ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু এর একদল গবেষক একটি ড্রোন-চালিত ডিভাইস তৈরি করেছে, যা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেয়ালের ওপাশের ডিভাইসের অবস্থান ও কার্যবিধি ট্র্যাক করতে পারবে । ওয়াই-পিপ (Wi-Peep) নামের ডিভাইসটি যেকোনো বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি উড়ে যেতে পারে এবং তারপরে ঐ বিল্ডিংএ বসবাসকারী ব্যক্তিদের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এর মধ্যে থাকা যেকোনো ওয়াইফাই-সংযুক্ত ডিভাইসকে দ্রুত শনাক্ত করতে পারবে।
ওয়াই-পিপ তার ফাংশনের জন্য এমন একটি রাস্তা (লুপহোল) ব্যবহার করে, যাকে গবেষকেরা নাম দিয়েছে পোলাইট ওয়াফাই বা “ভদ্র ওয়াইফাই”। এই ডিভাইসটি উড়তে উড়তে বেশ কয়েকটি ম্যাসেজ পাঠায় এবং কোনো পাল্টা সংকেত পাওয়া যায় কিনা সেটা পরিমাপ করতে থাকে। এভাবেই ওয়াই-পিপ অন্য ডিভাইসের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। গবেষক দল এটি দোকান থেকে কেনা একটি ড্রোন এবং ২০ ডলার সমমূল্যের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি করেছে।
ড. আলী আবেদী হলেন ওয়াটারলু এর একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। উনি এই আবিষ্কারের তাৎপর্য বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “ওয়াই-পিপ ডিভাইসগুলি দৃশ্যমান বর্ণালীতে আলোর মতো এবং দেয়ালগুলি হবে কাচের মতো।“ এ ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি তার ফোন বা স্মার্টওয়াচের অবস্থান অনুসরণ করে একটি ব্যাংকের ভিতরের নিরাপত্তারক্ষীদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারবে। শুনতে অন্যরকম মনে হলেও সত্য যে চোরেরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই কোনো অফিস বা বাড়িতে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরা, ল্যাপটপ এবং স্মার্ট টিভি সহ যেকোনো ডিভাইসের অবস্থান সহজেই বুঝে যাবে। ডিভাইসটি যেহেতু ড্রোনের মাধ্যমে পরিচালনা করা যায়, তাই এক্ষেত্রে বিপদটা একটু বেশিই।
আগেও এ ধরণের টেকনোলজি উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে ইউটিউবে BBC Click চ্যানেল থেকে ২০১৫ সালের ৪ঠা নভেম্বরে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে যেই প্রযুক্তির কথা বলা হয়েছিল, এটা তারই একটি অত্যাধুনিক সংস্করণ। ঐ প্রযুক্তিটি আবিষ্কার করেছিলেন এমআইটির একদল গবেষক। ঐ ট্রাকিং ডিভাইসটি কিছুটা সিটি স্ক্যান মেশিনের মতো কাজ করতো।
এখন মনে হতে পারে, এই প্রযুক্তি কোন কাজে ব্যবহৃত হবে? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এর সর্বোৎকৃ্ষ্ট ব্যবহারটি সামরিক এবং গোয়েন্দা ক্ষেত্রে হবে। শত্রুপক্ষের ঘাঁটি এবং টার্গেট এরিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য এটি বেশ কার্যকরী হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ব্যর্থতার সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ একটা বহিরাগত ড্রোনকে সামরিক অস্ত্র দিয়ে নিমিষেই ধ্বংস করে ফেলে যেকোনো সামরিক বাহিনী। এক্ষেত্রে বিকল্প পন্থা নিয়েও হয়ত ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা ভাববেন।
আমার মনে হয়, ওয়াই-পিপ ডিভাইসটি দমকলকর্মীদের বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। কোনো বিল্ডিং এ আগুন ধরলে সেখানে ভেতরে কয়জন কোথায় আছে-এটা জানা সম্ভব হবে এবং সেই অনুসারে উদ্ধারকাজ হয়ত সফলভাবে সম্পন্ন করা যাবে। তবে এখনি সুনির্দিষ্টভাবে বলে যাচ্ছে না যে এই ডিভাইসটি কীভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে।
যেহেতু এই ওয়ারলেস টেকনোলজি ব্যবহার করে সহিংসতা এবং গোপনীয়তা নষ্ট করার মত কাজ করা সম্ভব, তাই একে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, ডিভাইসটিকে মার্কেটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা যাবেনা। এটি শুধুমাত্র গোয়েন্দা বাহিনীই ক্রয় করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, এটি কেনার জন্য লাইসেন্স পেপার দেখাতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি এককভাবে লাইসেন্স পাবে না, বরং একটি অর্গানাইজেশন কিংবা কাহিনী লাইসেন্স পাবে। তৃতীয়ত, উপরের দুটি কার্যক্রম তদারকি করার জন্য নির্দিষ্ট ম্যানেজিং বোর্ড থাকবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। এটা কিভাবে ব্যবহৃত হবে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেটা এখনি স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব না।
এখন আমার পাঠকদের কাছে একটা প্রশ্ন, যদি এই ডিভাইসটির সাথে এআই বা আর্টিফিশিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম যুক্ত করা হয়, তাহলে পুরো ব্যাপারটা কেমন হবে? কী কী অতিরিক্ত সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে?
রেফারেন্স ও তথ্যসূত্রঃ
১. Researchers Develop a Device That Can Use Wi-fi To See Through Walls
২. Wi-Peep uses Wi-Fi-enabled Drone to Spy Through Walls
৩. Wi-fi can identify people through walls – BBC Click
৪. $20 Wi-Peep allows users to “see through walls”
Leave a Reply