Like the Brain
Leave a Reply