চার্লস ডারউইন’কে নিয়ে স্যার অ্যাটেনবরো’র ডকুমেন্টারি

লিখেছেন

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

অনুসন্ধানী মানুষ বোধ-বুদ্ধিপ্রাপ্তির শুরু থেকেই তার চারপাশের বৈচিত্র্যময় জীবজগতকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। কেমন করে এলো আকারে-প্রকারে-স্বভাবে-বর্ণে এতসব বৈচিত্র্যময় প্রাণী? ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় জুড়েই এই প্রশ্ন মানুষকে গোলকধাঁধায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। একটা সময় পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিলো এই সব প্রাণী সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র,এদের মধ্যে দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই,নিজেদের রূপেই এরা সকলে সৃষ্টির আদি থেকে রয়েছে,এবং সেই রূপের কোনো বদলও ঘটে নি। সে যুগের জ্ঞানে আপাতদৃষ্টিতে এই ব্যাখ্যাকেই সবচেয়ে সহজ এবং গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছিলো। উনিশ শতকে এসে এই প্রশ্নের সম্পূর্ণ ভিন্ন উত্তর হাজির করলেন এক বিজ্ঞানী। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা-সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর তিনি যখন তার মতবাদ পেশ করলেন,তখন সাড়া পড়লো সর্বত্র,কেঁপে উঠলো সেসময়ের সমাজবিধি,দর্শন এবং অতি-অবশ্যই সেসময়ের বিজ্ঞানীকুল। তার নাম চার্লস রবার্ট ডারউইন।

Charles Darwin and the Tree of Life ডকুমেন্টারির পোস্টার। ছবি : Wikipedia

তিনি বললেন মানুষ,কুমির,বানর এসবের কোনোটাই হুট করে আজকের মতো হয়ে যায় নি। ক্রমাগত তারা বদলেছে; লক্ষ কোটি বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল প্রাণ এক আদি পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হতে হতে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। সেই থেকে চার্লস ডারউইন বিবর্তনতত্ত্বের জনক বলে স্বীকৃত। ডারউইনই সর্বপ্রথম দেখিয়েছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কিভাবে যোগ্যতর প্রাণীরা টিকে থাকছে এবং বংশবিস্তারের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের সুবিধাজনক প্রকরণ। ২০০৯ সালে মহামতি ডারউইনের জন্মদ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই বৈপ্লবিক তত্ত্ব-আবিষ্কারকে উপজীব্য করে নির্মিত হয় ‘Charles Darwin and the Tree of Life’ ডকুমেন্টারিটি। ডকুমেন্টারিটির উপস্থাপক স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। ডারউইনের বিগলযাত্রা,তিনি কি কি তথ্য-উপাত্ত-প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন,তার মতবাদ কিভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলো,সমালোচনার বিপরীতে তার প্রতিযুক্তিগুলো কি ছিলো—এই বিষয়গুলো এখানে দেখানো হয়েছে। ডকুমেন্টারির দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়েছে ডারউইনের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জায়গায়,যেমন বিগলযাত্রার পর কেন্ট প্রদেশের যে বাড়িতে থেকে তিনি তার দীর্ঘ গবেষণা করেছিলেন,কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়,লন্ডনের ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম—যেখানে ডারউইনের সংগৃহীত নমুনাগুলোর অধিকাংশই সংরক্ষিত আছে।

ডারউইনের সংগৃহীত দানবাকার শ্লথের চোয়াল। ছবি: Author

মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে অ্যাটেনবরো সেই নমুনাগুলো দেখিয়েছেন—কোনটা কিসের নমুনা,কোন যুগের প্রাণী,বয়স কতো ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখিয়েছেন সরীসৃপ ও পাখির সংযোগকারী সূত্র আর্কিওপটেরিক্সসহ বিভিন্ন আদিম সামুদ্রিক প্রাণীর ফসিল’ও। অ্যাটেনবরোর অন্যান্য ডকুমেন্টারি (যেমন Life on Earth)’র ক্লিপও প্রয়োজনমতো এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ডারউইন সেসময় কী কী প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন,যেমন বিবর্তন হওয়ার জন্য পৃথিবীর বয়স যথেষ্ঠ নয়,চোখের মতো জটিলতর অঙ্গগুলো বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে না,একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হলে আটলান্টিকের দুই পাশে একই উভচর দেখা যায় কেনো ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করেছেন‌। আধুনিক জেনেটিক্স কিভাবে বিবর্তন বিষয়ে প্রতিনিয়তই আরো অসাধারণ তথ্য দিয়ে একে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে,আছে সেসব গল্পও।

আর্কিওপটেরিক্সের ফসিল। ছবি: Author

সব মিলিয়ে মোটামুটি উপভোগ্য একটা ডকুমেন্টারি। বিবর্তনের একদম প্রাথমিক জিনিসিগুলো এখানে আলোচনা করা হয়েছে‌। তার সাথে অ্যাটেনবরোর উপস্থাপনা,তার বিশ্লেষণের ঢঙ এবং সেই সাথে জীবজগতের কিছু অসাধারণ দৃশ্য মনে রাখার মতো। বিবর্তন বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে,কিন্তু শুরু করতে পারছেন না এখনো,তাদের জন্য বিশেষ উপযোগী হবে ডকুমেন্টারিটা; জ্ঞানপ্রাপ্তি আর চোখের আরাম দুই’ই ঘটবে একসাথে।

শিলার গায়ে আদিম সামুদ্রিক প্রাণীর ফসিল দেখাচ্ছেন অ্যাটেনবরো। ছবি: Author

আর হ্যাঁ,উপস্থাপককে নিয়ে কিছু বলা দরকার। জীবজগত যদি আপনার আগ্রহের বিষয় হয় তবে জেনে রাখুন আপনার আগ্রহ মেটাতে একজন মানুষের কাছে আপনাকে একদিন-না-একদিন যেতেই হবে। তিনি স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। জীবজগতের বিস্ময় ও রহস্যকে জানার জন্য, মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার জন্য পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যারা আজ ঘুরে বেড়ান, কষ্ট সহ্য করেন তাদের কাছে তিনি এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা। তার বিজ্ঞানভিত্তিক-আবিষ্কারমনস্ক-অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ডকুমেন্টারিগুলোর প্রশংসা করেন না এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। Life on Earth,The Living Planet,The Blue Planet— অ্যাটেনবরোর এই অসাধারণ ডকুমেন্টারিগুলো সক্কলের দেখা উচিত!

Charles Darwin and the Tree of Life দেখতে পারবেন এখান থেকে।

একনজরে ডকুমেন্টারি’টির খুঁটিনাটি:

Name : Charles Darwin and the Tree of Life
Host : Sir David Attenborough
Produced by : BBC (part of the BBC Darwin Season)
First Aired on : 2009
Episode count : 1
Total Duration : 1h
IMDb Rating : 8.5/10
Top Documentary Films : 8.18/10
Award : The Grierson Awards 2009, Winner, Best Science Documentary
Personal rating : 8/10

লেখাটি 141-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers