২০২৩ রসায়নে নোবেল পুরষ্কার যে কারণে

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

এবারের রসায়নে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন বিজ্ঞানী। এরা হলেন, মুঙ্গি বাওয়েন্ডি, লুই ব্রুস, আলেক্সি ইয়াকিমভ। ওনারা মূলত যে কারণে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন সেটাই আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়।

ওনারা মূলত রসায়নে নোবেল পেয়েছেন কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার করা জন্য। এইটা মূলত একপ্রকার সেমিকন্ডাক্টর যেটা আবার একপ্রকার ন্যানোপার্টিকেল।সেমিকন্ডাক্টর হলো একপ্রকার পদার্থ যেটা কখনো পরিবাহী আবার কখনো অপরিবাহীর মতো আচরণ করে। আর ন্যানোপার্টিকেল হলো ১ সেন্টিমিটারের এককোটি ভাগের একভাগের সমান ক্ষুদ্র কণা।

তো সাধারণ কোন মৌলের পরমাণু যখন একা থাকে  তখন তার শেষ কক্ষপথে কেবল একটা নির্দিষ্ট শক্তির স্তরই থাকে। কিন্তু সেমিকন্ডাক্টরে যখন একসাথে মৌলের অনেক পরমাণু থাকে তখন যেহেতু সবগুলো পরমাণুরই শেষ কক্ষপথে ইলেকট্রন থাকে, তাই ইলেকট্রন ইলেকট্রন বিকর্ষণের কারণে এদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তাই এই অবস্থায় ধাক্কাধাক্কি করে পরমাণুগুলোর শেষ কক্ষপথগুলো এদের চেয়ে কম শক্তির নিচের কক্ষপথগুলোর সাথে মিশে একধরনের হাইব্রিড কক্ষপথ তৈরি করে। এই কক্ষপথে দুইটা স্তর থাকে। একটাকে বলে যোজন ব্যান্ড (valence band) আর একটাকে বলে পরিবহন ব্যান্ড (conduction band)। যোজন ব্যান্ডের এনার্জি পরিবহন ব্যান্ড হতে কম হয়। সাধারণত সেমিকন্ডাক্টরে  মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো থাকে যোজন ব্যান্ডে। তখন সেমিকন্ডাক্টরগুলো তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না। এরপর যখন সেমিকন্ডাক্টরের পরমাণুগুলো কোনভাবে এনার্জি লাভ করে তখন পরমাণুগুলোর যোজন ব্যান্ডের ইলেকট্রনগুলো উত্তেজিত হয়ে বেশি শক্তির পরিবহন ব্যান্ডে চলে যায়, তখন এরা তড়িৎ পরিবহন করতে পারে।

তো আবিষ্কারটার মাহাত্ম্য কী?

আবিষ্কারটার মাহাত্ম্য হলো, এর আকার। কোয়ান্টাম ডটগুলোর আকার সাধারণ সেমিকন্ডাক্টরের তুলনায় অনেক অনেক অনেক ক্ষুদ্র হয়। এগুলার আকার Exciton Bohr Radius এর সমান ক্ষুদ্র হয়। কিন্তু জিনিসটা কি?

সেমিকন্ডাক্টরে দুইটা হোলের মাঝে একটা ইলেকট্রন বা দুইটা ইলেকট্রনের মাঝে একটা হোল থাকতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে একটা ইলেকট্রন আর একটা হোলের মাঝে যে দূরত্ব থাকে সেটা হলো  Exciton Bohr Radius।  এই দূরত্ব একেকটা সেমিকন্ডাক্টরের জন্য একেক রকম হয়। কিন্তু সব সেমিকন্ডাক্টরের জন্য একটা বিষয় কমন থাকে, সেটা হলো এই দূরত্বটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়। এইটা  2-10 ন্যানোমিটার পর্যন্ত ক্ষুদ্র হয়ে থাকে।

তো কোয়ান্টাম ডট এত ক্ষুদ্র হওয়ার কারণ কি?

এত ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে কোয়ান্টাম ডটের একটা বিশেষ কোয়ান্টাম ধর্ম প্রস্ফুটিত হয়, তখন কোয়ান্টাম ধর্মগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র জিনিসে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এ ধর্মটা হলো Quantum Confinement। এই ধর্মের কারণে সেমিকন্ডাক্টর যত ছোট হতে থাকে, তত এর পরিবহন ব্যান্ড আর যোজন ব্যান্ডের শক্তির পার্থক্য বাড়তে থাকতে। কোয়ান্টাম ডট যেহেতু অনেক ছোট, তাই এই ধর্ম অনেক প্রকট আকার ধারণ করে। আর পরিবহন ব্যান্ড আর যোজন ব্যান্ডের শক্তির পার্থক্য দুইটা সাধারণ শক্তিস্তরের পার্থক্যের প্রায় সমান হয়ে যায়। ফলে কোয়ান্টাম ডটের এই দুইটা ব্যান্ড অনেকটা আলাদা শক্তিস্তরের ন্যায় আচরণ করে। এই কারণে কোয়ান্টাম ডটকে একটা একলা পরমাণু আর সেমিকন্ডাক্টরের মাঝামাঝি একটা অবস্থা ধরা হয়। 

তো,  যেহেতু কোয়ান্টাম ডটের দুইটা ব্যান্ডের শক্তির পার্থক্য অনেক বেশি তাই এদেরকে আলোর মাধ্যমে এনার্জি দিলে এরা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সীর আলো খায়। ফলে এনার্জি লাভ করে ইলেকট্রনগুলো যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে চলে যায়। আবার যখন এদের এনার্জি পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, অর্থাৎ, আলোর মাধ্যমে এনার্জি দেয়া বন্ধ করে দিলে এদের এরা আবার শক্তি হারিয়ে পরিবহন ব্যান্ড থেকে যোজন ব্যান্ডে ফিরে আসে। এইযে শক্তিটা হারালো, এই শক্তিটা এরা আলো হিসাবে বের করে দেয়। ফলে এরা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করতে থাকে। এইযে আলো নিয়ে আলো ছাড়া, এটাকে বলে ফ্লুরোসেন্স ধর্ম আর এজন্য কোয়ান্টাম ডটকে বলা হয় ফ্লুরোসেন্ট পদার্থ।

এইধর্মের ফলে এটাকে LED, TV, Surger,  Nanotech – সহ অনেকক্ষেত্রে ব্যবহার করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এই কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার ও তৈরি করার কারণেই মূলত এবার নোবেল প্রাইজ জিতেছেন এই তিন বিজ্ঞানী।

Reference:
1. Quantum dot – Wikipedia

2. Quora: Why does the band gap of nanoparticles increase with a decrease in size?

3. Press Release from NobelPrize.org

4. Wikipedia: Exciton

লেখাটি 83-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading