আমরা সবাই স্কুলে জীববিজ্ঞানের বইয়ে স্নায়ুকোষের গঠন জেনেছি। যদিও একেক স্নায়ুর আকার-আকৃতি একেক রকম, কিন্তু কিছু বৈশিষ্ট্য সব স্নায়ুতেই দেখা যায়। সব স্নায়ুকোষের বাইরে একটা কোষঝিল্লী থাকে। এদের একটা মূল কোষদেহ থাকে, যেখানে নিউক্লিয়াস বাস করে। স্নায়ু কোষদেহ থেকে ডেনড্রাইট নামে শাখা-প্রশাখা বের হয়, এরাপ্রতিবেশী স্নায়ুকোষ থেকে রাসায়নিক সংকেত বহন করে নিয়ে আসে। সচরাচর স্নায়ুকোষের বেশ কিছু ডেনড্রাইট থাকে। পাশাপাশি কোষ দেহ থেকে বেশ লম্বা, তারের মতো দেখতে আরেকটা শাখা বের হয় যেটাকে অ্যাক্সন বলে। এটা সব স্নায়ুকোষেই দেখা যায়। আমরা জানি যে অ্যাক্সন দিয়েই স্নায়ুকোষটি অন্যান্য স্নায়ুতে সংকেত পাঠিয়ে থাকে। কখনো কখনো এই অ্যাক্সন এতো লম্বা হয় যে এরা অনেক দূর সংকেত পাঠাতে পারে। যেমন মানুষে তিন ফুট লম্বা এক্সনও দেখা যায়।
অ্যাক্সন আর ডেনড্রন যে জাংশনে মিলিত হয় সেটাকে বলে সিন্যাপ্স। সিন্যাপ্সে কিন্তু এক্সনের শেষ প্রান্ত ডেনড্রাইটকে স্পর্শ করে না। এক্সনের শেষ প্রান্তে অজস্র বুদবুদ সদৃশ ভেসিকল থাকে। এসব ভেসিকলের মধ্যে সাধারণত নিউরোট্রান্সমিটার নামে রাসায়নিক ভরা থাকে। সিন্যাপ্সের শেষ প্রান্তের পরে, ডেনড্রাইটের আগে, মধ্যবর্তী যে ফাঁকা জায়গাটা, সেটাকে সিন্যাপ্টিক ক্লেফ্ট বলে। এই ক্লেফ্ট লবণাক্ত তরলে পরিপূর্ণ। এক্সনের ভেসিকল যখন শেষ প্রান্তের ঝিল্লীর সাথে স্পর্শ করে, তখন বুদবুদটা ভেঙে যায়, আর নিউরোট্রান্সমিটারগুলো সিন্যাপ্টিক ক্লেফ্ট পার করে ডেনড্রাইটে প্রবেশ করে।
সিন্যাপ্সকে একটা সুইচ হিসেবে কল্পনা করা যায়, যেখানে খুব দ্রুত সংকেত বিনিময় ঘটে। এই সংকেতগুলোর দুই ধরনের: রাসায়নিক ও তড়িৎ। তড়িৎ সংকেত সাধারণত অতি দ্রুত বিভব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঘটে, যেটাকে স্পাইক নামে ডাকা হয়। স্নায়ু কোষদেহের যে জায়গা থেকে অ্যাক্সনের শুরু, সেখান থেকে স্পাইকের উৎপত্তি। এই স্পাইক সম্পূর্ণ অ্যাক্সন ভ্রমণ করে শেষ প্রান্তে চলে আসে। স্পাইক শেষ প্রান্তে আসার ফলে একটা রাসায়নিক পরিবর্তন শুরু হয়, যার কারণে অ্যাক্সনের শেষ প্রান্তে থাকা ভেসিকলগুলো নিকটবর্তী কোষঝিল্লীর সাথে মিশে গিয়ে নিউরোট্রান্সমিটারগুলো সিন্যাপ্টিক ক্লেফ্টে খালাস করে দেয়। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলো সিন্যাপ্টিক ক্লেফ্ট ভ্রমণ করে ডেনড্রাইটে অবস্থিত কিছু গ্রাহক প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়। এই গ্রাহক প্রোটিনগুলোর কেতাবি নাম নিউরোট্রান্সমিটার রিসেপ্টর। এসব রিসেপ্টরের কাজ হলো, নিউরোট্রান্সমিটার এদের সঙ্গে যুক্ত হলে নিজের কোষদেহে আরেকটা তড়িৎ সংকেত পাঠানো। এভাবে যথেষ্ট সংখ্যক ডেনড্রাইট যদি একই সময়ে সক্রিয় হয়, তাহলে গ্রাহক স্নায়ু কোষদেহ হয়তো সিন্যাপ্সে নতুন তড়িৎ সংকেত পাঠাবে। এভাবে এটি পরবর্তীস্নায়ুকোষকে সক্রিয় করে।
কিন্তু এটা হলো স্কুল পর্যায়ের জীববিজ্ঞান বইয়ের সহজবোধ্য বর্ণনা। আসলে ঠিক কিভাবে স্নায়ু কাজ করে? চলুন দেখা যাক।
ইনসাইডার হলো বিজ্ঞান ব্লগের একটি সদস্য প্রোগ্রাম। বিজ্ঞান ব্লগে প্রতি মাসে কিছু বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে। এগুলো লিখছেন আরাফাত রহমান ও সুজয় কুমার দাশ। এই লেখাগুলো কেবল মাত্র লগইন করে পড়া যাবে। আপনি যদি বিজ্ঞান ব্লগের ইনসাইডার হতে চান, তাহলে এই পেজে গিয়ে আমাদের বার্তা দিন। বার্তা পাওয়ার পর আপনার সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করা হবে।
Leave a Reply