বিজ্ঞানে নোবেল ২০২৪

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

সারাবিশ্বের বিজ্ঞানের মানুষদের কাছে অক্টোবর মাস হল নোবেলের মাস। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও অক্টোবরের ৭, ৮ ও ৯ তারিখে ঘোষিত হয়ে গেল বিজ্ঞানের তিন ক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ীদের নাম। বিজয়ীরা কে, কোন বিষয়ে, কেন এ পুরস্কার পেলেন তা নিয়েই সাজানো হয়েছে এই পর্ব।

চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল

মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার ও জিন গবেষণায় বিপ্লব

চলতি বছর চিকিৎসা ও শারীরতত্ত্বে নোবেল গেলো ভিক্টর অ্যামব্রোস আর গ্যারি রাভকুন এর ঝুলিতে। মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার এবং ট্রান্সক্রিপশন পরবর্তী জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা নিয়ে গবেষণায় তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ভিক্টর অ্যামব্রোস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উমাস চ্যান মেডিকেল স্কুলের ডেভেলাপমেন্ট জীববিজ্ঞানের গবেষক। অন্যদিকে রাভকুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের আণবিক জীববিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করেন এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে জিনবিদ্যায় অধ্যাপনা করেন। গতসোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় করোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি থেকে এই বার্তা জানানো হয়।

ছবিঃ ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকুন

সাধারণত আমাদের দেহের সকল কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং গুণমানে একই রকম হয়। অর্থাৎ সবকোষেই ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬টা। প্রত্যেক কোষের ক্রোমোজোমে একই রকম জিন, সমান সংখ্যায় উপস্থিত। তবুও ভিন্ন ধরণের কোষে উৎপন্ন হয় ভিন্ন রকম প্রোটিন। যেজন্যে শরীরের একেক জায়গার কোষের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। কাজও হয় আলাদা। যেমন স্নায়ু কোষ আর পেশী কোষের কাজ এক রকম নয়। কিন্তু এমনটা কেন হয়? কিংবা কীভাবে সম্ভব হয়? এর উত্তর মিলেছে  অ্যামব্রোস এবং রাভকুনের গবেষণার কল্যাণে।

সাধারণত কোষের যাবতীয় বংশগত তথ্য স্টোর করা আছে ডিএনএ’র দুই সুতায় থাকা নিউক্লিওটাইডের ক্ষার অনুক্রমে। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষার অনুক্রম থেকে তৈরি হয় প্রোটিন। এদের জিন বলে। প্রোটিনই ভিন্ন ভিন্ন কোষের আলাদা আলাদা কার্যক্রম চালনা করে। জিন থেকে প্রোটিন তৈরি হতে হলে প্রথমে তা বার্তাবাহক আরএনএ’তে (mRNA- messenger RNA) কপি হয়। এই এমআরএনএ প্রোটিন তৈরির বার্তা নিয়ে চলে যায় রাইবোজোমের কাছে। রাইবোজোম হল প্রোটিন উৎপাদন মেশিন। এর কাজ এমআরএনএ’তে থাকা বার্তা পড়ে ঠিক প্রোটিনটি তৈরি করা। শরীরের সব কোষে সবরকম জিন উপস্থিত থাকলেও সবরকমের প্রোটিন উৎপাদন হয়না। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, সবরকম কোষে সব জিন প্রকাশিত হয়না। প্রশ্ন হল, কোন জিনটি প্রকাশিত হতে হবে তা কোষ বুঝে কেমন করে?

কোষের জিন প্রকাশ প্রক্রিয়া কঠোর নিয়ন্ত্রণের ভেতর থাকে। একে বলে জিন রেগুলারেটরি সিস্টেম। অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীরা ভেবে আসছিলেন, ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর প্রোটিনগুলোই ঠিক করে দেয় কোন জিনটা কোন কোষে প্রকাশিত হবে। এরা ডিএনএ’র নির্দিষ্ট জায়গায় যুক্ত হয়ে হয় কোনো জিনকে সক্রিয় করে না হয় নিষ্ক্রিয় করে। অর্থাৎ কোন জিন থেকে এমআরএনএ তৈরি হবে কি না হবে তা ঠিক করে দেয় এসব প্রোটিন। কিন্তু ভিক্টর এবং রাভকুনের গবেষণা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন যে, এখানেই গল্পটা শেষ নয়। ১৯৯০ সালে এই দুই বিজ্ঞানী সি এলিগান নিয়ে গবেষণা করে আবিষ্কার করলেন  মাইক্রোআরএনএ। তাঁরা দেখান এমআরএনএ তৈরি হবার পরেও প্রোটিন উৎপাদন নাও হতে পারে। কেননা এই ছোট্ট আরএনএগুলো (মাইক্রোআরএনএ) সরাসরি বার্তাবাহক আরএনএ’র সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ফলে রাইবোজোম আর এসব আরএনএ পাঠ করে প্রোটিন তৈরি করতে পারে না।

এভাবে জিন নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ এক নতুন তরিকা আবিষ্কৃত হল।

আবিষ্কারটা যে নিঃসন্দেহে ব্রেকথ্রু পর্যায়ের তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কথা হল, সি এলিগানদেরই কি কেবল এসব মাইক্রোআরএনএ থাকে? নাকি মানুষেও থাকে? এর উত্তর জানা গেলো আরও অনেক পরে। মানব কোষেও আবিষ্কৃত হল হাজার হাজার মাইক্রোআরএনএ। সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এসব মাইক্রোআরএনএ কেবল এমআরএনএ’র সঙ্গে যুক্ত থেকেই ক্ষান্ত হয়না, ভেঙেও ফেলে। সে সঙ্গে একেক মাইক্রোআরএনএ নিয়ন্ত্রণ করে অনেকগুলো বার্তাবাহক আরএনএ’কে। আর একেকটা মাইক্রোআরএনএ’কে নিয়ন্ত্রণ করে আলাদা আলাদা মাইক্রোআরএনএ। আর এভাবেই ভিক্টর অ্যামব্রোস আর গ্যারি রাভকুন এর গবেষণা জিন নিয়ন্ত্রণের এক নতুন দাঁড় খুলে গেলো।

উল্লেখ্য নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনাার। দুই বিজ্ঞানীই পাবেন পুরস্কারের সমান ভাগ।

রসায়নে নোবেল

সমাধান মিলল প্রাণরসায়নের জটিলতম সমস্যার

এবছর রসায়নে নোবেল বিজয়ী হলেন তিনজন। দুজন হলেন গুগলের ডিপ মাইন্ডের দুই বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পার। অন্যজন মার্কিন প্রাণরসায়নবিদ ডেভিড বেকার। কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন এবং প্রোটিন গঠন অনুমানের জন্যে তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হল। ডেমিস হলেন ডিপ মাইন্ডের প্রতিষ্ঠাতা। জন জাম্পার গুগলের এআই মডেল আলফা ফোল্ড তৈরিতে নেতৃত্ব দেন। আলফা ফোল্ড অ্যামাইনো এসিডের অনুক্রম থেকে বলে দিতে পারে কোন প্রোটিনের গঠন কীরকম। এই দুজন পাচ্ছেন পুরস্কারের অর্থমূল্যের আধা ভাগ। বাকী অর্ধেক পাচ্ছেন ডেভিড বেকার। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক। তাঁর কম্পিউটেশনাল গবেষণার কল্যাণে সম্ভব হতে যাচ্ছে একেবারে নতুন প্রোটিন তৈরি।

