(লেখাটি The Scientist এ প্রকাশিত Surgeons Successfully Transplant a Pig Kidney into a Person এর অনুবাদ)
আমেরিকার জাতীয় কিডনী ফাউন্ডেশনের মতে, অঙ্গ স্বল্পতার কারণে একটি কিডনী প্রতিস্থাপনের অপেক্ষা বেশ কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। এই অঙ্গ স্বল্পতা মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর অঙ্গ দিয়ে পূরণ করা যেতে পারে, যদি জেনোট্রান্সপ্লান্ট অঙ্গগুলো মানব শরীরে কার্যকর প্রমাণিত হয় (এক প্রাণীর অঙ্গ অন্য প্রাণীতে প্রতিস্থাপন করাকে জেনোট্রান্সপ্লান্ট বলা হয়)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান গবেষণা জেনোট্রান্সপ্লান্ট এর দিকে একটি বড় ধাপ অতিক্রম করেছে। কারণ সম্প্রতি এন ওয়াই ইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের ডাক্তাররা দাবি করেছেন যে প্রথমবারের মত তারা সফলভাবে শুকরের কিডনী মানবদেহে প্রতিস্থাপন করেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন ব্যক্তির শরীরের বাইরে একজোড়া রক্তনালীতে একটি কিডনী যুক্ত করা হয় যাতে কিডনির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায় (এই প্রক্রিয়াটি রোগীর পরিবারের অনুমতি নিয়ে করা হয়)। এই গবেষণাটি এখনো কোন পিয়ার রিভিউ গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়নি।
এন ওয়াই ইউ ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক রবার্ট মন্টগোমারি, যিনি এই অস্ত্রোপচারটি করেছিলেন তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের ৫৪ ঘন্টা পরে অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের কোন লক্ষণ দেখা যায় নি এবং কিডনিটি ভালভাবে কাজ করছিল। তিনি বলেন “মৃত মানুষের অনেক কিডনি সাথে সাথে কাজ করে না এবং কাজ করা শুরু হতে কয়েক দিন বা সপ্তাহ লেগে যায়”। “এটি সাথে সাথে কাজ করেছে”।
জনস হপকিন্স ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি অধ্যাপক ডরি সেগেভ, যিনি এই অপারেশনে জড়িত ছিলেন না, তিনি টাইমসকে বলেছেন, জেনোট্রান্সপ্ল্যান্ট একটি “বিশাল অগ্রগতি”। তিনি আরও বলেন, এটি অনেক বড় একটি কাজ।
শূকরের মতো প্রাণীগুলোকে বৃহৎ পরিসরে প্রজনন করা যেতে পারে এবং এদের অঙ্গগুলি মানুষের জন্য ব্যবহারের উপযুক্ত আকারের হয়। তাই এদেরকে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের অভাবের সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে বিবেচনা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, মানুষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাধারণত বহিরাগত টিস্যুতে আক্রমণ করে, যার ফলে জেনোট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যর্থ হয়। রয়টার্সের মতে, এই কারণেই, এই ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য, দাতা শূকরটি ছিল একটি “গ্যালসেফ” শূকর।গ্যালসেফ হলো এমন একটি প্রাণী যাতে আলফা-গ্যাল (একটি কার্বোহাইড্রেট) উৎপাদনকারী জিন পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এই আলফা-গ্যালের কারণেই গ্রহীতা অঙ্গানু প্রত্যাখ্যান করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এফডিএ “গ্যালসেফ” শূকরগুলোকে চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল। মন্টগোমারি টাইমসকে বলেছেন, সফল অস্ত্রোপচার সংকেত দেয় যে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড শূকরগুলি সৌর এবং বায়ু শক্তির মতো সহজে অঙ্গ প্রাপ্যতার একটি টেকসই ও পুনঃ ব্যবহারযোগ্য উৎস হতে পারে।”
তবে অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য আরও কাজ করা প্রয়োজন । সেগেভ টাইমসকে বলেছেন, “আমাদের অঙ্গটির আয়ুষ্কাল সম্পর্কে আরও জানতে হবে,” কারণ এটি মাত্র দুই দিনের জন্য পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টারের জে এ ফিশম্যান, সেগেভের বিবৃতি সম্পর্কে বলেছেন, “এই বিশেষ গবেষণাটির অগ্রগতি হবে কিনা তা নির্ভর করবে তারা কোন ধরণের তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তারা এই তথ্য সরবরাহ করবে কিনা নাকি এটি শুধু একটি পদক্ষেপ যেটা দেখাবে যে তারা এটি করতে পারে।”
এসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্ট মতে জেনোট্রান্সপ্লান্টেশনে নৈতিকতার উদ্বেগও রয়েছে। কারেন মাশকে, হেস্টিংস সেন্টারের একজন রিসার্চ স্কলারকে শূকর থেকে মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রথম এনআইএইচ-তহবিলযুক্ত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য নীতিশাস্ত্র এবং নীতির সুপারিশ তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন যে, গ্যালসেফ শূকরগুলির জন্য ভবিষ্যতের যে কোনও পরিকল্পনায় প্রাণী কল্যাণকে প্রাধান্য দিতে হবে। মাশকে আরও বলেন, ” আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে , আমরা করতে পারি বলেই কি এটি করা উচিত?”
Leave a Reply