আমরা মানুষেরা নিজেদেরকে সৃষ্টির সেরা বলে গর্ব করি। এর কারণ হিসেবে আমরা ধরে নিই, আমাদের মস্তিষ্ক সেরা। কিন্তু মস্তিষ্কের একক, খোদ স্নায়ুকোষই প্রাগৈতিহাসিক একটা নকশায় তৈরি। যার ফলে এরা সংকেত লেনদেনের বেলায় অনির্ভরযোগ্য, অন্যদিকে কাজেকর্মে ধীরগতির। অনির্ভরযোগ্য আর স্লথ স্নায়ু দিয়েও কীভাবে আমাদের মস্তিষ্ক এতো চমৎকারভাবে কাজ করতে পারে, সেটা অবশ্য একটা ভিন্ন আলোচনা। তবে এই লেখাতে আমরা দেখবো কেন স্নায়ু এতো আনাড়ি।
গত লেখায় আমরা জেনেছি কিভাবে নিউরনের অ্যাক্সনের গোড়া অ্যাক্সন-হিল্লোক থেকে স্পাইক তৈরি হয়ে পরিবাহী তারের মতো তা অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করে। অনেক উদ্ভিদ বা প্রাণী কিছু নিউরোটক্সিন তৈরি করে, যা এইসব চ্যানেলকে বন্ধ করে দিতে পারে। আর একবার এসব চ্যানেল বন্ধ করা মানে হলো আপনি মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের সব সংকেত লেন-দেন আটকে করে দেয়া। এসব স্নায়ুবিষের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হলো জাপানের পাফারফিশ, জাপানিরা যাকে ফুগু বলে ডাকে। আমাদের দেশে এটা পটকা মাছ নামে চেনে। কেউ কেউ ট্যাপা মাছও বলে। পাফারফিশের টেট্রোডোটক্সিন নামক নিউরোটক্সিন মূলত একধরনের আণবিক প্লাগ ছাড়া কিছুই না, যা সোডিয়াম আয়ন চ্যানেলের কেন্দ্রীয় ছিদ্রটাতে খাপে খাপে আটকে যায়। ফলে সোডিয়াম আয়ন চ্যাানেল মূলত অকার্যকর হয়ে পড়ে। টেট্রোডোটক্সিন সানায়ানাইড বিষের চাইতে হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। শুধু একটা পাফার ফিশ থেকে ৩০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষ মারা যেতে পারে। অন্যদিকে জাপানিরা পাফারফিশ খেতে খুবই পছন্দ করে। এজন্য একসময় প্রচুর জাপানি লোকজন রেস্টুরেন্টে পাফারফিশ খেতে গিয়ে মারা পরতো। এজন্য এখন পাফারফিশ খাদ্যহিসেবে বেশ শক্ত ভাবে নিয়মনীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই টক্সিনের জন্য এখনো এই মাছ খাওয়া জাপানি রাজপরিবারের জন্য নিষিদ্ধ।
ইনসাইডার হলো বিজ্ঞান ব্লগের একটি সদস্য প্রোগ্রাম। বিজ্ঞান ব্লগে প্রতি মাসে কিছু বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে। এগুলো লিখছেন আরাফাত রহমান ও সুজয় কুমার দাশ। এই লেখাগুলো কেবল মাত্র লগইন করে পড়া যাবে। আপনি যদি বিজ্ঞান ব্লগের ইনসাইডার হতে চান, তাহলে এই পেজে গিয়ে আমাদের বার্তা দিন। বার্তা পাওয়ার পর আপনার সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করা হবে।
Leave a Reply