ঘুম কতটা জরুরী

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

ঘুম আমাদের মানবজীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের নানান কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যস্ত মন সারাদিন কর্মক্ষম থাকার পর চায় একটুখানি প্রশান্তি। যা একমাত্র ঘুমই এনে দিতে পারে।

ঘুম কেন গুরুত্বপূর্ণ :

হৃৎপিন্ডের সুস্থতা, হজম ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ প্রায় সকল শারীরবৃত্তীয় সিস্টেমের কার্যকারিতার জন্য ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো : এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যকলাপ বজায় রাখতে গুরাত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এটি জ্ঞান, একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি নতুন কিছু শেখার আগ্রহ তৈরিতেও রয়েছে ঘুমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

প্রতিদিন কতটুকু ঘুমানো দরকার?

একজন মানুষের জন্য কতটুকু ঘুম জরুরী তা তার বয়স, কর্মক্ষমতা ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর নির্ভর করে। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন (NSP: National Sleep Foundation) এর তথ্যানুযায়ী, একজন সুস্থ যুবক ব্যক্তির দিনে ৭-৯ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন [১]। যেখানে একজন শিশু-কিশোরদের প্রয়োজন ৯-১৫ ঘণ্টা। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে আমরা যে ভাতঘুম দেই সেটাও কিন্তু এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত! একজন তরুণ ব্যক্তির ঘুম দরকার ৭-১০ ঘণ্টা। এছাড়াও যাদের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি সে সকল বৃদ্ধ বয়সীদেরও দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন সকল চিকিৎসাবিদগণ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিদিন কতটুকু ঘুমানো দরকার?

NSP ঘুমের ব্যাপারে কিভাবে ঘুমাতে হবে, কত ঘণ্টা যাবত ঘুমাতে হবে, ভালো ঘুমের জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করতে হবে, এসকল বিষয়ে তারা বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঘুমের ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এই নির্দেশিকাগুলো মূলত ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যারা বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় জর্জরিত বা যাদের প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় বা হচ্ছে তাদের একটু বেশি ঘুমের দরকার পড়ে। একইভাবে যারা সরকারি নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ বা সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত তাদেরও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বেশি ঘুমের দরকার পড়ে।

কম ঘুম হলে কি কি সমস্যা হতে পারে?

সাধারণত ঘুমে ব্যাঘাতজনিত সমস্যাগুলো নানা কারণে হতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ লক্ষণ হলো : শরীর ক্লান্ত থাকা।

কম ঘুম হলে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যে সকল ব্যক্তিদের ঘুম কম হয় তাদের মধ্যে সাধারণত কয়েক ধরণের উপসর্গের দেখা মিলে। যেমন : মনোযোগ, একাগ্রতার অভাব, সৃজনশীলতা হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং মন- মেজাজের উঠানামা ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলি আবার ঘুম কম হবার পরিমাণের উপর উপর নির্ভর করে। এছাড়াও জিনগত সমস্যাও পরিমিত ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান এ সমস্যাকে আরো ত্বরান্বিত করে।

পরিমিত ঘুম না হলে যা করতে পারেনঃ

করোনা প্রকোপকালীন সময়ে আমাদেরকে নানা ধরেণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়েছে। এছাড়াও সুষম খাবার খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে খেতে হয়। ঠিক তেমনি ভাবে পরিমিত ঘুম এবং এর উপকারিতা নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে কিছু বিধি-নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রথমত আপনাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যেস করতে হবে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যেস ঘুমের ব্যঘাতজনিত সমস্যা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও নিজের কর্মঘন্টা ও চতুর্মূখী কাজের ব্যস্ততাও আপনার ঘুমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ত ঘুমোতে যাবার পূর্বে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

পরিমিত ঘুম না হলে যা করতে পারেন।

যেমন বই পড়া, রাতের পোষাক পড়ে ঘুমানো, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি অন্যতম। তৃতীয়ত শোবার ঘরের চারপাশের পরিবেশ যাতে শান্ত ও নিরিবিলি হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও ঘুমানোর সময় বিছানা, বালিশ যাতে আরামদায়ক হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।  চতুর্থ পয়েন্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো, ঘুমোতে যাবার আধ ঘণ্টা পূর্বে ভার্চুয়াল জগৎ থেকে আপনার নিজেকে সম্পূর্ণ দুরে সরিয়ে রাখতে হবে। মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। মনে রাখতে হবে যে, এসকল ডিভাইস থেকে উচ্চ মাত্রার স্বল্প-তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলো নির্গত হয়। এছাড়াও পূর্বেই বলেছি যে, ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্যদ্রব্য ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই অবশ্যই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

আপনি যদি রাতে পরিমিত ঘুম চান তবে আপনাকে দিনের বেলায় ঘুম অথবা ভাত ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে ৩০ মিনিট রাখলে ভালো হয়। সর্বশেষ যে পয়েন্টটি বলতে চাই তা হলো রাতে পরিমিত ঘুমের জন্য আপনাকে অবশ্যই দিনের বেলায় কর্মক্ষম থাকতে হবে। খেলা-ধুলা ও ব্যায়াম করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসকল কিছু আপনাকে দিনশেষে সুন্দর ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তথ্যসূত্রঃ

How Much Sleep do People Need?

লেখাটি 143-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 905 other subscribers