স্কুল জীবনে পদার্পণ করলেই ফলের রাজা কাঁঠাল এটাতো দিব্যি শেখানো হয়। কিন্তু আমকে কেন ফলের রাজা বলা হয়নি এ নিয়ে অনেকেরই আক্ষেপের শেষ নেই। তো বাংলাদেশে গ্রীষ্মের ছুটি মানেই রসালো আম, জাম, কাঁঠাল খাওয়ার ছুটি বলে প্রচলিত।
আম খেতে ভালোবাসেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের উপমহাদেশ তো আমের জন্য বিখ্যাত। কথিত আছে মোঘল সম্রাট রা আম সারা বছর খাওয়ার জন্য ঘি ভর্তি ড্রামে চুবিয়ে রাখতেন। তখন অবশ্য রেফ্রিজারেটরের যুগ ছিলোনা। আমের কত শত প্রজাতি। নাম শুনেই বিমুগ্ধ অনুভূতি হয়। ফজলি,ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত,আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, কাঁচা মিঠা, গোলাপ খাস,কার্টিমন, সূর্য ডিম আরো কত নাম। আমের জন্য বিখ্যাত হলো রাজশাহী আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
বাংলার নারীরা সুনিপুণ হাতে আচার, মোরব্বা সংরক্ষণ করে রাখে কাঁচা আমের বছরব্যাপি খাওয়ার জন্য। খোসাসহ আমের আচার খুব প্রচলিত বাংলাদেশে। তো কখনও কারো মনে হয়েছে আমের খোঁসা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে? নিশ্চয়ই প্রতিউত্তর হবে না।
কিন্তু আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব হেলথ ( NIH) এর একটি চমৎকার গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে আমের খোসার অ্যালার্জি নিয়ে। কী আছে ঐ প্রবন্ধে তার ভাবানুবাদ জেনে নিই।
উরুশিয়ল হচ্ছে একটা অ্যালার্জি জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ যা আইভি পয়জন ওয়াক বিষ নামে পরিচিত যা যথাক্রমে টক্সিকোডেনড্রন ও টক্সিকোডেনড্রন রেডিক্যানস নামক গাছে পাওয়া যায়।
এখানে এমন একজন রোগীর কথা তুলে ধরেছেন যে কী না উরুশিয়ল নামক বিষধারণকারী গাছের সংস্পর্শে এসেছিলেন । যা সংবহনতণ্ত্রে অ্যানাফালাক্সিস জাতীয় পদার্থের কারণে শ্বাসতন্ত্রে বায়ু প্রবাহ বাঁধাগ্রস্হ করে। এর কারণে শ্বাসতন্ত্রের ট্রাকিয়াসিস ও পালমোনারি ইডেমা হতে পারে। উরুশিওল একটি অ্যালার্জিক পদার্থ যা অ্যানাকার্ডিয়াসিয়ার পরিবারে পাওয়া যায়। যা সাধারণত বিষাক্ত আইভি (টক্সিকোডেনড্রন রেডিকানস) এবং পয়জন ওয়াক (টি ডাইরসিভিলোবাম) এর জন্য পরিচিত।
রোগীর উপস্থাপনা যা ইউরুশিয়ালযুক্ত উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসে তাদের মধ্যে রয়েছে প্রুরিটাস, এরিথেমা, ভ্যাসিকাল , বুলেট এবং স্থানীয় শোথ অ্যানাফিল্যাক্সিসের প্রতিক্রিয়াগুলো শ্বাসনালীতে মতো সিস্টেমিক সমঝোতার কারণ হতে পারে! ইউরুশিয়ালযুক্ত উদ্ভিদের জ্বলন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ফলে ট্র্যাকিয়াটিস ও পালমোনারি শোথ (ফুসফুসের অতিরিক্ত তরলজনিত কারণে ফুসফুসের শোথ অবস্থা হয় এই তরল ফুসফুসে অসংখ্য বায়ু থলের মধ্যে সংগ্রহ করে, শ্বাস নিতে কষ্ট দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, হার্টের সমস্যাগুলো ফুসফুসের শোথের মতো কারণে হয় তবে তীব্র শ্বাসনালীজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। যদিও প্রতিক্রিয়াগুলো বায়ুবাহিত ডার্মাটাইটিস এর সাথে যোগসূত্র ভালোভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। স্বল্প পরিচিত একটি প্রতিক্রিয়া হলো পুরনো ইউশিয়াল এক্সপোজার থেকে আমের ফলের হাইপারসেনসিটাইজেশন ঘটে বা অ্যালার্জিক সংবেদনশীলতা সৃষ্টি হয় ।
আমরা সন্দেহজনক আমের ডার্মাটাইটিস আক্রান্ত একজন ৪১ বছর বয়সী ব্যক্তির একটি ঘটনা উপস্থাপন করছি বিষাক্ত আইভির দূরবর্তী এক্সপোজারের কাছে আম রাখতে গিয়ে ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।
মারাত্মকভাবে অবনতির মধ্যে চার দিনের পুরাতন ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়া, যা দ্বিপাক্ষিকভাবে শুরু হয়েছিলো তবে তার ট্রাঙ্ক এবং বাহুতে (আর্ম ট্রাঙ্ক মেকানিজম হাড় এবং জয়েন্টগুলোর জটিল প্রণালী বোঝায় যা কাঁধের অঞ্চল গঠন করে, চলন এবং স্থিতিশীলতা, আলোড়ন এবং অঙ্গবিন্যাসের নিউরোমাসকুলার নিয়ন্ত্রণ করে) ছড়িয়ে পড়েছিলো। রোগীর প্রাথমিক অভিযোগ ছিল তার পুরাইট্রিস থেকে গৌণ অনিদ্রা। তিনি প্রথমে কোনও নতুন ওষুধ বা অন্যান্য এক্সপোজারকে অস্বীকার করেছিলেন তবে দু’বছর আগে আইভির বিষের সাথে যোগাযোগের ডার্মাটাইটিসের একটি দূরবর্তী পর্বকে সমর্থন করেছিলেন। আগমনের সময়, তার ভিটালগুলোর
তাপমাত্রা ছিলো ৯৮.৩ º ফারেনহাইট, ১৩৩/৮৭ মিলিমিটার ( পারদ) রক্তচাপ, প্রতি মিনিটে হৃদস্পন্দন ৬৯ বীট, প্রতি মিনিটে ১৮ শ্বাস প্রশ্বাস, এবং ঘরের বায়ুতে ১০০ % অক্সিমেট্রি অন্তর্ভুক্ত।
রোগীর শারীরিক পরীক্ষাটি ত্বক এবং মুখের শ্লেষ্মা বাদ দিয়ে,দুই হাত বুক এবং পিঠে একটি ম্যাকুলার, ব্লাঞ্চিং, নন-ভেসিকুলার, এরিথেমেটাস ফুসকুড়িগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য ছিলো। ফুসফুসের সমস্ত ক্ষেত্রে বরাদ্দ স্পষ্ট ফুসকুড়ি শুরুর দু’দিন আগে আরও খাবারের বিশদ ইতিহাসে দুটি আম খেয়েছিলেন জানা যায়। রোগীর স্ত্রী, যিনি তাঁর সাথে ইডিতে এসেছিলেন, তিনিও দু’দিন আগে আম খেয়েছিলেন কিন্তু তার কোন লক্ষণ ছিলোনা । যদিও রোগী এবং তার স্ত্রী উভয়ই আমের খোসা স্পর্শ করেছিলেন। স্ত্রী উদ্ভিদগুলোর পূর্বের এক্সপোজারের কারণে কোন ফুসকুড়ি উঠেনি।
রোগী যথেষ্ট অস্বস্তি বোধ করেছিলেন (IV) অ্যাক্সেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ৫০ মিলিগ্রাম (মিলিগ্রাম) ডিফেনহাইড্রামাইন এবং ৫০ মিলিগ্রাম রেনিটিডিন(প্যারেন্টেরাল ড্রাগ বলতে উপায় বোঝায় সাধারণত ত্বক এবং Sub mucosa শ্লেষ্মা ঝিল্লি বাইপাস করে সরাসরি দেহে ইনজেকশন দেওয়া) প্যারেন্টেরালি দেওয়া হয়। এর ফলে দৃশ্যমান ফুসকুড়ির হালকা উন্নতি হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণের পরে, রোগীকে পাঁচ দিনের জন্য ৬০ মিলিগ্রাম ওরাল প্রডিনিসোন এবং ২০ মিলিগ্রাম ওরাল লোরাটাডিনে ছিটানো হয়। লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার হলো রোগীর স্টেরয়েড গ্রহণের পরে সন্ধ্যার সময় অনিদ্রার সুদূরপ্রসারী ইতিহাসের কারণে ইডিতে প্রথম স্টেরয়েড ডোজ মুলতবি করা হয় । তাঁর ইডি পরিদর্শন শেষের পাঁচ দিনে লক্ষণ প্রায় সম্পূর্ণ সমাধান এবং ওভার-দ্য কাউন্টার (ওটিসি) ওরাল ডিফেনহাইড্রামিন দিয়ে অনিদ্রার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছিলো। অতিরিক্ত সপ্তাহের জন্য স্টেরয়েড চিকিৎসা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো তবে রোগীর লক্ষণগুলোর উন্নতির কারণে তা প্রয়োজন হয়নি । ইডি পরিদর্শন শেষে প্রায় তিন মাস পরে তার সাথে আবার যোগাযোগ করা হয়েছিলো এবং কোনও পুনরাবৃত্তির লক্ষণ মেলে নি।
তথ্যসূত্র : Mango Dermatitis After Urushiol Sensitization
Leave a Reply