আপনাকে কি মশারা একটু বেশিই ভালোবাসে? চারপাশের মানুষের তুলনায় একটু বেশিই “রক্ত-চোষা-চুম্বন” দেয়? আপনার দেহে এমন কি আছে যে কারণে মশারা এতো আকর্ষণ অনুভব করে আপনারপ্রতি?
ঘ্রাণ। আপনার-আমার-প্রত্যেকের দেহেই বৈশিষ্ট্যসুচক গন্ধ আছে। ঘাম, পায়েরমোজা, মাথার চুল কিংবা বগলের তলায় গন্ধ (মতভেদে দুর্গন্ধ!) তৈরি হয়। এই গন্ধের জন্যই হয়তো মশারা আপনার প্রতি একটু বেশিই আকৃষ্ট হয়।
এই ঘ্রাণ, গন্ধ(মতভেদে দূর্গন্ধ) সৃষ্টির জন্য আমরা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াকে দায়ী করতে পারি। আপনার হয়তো ডেটল-স্যাভলন সহ বিভিন্ন সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশের বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে যেতে পারে। জ্বি হ্যাঁ, আমাদের দেহত্বক ‘গিজগিজ’ করছে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে। এসব ব্যাক্টেরিয়ার জন্য আমাদের দেহত্বক অতি মনোরম একটি স্থান। উষ্ণ তাপমাত্রা, মৃত কোষ, ঘামে নিঃসৃত অ্যামিনো এসিডসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আমাদের দেহকে ব্যাক্টেরিয়ার থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো জায়গা বানিয়েছে। একদিক দিয়ে চিন্তা করলে, আমাদের শরীরও ব্যাক্টেরিয়াকে “পোষে”।
অ্যামিনো এসিড হলো আমিষ বা প্রোটিন তৈরির একক। দেয়াল তৈরি করতে যেমন ইট লাগে, প্রোটিন তৈরিতেও লাগে অ্যামিনো এসিড। মানুষ, গরু, ঘাসফড়িং, গাছ থেকে শুরু করে ব্যাক্টেরিয়ারও প্রোটিন তৈরি করতে হয়। তাই সবারই দরকার অ্যামিনো এসিড। খাবারের মধ্যে অ্যামিনো এসিড না থাকলে বিপদ।
একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে য়ে ঘাম নিঃসৃত হয় সেখানে বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো এসিড খায়। খাওয়ার পর “বাই-প্রোডাক্ট” হিসেবে ব্যাক্টেরিয়া এসিটিক এসিড সহ বিভিন্ন পদার্থ নিঃসৃত করে। ঘামের মৃদু গন্ধ হয় ব্যক্টেরিয়া নিঃসৃত এইসব পদার্থের কারণে।
মানুষের যাবতীয় ঘ্রাণ তৈরি হয় ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে। বগলের গন্ধ তৈরি করে কর্নিব্যাক্টেরিয়া-রা। হাতের বগল সহ অন্যান্য গোপন এলাকার ত্বকে বিশেষ এপোক্রিন গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন পদার্থ নিঃসৃত হয়। কর্নিব্যাক্টেরিয়ারা এগুলো খেয়ে বাঁচে। এমনকি আমাদের চুলের গন্ধও তৈরি হয় মাথার ত্বক ও চুলে বসবাসকারী ক্ষুদে জীবদের কল্যাণে।
আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার দেহের প্রাকৃতিক গন্ধ যদি ভালো লাগে, বুঝবেন, এটা ব্যাক্টেরিয়ারই সুদূরপ্রসারী প্রভাব। বিভিন্ন হ্যান্ডওয়াশের বিজ্ঞাপনগুলো দেহে বসাবাসকারী ব্যাক্টেরিয়াদের “শত্রু” হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা আসলে ততটা “খারাপ” নয়। উল্টো ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্য ছাড়া আমরা আসলে বাঁচতেই পারতাম না।
তথ্যসূত্র সায়েন্টিফিক আমেরিকান ব্লগ
Leave a Reply