মানব মস্তিষ্ককে বলা হয় এখন পর্যন্ত বিদ্যমান সবচেয়ে জটিল জৈবিক গঠন। আমরা এখনও পুরোপুরি জানিনা আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে। তবে এর জন্য কিন্তু নিউরোসায়েন্স বা স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি থেমে নেই। সেই খ্রিষ্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দ থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত গবেষকরা স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণার নতুন-নতুন মাইলফলক অর্জন করে যাচ্ছেন।
স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের ৮৫ বিলিয়ন বা তার বেশি সংখ্যাক নিউরনের জটিল ফাংশন এবং তাদের মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়নেরও বেশি সংযোগের ম্যাপিং করার দিকে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছেন। ১০০ ট্রিলিয়ন খুবই বিশাল সংখ্যা, যেখানে আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে মাত্র ৪০০ বিলিয়নের মতো নক্ষত্র রয়েছে।
হলো তো মস্তিষ্কের বিশালতা নিয়ে কথা। এবার চলুন পরিচিত হওয়া যাক ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (ইংরেজিতে Brain-computer interface এবং সংক্ষেপে BCI) এর সাথে। ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস হল এমন ডিভাইস যা লাগানো থাকবে ব্যবহারকারীর শরীরে (মূলত মস্তিষ্কে) এবং এটি ব্যবহারকারীকে একটি কম্পিউটারের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা শুধু তাদের মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহার করে কম্পিউটারের বিভিন্ন কমান্ড দিতে পারবে, অর্থাৎ শুধু মস্তিষ্ক ব্যবহার করেই কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ করতে পারবে (এখানে কম্পিউটার বলতে শুধু আমাদের বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত কম্পিউটারকেই বোঝাচ্ছে না)।
পুরো ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা BCI ব্যাপারটা বেশ সোজাসাপটা। আমাদের মস্তিষ্কে নিউরন নামক আণুবীক্ষণিক কোষ একে অপরের কাছে সব সময় বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠাচ্ছে। আপনার চারপাশের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার সময় আপনি যা ভাবেন, করেন কিংবা অনুভব করেন তা এই ৮০ বিলিয়ন বা তার বেশি নিউরনের কার্যকলাপের ফলাফল।
আপনি যদি এই নিউরনগুলির খুব কাছাকাছি ছোট একটি ডিভাইস ইমপ্লান্ট করেন, তাহলে আপনি সেটা দিয়ে নিউরনের তৈরি করা বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ/সংকেত রেকর্ড করতে পারবেন এবং সেটা চাইলেই একটা কম্পিউটারে পাঠাতে পারবেন। মস্তিষ্কের সঠিক এলাকায় যদি ডিভাইস ইমপ্লান্ট করা যায় তাহলে সেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সংকেত রেকর্ড করার মাধ্যমে নাড়াচাড়ার কথা চিন্তা করে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যদিও এর জন্য প্রচুর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা আছে, বিশেষ করে এত এত নিউরনের সংকেত রেকর্ড এবং সেটা প্রসেস করা।
১৯৭০ এর দশকে প্রথম BCI তৈরি করা হয়। প্রথম তৈরি BCI ছিল বেশ সোজাসাপটা। সেটা ব্যবহার করা হয়েছিলো মূলত বিড়ালের সাথে যোগাযোগের পথ তৈরি করা লক্ষ্যে। তবে মানুষের মধ্যে ইমপ্লান্ট করা প্রথম ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছিলো ১৯৯১ সালে। যেটা দিয়ে শুধু মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহার করে মাউস কার্সার নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। কালক্রমে রোবোটিক অঙ্গ, হুইলচেয়ার এবং এক্সোস্কেলটন সহ বিভিন্ন জটিল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন BCI দেখেছি আমরা।
তবে সম্প্রতি বিষয়টি সামনে এসেছে ইলন মাস্কের বিতর্কিত ব্রেইন-চিপ কোম্পানি, নিউরালিংক, অবশেষে US Food and Drug Administration (FDA) অনুমোদন পাবাব পর। গত ২৫ মে, ২০২৩ তারিখে নিউরালিংক তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানায় যে FDA তাদেরকে মানুষের প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে তারা আবেদন করলেও FDA তা নাকচ করে দেয় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/06/file-20200829-16-1gmglou.jpg?resize=878%2C1024&ssl=1)
নিউরালিংকের তৈরি ‘Link‘ নামের ডিভাইস সিস্টেমে একটি কম্পিউটার চিপ রয়েছে যা একটি নির্ভুল সার্জিক্যাল ‘সেলাই-মেশিনের মতো’ রোবট দ্বারা মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। রোবটটি মাথার খুলির একটি ছোট অংশ কেটে সরিয়ে নেয়, তারপর সুতার মতো ইলেক্ট্রোডগুলিকে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের সাথে সংযুক্ত করে (রোবটটি Link থেকে নির্দিষ্ট নিউরনের সাথে মোটামুটি এক হাজারের মতো ক্ষুদ্র থ্রেড বা ইলেক্ট্রোড সংযুক্ত করে, উল্লেখ্য, ২০০৫ সাল থেকে ১০০ ইলেক্ট্রোডের BCI ব্যবহৃত হয়ে আসছে)। প্রতিটি ‘সুতা’ মানুষের চুলের ব্যাসের এক চতুর্থাংশ। Link স্থাপনের পর সেলাই করে দেয়া হয়। ডিভাইসটি ব্লুটুথের মাধ্যমে একটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্তি থাকে। চার্জ দেয়া যায় ওয়্যারলেস চার্জারের মাধ্যমে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/06/file-20190718-116586-1u3ltol.jpeg?resize=367%2C319&ssl=1)
আগেই জেনে এসেছি আমাদের মস্তিষ্কে নিউরন নামক বিশেষ কোষ থাকে যা আমাদের পেশি এবং স্নায়ুর মতো শরীরের অন্যান্য কোষে সংকেত প্রেরণ করে। নিউরালিংক চিপের ইলেক্ট্রোডগুলি এই সংকেতকে পড়তে এবং প্রসেস করতে পারে। অর্থাৎ সেসব সংকেতগুলিকে বিভিন্ন কাজে ভাগ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এর মানে কী নিউরালিংক চিপ আমাদের চিন্তাভাবনা পড়তে পারবে? – সংক্ষিপ্ত উত্তর: না। ইলস মাস্ক তার টুইটার যত দাবিই করুক না কেন, বাস্তবটা বেশ আলাদা।
ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস দিয়ে আমরা যে পরিমাণ তথ্য মস্তিষ্ক থেকে ডিকোড করতে পারি তা এখনও খুবই সীমিত। তাই এটা দিয়ে মানুষের মন পড়া আপাতত এখন সম্ভব না। এছাড়া ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বিষয়ে ফ্রন্টলাইনের গবেষকরা বলছেন যে, এই জীবদ্দশায় কোনো ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস আমাদের মন পড়তে পারবে তা কল্পনা করাও কঠিন।
মৌলিক সমস্যা হল আমরা আসলেই জানি না আমাদের চিন্তাগুলি কোথায় বা কীভাবে মস্তিষ্কে জমা হয়। আমরা যদি আমাদের মস্তিষ্কে স্মৃতি কীভাবে জমা হয় তার পিছনের স্নায়ুবিজ্ঞান বুঝতে না পারি তাহলে আমাদের মন পড়া সম্ভব হবে কীভাবে? – হবে না।
এখন পর্যন্ত ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস-এর অগ্রগতি খুবই কম। আর এসব মোটামুটি ল্যাব এবং গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদিও অনেকে মনে করতে পারেন যে কিছুদিন আগে Synchron নামের এক কোম্পানি তো একজন ৪৮ বছর বয়সী রোগীর মস্তিষ্কে (যিনি amyotrophic lateral sclerosis (ALS) থেকে গুরুতর পক্ষাঘাতের কারণে নড়াচড়া করতে এবং কথা বলতে অক্ষম ছিলেন) প্রথম স্থায়ী ইমপ্লান্ট করে তার নড়াচড়া এবং কথা বলা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তাহলে? – সেটাও ল্যাব টেস্টের মধ্যেই পড়ে অর্থাৎ ইমপ্লান করা হয়েছে গবেষণার জন্য। তবে নিউরালিংক সহ বেশি কিছু স্টার্টআপ হাঁটছে এটাকে একদম কনজ্যুমার পর্যায়ে নিয়ে যাবার পথে।
এখন পর্যন্ত গবেষণা পর্যায়ে BCI দিয়ে আমরা কোনোকিছু দেখার, শোনার, এবং কী বলতে চাই তার সিগন্যাল ডিকোড করতে পারি। এছাড়া মাউস কার্সর, রোবোটিক অঙ্গ, হুইলচেয়ার এবং এক্সোস্কেলটন কীভাবে নাড়াতে চাই সেই সিগন্যালকে কনভার্ট করতে পারি। এটুকুই। এর থেকে জটিল কিছু আপাতত করতে পারিনা।
২০২১ সালে ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্ক একটা প্রুফ-অপ-কনসেপ্ট ভিডিয়ো প্রকাশ করে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে দেখা যায় যে ‘পেজার’ নামের একটা বানর তার মস্তিষ্কে বসানো চিপের মাধ্যমে পং গেইম খেলছে। যদিও এটাই প্রথম না।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2023/06/file-20210414-21-1kfzhyr.png?resize=640%2C353&ssl=1)
পেজারকে প্রথম দেখানো হয়েছিল কীভাবে জয়স্টিক ব্যবহার করে পং খেলতে হয়। সে যখন সঠিক পদক্ষেপ নিত, তখন সে কলা স্মুদির এক চুমুক পুরষ্কার হিসাবে পেত। পুরো খেলার সময় জুরে তার মস্তিস্কে ইমপ্লান্ট করা নিউরালিংকের ডিভাইস ‘Link’ তার মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের সিগনাল রেকর্ড করে। পরে জয়স্টিকটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু পেজার তার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে ঠিকই গেমটি খেলতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু “চিপ বসালে…প্রচুর তথ্য জমা রাখা যাবে…পড়া/শেখা লাগবে না…চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে..একটা ঝলকে নতুন ভাষা শেখা যাবে….মানুষের নিজস্ব চিন্তা কিছু থাকবো না….রোবটের মধ্যে মস্তিষ্ক আপলোড করে রাখা যাবে…ইত্যাদি ইত্যাদি” সবই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ছাড়া কিছু না।
নিউরালিংক-এর তৈরি ডিভাইস ‘Link’ এখন পর্যন্ত শুধু পশুর মস্তিষ্কেই ইমপ্লান্ট করা হয়েছে। মানুষের ট্রায়ালের মাত্র অনুমোদন পেয়েছে। FDA নিউরালিংককে তৃতীয় শ্রেণির মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে, যেটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগ। মানুষের ট্রায়ালের শুরু করার আগে, নিউরালিংককে অবশ্যই FDA-এর সব কঠোর নিয়ম মানতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের ওপর পরীক্ষার জন্য অনুমোদন প্রক্রিয়া বেশ কিছু সময় নিতে পারে।
এখন দেখা যাক ইলন মাস্কের টুইটারে করা বিভিন্ন দাবি কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব।
দাবি ১: মানুষের মধ্যে ইমপ্লান্ট করা: মাস্কের দাবি নিউরালিংক এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে একজন ব্যক্তির মধ্যে ‘Link’ স্থাপন করতে সক্ষম হবে। তার দাবি আসলে ততটা যুগান্তকারূ নয় যতটা শোনাচ্ছে। কারণ মাস্ক যে পদ্ধতির বর্ণনা করছিলেন সেটা মৃগীরোগ এবং পারকিনসনের মতো রোগের চিকিৎসার জন্য মোটামুটি নিয়মিতভাবে ঘটে। ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি-র তথ্য মতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০,০০০ মানুষের মস্তিষ্কে কোন না কোন ধরনের নিউরোটেকনোলজি বসানো আছে।
দাবি ২: আসক্তি এবং ডিপ্রেশন: স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে আসক্তি এবং ডিপ্রেশন কমানো যেতে পারে। ইতোমধ্যে ২০০-এর বেশি রোগীর মাথায় ইলেক্ট্রোড স্থাপন করা হয়েছে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা স্বরূপ। নতুন কিছু না। মুলত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ ক্যাপসুল নামক একটি স্থানে ইলেক্ট্রোড স্থাপন করা হয় এবং তা দিযৃে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের সাথে সংযোগকে উদ্দীপিত করা হয়। বেশ কয়েকটি দেশে ওপিওড আসক্তদের মস্তিষ্কের সেই অংশগুলিতে ইলেক্ট্রোড বসানো হয়েছে যা আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও আসক্তি এবং ডিপ্রেশন কমাতে BCI ব্যবহার এখনও এক্সপেরিমেন্টাল পর্যায়েই আছে। তবে আরো গবেষণায় একে সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে দ্রুত।
দাবি ৩: অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD)-এর মতো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান: এটাও নতুন কিছু না। তবে এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে সেটা এখনও উন্নত হচ্ছে দিন দিন।
দাবি ৪: অটিজম এবং ব্রেইন ইঞ্জুরি: মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোডের মাধ্যমে অটিজম এবং ব্রেইন ইঞ্জুরির চিকিৎসা ইতোমধ্যেই করা হয়। তবে সেসবও গবেষণা পর্যায়ে। পর্যবেক্ষণ এবং পূর্নাঙ্গ ফলাফল বাকি।
Synchron নামের কোস্পানিটি ALS এর জন্য প্রথম হিউম্যান ইমপ্লান্ট করলেও ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস দিয়ে এর চিকিৎসা করা বেশ কঠিন হতে পারে। গবেষকরা বলছেন যে, ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস থেকে এর জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল চিকিৎসা-ই বেশি কার্যকরী হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
দাবি ৫: মস্তিষ্কে মিউজিক স্ট্রিম: অসম্ভব শোনালেও, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এটা এখনই প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব কারণ আমাদের মস্তিষ্কের শ্রাবণ ইতিমধ্যে খুব ভালোভাবে ম্যাপ করা হয়েছে। তবে বাস্তবে দেখতে অনেক সময় লাগবে।
বর্তমানে, কোম্পানিটি “Link” ইমপ্লান্ট করতে নমনীয় পলিমার ব্যবহার করে, যা মানবদেহে ১০ স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেখানে FDA এর নিয়ম অনুসারে যেসকল মেডিকেল ডিভাইস সহজে রিপ্লেস করা যায় না সেটার ন্যূনতম সময়সীমা ১০ বছর হতে হবে।
যাই হোক না কেন ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তবে এর জন্য আমাদের কাছে এখনও পর্যাপ্ত রিসোর্স বা উন্নত প্রযুক্তি নেই।
সমালোচকরা নিউরালিংকের সম্ভাব্য সুবিধাগুলি স্বীকার করেন, কিন্তু সমস্যা হলো কোম্পানি খুব বেশি তারাহুড়ো করছে যে ব্যাপারে বরাবারই সবাই সতর্ক করে যাচ্ছে। কারণ সমস্যা সমাধান এবং সীমাবন্ধতা কাটাতে সময় প্রয়োজন। তারাহুড়ো করে সমাধানে পৌঁছাতে জোড়াতালি দিয়ে আগানো উচিত নয়৷
‘Link’-এর চিকিৎসাক্ষেত্রে সম্ভাব্য ব্যবহারের বাইরেও, মাস্কের করা সব আজব-আজব দাবিও দেখতে হবে। তিনি দাবি করেছেন যে নিউরালিংক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমের সাথে একটি অন-ডিমান্ড সংযোগ তৈরি করে মানুষের বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করতে পারবে।
এমনকি সে এমনও বলেছেন যে ‘Link’ একটি মধ্যস্থতাকারী কম্পিউটারের মাধ্যমে সংযুক্ত দুই বা ততোধিক লোকের মধ্যে উচ্চ-ব্যান্ডউইথের টেলিপ্যাথিক যোগাযোগের সুযোগ করে দিবে। যেটা আপাতত কল্পবিজ্ঞান বিভাগেই রাখা যায়।
তবে সুদুর ভবিশ্যতে নিউরালিংক এসব প্রযুক্তির মাইলফলক অর্জক করে থাকলেও নিরাপদ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এগুলি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়৷ আর এটি শুধুমাত্র সম্পূর্ণ পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।
কোম্পানি এবং একাডেমিক গবেষণা ল্যাবগুলিতে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ, সেইসাথে প্রযুক্তি এবং ডেটা অন্য গবেষকদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে একত্রে কাজ করার উদ্ভাবনী উপায়গুলি সত্যিই বিজ্ঞানীদেরকে মস্তিষ্ককে আরো ভালোভাবে বোঝার এবং তা কাজে লাগিয়ে আরো উন্নত ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস তৈরি করা সম্ভব। ফলে আরো বেশি লোককে মস্তিষ্ক এবং শরীরে আঘাত বা রোগের কারণে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতাগুলি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা সম্ভব হবে।
মাস্ক তার আজগুবি মার্কা চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারুক বা না পারুক, সে এবং অন্যান্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা যারা ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেস খাতে বিনিয়োগ করছেন তাদের কাজ আমাদের নিউরোসায়েন্স গবেষণার অগ্রগতি নিশ্চিত করবে।
আমাদের এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা মোকাবেলা করতে হবে।
তথ্যসুত্র এবং আরো পড়ুন:
Leave a Reply