যারা কাঁদতে পারে, তাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ও সাহসী বলে বিবেচনা করা হয়। কান্না করার সময় চোখের পানির সাথে নির্গত হয় অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন হরমোন। এই দুই হরমোন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ব্যথা উপশম করে। একইসাথে চোখের পানি মানুষের মধ্যে সহানুভূতি জাগায়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, চোখের অশ্রুর আরও অনেক কার্যকরী প্রভাব রয়েছে। যেমন নারীর অশ্রুতে থাকা হরমোন পুরুষের আগ্রাসী আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞানীরা পুরুষের হিংস্র আচরণ এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরখ করে দেখেছেন। গত সপ্তাহে প্লস বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হওয়া একটি গবেষণাপত্রে গবেষকরা দেখিয়েছেন, নারীর চোখের পানির গন্ধে পুরুষের আগ্রাসী আচরণ চল্লিশ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পায়। তবে শুধু মানুষ নয়, অশ্রু সুরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে ইঁদুরসহ প্রায় স্তন্যপায়ী প্রাণীতে। এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নারীর চোখের পানি পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা, যৌন উত্তেজনা কমায়। নিজের অজান্তেই, মানুষরা একে অপরের শরীরের গন্ধের উপর ভিত্তি করে যোগাযোগ করে। কখনো কখনো ঘামের মাধ্যমেও মনের ভাব প্রকাশ পায়।
গবেষণায় অংশ নেয় বাইশ থেকে পঁচিশ বছর বয়সী একশ জন নারী। এদের মধ্য থেকে ছয় জনের কাছ থেকে আবেগজড়িত চোখের পানি সংগ্রহ করা হয়। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। প্রতি জন পুরুষকে প্রায় এক মিলি লিটার এর মতন অশ্রু সরবরাহ করতে হয়েছে। পরিমাণটা কিন্তু অনেক। পাশাপাশি কান্নার পেছনে কাজ করা আবেগের ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হয়েছে। কেননা, পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে আসা চোখের পানি আর ট্র্যাজেডি চলচ্চিত্র দেখে আসা চোখের পানি এক নয়। অন্যদিকে ২৫ জন পুরুষকে উত্তেজিত করতে তাদের ভিডিও গেইম খেলতে দেওয়া হয়। তবে তাদের প্রতিপক্ষ যে কম্পিউটার, তা আগে থেকে জানানো হয়নি।
গেইম খেলার সময় কম্পিউটারের বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসী আচরণ পরিমাপ করেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি এমআরআই স্ক্যানার দিয়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপও পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পুরুষদের লবণ পানি এবং নারীর চোখের পানি শুঁকতে দেওয়া হয়। তবে কেউই জানতেন না তারা নিশ্বাসের সাথে কি নিচ্ছেন। দেখা যায়, লবণ পানির তুলনায় বরং যে-সব পুরুষদের নমুনা হিসেবে নারীর চোখের পানি দেওয়া হয়েছিল, তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ ৪৩.৭ শতাংশ বেশি হ্রাস পায়। এই ক্ষেত্রে পুরুষের মগজের দুটি অংশ- প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং বাম অ্যান্টেরিওর ইনসুলা, কম সক্রিয় ছিল। তবে আবেগ আর ঘ্রাণের সাথে জড়িত অ্যামিগডালা অধিকতর বেশি সক্রিয় ছিল। বাচ্চাদের চোখের পানি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একই রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করে কিনা, তা নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা করে দেখবেন বিজ্ঞানীরা।
তথ্যসুত্র– A chemical signal in human female tears lowers aggression in males | PLOS Biology
Leave a Reply