যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষেত্রে মিসাইলকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও উপযুক্ত অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যুদ্ধটি যদি হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার, তাহলে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও হতে হবে অভিনব। যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী যুদ্ধ করে কারা কিংবা সবচেয়ে বেশী হত্যায় শামিল কারা?
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি অনুসারে উত্তর বিবিধ হতে পারে। কিন্তু সঠিক উত্তরটি পুরোপুরি আপনার ধারণার বাইরেও হতে পারে।
কোটি কোটি বছর ধরে একটি যুদ্ধ চলছে, প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে হাজার, লক্ষ, কোটি, বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন, অগণিত সংখ্যকের। কি বিস্মিত হচ্ছেন? কিছুটা রাগও হতে পারে, আমি যুদ্ধের কথা বলছি, অথচ কে যুদ্ধ করছে, কার মৃত্যু হচ্ছে কিছুই পরিস্কার করে বলছি না। আর ভণিতা না করে চলুন বলা যাক। আসলে এই ভয়ংকর যুদ্ধটি নিত্যদিন আমাদের শরীরে হয়ে থাকে। যদিও আমরা এর কিছুই লক্ষ্য করছি না। আর এ যুদ্ধের মহানায়ক হলো পৃথিবীর সবচাইতে মারাত্মক সত্ত্বা ব্যাকটেরিওফাজ। পৃথিবীতে এদের সংখ্যা অগণিত। এদের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। মাটি, পানি, এমনকি মানবদেহ (বেশিরভাগ আমাদের অন্ত্রে এবং শ্লেষ্মায়) সহ প্রায় সবখানেই থাকে ব্যাকটেরিওফাজ। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণও এই ব্যাকটেরিওফাজ।
নাম শুনে কেউ কেউ হয়তো আন্দাজও করে ফেলেছেন এই সংশপ্তক যোদ্ধা কার এত ক্ষতি করে চলেছে, আবার হয়তো আপনার ভয়ও লাগতে পারে মানবজাতির ক্ষতির কথা চিন্তা করে। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, মানবজাতি ভাগ্যবান কারণ ব্যাকটেরিওফাজ মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। তাহলে কার ক্ষতি করে? চলুন যোদ্ধা সম্পর্কে অল্প-বিস্তর জানার মাধ্যমে কে তার শিকার তা জেনে নেওয়া যাক।
ব্যাকটেরিওফাজ কি?
ব্যাকটেরিওফাজ হলো এক ধরনের ভাইরাস। এরা জীবিত বা মৃত কোনোটিই নয়। শুধুমাত্র কোনো জীবিত সত্তার (কোষীয় প্রাণীর) সংস্পর্শে এরা জীবিত হয়ে ওঠে। নাম থেকেই বুঝা যায়, ব্যাকটেরিও অর্থ ব্যাকটেরিয়া এবং ফাজ অর্থ ভক্ষণ করা। অর্থাৎ যেসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে ভক্ষণ করে তারাই হলো ব্যাকটেরিওফাজ। এদের প্রধান কাজই হলো জীবদেহে অবস্থিত ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রামিত করে ধ্বংস করে দেওয়া। কিছু পরিচিত ব্যাকটেরিওফাজ হলো T- সিরিজভুক্ত T2, T4, T6 ফাজ, ল্যাম্বডা ফাজ, P1 ফাজ এবং M13 ফাজ ইত্যাদি।
ব্যাকটেরিওফাজের দেহকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়, মাথা ও লেজ। মাথাটি স্ফীত, ষড়ভুজাকৃতির এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরী। এ অংশে দ্বিসূত্রক ডিএনএ অণু প্যাঁচানো অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে ফাঁপা নলের মতো লেজের প্রধান অংশের সাথে চাকতির মতো কলার, একটি বেসপ্লেট, ছয়টি স্পর্শক তন্তু এবং কাঁটার মতো স্পাইক থাকে। লেজের এসব অংশও প্রোটিন দিয়ে তৈরী।
এতক্ষণে আপনার জানা হয়ে গিয়েছে ব্যাকটেরিওফাজরা কাকে আক্রমণ করে, এরা সাধারণত ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে।
ব্যাকটেরিওফাজরা সুনির্দিষ্ট। এরা সাধারণত একটি সুনির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া কিংবা ব্যাকটেরিয়া পরিবারকে আক্রমণ করে এবং এদের সংখ্যাবৃদ্ধির কাজ চালিয়ে যায়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিওফাজ নির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে।
ব্যাকটেরিওফাজ যেভাবে ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে ও সংখ্যাবৃদ্ধি করে
যখনই ফাজ ভাইরাস তার জন্য উপযুক্ত একটি পোষক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পায়, সাথে সাথে এটি এর লেজের স্পর্শক তন্তু কে ব্যাকটেরিয়ার রিসেপ্টর সাইটে সংযুক্ত করে আক্রমণের সূচনা করে। এরপর এটি এর দণ্ডাকৃতির লেজকে সংকুচিত করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রিসেপ্টর সাইটের ব্যাকটেরিয়া প্রাচীরকে ছিদ্র করে এবং তার ফায ডিএনএ কে ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ফাজ ডিএনএ একটি বিশেষ প্রোটিন তৈরী করে ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ কে নষ্ট করে দেয়। এছাড়া ফাজ ডিএনএ ব্যাকটেরিয়া কোষের রাইবোজোম, tRNA, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদির কর্তৃত্ব গ্রহণ করে।
(ব্যাকটেরিওফাজরা ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করছে; উৎসঃ Gettyimages)
এরপর ফাজ তার নিজের ইচ্ছেমত নতুন ফাজ ডিএনএ প্রতিলিপন করে ও কোট প্রোটিন (মাথা, লেজ, স্পর্শক তন্তু, স্পাইক পৃথকভাবে) তৈরী করতে থাকে। এরপর এসব অংশগুলো একত্রিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যাকটেরিওফাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং পোষক ব্যাকটেরিয়া প্রাচীর কে এন্ডোলাইসিন এনজাইমের ক্রিয়ায় বিদীর্ণ করে বেরিয়ে আসে। নির্গত ফাজ আবার নতুনভাবে ব্যাকটেরিয়া কে আক্রমণ করে। এসব ভাইরাস কেবল যে ব্যাকটেরিয়াতে সীমাবদ্ধ থাকে তা না, এরা প্রাণী ও মানুষকেও আক্রমণ করতে পারে, যেমন Herpes Simplex ভাইরাস।[১]
রোগসৃষ্টিকারী আণুবীক্ষণিক দানব ব্যাকটেরিয়া ও তার বিরুদ্ধে বিশেষ অস্ত্র অ্যান্টিবায়োটিক
ব্যাকটেরিওফাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু প্রসঙ্গ হলো ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক। মানবদেহে যতগুলো কোষ আছে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশী আছে ব্যাকটেরিয়া। মানুষের অন্ত্র ও ত্বকে সর্বাধিক সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া থাকে। এদের বেশিরভাগই কোনো ক্ষতি করে না, আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ও অপরিহার্য। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া যক্ষা, কলেরা, আমাশয়, ধনুষ্টংকার, নিউমোনিয়া, গনোরিয়া ও সিফিলিসের মতো মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখি ও গাছপালাতে রোগ সৃষ্টি করে ব্যাকটেরিয়া অর্থনীতিতে ব্যাপক বিপর্যয় নামিয়ে আনে।
প্রায় ১০০ বছর আগে আমরা প্রকৃতিতেই এসব ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দমনের একটি উপায় পেয়ে যাই। পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার সময় বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লক্ষ্য করেন আবাদ মাধ্যমে একটি ছত্রাকের উপস্থিতির কারণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। এ ছত্রাক এমন একটি পদার্থ তৈরী করে যা ব্যাকটেরিয়াকে দমন করে। সেখান থেকেই তৈরী হয় আণুবীক্ষণিক দানব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ অস্ত্র অ্যান্টিবায়োটিক।
এরপর মানুষ সামান্য সর্দি-কাশি, জ্বরে নিজের ইচ্ছেমত, কোনো সঠিক ডোজ না মেনে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে থাকে। রোগ ভালো লাগলেই রোগ সেরেছে ভেবে সম্পূর্ণ ডোজ না খেয়েই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে কিভাবে টিকিয়ে রাখতে হয় যদিও তা মানুষের অজানা। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার তা অজানা নয়, তার বংশগতিবস্তু গোলাকার ডিএনএ (প্লাজমিড) ৬ টি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীন বহন করে। ফলাফল ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিক চিনে যায় আর শিখে যায় কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয় এবং নিজেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে প্রথমবার ডোজ না মেনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে, পরেরবার আরও বেশী ডোজ খেলেও এসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করতে পারে না। এ অবস্থাকে বলে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।
(দিনদিন ব্যাকটেরিয়ারা প্রতিরোধক্ষম হয়ে উঠছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি; উৎসঃ shutterstock)
এভাবে ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে ব্যাকটেরিয়া প্রায় সবধরনের অ্যান্টিবায়োটিক কে পরোয়া না করা মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট সুপারবাগ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে এমনও হবে সামান্য জ্বর, কাটা ছেড়া কিংবা সামান্য ক্ষতের কারণে মানুষের মৃত্যু হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা যাবে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ক্যান্সারের কারণে নয়, সুপারবাগের কারণে।
তাহলে উপায়?
এতক্ষণ ধান ভানতে শীবের গীত গাইলাম তার মুল কারণ হলো অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স সমস্যার আশাবাদী একটি সমাধান নিয়ে আলোচনা করা। অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে, তাই বসে নেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকরা, তারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন সমস্যার সমাধান।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো ব্যাকটেরিওফাজ মানবদেহে প্রবেশ করিয়ে কি হয় তা পর্যবেক্ষণ করেন। ব্যাকটেরিওফাজ কে একটি ছোট মারাত্মক রোবটের সাথে তুলনা করছেন বিজ্ঞানীরা। শরীরে ইনজেক্ট করলে ওরা আমাদের বিভিন্ন ইনফেকশন থেকে বাঁচাবে বলে ধারণা করছেন তারা। কিন্তু ব্যাকটেরিয়াকে মারতে শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করানো কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? ফাজ ভাইরাসরা যদি আবার মানবদেহে আক্রমণ করে বসে?
প্রথমেই বলেছি, ফাজ ভাইরাসরা খুবই সুনির্দিষ্ট এবং এরা সুনির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে থাকে। মানুষের শরীর এদের প্রতি অনাক্রম্য। আমাদের শরীর সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আমাদের শরীরে প্রতিদিন কোটি কোটি ফাজ প্রবেশ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমনের পাশাপাশি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে। ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কে যদি একটি বোমার সাথে তুলনা করা হয়, তবে ফাজ ভাইরাস হবে মিসাইল স্বরূপ। একধরনের বায়োমিসাইল যা সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাকটেরিয়াকে দমন করবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ব্যাকটেরিয়ারা যদি ফাজ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধক্ষম হয়ে উঠে?
হঠাৎ করে প্রতিরোধক্ষম হয়ে ওটা তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। কারণ ব্যাকটেরিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ফাজ ভাইরাস ও নিজেকে পরিবর্তিত করতে পারে। ফাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষম হয়ে উঠার জন্য ব্যাকটেরিয়ার অনেক বেশী সময় লাগবে। ততক্ষণে ফাজ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব বিলীন করে দিবে।
Pseudomonas aeruginosa নামক একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদ ও প্রাণীতে রোগ সৃষ্টি করে। এটি প্রায় সবধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষম। এ ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের Chest cavity (হৃদপিন্ড, ফুসফুস, শ্বাসতন্ত্র, ডায়াফ্রাম, পরিপাকতন্ত্র, লসিকা, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ইত্যাদি নিয়ে গঠিত) ইনফেকশনের জন্য সুপরিচিত।
সম্প্রতি শরীরে ব্যাকটেরিওফাজ প্রবেশ করিয়ে Chest cavity ইনফেকশনের স্বীকার Ali Khodadoust নামক একজন অশীতিপর বৃদ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে এবং ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।[২]
(Ali Khodadous; উৎসঃ Steven G. Smith)
আফসোসের বিষয়, এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে সব ধরনের এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষম হয়ে উঠবে। তখন আমাদের বিশেষ অস্ত্র এন্টিবায়োটিক কোনো উপকার করতে পারবে না। তখন হয়তো শরীরে মারাত্মক ভাইরাস ফাজ কে প্রবেশ করিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচানো হবে। ক্যান্সার নিরাময়ে ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করার জন্য ফাজ ভাইরাসের ব্যবহার চিকিৎসা শাস্ত্রে এক নতুন আশাবাদের সৃষ্টি করেছে।
পরিশেষে, আপনার কাছে প্রশ্ন রইল, ‘ব্যাকটেরিওফায মারাত্মক ভাইরাস নাকি উপকারী বায়োমিসাইল?’
তথ্যসূত্রঃ
[১] উচ্চ মাধ্যমিক উদ্ভিদবিজ্ঞান বই, আবুল হাসান, ২০২০ সংস্করণ, ১৪৬ পৃষ্ঠা।[২] A virus, fished out of a lake, may have saved a mans life
Leave a Reply