আজকের টপিকটা খানিক স্পর্শকাতর বটে। আধুনিকায়নের এই যুগে সমগ্র বিশ্ব এখনো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, বর্ণবাদ’কে ম্লান করতে। একটু ভেবে দেখুন তো- শুধুমাত্র গায়ের রঙ, জাতি বা গোত্রের উপর ভিত্তি করে মানবজাতিতে বিভক্তি। একে অন্যের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ। যেটা অবশ্যই একটি সভ্য দেশের উন্মুক্ত চিন্তাধারার প্রধান অন্তরায়। বর্ণবাদ নিয়ে প্রচুর লিখালিখি হয়, প্রতিবাদ হচ্ছে তবু কিছু সংকীর্ণ মনের মানুষের মূল্যবোধ বিকশিত হয়না।
এখন, আপনি ভাবতেই পারেন- এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য কি তাহলে? প্রশ্ন রাখতে পারেন আমাকে-
আপনি কি ম্যাজিশিয়ান?
এই এক লিখায় দৃষ্টিভঙ্গি পালটে দেবেন?
সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে, এই নিবন্ধ লিখার কারণ হচ্ছেঃ-
কিভাবে মস্তিষ্ক বর্ণবাদী আচরণ ঘটায়, যে আচরণের শিকার হচ্ছে তার কেমন লাগে তা একটু জানানো।
চলুন তবে, শুরু করা যাক-
বর্ণবাদ (racism) কি ?
মূলত সোজাসুজিভাবে বলতে গেলে, গায়ের রঙ, জাতি বা গোত্রের উপর ভিত্তি করে মানুষে-মানুষে বিভক্তিকরণ। এর চেয়ে সহজভাবে প্রকাশ করার প্রক্রিয়া জানা নেই । একটা দেশের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, কেবলমাত্র গায়ের রঙকে প্রধান কারণ ধরে। একে অন্যের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে কুন্ঠাবোধ করে না।
ধরুন, আপনাকে দুই জন মানুষ দেখানো হলো। দুইজনের গায়ের রঙ যথাক্রমে সাদা এবং কালো। এখন, আপনার গায়ের রঙ যদি সাদা হয়, তবে আপনি ভাবতে পারেন- যার গায়ের রঙ সাদা সে ভাল মনের মানুষ, শান্ত স্বভাবের। অন্য যে জন কালো গায়ের রঙ, তাকে ভাবলেন- একজন খারাপ মনের মানুষ, উগ্র মেজাজের মানুষ।
কিছুক্ষন পর দুইজন মানুষের সাথেই আপনার আলাপ হলো।
তারপর যদি প্রশ্ন করি আপনাকে-
এই যে বিবেচনা করলেন প্রথমে শুধু দেখেই, এটা কি ঠিক হলো?
হয়তো আপনি ও আমার সাথে একমত হবেন- না, ঠিক হয়নি।
শুধুমাত্র গায়ের রঙ দেখেই কাউকে নিয়ে ধারণা করা – নেহায়েত ভ্রান্ত ধারণা।
আর এই ভ্রান্ত ধারণাকেই পুঁজি করেই বিশ্বের একদল মানুষ অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। নিজের গায়ের চামড়ার রঙ উজ্জ্বল বলে উৎকৃষ্ট ভাবতে পছন্দ করে এবং অন্যকে হেয় করতে মজা পায়।
কতটা নিকৃষ্ট মনের অধিকারী হতে পারে এরা! ভাবা যায়?
আমরা কেউই নিশ্চয় জন্মগ্রহণ করার আগে নিজের গায়ের রঙ, জাতি বা গোত্র নির্বাচন করতে পারি না। আপনি ধনী পরিবারে জন্ম নিবেন নাকি গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করবেন – এটাও জানতেন না। এই পুরো ব্যাপারটা নিশ্চয়ই স্রষ্টা নির্ধারণ করে থাকেন। কারোর কিছুই করার থাকে না। তাই নয় কি?
মস্তিষ্ক যেভাবে বর্ণবাদী আচরণকে প্রশ্রয় দেয়
আমাদের মস্তিষ্ক এক বিস্ময়কর অঙ্গ। সাধারণত মস্তিষ্ক শ্রেণিবিভাগ (categorize) করতে পছন্দ করে থাকে। এই যেমন ধরুনঃ পজেটিভ-নেগেটিভ, ভাল-মন্দ, উপকারী-অপকারী এভাবেই স্তরীভূত করে থাকে।
আচ্ছা ,একটু খুলেই বলি তাহলে। ছোটবেলায় আমাদের সবাইকে কত কিছু শেখানো হয়েছিল। সব কিছুর সাথে একটা বেশ দারূণ ব্যাপার শিখানো হয়েছিল। তা হল – “তফাত করতে শেখা।”
কুকুর, বেড়াল, পশু-পাখি এবং অন্যান্য জীব জন্তুর মধ্যে কোনটা ভীতিকর অথবা কোনটা আতংকের নয়। একই ভাবে বোঝানো হয়েছিল- কোন খাবার খেলে ক্ষতি হতে পারে বা কোন খাবার খাওয়া নিরাপদ। সেরকম ভাবেই বড় হবার সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক কোন কিছু দেখলেই সেটাকে কোন দলে ফেলবে তা নির্ধারণে ছক কষতে শুরু করে। হা হা! শুনে বড়ই আজব লাগছে তাই না?
বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়াকে দুইভাগে নামকরণ করা হয়েছেঃ
- ইন-গ্রুপ (in group) এবং
- আউট- গ্রুপ (out group)।
এবার আসি কোন দলে কোন বৈশিষ্ট্যকে জায়গা দেয় মস্তিষ্ক।
ইন-গ্রুপে থাকে পজিটিভ বা ভাল বৈশিষ্ট্য সমন্বিত বিষয়গুলো এবং আউট-গ্রুপে থাকে নেগেটিভ বা মন্দ বৈশিষ্ট্যগুলো।
%22%20transform%3D%22translate(1.5%201.5)%20scale(2.98828)%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%23c4d0ff%22%20rx%3D%221%22%20ry%3D%221%22%20transform%3D%22matrix(.51298%20-58.78155%20134.6531%201.1751%20128.6%2021.8)%22%2F%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%2399b400%22%20cx%3D%2296%22%20cy%3D%22145%22%20rx%3D%22255%22%20ry%3D%2240%22%2F%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%23fff6fc%22%20rx%3D%221%22%20ry%3D%221%22%20transform%3D%22matrix(-32.8669%20-17.81332%2012.12583%20-22.37307%20129.6%2014.2)%22%2F%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%23786c8a%22%20cx%3D%22255%22%20cy%3D%2269%22%20rx%3D%2270%22%20ry%3D%2228%22%2F%3E%3C%2Fg%3E%3C%2Fsvg%3E)
চিত্রঃ- কার্টুনের মাধ্যমে দলাদলি দেখানো হয়েছে।
আসুন, একটু খোলাসা করেই বলি।
ধরুন, আপনি যাকে ভালবাসেন ,তার যা কিছু পছন্দের সেসব ইন-গ্রুপে এবং অপছন্দের সব আউট-গ্রুপে। আবার যাকে একবারেই অপছন্দ করেন তার সবকিছু কিন্তু আউট গ্রুপেই যাবে। হা হা!
ইন-গ্রুপের বৈশিষ্ট্য বেশি থাকলে ,অই মানুষটার জন্য আপনার ভাল লাগা কাজ করবে বেশি। আর আউট গ্রুপের বৈশিষ্ট্য বেশি হলে বিরক্তি বা খারাপ লাগা কাজ করবে। স্বাভাবিক!
আবার ধরুন, আপনি যদি দেখতে ফর্সা হন মানে গায়ের চামড়ার রঙ উজ্জ্বল হয়, তবে ফর্সা মানুষ দেখলেই ভাল লাগা কাজ করবে। কারণ, মনে হবে তারা আপনার মতোই বৈশিষ্ট্য মানে একই চামড়ার রঙের বা স্বজাতি আর কি । আর কালো মানুষদের মানে যাদের গায়ের চামড়ার রঙ অনুজ্জ্বল বা শ্যাম বর্ণের, তাদের দেখলে পর মনে হতে পারে। ব্যাপারটা সবার জন্য এক রকম অনুভূতি হবে, তা কিন্তু আমি বলছি না। উদাহরণ দিচ্ছি আর কি।
একটু ভাবুন তো, ব্যাপারটা এরকম হলে কি অদ্ভুত হবে, তাই না?
গায়ের রঙ দেখেই বিবেচনা করে নিচ্ছে; কে আপন, কে পর!
আপনিও যদি সত্যি এমন ভেবে থাকেন বাস্তবে বা যারা ভাবছে- এর পেছনে কারণ আছে। আসুন, একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
আমাদের মস্তিষ্কের একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম এমাইগডালা (amygdala)। এই পুঁচকে অংশই মূলত ইন-গ্রুপ এবং আউট-গ্রুপ- এই বিষয়গুলোতে সাড়া দেয় বা সংকেত দিয়ে থাকে। যখনি আউট-গ্রুপের কোন কিছু সামনে আসে, তখন সেটাকে ভিন্ন বা আলাদা বলে বিবেচনা করে থাকে। কিছু গবেষকদের মতে, আউট-গ্রুপের লোকদের এই এমাইগডালা অংশ আতংক বা হুমকিস্বরুপ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এছাড়াও আমাদের অনুভূতি প্রক্রিয়াকরণে এমাইগডালা দারূন ভূমিকা রাখে।
এখন আপনার মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে। তা হল- এমাইগডালা কি শূন্য থেকে এইসব তথ্য পায় বিবেচনা করার জন্য? উত্তোর হচ্ছে – না!
গবেষণায় দেখা যায় যে, মস্তিষ্কের এমাইগডালা অংশে এসব বিষয়ে তথ্য জমা হয় বাইরে থেকে। তার মধ্যে এই চেতনা প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছিল। সংকেত দেয়া হয়- গায়ের রঙের উপর নির্ভর করে ইন-গ্রুপ এবং আউট-গ্রুপে মানুষদের স্তরীভূত করতে।
কেউ আপনাকে বুঝিয়েছিল আগে এই বলে যে, যারা কালো দেখতে তারা বদ প্রকৃতির মানুষ। খারাপ মানুষ। এদের পর ভাবতে হবে। মেশা যাবে না তাদের সাথে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবার কর্তৃক প্রভাবিত হয় ব্যক্তি। সবাই যে ধারণা পোষণ করে, তিনি ও হুবহু তাই লালন করতে শুরু করেন।
আচ্ছা, এবার আসি মস্তিষ্কের অন্য আরেকটি অংশ নিয়ে। যার নাম প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex)। এই অংশ এমাইগডালা অংশের সংকেতকে স্থিমিত করে দেয় বা প্রশমিত করে থাকে। বিশেষ করে বলতে গেলে, আউট-গ্রুপের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে।
%27%20fill-opacity%3D%27.5%27%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%239c9c9c%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20rx%3D%221%22%20ry%3D%221%22%20transform%3D%22matrix(62.63262%20-165.1975%20298.6329%20113.22303%20493.8%20201.6)%22%2F%3E%3Cpath%20fill%3D%22%23fff%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20d%3D%22M-46.3%20694.8l857.6-9-809.8-523z%22%2F%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%23898989%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20rx%3D%221%22%20ry%3D%221%22%20transform%3D%22matrix(33.80054%20-84.69753%20102.07797%2040.73662%20347.5%20179.4)%22%2F%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%23fff%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20rx%3D%221%22%20ry%3D%221%22%20transform%3D%22matrix(-14.63189%20117.47182%20-689.95646%20-85.93862%20427.6%20576.6)%22%2F%3E%3C%2Fg%3E%3C%2Fsvg%3E)
চিত্রঃ- মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অংশ।
যখন কোন ব্যক্তি বর্ণবাদী আচরণ করেন, তখন বুঝতে হবে তার প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশ সক্রিয় নয়। এমাইগডালাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স। ব্যাপারটা কি একটু গোলমেলে লাগছে?
আসুন তবে, ভেঙ্গেচুরে ব্যাখ্যা করি-
ধরুন, আপনি ঘুমিয়েছেন। ঘুমের মাঝে বেশ ভয়ংকর কোন স্বপ্ন দেখে হাঁসফাস করে জেগে উঠলেন। তারপর হুঁশ ফেরার পর যখন বুঝতে পারলেন, সেসব নিছকই স্বপ্ন ছিল তখন স্বস্তি পান।
আবার আপনার কারো প্রতি অনেক রাগের উদ্রেক হলো। তাকে কিল-ঘুষি, চপেটাঘাত করতে খুব মন চাইছে। কিন্তু একটু পরেই মনে হলো- না! এরকম করা একদম ঠিক হবে না।
দুটো ঘটনার ক্ষেত্রেই, প্রথমদিকে যেভাবে আপনি সংবেদনশীল হয়ে পড়েছিলেন- সেসব কিছুর নাটের গুরু হচ্ছে এমাইগডালা। আর শেষের ধাপের সম্বিত ফিরে পাওয়া বা স্থিরতা আসার কাজ করে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স।
বর্ণবাদী আচরণের ক্ষেত্রেও ঠিক এভাবেই এমাইগডালা ব্যক্তিকে প্ররোচিত করে থাকে। ব্যক্তি খারাপ আচরণ করে, এমনকি সহিংস কর্মকান্ডে জড়িয়ে যায়। একমাত্র প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের নিয়ন্ত্রিত কাজের মাধ্যমে ব্যক্তির এসব গর্হিত কাজ বন্ধ হয়। বিশ্বের কিছু কিছু স্থানে এখনো বর্ণবাদ নিয়ে বেশ হইচই আছে। যার উদাহরণ ভুরিভুরি। শ্বেতাঙ্গ মানুষেরা কৃষ্ণাঙ্গদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকে।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, ছোট্ট শিশুদের মধ্যে এই বর্ণবাদী আচরণ দেখা যায় না। তাদের বন্ধু নির্বাচনে কোন ভেদাভেদ নেই। এর কারণ হচ্ছে, তাদের মস্তিষ্কের এমাইগডালা অংশ তখনো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। আর এই আচরণ শিশু বড় হবার সাথেও ধরে রাখতে পারে; যদি তার পরিবার থেকে মানে মা-বাবা,আত্মীয় স্বজন পজিটিভ ধারণা দিতে পারে। শিশু বড় হবার সাথে সাথে এমাইগডালা অংশ সক্রিয় হতে শুরু করে। তখন সে অনেক কিছু বুঝতে শুরু করে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্ধু সংখ্যা সীমিত হতে শুরু করে।
%22%20transform%3D%22translate(1.5%201.5)%20scale(2.98828)%22%3E%3Cpath%20fill%3D%22%23c4c4c4%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20d%3D%22M10.6-.2l.8%2042-22%20.4-.8-42z%22%2F%3E%3Cellipse%20fill%3D%22%23fff%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20cx%3D%22163%22%20cy%3D%2243%22%20rx%3D%22154%22%20ry%3D%22154%22%2F%3E%3Cpath%20fill%3D%22%23e0e0e0%22%20fill-opacity%3D%22.5%22%20d%3D%22M10.6%2029.7l-.7%2013.4-18-1.6L9.8%2013.3z%22%2F%3E%3Cpath%20stroke%3D%22%23f8f8f8%22%20stroke-opacity%3D%22.5%22%20fill%3D%22none%22%20d%3D%22M14.7%2031.8Q-.3%201.6%2033.9-15.4%22%20stroke-width%3D%22.5%22%2F%3E%3C%2Fg%3E%3C%2Fsvg%3E)
চিত্রঃ- বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমাইগডালা অংশের সক্রিয়তা বাড়ছে।
২০০৬ সালে ১৫০ জন শ্বেতাঙ্গ ছাত্র-ছাত্রীর উপর সমীক্ষা করেন এমোডিও (Amodio) এবং তার সহকর্মীরা। গবেষকেরা ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু শব্দ দেন বাছাই করতে। যেমন- শান্তি, স্বর্গ, সম্মান, ধনী, দরিদ্র, ক্যান্সার, বিজ্ঞানী, মেধাবী, শিক্ষক ইত্যাদি।
এই শব্দগুলো শ্রেণিবিভাগ করার আগে, তাদের কাউকে হয় শ্বেতাঙ্গ কিংবা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ছবি দেখানো হয়েছিল। ফলাফল কি হয়েছিল জানেন?
