চি লির আতাকামা মরুভূমিতে, একটি অত্যাধুনিক রেডিও টেলিস্কোপের সমারোহ আছে। আন্দিজে চাজনান্তর উঁচু মালভূমিতে নির্মাণ করা হয় এই দূরবীক্ষণ সমারোহের। এটি ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি (ESO) এবং আরও কিছু আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে, আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (ALMA) পরিচালনা করছে। ALMA পৃথিবীতে নির্মিত সবচেয়ে জটিল জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। উত্তর আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের দলগুলি চিলির উত্তর দিকে এই জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটির বিকাশে কাজ করছে। আলমা রেডিও টেলিস্কোপ সুদূর মহাকাশ থেকে আসা মহাজাগতিক আলো গুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারে। এটি রেডিও এবং অবলোহিত আলোর মধ্যে সীমানা বেঁধে দেয়। মহাবিশ্বের বেশিরভাগ বস্তুই এই ধরনের আলো নির্গত করে। তাই এটি সনাক্ত করার ক্ষমতা কয়েক দশক ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য ভরসার খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/01/image-13.png?resize=446%2C335&ssl=1)
এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র গুলো প্রাচীন মহাবিশ্ব থেকে আসা আলো পর্যবেক্ষন করে। এই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অবলোহিত এবং বেতার তরঙ্গের মধ্যে। প্রায় এক মিলিমিটার। সে কারণে এইসব আলোর নাম হয়েছে মিলিমিটার এবং সাবমিলিমিটার বিকিরণ। আলমা ৬৬টি অ্যান্টেনা নিয়ে গঠিত। অ্যান্টেনা গুলো ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে বিস্তৃত। এটি একটি বৃহত্তম স্থল-ভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
সাবমিলিমিটার জ্যোতির্বিদ্যা কি?
এই ধারার জ্যোতির্বিদ্যা মিলিমিটার এবং সাবমিলিমিটার বিকিরণ নিয়ে কাজ হয় [১]। এমন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর জন্ম হয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশের বিস্তীর্ণ ঠান্ডা মেঘ থেকে। পরম শূন্য তাপমাত্রার মাত্র কয়েক দশ ডিগ্রি উপরে এবং মহাবিশ্বের কিছু দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আণবিক মেঘ নিয়ে গবেষণা করতে এসব আলো নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া নতুন নক্ষত্রদের জন্মস্থান গ্যাস এবং ধূলিকণার ঘন অঞ্চল নিয়ে গবেষণার কাজেও এই রকম মিলিমিটার সাবমিলিমিটার আলোর বিশ্লেষণ প্রয়োজন পড়ে। মহাবিশ্বের এই অঞ্চলগুলি বেশ অন্ধকার। দৃশ্যমান আলোতে অস্পষ্ট। তবে বর্ণালীর মিলিমিটার এবং সাবমিলিমিটার অংশে উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/01/image-14.png?resize=432%2C358&ssl=1)
কেন আন্দিজ পর্বতের উচ্চ স্থানে আলমা নির্মাণ করা হলো?
মিলিমিটার এবং সাবমিলিমিটার বিকিরণ রহস্যময় প্রাচীন ঠান্ডা মহাবিশ্বের একটি জানালা খুলে দেয়। কিন্তু মহাকাশ থেকে আসা আলোক সংকেতগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প দ্বারা ব্যাপকভাবে শোষিত হয়। তাই এই ধরনের জ্যোতির্বিদ্যার জন্য টেলিস্কোপগুলি অবশ্যই উঁচু, শুষ্ক জায়গায় তৈরি করা হয়। যেমন চাজনান্তরের ৫০০০-মি উচ্চ মালভূমি, পৃথিবীর সর্বোচ্চ জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ সাইটগুলির মধ্যে একটি।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/01/image-15.png?resize=534%2C307&ssl=1)
আতাকামা সাইট, উত্তর চিলির সান পেড্রো দে আতাকামা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পূর্বে, পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থানগুলির মধ্যে একটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণের জন্য এই স্থানকে আদর্শ হিসাবে মনে করেন। তবে তাদের অবশ্যই খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এই মানমন্দির পরিচালনা করতে হয়। চাজনান্তর মাউনা কেয়ার মানমন্দির থেকে ৭৫০ মিটারের বেশি এবং Cerro Paranal-এর VLT থেকে ২৪০০ মিটার বেশি উচু।
কেন আলমা একটি ইন্টারফেরোমিটার?
