প্রতি-পরমাণু (Anti-atoms) এবং প্রতি-রসায়ন (Anti-Chemistry) এর উদ্ভাবন
এই সিরিজের অন্যান্য পোষ্টগুলো (১ , ৩ , ৪)
মূল : মিশিও কাকু
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের কথা , যখন পদার্থবিদরা অনুধাবন করতে লাগল যে পরমাণু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত । এই কণা গুলোর মধ্যে ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট ইলেকট্রন যা কিনা নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ঘুরে , আর নিউক্লিয়াসে আছে মূলত ধণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট প্রোটন এবং চার্জবিহীন নিউট্রন । ১৯৩০ সালে (পল ডিরাক সর্ব প্রথম ইলেকট্রনের প্রতিকণা পজিট্রনের কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন এবং যা ১৯৩২ সালে অ্যান্ডারসনের পরীক্ষায় আবিষ্কৃত হয় ) বিজ্ঞানীরা খুবই অবাক হয়েছিল যখন তাঁরা জানতে পারল যে প্রতিটি কণাই যমজ শুধু এদের মধ্যে চার্জ বিপরিতমুখী । আর তাই এদের বলা হয় প্রতিকণা (Anti-Particle) ।
সর্ব প্রথম ইলেকট্রনের প্রতিকণা পজিট্রন আবিস্কার হয় যার চার্জ ধণাত্মক ।শুধু চার্জ ছাড়া (কণা ও প্রতিকণার মাঝে শুধু একটি মাত্রায় ( Dimension ) পার্থক্য । আর তা হল চতুর্থ মাত্রা সময়। আমরা কণার জগতে যা কিছু দেখছি তারা , অর্থাৎ আমরা সবাই সময়ের যেই দিকে যাচ্ছি প্রতিকণা তার উল্টোদিকে যাচ্ছে ) পজিট্রনের ধর্ম ইলেকট্রনের মত । পজিট্রনের আলোকচিত্র সর্ব প্রথম cloud chamber এ মহা জাগতিক রশ্মি (Cosmic ray) হতে নেওয়া হয় ।
(Cloud chamber এ পজিট্রনের চলাচলের পথ খুব সহজেই দেখা যায় , যখন একটি শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গামা রশ্মি পাঠানো হয় তখন ইলেকট্রন ও প্রতিকণা পজিট্রনের চলার পথ পরস্পর হতে বিপরীত দিকে বেকে যায় ) । ১৯৫৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Particle Accelerator Bevatron (Emilio Segrè ও Owen Chamberlain এন্টি-প্রোটন আবিষ্কার করেন এবং এর জন্য তাঁরা ১৯৫৯ সালে নোবেল পুরস্কার পান ) এর মাধ্যমে সর্ব প্রথম এন্টি-প্রোটন কণা আবিস্কার হয় , আর এই কণার চার্জ (ঋণাত্মক চার্জবাহী) ব্যতিত সব ধর্মই প্রোটনের মত । তাই তাত্ত্বিক ভাবে বলা যায় যে প্রতি-পরমাণু বা anti-atom (পজিট্রন , এন্টি-প্রোটন কে কেন্দ্র করে ঘুরবে ) বলে কিছু থাকা সম্ভব । আসলে তাত্ত্বিকভাবে Anti-elements , Anti-Chemistry , Anti-People , Anti-Earth এমনকি Anti-Universe ও থাকা সম্ভব । বর্তমানে CERN এবং Farmilab এর বিজ্ঞানীরা বড় বড় দানবীয় Particle Accelerator এর মাধ্যমে প্রতি-হাইড্রোজেন (Anti-Hydrogen) সৃষ্টি করতে সমর্থন হয়েছেন । (প্রতি-হাইড্রোজেন সৃষ্টির এই পরীক্ষাটি করা হয় উচ্চ শক্তিসম্পন্ন প্রোটনের রশ্মি কে Particle Accelerator এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষে আঘাত করা হয় , যার ফলে এক ঝাঁক Sub-atomic particle এর ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয় । এরপর শক্তিশালী চুম্বকের সাহায্যে এন্টি-প্রোটন কে আলাদা করে এর বেগ কমানো হয় । আর প্রাকৃতিক ভাবে সোদিয়াম-২২ পরমাণু হতে পজিট্রন বা এন্টি-ইলেকট্রন নির্গত হয় । এই পজিট্রন যখন এন্টি-প্রোটন কে কেন্দ্র করে ঘুরে তখন প্রতি-হাইড্রোজেন বা Anti-Hydrogen এর সৃষ্টি হয় কেননা আমরা জানি যে একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটন এর মাধ্যমে হাইড্রোজেন পরমানুর সৃষ্টি ) । শুদ্ধ বায়ু শূন্যস্থানে এই পরমাণু গুলো চিরস্থায়ী , কিন্তু ঐ স্থানে যদি অল্প কিছু পরিমানও বায়ু থেকে থাকে তাহলে এদের (পরমাণু ও প্রতি-পরমানু ) মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পরে শক্তিতে রুপান্তর হবে । ১৯৯৫ সালে CERN ইতিহাস রচনা করে , তাঁরা ঘোষণা করে যে ৯ টি প্রতি-হাইড্রোজেন বানাতে সক্ষম হয়েছেন । Fermilab এর বিজ্ঞানীরাও বসে ছিলোনা , তাঁরা ১০০ টি প্রতি-হাইড্রোজেন বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল । একমাত্র উৎপাদনের ব্যয় ছাড়া এমন কোন বাধা নাই যা উচ্চতর প্রতি-পরমানু ( অর্থাৎ উচ্চতর পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট প্রতি-পরমানু ) সৃষ্টিতে বিজ্ঞানীদের দমিয়ে রাখে ।
চলবে…………
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
মিশিও কাকুর Physics of the impossible বইয়ের ১০ম অধ্যায়টি নিজের ভাষায় লিখার চেষ্টা করেছি । এই পোষ্টে কিছু চিত্র সংযোজন করলাম যা মূল বইয়ে ছিল না শুধু পাঠকের বুঝার সুবিধার জন্য । নিম্নে cloud chamber এবং ইলেকট্রন ও প্রতিকণা পজিট্রনের কিছু video এর link দেওয়া হল আগ্রহী পাঠকদের জন্য ।
১. www.youtube.com/watch?v=1pE9kMjLimw
Leave a Reply