যাদের কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ছবির দেখানো হয়েছিলো,তারা নেগেটিভ বা বিরুপ প্রকৃতির শব্দ বাছাই করে। আর যাদের শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির ছবি দেখানো হয়েছিল, তারা পজিটিভধর্মী শব্দ বাছাই করে।
ব্যক্তির উপর বর্ণবাদী আচরণের প্রভাব
যে ব্যক্তিটি গায়ের রঙ কালো বলে কটু কথা শুনছে বা গোত্র ভিন্ন বলে কটাক্ষ সহ্য করছে, তার মানসিক বা শারীরিক অবস্থা কতটুকু ভেঙ্গে পড়ে – এটা শব্দে বোঝানো মুশকিল।
মানসিক প্রভাব
বর্ণবাদী আচরণের শিকার ব্যক্তির মানসিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। সে নিজেকে হেয় ভাবতে শুরু করে। তুচ্ছ ভাবতে শুরু করে অন্যের কাছে। দোষারোপ করতে শুরু করে নিজেকে।
কেন আরেকটু ফর্সা হলাম না?
কেন আরেকটু উঁচু গোত্রে জন্ম নিলাম না?
বারংবার কটাক্ষ শুনতে শুনতে শুধুমাত্র গায়ের রঙ অনুজ্জ্বল বলে, একটা মানুষ ধীরে ধীরে ভেতর থেকে কুঁকড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সে ভুগতে থাকে নানা রকম সমস্যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা বর্ণবাদী আচরণে পর্যুদস্ত তারা কিছু উল্লেখযোগ্য সমস্যায় ভুগে। যেমন-
- ডিপ্রেশান
- মানসিক অবসাদ
- দুশ্চিন্তা
- আত্মহননের প্রবণতা
- পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (Post Traumatic Stress Disorder- PTSD)
শারীরিক প্রভাব
মানসিকভাবে একজন মানুষ ভেঙ্গে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই সে শারীরিক দিক দিয়েও ঠিক থাকে না। মানসিক হতাশা ক্রমশ শারীরিকভাবে আক্রান্ত করে।
ব্যক্তির হতাশা বা চাপ তার উচ্চ-রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার ব্যক্তি হতাশা থেকে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ধূমপান, মদপান এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ব্যক্তির ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
মূলত, এই বর্ণবাদ কিছু একপাক্ষিক আচরণের অধিকারী মানুষদের কিছু মন গড়া নিয়ম এবং গোঁড়ামি থেকে উদ্ভুত।
প্রকৃতপক্ষে, গায়ের রঙ ফর্সা হলেই যে তার মন সুন্দর হবে তা কিন্তু নয়। যার মন সুন্দর, সেই হচ্ছে সবচেয়ে আলোকিত মানুষ। কারণ তার মনের উজ্জ্বলতা দীপ্তি ছড়ায় সব জায়গায়। আসুন, সুস্থ মনের অধিকারী হবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই সবাই।
তথ্যসূত্রঃ-
২। What are the effects of racism on health and mental health?











Leave a Reply