আলমা সন্দেহাতীত ভাবে একটি দারুণ নকশার একক দূরবীক্ষণ যন্ত্র। প্রাথমিকভাবে এটি ৬৬টি উচ্চ-নির্ভুল অ্যান্টেনা দিয়ে গঠিত যেগুলো ০.৩২থেকে ৩.৬ মিমি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে। এর প্রধান ১২-মিটার অ্যারেতে পঞ্চাশটি অ্যান্টেনা রয়েছে। প্রতিটির ব্যাস ১২ মিটার। সবগুলো একসাথে একটি একক টেলিস্কোপ- ইন্টারফেরোমিটার হিসাবে কাজ করে। আলমার অ্যান্টেনাগুলিকে বিভিন্ন বিন্যাসে সাজানো যেতে পারে। অ্যান্টেনা গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দূরত্ব ১৫০ মিটার থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। এটি আলমাকে একটি শক্তিশালী পরিবর্তনশীল “জুম” দেয়। এই অ্যারের মোট সংগ্রহ এলাকা ৭১,০০০ বর্গ ফুটের বেশি।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/01/image-16.png?resize=505%2C304&ssl=1)
এটি অভূতপূর্ব সংবেদনশীলতা এবং রেজোলিউশনের সাথে মিলিমিটার এবং সাবমিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে মহাবিশ্বকে পরীক্ষা করতে সক্ষম। এর দৃষ্টি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চেয়ে দশগুণ সূক্ষ্ম। এর ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহার করে তৈরি করা ছবি গুলোও বেশ স্পষ্ট ৷
আলমার বিজ্ঞান
আলমা হল শীতল মহাবিশ্ব, আণবিক গ্যাস এবং ধূলিকণা পর্যবেক্ষণ করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। আলমা নক্ষত্র, গ্রহ ব্যবস্থা, ছায়াপথকে পর্যবেক্ষণ করে। আমাদের সৌরজগতের কাছে গ্যাসের মেঘে জন্ম নেওয়া নক্ষত্র ও গ্রহের বিশদ চিত্র বিজ্ঞানীদের প্রদান করে। প্রায় দশ বিলিয়ন বছর আগে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের প্রান্তে তৈরি হওয়া দূরবর্তী ছায়াপথগুলি সনাক্ত করে। আলমা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আমাদের মহাজাগতিক উৎসের গভীরতম প্রশ্নগুলি সমাধান করতে সুযোগ করে দেয়।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/01/image-17.png?resize=347%2C279&ssl=1)
২০১৩ সালে আলমার উদ্বোধন করা হয়েছিল। তবে এর প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণগুলি শুরু হয় ২০১১ সালে। আলমা ধারাবাহিকভাবে বেশ অনন্য ফলাফল তৈরি করেছে। যে ক্ষেত্রগুলিতে এটি অসামান্য ফলাফল প্রদান করেছে তার মধ্যে রয়েছে:
- প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের ছবি প্রদান করা যেমন HL Tau। এই আলোকচিত্র গ্রহের গঠন সম্পর্কে পূর্বে প্রাপ্ত তত্ত্বগুলিকে রূপান্তরিত করেছে।
- আইনস্টাইন রিং বিশদে পর্যবেক্ষণ করা।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/01/image-18.png?resize=339%2C338&ssl=1)
আলমা এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি এর অর্থায়ন করে থাকে [২]। এর নির্মাণ এবং কার্যকলাও পরিচালনা করে থাকে তারা। জয়েন্ট আলমা অবজারভেটরি (JAO) আলমা এর নির্মাণ, কমিশনিং এবং কার্যক্রমে একীভূত নেতৃত্ব এবং ব্যবস্থাপনা প্রদান করে।
তথ্যসুত্রঃ
Leave a Reply