ছবিঃ ডেমিস হাসাবিস, জন জাম্পার ও ডেভিড বেকার

বেকারের এই স্বপ্নের শুরুটা হয় বিশ বছর আগে। পরবর্তীতে কম্পিউটিং ও বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার অগ্রগতির ফলে অভীষ্টে পৌঁছানোর পথটা আরও প্রশস্ত হয়। পৃথিবীবাসীদের জন্যেও এ গবেষণা বয়ে আনে দারুণ সুফল। এক্ষেত্রে টানা যায় করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোক্ষম টিকা প্রস্তুতের কথাটা। একবিংশ শতাব্দীর মধ্যেই হয়তবা সম্ভব হবে প্রোটিনের এক নতুন জগত তৈরি। বিজ্ঞানীরা ইচ্ছেমতন গড়তে পারবেন সম্পূর্ণ নতুন প্রোটিন প্রকৃতিতে যার কোনও অস্তিত্বই নেই। এতে করে হরেক রকমের সমস্যার সুরাহা সম্ভব হবে। জীবদেহে প্রোটিনের ভূমিকা বলে কয়ে শেষ হবে না। সবরকম প্রাণরাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ আর পরিচালনা করে প্রোটিন। প্রোটিন হরমোন, এনজাইম, এন্টিবডি- নানা রূপে উপস্থিত থাকে আমাদের দেহে। টিস্যুর অন্যতম গাঠনিক একক হিশেবেও কাজ করে প্রোটিন। ২০০৩ সালে থেকে বেকার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন এক্কেবারে নতুন প্রোটিন তৈরি করার। তিনি ও তাঁর গবেষণা দল সেরকম কিছু প্রোটিন তৈরি করতে সফলও হন। এগুলোর সবকটারই চিকিৎসাক্ষেত্রে আছে নানমুখী প্রয়োগ। 

প্রোটিন হল অ্যামাইনো এসিডের গাঁথুনি। বিশ প্রকারের অ্যামাইনো এসিড নানা সজ্জায় সজ্জিত হয়ে তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন। প্রোটিনের এই গঠন ও অ্যামাইনো এসিডের সজ্জার ওপরেই নির্ভর করে এর কার্যক্রম। ১৯৭০ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে আসছিলেন রাসায়নিক গড়ন থেকে প্রোটিনের গঠন অনুমানের কোনো পথ বাতলানো যায় নাকি। কাজ আগাচ্ছিল কচ্ছপের গতিতে। ব্রেক থ্রুটা ঘটে বছর চারেক আগে। গুগলের ডিপ মাইন্ডের দুই বিজ্ঞানী হাসাবিস ও জাম্পার ঘোষণা দিলেন এআই মডেল আলফা ফোল্ড২ এর ব্যাপারে। অ্যামাইনো এসিডের সজ্জা থেকেই নাকি যেকোনো প্রোটিনের গঠন অনুমান করে দিতে পারে এই মডেল। এই অবধি আবিষ্কৃত দু শ মিলিয়ন প্রোটিনের সবকটার গঠনই ভার্চুয়ালি তৈরি করে দিতে পারে এই মডেল। এরপর থেকে পৃথিবীর ১৯০টা দেশের দু মিলিয়ন মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স, প্লাস্টিক খেকো এনজাইমসহ হরেক রকম গবেষণার কাজে ব্যবহার করে এই মডেল। 

গুগুলের আলফাফোল্ড ডাটাবেজ। অ্যামাইনো এসিডের ক্রম থেকেই তৈরি করে দিতে পারে যেকোনো প্রোটিনের গঠন।

এভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে চিকিৎসাক্ষেত্রে, জীববিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটে গেল বলা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি প্রায়শই মানবনে দুশ্চিন্তার সঞ্চার করে। এই বুঝি সবকিছু গিলে খেল এআই। তবে এআই যে মানব কল্যাণেও অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে পারে তার উত্তম উদাহরণ এই আলফা ফোল্ড২। যেকারণে মাত্র চার বছরের ব্যবধানেই হাসাবিস ও জাম্পারের আবিষ্কার জিতে নিল নোবেল।

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল

কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র আবিষ্কার ও যন্ত্রকে শেখানোয় নোবেল

এবছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জেতেন জে. হপফিল্ড এবং জেফরি এভারেস্ট হিন্টন। দুজনই আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুই দিকপাল। প্রথমজন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। অন্যজন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ-কানাডিয়ান ইমেরিটাস অধ্যাপক। কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে যন্ত্রকে শিখিয়ে তোলা সম্ভব করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও আবিষ্কারের জন্যে এ পুরস্কার জেতেন তাঁরা। 

ছবিঃ জে. হপফিল্ড এবং জেফরি এভারেস্ট হিন্টন

যে গুণটি মানব মস্তিষ্ককে অন্যন্যতা দিয়েছে তা হল স্মৃতি ধরে রাখা। মগজের স্নায়ুকোষগুলো পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত স্মৃতি জমা করে রাখে। পরবর্তীতে স্নায়ু কোঠরে জমা স্মৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একই ভাবে যন্ত্রকে শেখানো যায় কিনা বিজ্ঞানীরা সে চেষ্টা করে আসছেন সত্তোর-পঁচাত্তর বছর আগে থেকে। বিজ্ঞানীদের এই প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে আজকের দিনের ভাষার নিখুঁত অনুবাদ, ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম, এবং চ্যাটজিপিটি (ChatGPT), জেমিনি (Gemini) ও ক্লড (Claude) এর মতন জেনারেটিভ এআই সৃষ্টি। বর্তমান বিশ্বে হাজার হাজার কোটি স্মার্ট ডিভাইসে প্রতিদিন পেল্লয় পরিমাণ ডেটা তৈরি হচ্ছে। এতো এতো ডাটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ নিমিষেই করে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা সামাল দিচ্ছে এআই চালিত নানা যন্ত্র। যন্ত্রকে আজ এই পর্যায়ে উন্নীত করার পেছনে মৌলিক অবদান রেখেছে যেই প্রযুক্তি এবারের নোবেল সম্মানিত করেছে সে প্রযুক্তিকেই। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-এর অদ্যোবধি যে অগ্রগতি তার পেছনের নায়ক হলেন দুজন- জে. হপফিল্ড এবং জেফরি এভারেস্ট হিন্টন। হপফিল্ড পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। বাবার মতন আগাগোড়া তিনি একজন পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি ছিল সলিড স্টেট ফিজিক্সে। এরপর থেকে সময় যত গড়িয়েছে হপফিল্ডের গবেষণা তত শারীরবিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নের দিকে এগিয়েছে। এর পেছনে একটা কারণ সম্ভবত মানবদেহের নান অঙ্গের কার্যাবলী পদার্থবিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ১৯৮০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। এখানে থাকাকালীন সময়েই ১৯৮২ সালে দাঁড় করান তাঁর বিখ্যাত তত্ত্ব “হপফিল্ড নেটওয়ার্ক”। এই তত্ত্ব বলে, জৈব অণুর ভেতর যেমন ইলেকট্রিক তথ্য আদান-প্রদান হয় তেমনি মগজের স্নায়ুর ভেতরেও ইলেকট্রিক তথ্য আদান-প্রদান হয়। বলা যায় হপফিল্ডের এই গবেষণাই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরির পথ খুলে দেয়। 

হপফিল্ড নেটওয়ার্ক-কে কাজে লাগিয়ে যন্ত্রকে শেখানোর পথটা আরও সহজ করে দেন জেফরি এভারেস্ট হিন্টন। হিন্টনকে বলা হয় “দ্য গডফাদার অব এআই”। মধ্য নামটা তিনি পেয়েছেন বংশানুক্রমে তাঁর পূর্বপুরুষ জর্জ এভারেস্টের (যার নামে এভারেস্ট পর্বতের নাম রাখা হয়েছে) নাম থেকে। এবছর পদার্থবিজ্ঞান নোবেল জিতলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে, পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর কোনও ডিগ্রিই নেই। ১৯৭৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৮২ সালে হপফিল্ড নেটওয়ার্ক আবিষ্কৃত হল। হিন্টন চেষ্টা করলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় কি করে এই তত্ত্ব প্রয়োগ করা যায়। আগেই বলেছি আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। মগজের নিউরন সংযোগ বাড়িয়ে কমিয়ে আমাদের এই শিখন-ক্ষমতা বাড়ানো কমানো যায়। একই ভাবে কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রকে শেখানো যায় কিনা সেই চেষ্টাটাই করলেন হিন্টন। পরিসংখ্যান পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে বোলজম্যান সমীকরণ কাজে লাগিয়ে তিনি তৈরি করলেন বোলজম্যান মেশিন। 

এটাই ছিল মেশিন লার্নিং এর একেবারে প্রাথমিক মডেল। এভাবেই মানবসভ্যতা প্রবেশ করল এক নতুন যুগে। পরবর্তীতে হপফিল্ড ও হিন্টনের পথ অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে এআই চালিত নানরকম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানব ক্ষমতাকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে এসব এআই যন্ত্র। আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে তেমনি জন্ম দিয়েছে ভয়ের। তাইতো গডফাদার তকমা পেলেও গেলো বছর গুগলের চাকরী ছেড়েছিলেন হিন্টন।

তথ্যসূত্র-

লেখাটি 117-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading