মানুষের যত পূর্বপুরুষ (পর্ব-২)


লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

সূর্য তখনও পুরোপুরি ওঠেনি। দূর দিগন্তে কমলা আভা ছড়িয়ে পড়ছে। জঙ্গলের ঘন পাতার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে প্রাণীটি। তার চোখে সতর্ক দৃষ্টি, হাতের পাথরের হাতিয়ারের অগ্রভাগ ধারালো – যা সে নিজেই তৈরি করেছে আগের রাতে। আজ তাদের দল শিকারে নেমেছে বড় কিছু ধরার আশায়। দলের সবাই জানে, সফল শিকার মানে কেবল পেট ভরা নয়, বরং তা মানে শক্তি, ক্ষমতা আর টিকে থাকার নিশ্চয়তা। শীতের হাওয়া ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে, খাবার মজুত করা দরকার। প্রাণীটির পাশে আছে তার আরও দুই-তিনজন সঙ্গী – সবার হাতেই বর্শার মতো দেখতে এক ধরণের পাথরের অস্ত্র। তাদের লক্ষ্য বিশাল এক বন মহিষ, যাকে গতকাল সন্ধ্যায় এক ঝোপের পাশে ঘুরতে দেখেছিল তারা। মহিষটি বড়, তার গায়ে গভীর ক্ষতচিহ্ন, সম্ভবত শিকারির থাবায় নয়, বরং অন্য মহিষের সঙ্গে লড়াইয়ে আহত। এটাই সুযোগ- দুর্বল শিকার সহজ লক্ষ্য।

প্রাণীটির হাতের ইশারায় সবাই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের বিপরীতে চলতে থাকে, যাতে গন্ধ শিকারের কাছে না পৌঁছায়। মুহূর্তগুলো একদম থমথমে – কারও নিঃশ্বাস পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে না। হঠাৎ ঝোপের আড়ালে মহিষের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। বিশাল শরীর ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোচ্ছে। প্রাণীটি সংকেত দেয়। এক সঙ্গী দ্রুতই একটি পাথর ছুড়ে মারে মহিষের পাশে। শব্দ শুনে চমকে ওঠে মহিষ ছুটতে শুরু করে, কিন্তু সামনে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল দলের বাকি সদস্যরা। তারা চারপাশ থেকে মহিষকে ঘিরে ফেলল। মহিষটি একবার দৌড়াতে গিয়েও পিছলে পড়ে, কারণ আহত পা তাকে দুর্বল করে তুলেছে। এই সুযোগে প্রাণীগুলো তাদের ধারালো হাতিয়ার দিয়ে মহিষের পাশে আঘাত হানে। দলটি সমন্বিতভাবে বারবার আঘাত করতে থাকে যতক্ষণ না মহিষ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

অবশেষে গভীর নীরবতা নামে। সবার হৃদস্পন্দন যেন একসঙ্গে শোনা যাচ্ছে। তারা জানে, আজকের শিকার সফল। এই মহিষের মাংস দিয়ে পুরো গোষ্ঠী কয়েকদিন খেতে পারবে। চামড়া দিয়ে তৈরি হবে পোশাক আর অস্ত্রের হাতল। হাড় ব্যবহার হবে নতুন অস্ত্র তৈরিতে। সবাই একসাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তাদের গলায় গর্জন ধ্বনিত হয় – সফল শিকারের ঘোষণা। অবশেষে চারদিন পর বড় শিকার ধরে বাড়ির পথে ফিরে যাচ্ছে হোমো হাইডেলবার্গেনসিস এর এই ছোট দলটি। আফ্রিকার এই অঞ্চলে খাবার খুঁজে পাওয়া একটু কষ্টই। তবুও ভাগ্যগুণে আজকে একটি বড় রকমের শিকার ধরতে পেরেছে তারা। রাতে আগুনের পাশে বসে মহিষের মাংস খেতে খেতে হাইডেলবার্গেনসিস এর শিশুরা শুনবে তাদের গোষ্ঠীর বড়দের শিকারের কাহিনী। তাকিয়ে থাকবে অসীম আকাশের পানে; তাদের মধ্যে কেউ হয়তো ভাববে অন্য কোনো কিছু নিয়ে।

গত পর্বে আমরা মানুষের কিছু পূর্বপুরুষ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বেও আরো কিছু পূর্বপুরুষ নিয়ে আলোচনা করবো। যদিও হোমো গণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে আমাদের আলোচনা, তবে এখানেও প্রায় ১৫ টি প্রজাতি রয়েছে। তাই একটু বড় হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি পর্ব। তবে আশাকরি এই লেখার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম আবিষ্কার, তাদের চলাফেরা, খাদ্যাভ্যাস সর্বোপরি তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে। তাহলে শুরু করা যাক।

হোমো অ্যান্টেসেসরঃ

হোমো অ্যান্টেসেসর হলো পশ্চিম ইউরোপে খুঁজে পাওয়া হোমো গণের সবচেয়ে প্রাচীন প্রজাতি। যদিও এদের নামকরণ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে; তবে এদেরকে নিয়ান্ডারথাল ও সেপিয়েন্স এর ‘সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। হোমো অ্যান্টেসেসর (Homo antecessor) প্রাচীন মানব প্রজাতির একটি বিলুপ্ত সদস্য, যারা প্রায় ১২ থেকে ৮ লাখ বছর পূর্বে ইউরোপে বসবাস করতো। এই প্রজাতির জীবাশ্ম সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে স্পেনের আতাপুয়েরকা পর্বতমালার গ্রান দোলিনা গুহায় আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৯৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরণ করা হয়। এই জীবাশ্মগুলোতে প্রাচীন ও আধুনিক উভয় বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ দেখা যায়; বিশেষ করে দাঁতের গঠন প্রাচীন হোমো ইরেক্টাসের মতো হলেও, নাসারন্ধ্রের আকৃতি এবং ক্যানাইন দাঁতের উপরের অংশ আধুনিক মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ধারণা করা হয়, গ্রান দোলিনা সাইটে পাওয়া ৮০টি জীবাশ্ম ছয়টি পৃথক ব্যক্তির, যারা প্রায় ৮ লাখ বছর পূর্বে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াতো। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে, আতাপুয়েরকার ‘সিমা দেল এলেফান্তে’ গুহায় প্রায় ১২ লক্ষ বছর পূর্বের একটি ‘চোয়ালের নিচের অংশ’ এবং প্রায় কয়েক ডজন পাথরের সরঞ্জাম আবিষ্কৃত হয়, যা হোমো অ্যান্টেসেসরের সময়কালের সাথে মিলে যায়। স্পেনের বাইরে, ইংল্যান্ডের হ্যাপিসবার্গ সাইটে প্রায় ৮ লাখ বছর পূর্বের পাথরের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, যা এই প্রজাতির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। গ্রান দোলিনা সাইটে পাওয়া জীবাশ্মগুলোতে ক্যানিবালিজমের প্রমাণও রয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এই আচরণটি শিম্পাঞ্জিদের মতো এলাকা রক্ষার জন্য শত্রু গোষ্ঠীর লোকেদের হত্যা ও ভক্ষণ করার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে।

হোমো অ্যান্টেসেসরের মাথার খুলি।

কিছু গবেষক, বিশেষ করে হোমো অ্যান্টেসেসরের আবিষ্কারকরা, এই প্রজাতিকে নিয়ানডার্থাল এবং আধুনিক মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করেন। তাদের মতে, হোমো ইরেক্টাস থেকে উদ্ভূত হয়ে হোমো অ্যান্টেসেসর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে অভিবাসন করেছিল। তবে, আফ্রিকায় এই প্রজাতির কোনো জীবাশ্ম এখনো পাওয়া যায়নি, ফলে এই হাইপোথিসিস এখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, অনেক নৃতত্ত্ববিদ হোমো অ্যান্টেসেসরকে স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে মানতে নারাজ। তাদের মতে, এই ফসিলগুলো হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যারা প্রায় ৬ লাখ থেকে ২ লাখ বছর পূর্বে আফ্রিকা ও ইউরোপে বসবাস করত। এই বিতর্কের মূল কারণ হলো জীবাশ্মের সীমিত সংখ্যা এবং তাদের বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্য।

শিকার করছে হোমো অ্যান্টেসেসরের দল। ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র সাহায্যে তৈরি।

হোমো অ্যান্টেসেসর শব্দের অর্থ অনুসন্ধানকারী কিংবা পথপ্রদর্শক।নিয়ানডার্থাল ও সেপিয়েন্সদের পূর্বপুরুষ হিসেবে এমন নামকরণ করা হয়েছে। এদের মস্তিষ্কের আকার ছিলো প্রায় ১০০০ ঘনসেন্টিমিটার। এই প্রজাতির পুরুষেরা লম্বায় ১.৬-১.৮ মিটার পর্যন্ত হতো। এদের জীবাশ্মের পাশে বিভিন্ন পশুর হাড়গোড় পাওয়া যাওয়ায় ধারণা করা হয় যে, এরা মাংসাশী ছিলো। এছাড়াও পশু শিকারে বিভিন্ন পাথরের হাতিয়ারও ব্যবহার করতো এরা। শুধুমাত্র গ্র‍্যান্ড দোলিনা অঞ্চল থেকেই ২০০ টি পাথরের হাতিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। হোমো অ্যান্টেসেসর’রা সাধারণত গুহায় বসবাস করতো এবং একসাথে দলবদ্ধ হয়ে শিকার করতো। এদের নিয়ে গবেষণা চলমান। ভবিষ্যতে হয়তো আরো বিস্তারিত জানা যাবে রহস্যময় এই প্রজাতি সম্পর্কে।

হোমো সেপ্রানেনসিসঃ

১৯৯৪ সালের ১৩ মার্চ। ইতালির সেপ্রানো’র ক্যাম্পো গ্রান্ডে এলাকায় মহাসড়ক নির্মাণের খননকাজ চলাকালীন সময়ে একটি আংশিক মানব করোটি আবিষ্কৃত হয়। তবে উদ্ধারের সময় এটি বুলডোজারের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক ‘ইতালো বিদিত্তু’ পরবর্তীতে সেখানে উপস্থিত হয়ে জীবাশ্মটি শনাক্ত, নথিভুক্ত এবং বর্ণনা করেন। সেপ্রানো অঞ্চলে এই জীবাশ্ম পাওয়া যাওয়ায় এর নামকরণ করা হয় ‘সেপ্রানো মানব’ এবং পরবর্তীতে হোমো সেপ্রানেনসিস নামক প্রজাতিতে স্থান দেওয়া হয় এই জীবাশ্মটিকে। 

হোমো সেপ্রানেনসিসের মাথার খুলির কিছু অংশ।

সেপ্রানো মানব (Ceprano Man) মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের একটি প্রাচীন মানব জীবাশ্ম। এই জীবাশ্মটি একটি একক করোটির খুলি (ক্যালভারিয়া) নিয়ে গঠিত, যা হোমো হাইডেলবার্গেনসিস বা প্রাচীন নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হয়। ২০০০ সালে নৃতত্ত্ববিদ’রা ভাঙা মাথার করোটি থেকে একটি পূর্ণ মাথার করোটি ডিজাইন করেন। অবশ্য পরবর্তীতে ২০১৭ সালে পুনরায় সেই ডিজাইন তৈরি করা হয়। তবে এবার করোটির বৈশিষ্ট্যগুলো আরো দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।

বিভিন্ন ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথমদিকে সেপ্রানো মানবের বয়স ৬৯০,০০০ থেকে ৯০০,০০০ বছরের মধ্যে অনুমান করা হয়েছিল। তবে, ‘ফন্টানা রানুচ্চিও’ সাইটের সাথে ভূতাত্ত্বিক, জীবাশ্মবৈজ্ঞানিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পর্ক স্পষ্ট হওয়ার পর, সেপ্রানো মানবের বয়স প্রায় ৪৫০,০০০ বছর বলে ধারণা করা হয়। উল্লেখ্য যে, ফন্টানা রানুচ্চিও সাইটের বিভিন্ন উপাদানের বয়স ছিল ৪৮৭,০০০ বছর। অবশ্য পরবর্তীতে, মানজি এবং তার সহকর্মীরা (২০১০) এই বয়সকে সমর্থন করে এবং তাদের ধারণা অনুযায়ী বয়সের উর্ধ্বসীমা ছিল ৪৩০,০০০ এবং নিম্নসীমা ছিল ৩৮৫,০০০ বছর।

শিল্পীর কল্পনায় হোমো সেপ্রানেনসিস।

২০০০ সালে, ক্লার্ক এবং তার সহকর্মীরা করোটির পুনর্গঠন করেন, যেখানে পারিয়েটাল হাড়ের পুনঃস্থাপন, প্লাস্টার অপসারণ, মিডস্যাজিটাল প্লেন প্রতিষ্ঠা এবং অনুপস্থিত জাইগোম্যাটিক ফ্রন্টাল প্রক্রিয়ার সংযোজন করা হয়। ডি ভিনসেনজো এবং তার সহকর্মীরা (২০১৭) ভার্চুয়াল পুনর্গঠনের মাধ্যমে করোটির বিভিন্ন বিকৃতি সংশোধন করেন এবং করোটির বিভিন্ন অংশের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করেন।

সেপ্রানো মানবের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে, এটি হোমো সেপ্রানেনসিস নামে নতুন প্রজাতি হিসেবে প্রস্তাবিত হয়েছিল। তবে, পরবর্তীতে গবেষণায় এটি হোমো হাইডেলবার্গেনসিস বা প্রাচীন নিয়ান্ডারথাল প্রজাতির সাথে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়। কিছু গবেষক মনে করেন, এটি আফ্রিকান হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, আবার কেউ কেউ মনে করেন এটি নিয়ান্ডারথালের পূর্বপুরুষ হতে পারে।

সেপ্রানো মানবের সাথে সরাসরি কোনো প্রাচীন প্রযুক্তি বা সরঞ্জাম আবিষ্কৃত না হলেও, একই সময়কালের অন্যান্য সাইটে বিভিন্ন হাতিয়ার পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা হয় যে তারা পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করত। সেপ্রানো এলাকার পরিবেশ মধ্য প্লেইস্টোসিন সময়ে মিশ্র বনভূমি ও তৃণভূমি নিয়ে গঠিত ছিল, যা শিকার ও সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করত। তাই ধারণা করা হয়,হাতিয়ার ব্যবহার করেই শিকারে নামতো তারা।

হোমো হাইডেলবার্গেনসিসঃ

হোমো হাইডেলবার্গেনসিস (Homo heidelbergensis) প্রাচীন মানব প্রজাতির একটি বিলুপ্ত সদস্য, যারা মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগে, প্রায় ৭ লাখ থেকে ২ লাখ বছর পূর্বে, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় বসবাস করত। এই প্রজাতিকে আধুনিক মানব (হোমো সেপিয়েন্স) এবং নিয়ান্ডারথালদের (হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস) সম্ভাব্য সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৯০৭ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ শহরের কাছে মাউয়ার নামক স্থানে একটি নিম্ন চোয়ালের হাড় আবিষ্কৃত হয়, যা হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের প্রথম পরিচিত জীবাশ্ম। পরের বছর, জার্মান নৃতত্ত্ববিদ অটো শোয়েটেনস্যাক এই জীবাশ্মটি বিশ্লেষণ করে নতুন প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করেন এবং হাইডেলবার্গ শহরের নামানুসারে এর নামকরণ করেন। মাউয়ার ১ ফসিলটি প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার বছর পূর্বের এবং এটি তার বড় আকারের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

হাইডেলবার্গ মানুষের চোয়ালের একটি অংশ।

হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের মস্তিষ্কের আয়তন ছিল প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৩০০ ঘন সেন্টিমিটার, যা আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের আয়তনের কাছাকাছি। তাদের কপাল ছিল নিচু এবং প্রশস্ত, ভ্রূকুটি ছিল সুস্পষ্ট এবং মুখমণ্ডল ছিল বড়। শরীরের গঠন ছিল মজবুত এবং শক্তিশালী, যা তাদের শিকারি জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাদের উচ্চতা প্রায় ১.৭৫ মিটার এবং ওজন প্রায় ৬২ কিলোগ্রাম ছিল।

হোমো হাইডেলবার্গেনসিস পাথরের সরঞ্জাম তৈরিতে দক্ষ ছিল এবং অ্যাশুলিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করত, যা দ্বিমুখী হাতিয়ার তৈরির জন্য পরিচিত। প্রায় ৪ লাখ বছর পূর্বে, তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছিল, যা তাদের খাদ্য প্রস্তুতি, উষ্ণতা এবং শিকারি প্রাণীদের থেকে সুরক্ষা প্রদান করত। এছাড়া, তারা কাঠের বর্শা তৈরি করত এবং সমন্বিত শিকার কৌশল ব্যবহার করত, যা তাদের মাংসের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছিল।

শিল্পীর কল্পনায় হাইডেলবার্গ মানুষের শিকার ধরার দৃশ্য।

হোমো হাইডেলবার্গেনসিস আফ্রিকা, ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় বিস্তৃত ছিল। তাদের বিবর্তনীয় সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে, তাদেরকে আধুনিক মানব এবং নিয়ান্ডারথালদের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণায় এই ধারণা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে হোমো হাইডেলবার্গেনসিস শুধুমাত্র ইউরোপীয় পূর্বপুরুষ হতে পারে, যেখানে আফ্রিকায় হোমো রোডেসিয়েনসিস আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত হয়।

হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক হয়েছে। প্রথমদিকে, এই প্রজাতিকে হোমো ইরেক্টাসের উপপ্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে, পরবর্তীতে তাদের স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিছু গবেষক আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের বিভিন্ন জীবাশ্মকে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের অন্তর্ভুক্ত করেন, আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র ইউরোপীয় ফসিলগুলোকে এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।

সাম্প্রতিক গবেষণায় হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের বিবর্তনীয় ভূমিকা নিয়ে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। জিনগত বিশ্লেষণ এবং নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কারের মাধ্যমে জানা যায় যে, আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ সম্ভবত আফ্রিকায় হোমো হাইডেলবার্গেনসিস থেকে উদ্ভূত হয়নি, বরং হোমো রোডেসিয়েনসিস বা অন্য কোনো প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এছাড়া, নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের পূর্বপুরুষ হিসেবে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসকে বিবেচনা করা হয়। তাদের বিবর্তনীয় সম্পর্ক এবং শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে এখনও গবেষণা ও বিতর্ক চলমান, যা ভবিষ্যতে আমাদের মানব ইতিহাস সম্পর্কে আরও গভীরতর ধারণা পেতে সহায়তা করবে।

হোমো রোডেসিয়েনসিসঃ

হোমো রোডেসিয়েনসিস (Homo rhodesiensis) হলো মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের একটি প্রাচীন মানব প্রজাতি, যারা প্রায় ৩ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার বছর আগে আফ্রিকায় বসবাস করত। এই প্রজাতি আধুনিক মানব (Homo sapiens) এবং নিয়ান্ডারথালদের (Homo neanderthalensis) মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

হোমো রোডেসিয়েনসিসের একটি জীবাশ্ম।

হোমো রোডেসিয়েনসিসের প্রথম জীবাশ্ম ১৯২১ সালে বর্তমান জাম্বিয়ার কাবওয়ে শহরের ব্রোকেন হিল খনিতে আবিষ্কৃত হয়। এই জীবাশ্মটি “কাবওয়ে করোটি” বা “ব্রোকেন হিল করোটি” নামে পরিচিত। আবিষ্কারের পর, ব্রিটিশ জীবাশ্মবিদ আর্থার স্মিথ উডওয়ার্ড এটিকে হোমো রোডেসিয়েনসিস নামে অভিহিত করেন, তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অঞ্চল “রোডেসিয়া” (বর্তমান জাম্বিয়া) থেকে নামকরণ করা হয়।

কাবওয়ে করোটির খুলি প্রায় সম্পূর্ণ, যদিও নিচের চোয়াল অনুপস্থিত ছিল। এর মস্তিষ্কের আয়তন ছিল প্রায় ১,১০০ ঘন সেন্টিমিটার — আধুনিক মানুষের তুলনায় কিছুটা ছোট হলেও হোমো ইরেক্টাসের তুলনায় বড়। এই খুলির কপাল ছিল নিচু, ভ্রূকুটি ছিল ঘন এবং মুখের হাড় কিছুটা সামনের দিকে বেরিয়ে ছিল। এটি কিন্তু আধুনিক মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালের মধ্যবর্তী একটি রূপ প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে কাবওয়ে ফসিলের বয়স ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ বছর অনুমান করা হলেও, ২০২০ সালে গবেষণায় এটি ৩ লাখ ২৪ হাজার থেকে ২ লাখ ৭৪ হাজার বছরের পুরনো বলে নির্ধারণ করা হয়। 

শিল্পীর কল্পনায় হোমো রোডেসিয়েনসিস।

হোমো রোডেসিয়েনসিসের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে এটিকে হোমো হাইডেলবারজেন্সিসের আফ্রিকান রূপ বলে মনে করেন, যারা নিয়ান্ডারথালের পূর্বপুরুষ। আবার, কেউ কেউ মনে করেন এটি আধুনিক মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ। বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, হোমো রোডেসিয়েনসিস এবং হোমো হাইডেলবারজেন্সিসের মধ্যে জিনগত পার্থক্য থাকতে পারে, যা মানব বিবর্তনের ইতিহাসকে আরও জটিল করে তুলেছে। এদের সম্পর্কে খুব কমই জানা গিয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরো বিস্তারিত জানতে পারবো আমরা।

হোমো নালেদিঃ

বর্তমানে প্রায় প্রতি দশকেই নতুন নতুন প্রাচীন মানবের জীবাশ্ম আবিষ্কার হচ্ছে। সম্প্রতি গত দশকে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে হোমো নালেদি’র নাম। হোমো নালেদি (Homo naledi) প্রাচীন মানব প্রজাতির একটি সদ্য আবিষ্কৃত সদস্য, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের বিবর্তনীয় ইতিহাসে নতুন আলোকপাত করেছে। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার গাউতেং প্রদেশের রাইজিং স্টার গুহায় এই প্রজাতির মানুষের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এই আবিষ্কারটি মানব বিবর্তন গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০১৩ সালে, নৃতত্ত্ববিদ ‘লি বার্জার’ এবং তার দল রাইজিং স্টার গুহা’র ডিনালেদি চেম্বারে হোমো নালেদির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন। এই গুহাটি অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং গভীর স্থানে অবস্থিত, যা গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে, “আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যাস্ট্রোনটস” নামে পরিচিত ছয়জন বিজ্ঞানীর একটি দল সফলভাবে এই জীবাশ্মগুলো উদ্ধার করেন। এই জীবাশ্মগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫টি পৃথক ব্যক্তির অবশিষ্টাংশ রয়েছে, যা প্রায় ১,৫৫০টি হাড়ের টুকরা নিয়ে গঠিত। ২০১৫ সালে, এই প্রজাতির নামকরণ করা হয় “হোমো নালেদি”। “নালেদি” শব্দটি সেসোথো ভাষায় “তারা” অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা রাইজিং স্টার গুহার নামের সাথে সম্পর্কিত।

হোমো নালেদি’র জীবাশ্মের বিভিন্ন অংশ।

হোমো নালেদির শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রাচীন এবং আধুনিক উভয় বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ প্রদর্শন করে। তাদের মস্তিষ্কের আয়তন ছিল প্রায় ৪৬৫ থেকে ৫৬০ ঘন সেন্টিমিটার, যা আধুনিক মানুষের তুলনায় অনেক ছোট। তবে, তাদের কব্জি, হাত এবং পায়ের গঠন আধুনিক মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সূক্ষ্ম কাজ এবং দীর্ঘ দূরত্বে হাঁটার সক্ষমতা নির্দেশ করে। অন্যদিকে, তাদের কাঁধ এবং ধড়ের গঠন প্রাচীন প্রজাতির সাথে মিলে যায়, যা গাছে চড়ার দক্ষতার ইঙ্গিত দেয়। এরা সম্ভবত হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস দের মতো বামন মানব ছিল।

প্রাথমিকভাবে, হোমো নালেদির ফসিলগুলির বয়স নির্ধারণ করা কঠিন ছিল, কারণ তাদের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কোনো জীবাশ্ম বা ভূতাত্ত্বিক স্তর পাওয়া যায়নি। তবে, ২০১৭ সালে বিভিন্ন পরিমাপ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় যে এই প্রজাতির মানুষেরা প্রায় ৩,৩৫,০০০ থেকে ২,৩৬,০০০ বছর পূর্বে জীবিত ছিল। এই সময়কালটি আধুনিক মানুষের উদ্ভবের সময়ের সাথে মিলে যায়, যা নির্দেশ করে যে হোমো নালেদি এবং আধুনিক মানুষ একই সময়ে আফ্রিকায় সহাবস্থান করেছিল।

হোমো নালেদি’র সম্ভাব্য মুখাবয়ব।

হোমো নালেদির ফসিল আবিষ্কারের স্থান এবং পদ্ধতি নিয়ে গবেষকরা ধারণা করেন যে তারা সম্ভবত মৃতদেহগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে গুহার গভীরে স্থাপন করত। যদি এই ধারণা সঠিক হয়, তবে এটি তাদের মধ্যে প্রাথমিক সাংস্কৃতিক বা আচার-অনুষ্ঠানের উপস্থিতির প্রমাণ হতে পারে। তবে, এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

হোমো জুলুয়েনসিসঃ

হোমো জুলুয়েনসিস (Homo juluensis) মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন এবং রহস্যময় সংযোজন। সম্প্রতি চীনের জুজিয়াও (Xujiayao) অঞ্চলে এই প্রজাতির ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৩ লাখ থেকে ৫০ হাজার বছর আগের। এই আবিষ্কার মানবজাতির বিবর্তনের গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন মানব প্রজাতিগুলোর সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলেছে।

জীবাশ্মের কিছু অংশ।

১৯৭০-এর দশকে জুজিয়াও অঞ্চলে প্রথম এই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। যদিও তখন এগুলোকে স্পষ্টভাবে কোনো নির্দিষ্ট মানব প্রজাতির সাথে যুক্ত করা হয়নি। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেন যে, এসব খুলির গঠন আধুনিক মানব, নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ বহন করে। এই নতুন প্রজাতির নাম দেওয়া হয় হোমো জুলুয়েনসিস। তাদের বড় মাথা এবং প্রশস্ত খুলির জন্য এদের “বিগ হেডেড পিপল” নামেও ডাকা হচ্ছে।

হোমো জুলুয়েনসিসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য তাদের বড় আকারের মাথা। তাদের মস্তিষ্কের আয়তন আধুনিক মানুষের তুলনায় বড় ছিল, যা তাদের চিন্তা-ভাবনা ও বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিত দিতে পারে। এছাড়া, তাদের দাঁত বড় এবং শক্ত ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা হয়তো শক্ত খাবার খেতো, যেমন — শিকারের মাংস বা গাছের ফলমূল। তবে, তাদের খুলির গঠন নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও, কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য তাদের আলাদা করে তোলে। এটি প্রমাণ করে যে, আধুনিক মানুষ উদ্ভবের সময়, পৃথিবীতে আরও অনেক মানব প্রজাতি সহাবস্থান করেছিল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র সাহায্যে তৈরি হোমো জুলুয়েনসিস।

এই আবিষ্কার পূর্ব এশিয়ায় একাধিক মানব প্রজাতির সহাবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। আধুনিক মানুষ (Homo sapiens) যখন উদ্ভব হচ্ছিল, তখন হোমো জুলুয়েনসিস, নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানরা একই সময়ে বাস করত। এর মানে হলো, বিভিন্ন মানব প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, ইন্টারব্রিডিং বা আন্তঃবংশগতি এবং সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া ছিল।

এই সহাবস্থান বিবর্তনবাদের জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: কীভাবে বিভিন্ন মানব প্রজাতি একসঙ্গে টিকে ছিল? এবং হোমো জুলুয়েনসিস শেষ পর্যন্ত কীভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেল?

এভাবে নতুন নতুন মানব প্রজাতির সন্ধান প্রমাণ করে যে, মানবজাতির বিবর্তন সরলরেখার মতো নয় – এটি জটিল, বহুস্তর বিশিষ্ট এবং এখনও অনেক রহস্যে ঘেরা। প্রতিটি নতুন আবিষ্কার আমাদের নিজেদের সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয় এবং আমাদের অতীতের জগতে উঁকি দেওয়ার পথ দেখায়।

তথ্যসূত্রঃ

লেখাটি 31-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো, মাসে একবার। নিউজলেটারে সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে বিশ্লেষণ থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading