১৬৬৫ সাল, পুরো বিশ্বটা মহামারীতে আক্রান্ত। এই ভয়াবহ মহামারীর কারণ হলো ছোট ছোট ইদুর, যার কামড়ে হয় প্লেগ! কত কত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এই সময় নিউটন নামে এক তরুণ ছাত্র ট্রিনিটি কলেজ থেকে ফিরে আসে তার গ্রামে। কিছুদিন আগেই এই ছেলেটা দ্বিপদী উপপাদ্যকে নতুন রূপ দিয়েছে। নিউটনের আগে এই উপপাদ্য নিয়ে অনেকেই কাজ করেছে। নিউটন সেই উপপাদ্যকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। দ্বিপদী বিস্তৃতী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ব্লেস প্যাসকেল দ্বিপদী বিস্তৃতীর সহগগুলোকে একটা ত্রিভুজে রূপ দেন। কিন্তু এইভাবে কাজ করাটা অনেক সময় ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। নিউটন তাই তার উপপাদ্যে দ্বিপদী বিস্তৃতীর সহগগুলোকে সমাবেশের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন। আর দ্বিপদী বিস্তৃতীকে পূর্ণতা দিলেন।
গণিতবিদরা দ্বিপদী বিস্তৃতীর কয়েকটা বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই জানতেন। এর মধ্যে একটা হলো যদি পদ দুইটাকে a ও b ধরি। তাহলে a এর ঘাত বাড়তে থাকলে b এর ঘাত কমে, আবার a এর ঘাত কমলে b এর ঘাত বাড়ে। এটা আসলে বিস্তৃতী থেকেই বোঝা যায়ঃ
$(a+b)^0 = 1$
$(a+b)^1= a+b$
$(a+b)^2= a^2 + 2ab + b^2$
$(a+b)^3= a^3 + 3a^2b+3ab^2+b^3$
$(a+b)^4= a^4+ 4a^3b+ 6a^2b^2+4ab^3+ a^4$
এখান থেকে দেখা যায়, a এর ঘাত বাড়লে b এর ঘাত কমে। আবার b এর ঘাত বাড়লে a এর ঘাত কমে। এখান থেকে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমনঃ- রাশিটার ঘাত যখন ৩ তখন বিস্তৃতীতে রাশির পদসংখ্যা ৪। যখন ঘাত ৪ বিস্তৃতীতে পদসংখ্যা ৫। মানে ঘাত যত পদসংখ্যা তার চেয়ে ১ বেশি। তাহলে এটাকে বীজগাণিতিকভাবে লেখা যায়, ঘাত n হলে পদসংখ্যা n+1 টি হবে। আবার বীজগাণিতিক রূপ থেকে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করা যায় যে, ঘাতের সহগগুলো যেই প্যাটার্নে বাড়তে থাকে নির্দিষ্ট একটা সংখ্যায় গিয়ে ঠিক সেইভাবে কমতে থাকে। তাহলে যদি আমরা কোন দ্বিপদী রাশি বিস্তৃত করতে যাই তাহলে আমাদের শুধু সহগ নির্ণয় করতে হবে। আর রাশি দুটো কিভাবে বসবে সেটা তো বৈশিষ্ট্য থেকেই দেখলাম। a এর ঘাত বাড়তে থাকলে b এর ঘাত কমে আবার a এর ঘাত কমলে b এর ঘাত বাড়ে।
কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, উপরে যে সূত্রগুলো দেখলাম এগুলো কিভাবে এলো? এটা খুবই সহজ। $(a+b)^2$ মানে ২ বার $a+b$ গুণ করলেই সূত্র পেয়ে যাব। ৩ বার গুণ করলে ঘনের সূত্র, চারবার গুণ করলে চার ঘাতের সূত্র পেয়ে যাব। এখন কি বোঝা যাচ্ছে কেন দ্বিপদী বিস্তৃতীর জন্য একটা উপপাদ্য দরকার? কারণ যদি ঘাত হয় ১০, তাহলে ১০ বার গুণ করলে আমরা সূত্র পাব। কিংবা ৯ এর ঘাতের সূত্র বের করে সেটার সাথে $a+b$ গুণ দিলেই হবে। কি কষ্টসাধ্য ব্যাপার! এই নিয়ে অনেকেই কাজ করে গেছেন, এমনি একজন ছিলেন প্যাসকেল। তিনি সহগগুলোর মধ্যে একটা প্যাটার্ন দেখতে পান, আর সেগুলোকে ত্রিভুজে রূপ দেন। কিন্তু প্যাটার্নের মধ্যে তো অবশ্যই গণিত আছে। কি সেই গণিত? তা নিয়ে পরিশিষ্টে আলোচনা থাকবে। এখানে আরো একটা প্রশ্ন চলে আসে।
যেহেতু প্যাসকেল একটা প্যাটার্ন দেখিয়ে ছিলেন তাহলে নিউটনের উপপাদ্য কি প্রয়োজন? একটু আগে আমরা দেখলাম না, যে ১০ ঘাতের বিস্তৃতীর জন্য ৯ ঘাতের বিস্তৃতী প্রয়োজন। প্যাসক্যালের ত্রিভুজ সূত্রেও ঠিক এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তাই এমন একটা উপপাদ্য দরকার ছিল যেটা সহজেই অন্য ঘাতের সাহায্য ছাড়া একটা ঘাতের বিস্তৃতি বের করতে পারে। নিউটন সেই কাজটাই করেছিলেন।
নিউটন সহগগুলোকে প্রকাশ করেছেন, সমাবেশের মাধ্যমে। সেটা কিভাবে?
$(a+b)^5$ এটাকে বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে সমাবেশের ধারণাটা হলো মনে কর, ৫ টা ঝুড়ি আছে যেখানে ১টা a আর ১টা b আছে। এখন আমি প্রতিটা ঝুড়ি থেকে একটা করে উপাদান তুলে দেখব আমি কি রাশি পেলাম আর সেই রাশিগুলো কতবার পেতে পারি। আমি ঝুড়িগুলোকে এভাবে সাজাই–
১ $(a+b)$
২ $(a+b)$
৩ $(a+b)$
৪ $(a+b)$
৫ $(a+b)$
এখন চিন্তা করো, আমি যদি ৫টা a নিতে চাই। তাহলে আমি ১ বারই নিতে পারব। সমাবেশের ভাষায় 5C0 উপায়ে। ৫ টা b নিতে চাইলেও ১ বারই নিতে পারব।
যদি আমি চিন্তা করি যে, আমি এমনভাবে উপাদানগুলো তুলব। যাতে সেই রাশিতে অন্তত ১টা b থাকে। সেটা নেওয়া যাবে $^5C_1$ উপায়ে।
আবার যদি চাই ২টা b রাখতে সেটা নেওয়া যাবে ১০ বার। যেমন
(১,২); (১,৩); (১,৪); (১,৫)
(২,৩); (২,৪); (২,৫)
(৩,৪); (৩,৫)
(৪,৫)
৩টা b নেওয়া যাবে ১০ বার, ৪টা b নেওয়া যাবে ৫ বার।
এখানে কৌশলটা কি ধরতে পারছ? আমরা জানি a এর ঘাত বাড়তে থাকলে b এর ঘাত কমে আবার a এর ঘাত কমলে b এর ঘাত বাড়ে। তাই আমি আগে b এর ঘাত প্রথম ০ ধরে, আস্তে আস্তে b এর ঘাত বাড়িয়েছি। যাতে বিস্তৃতীর সাথে মিল থাকে। এভাবে সবগুলো সমাবেশ করলে আমরা সহগসহ বিভিন্ন পদ পেয়ে যাব। সেটা হবেঃ
\begin{align} (a+b)^5 &= a^5 + 5a^4b + 10a^3b^2 + 10a^2b^3 + 5ab^4 + b^5 \\
&= (^5C_0) a^5+ (^5C_1) a^4b+ (^5C_2) a^3b^2 + (^5C_3) a^2b^3 +(^5C_4) ab^4 + (^5C_5) b^5 \end{align}
এখন এটাকে যদি বীজগাণিতিক রূপ দেই তাহলেই দ্বিপদী উপপাদ্য পাওয়া যাবে।
$(a+b)^n = a^n +^nC_1 a^{(n-1)}b +^nC_2 a^{(n-2)}b^2 + \cdots + b^n$
এভাবে যখন দ্বিপদী উপপাদ্যকে ব্যাখ্যা করা গেল, তখন আর কোন সমস্যা থাকল না। এভাবে ব্যাখ্যা করার আকেরটা মজার দিকও আছে। এভাবে ব্যাখ্যা করলে আমরা বিস্তৃতি ছাড়াই একটা ঘাতের বিস্তৃতির নির্দিষ্ট পদ বের করতে পারব!
পরিশিষ্ট
নিউটন হলেন ক্যালকুলাসের একজন জনক। এই ক্যালকুলাসের একটা বিশেষ ধারা হলো ম্যাকলরনির ধারা। এই ম্যাকলরনির ধারা নির্দিষ্ট কিছু নিয়মে দ্বিপদী উপপাদ্যতে রূপ নেয়! আর এই দ্বিপদী উপপাদ্য তৈরি করতে বেচারা নিউটন কি কষ্টই না ভোগ করলো!
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply